তারিখ: ১০জুলাই,সোমবার, ২০২৩
সিপিআই(এম)-সিপিআই যৌথ প্রতিনিধিদল, সংঘর্ষ-বিধ্বস্ত মণিপুর পরিদর্শন করার পরে, মনে করে যে বীরেন সিং সরকারের এখনো রাজ্যের ক্ষমতায় থাকা রাজ্যে শান্তি ও স্বাভাবিকতা পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা। এই রাজ্যকে খাদের কিনারা থেকে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন একটা অর্থবহ পদ্ধতি অনুসরণ করা যেখানে সমাজের সকল জনজাতির ও অংশের মানুষ তথা নাগরিক সমাজকে একত্রিত করতে হবে।
বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, জন ব্রিটাস [সিপিআই(এম)], বিনয় বিশ্বম, কে. সুব্বারায়ণ এবং পি সন্দোষ কুমার [সিপিআই] এর সমন্বয়ে গঠিত প্রতিনিধি দলটি ৬ জুলাই, ২০২৩ থেকে তিন দিন ধরে মণিপুরের উপত্যকা ও পাহাড়ের শরণার্থী শিবির এবং বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেছেন। সমতল ও পাহাড়ের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে মানুষদের সাথে কথা বলে তারা উপলব্ধি করেছেন যে উভয় শিবিরে থাকা মানুষদের দীর্ঘস্থায়ী দুর্দশার চিত্র একই রকম সাযুজ্যপূর্ণ। ৬০,০০০ এরও বেশি মানুষ উৎখাত হয়েছে, তাদের জীবন ও জীবিকা ধ্বংস হয়ে গেছে।তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া এবং পরিবারের সদস্যদের গুলি করে হত্যা করার আতঙ্ক এখনো তাদের তাড়া করছে।
প্রতিনিধিদলটি নাগরিক সমাজের বিভিন্ন অংশের সাথে খোলামেলা আলোচনা করেছে।এই আলোচনা থেকে প্রধান যে দৃষ্টিভঙ্গি উঠে এসেছে তার হল মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বৈধতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে এবং রাজ্য প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে।কাজেই মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং-এর পদে থাকাটা অর্থহীন। মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অসহনীয় নীরবতায় মানুষ ব্যথিত ও মর্মাহত। প্রতিনিধিদলটি রাজ্যপাল আনুসুইয়া উইকির সাথে দেখা করে এবং তাদের মতামত জানায়।রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানকে সব মহলের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।তিনি বলেছিলেন যে তিনি ঘটনাগুলিতে অত্যন্ত বিচলিত হয়েছিলেন এবং স্বীকার করেছিলেন যে তিনি তার জীবনে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হননি। তিনি বলেন, তিনি আন্তরিকভাবে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
প্রতিনিধিদল লক্ষ্য করেছে যে, বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনীর ৬০,০০০ সদস্য মোতায়েন থাকলেও কার্যকরী অসামরিক প্রশাসনের অভাবে তারা কোনভাবেই কার্যকর নয়।কুকি এবং মেইতেই সম্প্রদায়ের হাজার হাজার সরকারি কর্মচারী যথাক্রমে উপত্যকা ও পাহাড় থেকে পালিয়ে গেছেন, যা প্রশাসনকে পঙ্গু করে দিয়েছে।
প্রতিনিধিদল উল্লেখ করেছে যে জাতিগত হিংসাকে সাম্প্রদায়িক মোড় দেওয়ার জন্য নিয়মতান্ত্রিক এবং পরিকল্পিত একটা প্রচেষ্টা ছিল।এক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকাও স্পষ্টতই অনুভূত হয়।এমনকি ইম্ফল শহরের কেন্দ্রস্থলে গির্জা এবং মন্দিরগুলিকে এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়-চালিত স্কুলগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়, এগুলোতে ভাংচুর করা হয় এবং জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।এ ধরনের সংগঠিত ধ্বংসযজ্ঞের প্রত্যক্ষ হিসাব জানতে প্রতিনিধি দল কয়েকটি সংঘর্ষদীর্ণ স্থান পরিদর্শন করেছে।
প্রতিনিধিদলটি মনে করে যে সমস্ত অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগ, দাবি এবং পাল্টা দাবিকে গুরুত্ব না দেওয়া উচিত এবং একমাত্র লক্ষ্য শান্তি ও স্বাভাবিকতা পুনরুদ্ধার করাই হওয়া উচিত।কেন্দ্র এবং রাজ্য প্রশাসনের উচিত রাজ্যের সমস্ত অংশের মানুষকে সমবেত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা, পুনর্বাসনের জন্য জরুরি ব্যবস্থা ঘোষণা করা এবং জনগণের দুর্ভোগ লাঘব করা।