শমীক লাহিড়ী
মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক দাঙ্গার সূত্রপাত ৮ এপ্রিল। ঐদিন উমরপুরে জাতীয় সড়ক ১২ অবরোধ হয়। ১১ এপ্রিল প্রচুর মানুষ জাতীয় সড়ক ১২-এর বিভিন্ন অংশে অবরোধ এবং সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি যানবাহন ভাঙচুর করে। এরপর হঠাৎই বিক্ষোভ স্থল থেকে অনেকটা দূরে একটি গ্রামে হামলা হয়। হামলাকারীদের আক্রমণে ৭০ বছরের বৃদ্ধ সিপিআই(এম) সমর্থক হরগোবিন্দ দাস এবং তাঁর ছেলে চন্দন দাস নৃশংস ভাবে খুন হন। বহু মানুষের ঘরবাড়ি ভাঙচুর লুটপাট হয়। আতঙ্কে অনেকেই গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান।
দাঙ্গা কেন ?
ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন, ২০২৫-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্যই ছিল এই বিক্ষোভ। এই আইনের বিরোধিতা কি শুধুই মুসলিম মানুষরাই করছিলেন? তা তো নয়। এই আইনের মাধ্যমে দেশের সংবিধানে প্রদত্ত অধিকার কেড়ে হয়েছে। সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের সম্পূর্ণ বিরোধী এই আইন। এর বিরোধিতা দেশজুড়েই হচ্ছে। উল্লেখ্য, সংসদে যে ২৩৪ জন এই বিলের বিরোধিতা করেছিলেন, তার মধ্যে ২০৮ জনই হিন্দু সাংসদ।
এর জন্য দাঙ্গা কেন? যে যানবাহনগুলিতে আগুন দেওয়া হল, এগুলোর চালক বা মালিক কি এই আইন তৈরি করেছেন? হিন্দু সম্প্রদায় প্রধান গ্রাম আক্রমণ করা হল কেন? তারা কি এই আইন বলবৎ করেছেন? হরগোবিন্দ দাস এবং তাঁর ছেলে চন্দন দাস কি এই আইনের সমর্থনে দাঙ্গা হাঙ্গামা বাঁধিয়েছিলেন? এর কোনটাই তো ঘটেনি, তাহলে দাঙ্গা কেন? হঠাৎ করেই মূল বিক্ষোভস্থলের থেকে অনেকটা দূরে অন্য গ্রামে কিছু যুবককে কে বা কারা জড়ো করলো মাত্র ৬০/৭০টি ঘরের বাস হিন্দুদের গ্রাম জাফরাবাদ গ্রামে লুটপাট করা, সম্পত্তি নষ্ট করার জন্য? এটা কি হঠাৎ করে জড়ো হওয়া শতখানেক চ্যাংড়া মুসলমান ছেলেদের কাজ? এত সহজ তো নয় এই ঘটনা! এদের পেছনের মাথা কে, এই প্রশ্নের উত্তর তো পেতেই হবে? না হলে তো বারবার এধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
রাজ্য প্রশাসন কি আগাম কিছুই জানত না? তাহলে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ কি করছিল? বিক্ষোভ তো কয়েকদিন ধরেই চলছে দেশ রাজ্যের নানা জায়গাতেই। তাছাড়া রাম নবমী ও হনুমান জয়ন্তীকে ঘিরে নানা সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক হুঙ্কার চলছিল আগের কয়েক সপ্তাহ ধরেই। তাহলে গোয়েন্দা বিভাগকে সেসব জেনেও নাকে তেল দিয়ে ঘুমোতে নির্দেশ দিয়েছিল কে? সেদিন সন্ধ্যায় বিনা বাধায় তিন-চার ঘণ্টা ধরে লুটপাট চলে, তখন পুলিশ কি করছিল? নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি, নাকি কারোর নির্দেশেই ৩-৪ ঘন্টা ধরে নির্বিচারে লুটপাট চালাতে দিয়েছে দুস্কৃতীদের? জেলার পুলিশ সুপার কি করছিলেন? যদি তার পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ওপরতলায় সেনা বা আধাসেনা বাহিনীকে পাঠাবার অনুরোধ কেন করেননি? রাজ্য পুলিশের ‘পার্ট টাইম’ডিজি কোথায় ছিলেন? কেন কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ পর্যন্ত অপেক্ষা করল রাজ্য সরকার আধাসেনা বাহিনীকে নামাতে? কোন মাথা আটকে রেখেছিল রাজ্য সরকারকে, এই প্রশ্ন তো উঠবেই।

