Liberalism

"মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগম" - কুশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার রাজনীতি

মেরুকরণে মমতার ভূমিকা আড়ালেই ব্যস্ত প্রবাসী পন্ডিতেরা

Gautam-Roy

গৌতম রায়

অন্তর থেকে বিদ্বেষ বিষ নাশের সংকল্পে আন্তরিকতার বদলে কেবল দেখনদারি থাকলে, সেই বিষ নাশ হওয়ার পরিবর্তে ক্রমশঃ বাড়তেই থাকে। যে রবীন্দ্রনাথ কে উদ্ধৃত করে ইতিহাসচর্চার নামে কোনো ধরণের নির্মোহ ভাবনার ধারপাশ দিয়ে না হেঁটে একাংশের মানুষ নিজেদের বুদ্ধিমত্তার বিশালত্ব প্রমাণে এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিক্ষেত্রে রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস আর কেন্দ্রের শাসক বিজেপি ছাড়া সংযুক্ত মোর্চা, যেটি বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং আই এস এফের সমন্বয়ে গঠিত, এঁদের দেখতেই পাচ্ছেন না, সন্দর্ভ রচনায় এই সংযুক্ত মোর্চার জন্যে একফোঁটা কালি খরচ ও যাঁরা করতে চান না ,তাঁদের ১৩১৪ বঙ্গাব্দে লেখা রবীন্দ্রনাথেরই 'ব্যাধি ও প্রতিকার' স্মরণ করিয়ে দেওয়া জরুরি।

Rabindranath-Tagore-ili-153-img-4

                    রবীন্দ্রনাথ লিখছেন;" যদি সকলে মিলিয়া একটা কাজের আয়োছন গড়িয়া তুলিবার শক্তি আজও আমাদের না হইয়া থাকে তবে অগত্যা আমাদিগকে নিভৃতে নিঃশব্দে ব্যক্তিগত চেষ্টায় প্রবৃত্ত হইতে হইবে।কিন্তু যদি আমরা অসময়ে ঔদ্ধত্য করিতে থাকি সেই বিচ্ছিন্ন চেষ্টার ক্ষেত্র একেবারে নষ্ট হয়।গর্ভিণীকে সমস্ত অপঘাত হইতে নিজেকে বাঁচাইয়া সাবধানে চলিতে হয়- সেই সতর্কতা ভীরুতা নহে, তাহা তাহার কর্তব্য।"

                     ১৯০৭-০৮ সালে হিন্দু- মুসলমান উভয়েই নানা ছলছুতোয় একে অপরের উপরে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে, আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে, আর তার সুযোগে ব্রিটিশ কিভাবে তার চন্ডরূপ প্রকাশ করছে- সেই অসুখের কারন আর অসুখ থেকে সেরে ওঠার উপায়ের খোঁজেই রবীন্দ্রনাথের এই ' ব্যাধি ও প্রতিকার' রচনা। দেশের মানুষের অভিমতকে অবহেলা করবার যে দুঃসাহস ব্রিটিশ দেখাচ্ছে, তা তারা দেখাতে পারছে দেশের মানুষ দ্বিধা বিভক্ত , সেই কারনে- এই অভিব্যক্তির উপরে দাঁড়িয়ে আজ থেকে একশো বছরের ও বেশি সময় আগে রবীন্দ্রনাথ যে উচ্চারণ করেছিলেন, বিদেশ থেকে কৌতুকে করুণায় স্বদেশ কে দেখা বিদগ্ধ মানসেরা না হয় ' খারাপ' বামপন্থীদের সময় সেটা খুঁজেই পান নি।'ভালো' তৃণমূলের সময়ে কি বহু সুলুক সন্ধান করেও তার এতোটুকু খোঁজ পেয়েছেন? আমাদের মূল ' অসুখে' র কারন যে ' বিভাজন' , আর বাম শাসকদের আমলে শাসকের দ্বারা সেই ' বিভাজন ' ঘটছে-- এমন একটি উদাহরণ ও দেখানো কি এইসব বিদেশে বসে কবি অমিয় চক্রবর্তীর ' মানুষের ঈশ্বর 'কবিতার নায়কের মতো ইতিহাসবিদদের একবারের জন্যে দেখানো সম্ভবপর হবে? অমিয় চক্রবর্তী লিখেছিলেন;