এসব কি এজন্যই ঘটতে দেওয়া হলো, যাতে আরএসএস-এর দীর্ঘদিনের কথা –‘হিন্দু খতরে মে হ্যায়’, এটা আপামর হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা যায়! কিছু চ্যাংড়া মুসলমান ছেলেদের দিয়ে হিন্দু প্রধান গ্রামে লুটপাট, খুন জখম ৩-৪ ঘন্টা ধরে চালাতে দেওয়ার কারণ কি, হিন্দুদের কাছে মুসলমানদের শত্রু হিসাবে তুলে ধরার জন্যই? পশ্চিমবঙ্গে বিগত ১৪ বছরে ৫০টিরও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা নিয়ে, বিচারবিভাগীয় স্বাধীন কমিশন গঠন করে প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা হলো না কেন? তৎপরতার সাথে সব দাঙ্গার ঘটনাগুলিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মমতা ব্যানার্জির এত উদ্যোগ কার নির্দেশে? কে বা কাদের এত ভয় পান বাংলার বাঘিনী-অগ্নিকন্যা?
কথা কও হে অতীত
দুটো ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিনটন ৭মে, ২০১২ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সাথে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে ১ঘন্টারও বেশি সময় ধরে বৈঠক করেছিলেন। কি আলোচনা হয়েছিল? জানা যায়নি। যার সাক্ষাৎ পাবার জন্য তাবড় তাবড় দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের অপেক্ষমান বিরাট লাইনে তীর্থের কাকের মতো বসে থাকতে হয়, তাদের সকলকে বাদ দিয়ে ভারতবর্ষের একটি অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে ১ঘন্টারও বেশি সময় ব্যয় কেন? শুধুই কি কমিউনিস্টদের সরকার ফেলার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য এসেছিলেন! নাকি তার সঙ্গে দেশের ভবিষ্যতের পথ নির্দেশিকাও দিতে এসেছিলেন ১৩ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে! কি সেই নির্দেশিকা, যা গোপন রেখেছিলেন দুজনেই?
দ্বিতীয় ঘটনা, আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত গত ৬-১৭ ফেব্রুয়ারী পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে ১১ দিনের সফরে এসেছিলেন। এটিই ছিল যে কোনও আরএসএস প্রধানের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে দীর্ঘতম সফর। এর পরেই তরোয়াল ঘোরাতে শুরু করে দিলীপ ঘোষ, গদা হাতে নেমে পড়ে শুভেন্দু অধিকারী। রাম নবমী কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠান নাকি লড়াইয়ের ময়দান, সেটা বোঝাই দুষ্কর হয়ে পড়ে, বিশেষত বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তার সচিত্র বিস্তারিত উত্তেজক খবর পরিবেশনে। কিন্তু সেটা জমলো না, এর মাঝেই প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের চাকরি হারানোর খবরে। মমতা ব্যানার্জির সরকারের সুবিশাল দুর্নীতিতে চাকরিহারাদের ক্রন্দনরোল, প্রতিবাদ, মানুষের ক্ষোভের আগুন তখন জ্বলছে। এর মধ্যেই আবার সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে দেশজোড়া গণতান্ত্রিক বিক্ষোভের চলাকালীন আচমকাই এরাজ্যের ৩৮ হাজার গ্রামের মধ্যে ছোট্ট একটি হিন্দু গ্রামে লুটপাট দাঙ্গা বাঁধানো হল কেন? বিশেষত যে গ্রাম বা পৌরসভা এলাকায় সুদূর অতীতেও কোনদিনই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়নি, সেখানে বড় মাথার পরিকল্পনা ছাড়া গুটিকতক চ্যাংড়া দাঙ্গা করতে নেমে পড়ল, আর পুলিশ সে খবর পেয়েও দিব্যি ঘুমোতে লাগল কার নির্দেশে?