ইশ্বর , মুখে দিয়ে দামী সিগারেট

ব'সে ব'সে দেখছেন স্বর্গে।

নতুন জুতো- পরা পা দুটো রেলিঙে

উঠিয়ে, আরাম ক' রে , ভালো খেয়ে দেয়ে,

মাটির পৃথিবীটাকে কৌতুকে করুণায়

ঈশ্বর দেখছেন স্বর্গ থেকে।

রং তার মাঝামাঝি, চকচকে চুল,

মুখের ভাবটি বেশ,পোষাক নতুন-

নিগ্রো নাটকে তাঁকে দেখে থিয়েটারে

ধক ক'রে বুক ভ'রে ভালোবাসলেম।

মানুষের ঈশ্বর, মানুষের ঈশ্বর।"(মানুষের ঈশ্বর, দূরযাণী কাব্যগ্রন্থ)

এই কৌতুকে করুণায় বিদেশের স্বর্গ থেকে এ পোড়া পশ্চিমবঙ্গকে দেখার চেষ্টা করতে গিয়ে দূরদৃষ্টির অভাবে এই নোতুন ঈশ্বরেরা যে বিজেপি আর তৃণমূল ছাড়া এখানে আর কোনো রাজনৈতিক শক্তিকেই দেখতে পাচ্ছেন না।অন্তর মম বিকশিত কর- বলতে গিয়ে নিজেদের মনের , চিত্তবৃত্তির বিকাশটাই তাঁরা ঘটাতে পারছেন না, ফলে কৌতুকে করুণায় তাঁদের দেখার ভিতরে যে মস্ত একটা ফাঁকি থেকে যাচ্ছে, তা তৃণমূল কংগ্রেসের মতো প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকদের ই কেবল সুবিধা করে দিচ্ছে না, তৃণমূলের স্বাভাবিক মিত্র , ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক বিজেপিকেও বিশেষ রকমের ই সুবিধা করে দিচ্ছে।বিশ্ববিশ্রুত চিন্তাবিদ অমর্ত্য সেন একাধিক বার বলেছেন এবং লিখেছেন, বামপন্থী রাজনীতি কোনঠাসা হয়ে পড়লে প্রতিক্রিয়ার সব রকমের উপাদান শক্তিশালী হয়।এইসব প্রতিক্রিয়াকে শক্তিশালী করবার তাগিদে বুদ্ধিবৃত্তিকে পরিচালিত করতে পারার মতো শৌখিন মজদুরি করা চিন্তাবিদেরা তাই একাংশের পত্রপত্রিকাতে ইতিহাস চর্চার নামে অপইতিহাসকেই নিজস্ব আঙ্গিকের সন্দর্ভ দিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।রবীন্দ্রনাথ থেকে অন্নদাশঙ্কর, কাজী আবদুল ওদুদ, রেজাউল করীম, অমর্ত্য সেন - সকলেই,মিছে হাসি খেলা, প্রমোদের ও মেলা , শুধু মিছে কথার ছলনা।এঁদের কাছে বামপন্থীদের উদ্দেশে কেবল অনুষ্টুপ ছন্দে অভিশাপ ই নির্গত হবে;" মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগম।" এঁদের কাছে একমাত্র কাম্য হল, যে কোনো উপায়ে মমতার পুনঃপ্রতিষ্ঠা।

mamatabbanerjee

                      যে ' ব্যাধি ও প্রতিকার'  প্রবন্ধের কথা বলা হল, সেখানে রবীন্দ্রনাথ লিখছেন;" আজ নিম্ন আদালত হইতে শুরু করিয়া হাইকোর্ট পর্যন্ত স্বদেশি মামলায় ন্যায়ের কাটা যে নানা ডিগ্রির কোণ লইয়া ফেলিতেছে , ইহাতে আমরা যত ই আশ্চর্য হইতেছি, তত ই দেখা যাইতেছে আমরা হিসাবে ভুল করিয়াছিলাম।"