২০১২ হিলারি থেকে ২০২৫ ভাগবত, কোথাও একটা যোগসূত্র কিছু আছে কি? কে দেবে উত্তর?
বৈসরানে বর্বরতা
২২ এপ্রিল, ২০২৫ বৈসরান ভ্যালি, পহেলগামে জঙ্গিরা হামলা চালায়। এই হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে একজন বাদে সবাই ছিলেন ভারতীয় পর্যটক। স্থানীয় টাট্টু ঘোড়া চালক সাইদ আদিল হুসেন শাহ পর্যটকদের রক্ষা করতে গিয়ে সন্ত্রাসবাদীদের গুলিতে নিহত হন। এই ঘটনা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে কাশ্মীরে সাধারন নাগরিকদের উপর সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলা। নিহত ২৬ জনের মধ্যে ১ জন মুসলমান এবং ১ জন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী, বাকি ২৫ জনই হিন্দু। পর্যটকদের নানা ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের ধর্ম সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে, তবেই এই হত্যাকান্ড চালিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিজেপি’র শাসনকালেই কেন ?
জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী হামলা নতুন কোনও বিষয় নয়। সন্ত্রাসবাদীদের নানাভাবে পাকিস্তানের মদত দেওয়াও নতুন কোনও ঘটনা নয়। নতুন বিষয় হলো ধর্ম বিচার করে নিরীহ সাধারন পর্যটকদের ওপর হামলা। যদিও ২৫ বছর আগে এরকমই এক নৃশংস হত্যাকান্ড হয়েছিল। ২০ মার্চ, ২০০০ রাতে, ১৫-১৭ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসবাদী ভারতীয় সেনাবাহিনীর পোশাক পরে সামরিক জিপে এসে চিত্তিসিংহপুরা গ্রামে নিরস্ত্র পুরুষদের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৩৬ জন শিখকে হত্যা করে। তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অটল বিহারি বাজপেয়ী, এবার নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি’র শাসনকালেই দু’বার নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষদের হত্যা করার সুযোগ পেল সন্ত্রাসবাদীরা। এটা নিছকই কাকতালীয় নাকি পিছনে অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে! মাত্র ২ বার ধর্ম বিচার করে সন্ত্রাসবাদীরা হত্যালীলা চালালো, সেই দু’বারই বিজেপি’র সরকার। এটা কি যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ নয়!
রহস্যাবৃত সমাপতন
শিখ গণহত্যা ঘটেছিল তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটনের ভারত সফরের ঠিক আগের দিন। এবারের সন্ত্রাসবাদী হামলার সময়ে মার্কিন উপরাষ্ট্রপতি জে.ডি. ভ্যান্স ২১-২৪ এপ্রিল, ভারত সফরে ছিলেন। এটা কি নিছকই ঘটনার সমাপতন, নাকি পেছনে কোনও গূঢ় রহস্য রয়েছে!
আরও কিছু অদ্ভুত গভীর রহস্যময় ঘটনা রয়েছে। এই রহস্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে দেশের প্রধানমন্ত্রীর আচরণ। তাঁর ১৯ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীর সফরে যাওয়ার কথা ছিল রেল প্রকল্পের উদ্বোধন করার জন্য, যা স্থগিত করা হয়। বলা হল, প্রতিকূল আবহাওয়ার পূর্বাভাস থাকার কারণে এই সফর স্থগিত করা হয়েছে। অথচ সামান্য বৃষ্টির পূর্বাভাস ছাড়া আর কোনও সতর্কবার্তা ছিল না আবহাওয়া দপ্তরের। সামান্য বৃষ্টি হতে পারে শুনেই সফর বাতিল করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী! কেন?
৩৭০ বাতিল ও সন্ত্রাসবাদ
২০১৯ সালে ক্ষমতায় এসেই সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে, জম্মু-কাশ্মীরকে দু’ভাগে বিভক্ত করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিলেন মোদী-শাহ। এর আগে নোট বাতিল করে আরএসএস-বিজেপি প্রচার করেছিল সন্ত্রাসবাদীরা জব্দ হবে। কিছুই হয়নি। ২০১৯ সালের পর সন্ত্রাসবাদীদের হামলা কমেছিল? ‘২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সেপ্টেম্বর পুলওয়ামায় সন্ত্রাসবাদী হামলা সহ ৬৯০টিরও বেশি ঘটনায় কমপক্ষে ২৬২ জন সেনা জওয়ান এবং ১৭১ জন সাধারন নাগরিক নিহত হয়েছেন।
(FP, ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনে ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ প্রকাশিত)
দায় কার ?
জম্মু-কাশ্মীরের নিরাপত্তার দায়িত্ব সেখানকার রাজ্য সরকারের নয়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ’র হাতেই রয়েছে। পুলিশ, মিলিটারি, আধাসেনা সব কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে। তাহলে কেন ২৭ জন নাগরিকের মৃত্যুর দায় নেবেন না মোদী-শাহ? হাত ধুয়ে ফেলে পেটোয়া সংবাদ মাধ্যমগুলোকে জড়ো করে কয়েকটা ফাঁকা বাড়ি বোমা দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার ছবিতে দেশের মানুষ নিরাপদ বোধ করছেন না। বরং প্রশ্ন উঠছে, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাহিনী আগেই তো জানতো ওই বাড়িগুলো জঙ্গীদের, তাহলে এতদিন সব জেনেও চুপ করে ছিল কেন?
কোথায় ছিল নিরাপত্তা বাহিনী ?
২২ এপ্রিল, ভয়াবহ ঘটনার দিন কি হলো সবাই এতদিনে জেনে গেছেন। যারাই কাশ্মীর গেছেন জানেন সেখানে কত কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থাপনা থাকে। আর অনন্তনাগ জেলায় অসংখ্য সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ হয়েছে। সেখানকারই সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থল পহেলগাম। সেখানে ১জন নিরাপত্তা রক্ষীর টিকিও সেদিন খুঁজে পাওয়া গেল না কেন? বলা হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসন নাকি নিরাপত্তা বাহিনীদের জানায়নি, ফলে নিরাপত্তা মোতায়েন করা হয়নি। নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর গোয়েন্দা দপ্তর কি তুলে দেওয়া হয়েছে? হাজার হাজার পর্যটক হেঁটে, ঘোড়ায় চড়ে পুলিশ চৌকি, আধাসেনা-সেনা বাহিনীর ক্যাম্পের সামনে দিয়ে যাচ্ছেন, তারা কি দেখতে পাননি? নাকি নিরাপত্তা বাহিনীকে পরিকল্পনা মাফিক সরিয়ে রাখা হয়েছিল, এই প্রশ্ন ওঠা কি অস্বাভাবিক?
পুলওয়ামার তদন্ত রিপোর্ট কোথায় ?
জেনেবুঝে একটা সরকার কি তার নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে এত উদাসীন থাকতে পারে? এটাই লাখ টাকার প্রশ্ন, সত্যিই কি এটা শুধুই মোদী-শাহ’র ব্যর্থতা বা উদাসীনতার ফল, নাকি পিছনে আরও কিছু রহস্য আছে? ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ – ৪০ জন সেনা শহীদ হলেন পুলওয়ামাতে। সেই শহীদদের ছবি দেখিয়ে মোদী নির্বাচনের বৈতরণী পার হলেন। তার তদন্ত রিপোর্ট কোথায়? অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা হল ২০২০ সালে। ৫ বছরে বিচারের অগ্রগতি কি, কেউ জানেন না। তৎকালীন সময়ের রাজ্যপাল সতপাল মালিক, যিনি নিজেও একজন বিজেপি’র বড় মাপের নেতা ছিলেন, পুওয়ামার ঘটনা নিয়ে নানান অভিযোগ তোলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ধমকে চুপ করাবার চেষ্টা করেন, রাজ্যপাল পদ থেকে সরিয়েও দেন। কিন্তু তাঁর তোলা মূল প্রশ্নগুলো সম্পর্কে সরকার নীরব-নিশ্চুপই রইল কেন?