                      পাঠক, রবীন্দ্রনাথের এই ছত্রটি পড়ে কি মনে হচ্ছে, সিঙ্গুরের জমির মালিকানা  বা ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের জমির মালিকানা ঘিরে আদালতের রায় পাঠ করবার পর এই প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন কবি? যাঁরা রবীন্দ্রনাথ কে উদ্ধৃত করে অন্তর থেকে বিদ্বেষ বিষ নাশের আহ্বান জানাচ্ছেন,  সেই বিষের বাড়বাড়ন্তের সময়কালকে উহ্য রাখতেই যাঁরা বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন, ২০১১ র ভোটে জেতবার পরে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক যে নিদান দিয়েছিলেন; সি পি এমের লোকেদের সঙ্গে চায়ের দোকানেও বসবেন না, তাদের বিয়ে- শ্রাদ্ধের মতো সামাজিক অনুষ্ঠানেও যাবেন না-- এগুলিকে বিদ্বেষের আঁতুরঘর মানতেও যেসব সন্দর্ভ রচয়িতাদের আপত্তি, আসুন সেই সব দেশের মাটির থেকে যোজন যোজন মাইল দূরে বসে দেশের দুঃখে নন্দলালীয় দেশপ্রেমিকদের উদ্দেশে আমরা একটা সুখ নিদ্রাই দিয়ে নিই।

singur tata nano

                       গোটা সিঙ্গুর , নন্দীগ্রামের কার্যকলাপগুলি ক্ষমতায় আসবার জন্যে মমতা বিদ্বেষ বিষের পরাকাষ্ঠা হিশেবে ব্যবহার করেছিলেন কি না-- একটু বিচার করে দেখবেন না মমতার হারানোর সোশাল ইমেজ পুনরুদ্ধারকারী ইতিহাসবিদের দল? ক্ষমতায় আসার জন্যে বামফ্রন্ট সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে মুসলমানদের জমি কেড়ে নিচ্ছে, এই প্রচার করে নি মমতা? মমতার সেই প্রচারকে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে তৃণমূল নেত্রীর সেই সময়ে একটি অবস্থানে এসে বিদ্বেষের বিষবাষ্পে তা দিয়ে যান নি বিচারপতি রাজেন্দ্র সাচার? প্রবাসী ইতিহাসবিদের কলমে সেইসব ঘটনাপ্রবাহ কেন অনুল্লিখিত ই থেকে গেল? একপেশে ধারাভাষ্য রচনা কি ইতিহাসবিদের ধর্ম?

                       আজ যে বিভাজনের রাজনীতি পশ্চিমবঙ্গের বুকে দেগে দিয়েছে আর এস এস এবং তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি, সেই সুযোগ তাদের করে দেওয়ার পরিবেশ রচনাতে মমতার ভূমিকা কতোখানি ছিল, তার সবিস্তার আলোচনা ছাড়া কি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার চলতি ভোটে(২০২১) সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের পরিবেশের ধারাবাহিকতা আদৌ ঠিক মতো বোঝা সম্ভব?

                    মমতাকে মুসলমান প্রেমি হিশেবে দেখানোর ভিতরেও একটা বড় রাজনীতি লুকিয়ে আছে।সংখ্যালঘুকে বুক দিয়ে আগলে রাখা সংখ্যাগুরুর একান্ত কর্তব্য।সেই কর্তব্য যদি মমতা নির্মোহ ভাবে তাঁর রাজনৈতিক জীবনে পালন করতেন, তাহলে দেশের আপামর ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিকেরা দুই হাত তুলে মমতাকে সাধুবাদ জানাতেন।দুঃখের কথা হল, সংখ্যাগুরুর সেই স্বাভাবিক আচরণ, সংবিধান রক্ষার আপোষহীন প্রচেষ্টা মমতা তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে একটি বারের জন্যেও করেন নি। সংখ্যালঘুদের ভোটের পণ্য হিশেবেই মমতা চিরদিন ব্যবহার করে গিয়েছেন।দেশভক্তির যে আলঙ্কারিক উটকরণ মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মমতা পালন করেন, রাজ্য প্রশাসনের সদর দপ্তরে গত দশ বছরে একটিবারের জন্যে ও কি মমতা বেগম রোকেয়া বা কাজী আবদুল ওদুদ, রেজাউল করীম( যে কংগ্রেসী রাজনীতি করে মমতা প্রথম সংসদীয় জীবন শুরু করেন এবং পাদপ্রদীপের আলো পেতে শুরু করেন, একদা সেই কংগ্রেসের প্রাদেশিক শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন মনীষী রেজাউল করীম।দাঙ্গায় দাঙ্গাবাজদের আক্রমণে যাঁর একটি পা চিরকালের জন্যে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল) প্রমুখ কারো জন্ম বা মৃত্যুদিন মমতা পালন করেছেন?