সুবিধা হচ্ছে কার ?
পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদীরা যা চেয়েছিল, তাই হল। ভারতবর্ষের মানুষকে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন করে, পরস্পরের বিরুদ্ধে ঘৃণা তৈরি করে দেশের ঐক্য স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করে, ভারতকে দুর্বল করে দেওয়াই ওদের লক্ষ্য। ওরা যা চায়, সেই হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক ঘৃণা ও স্থায়ী বিভাজনের কাজটাই করছে আরএসএস-বিজেপি। আমাদের আক্রমণের লক্ষ্য কে? সন্ত্রাসবাদ এবং তাদের যারা মদত দেয় তারা। পাকিস্তান এই অপরাধ দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছে। কিন্তু অদ্ভুদ ভাবে এদের লক্ষ্যবস্তু না করে, এদেশের নাগরিক জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দাদের আক্রমণ করা হচ্ছে কেন! পর্যটকদের রক্ষা করতে গিয়ে ওখানকারই টাট্টুঘোড়া চালক সাইদ আদিল হুসেন শাহও তো সন্ত্রাসবাদীদের হাতে খুন হলেন। আরএসএস-বিজেপি বাহিনী কাশ্মীরিদের ওপর দৈহিক আক্রমণ চালিয়ে তাদের দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে কাদের হাত শক্ত করছে? হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা লাগালে দেশ শক্তিশালী হবে? অথচ সেই ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরির কাজটাই করছে আরএসএস-বিজেপি। অথচ পরের দিনই, ২৩ এপ্রিল সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে শহীদ হয়েছেন বাংলারই বাসিন্দা বিএসএফ জওয়ান ঝন্টু আলি শেখ। সন্ত্রাসবাদ ও তাদের মদতদাতা দেশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সব বিরোধী দল এককাট্টা হয়ে সরকারের যে কোনও পদক্ষেপকে সমর্থন জানাবার কথা সর্বদলীয় বৈঠকে তো জানিয়ে দিয়ে এসেছে। অবশ্য সেদিন প্রধানমন্ত্রী দেশ রক্ষার বিষয়ে ডাকা এই সভায় উপস্থিত না থেকে, বিহারে দলের নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে বক্তৃতা করাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। দেশ না দল, কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ মোদি’র কাছে?
পাকিস্তানে সরকার-অর্থনীতি-গণতন্ত্র-শান্তি সবকিছুই ভেঙে পড়ছে। সে দেশের মানুষের নজর ঘোরাতে কাশ্মীরে হামলা, যুদ্ধের উন্মাদনা তুলে উগ্র ধর্মীয় ও জাতীয়তাবাদী প্রচার ওদেশের শাসকদের ক্ষমতায় টিঁকে থাকার জন্য জরুরী। আশ্চর্যের বিষয়, মোদী-শাহ সেই রাস্তাতেই এদেশেও চলছেন। পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদীরা চায় কাশ্মীর অশান্ত থাকুক, পর্যটন শিল্প বন্ধ হয়ে অসংখ্য দরিদ্র বেকার তৈরি হোক। তাহলে এদেরই কেউ কেউ অর্থের জন্য হয়তো সন্ত্রাসবাদীদের দলে নাম লেখাতে পারে। সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষনা করে কাদের সাহায্য করছেন মোদী-শাহ? পাকিস্তান ধর্মের নামে দেশ তৈরি করে সে দেশের মানুষের সর্বনাশ করেছে। ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষকে সেই রাস্তাতেই নিয়ে গিয়ে পাকিস্তানের মতোই ধর্মীয় মৌলবাদী পরিচালিত একটা অস্থির, দাঙ্গাক্লিষ্ট, সন্ত্রাস কবলিত দেশ বানাতে চাইছে আরএসএস-বিজেপি।
সুত্রঃ গণশক্তি, ৪ মে, ২০২৫