                     কাজী আবদুল ওদুদ দেশভাগকে কখনো মেনে নিতে পারেন নি।তাই তাঁর স্ত্রী, পুত্র ,কন্যারা ঢাকায় থেকে গেলেও তিনি কখনো ভারত তথা বাংলা ছাড়েন নি।আমৃত্যু থেকে গিয়েছিলেন তাঁর পার্ক সার্কাস অঞ্চলের ৮ বি তারক দত্ত রোডের বাড়িটি।তাঁর বাড়ির ই আরেক তলায় থাকতেন রফিউদ্দিন আহমদ।যিনি হুগলীর খানাকুল, রামমোহনের জন্মস্থানে একাধিক বছর দারাশিকোহ এবং রামমোহন কে স্মরণ করে মেলার আয়োজন করতেন।দেশভাগের পর হিন্দু- মুসলমানের ভিতর ক্ষত নিরাময়ের উদ্দেশে এই মেলা ছিল ওদুদ, অন্নদাশঙ্কর, আবু সয়ীদ আইয়ুব, গৌরী আইয়ুব , বিচারপতি মাসুদ প্রমুখের বিশেষ আয়োজন।রফিউদ্দিনের ভাই রবিউদ্দিন আহমদ ও ছিলেন কলকাতায় ওদুদের শেষ জীবনের নিঃসঙ্গ যাপনের অন্যতম সঙ্গী।

                     ওদুদের জীবনাবসান হয় ১৯৭০ সালের ১৯ শে মে।তারপর থেকে সেই বাড়িটি ,' শাশ্বত বঙ্গে' র উপাসকের যাবতীয় বইপত্র কার্যত অরক্ষিত অবস্থায় পড়েছিল।নয়ের দশকে ওদুদের উত্তরসূরিরা( ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা) সেই বাড়িটি এক অবাঙালির হাতে বিক্রি করে দেন।খবর টি পাওয়া মাত্র অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্য সচিব হিশেবে, অন্নদাশঙ্করের নির্দেশে এই নিবন্ধকার সেই বাড়িটিতে যান।দেখা যায় , বাড়িটির নোতুন মালিক পুরনো কাগজক্রেতাদের কাছে ওদুদের  সংগ্রহের অমূল্য বইপত্র ,পান্ডুলিপি বিক্রি করে দিয়েছে।পবিত্র কোরানের যে অনুবাদ ওদুদ করেছিলেন( সেটি কাউকে দিয়ে অনুলিখন তিনি করিয়েছিলেন, তবে মাঝে মাঝে তাঁর নিজের হাতে লেখা সংশোধনী ছিল) সেটি এই নিবন্ধকারের পক্ষে সেই বাড়ি থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।অন্নদাশঙ্করের নির্দেশে তাঁর সাহিত্য সচিব ওদুদের বাড়িটি রক্ষার আবেদন নিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করেন।বুদ্ধবাবু ওদুদের বাড়ির নোতুন মালিকের কাছ থেকে রাজ্য সরকারের পক্ষে উচিত মূল্যে বাড়িটি কিনে নেওয়ার প্রচুর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।বুদ্ধবাবুর পরামর্শে অন্নদাশঙ্করের সাহিত্য সচিব ওদুদের যে পান্ডুলিপি টি উদ্ধার করতে পেরেছিলেন, সেটি বাংলা আকাদেমিকে দিয়ে দেন।ওদুদের বাড়িটির নোতুন ক্রেতা অন্নদাশঙ্করকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ওদুদের ব্যবহৃত আসবাবপত্র তিনি বাংলা আকাদেমিকে দিয়ে দেবেন।তবে কার্যক্ষেত্রে সেই নোতুন মালিক প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে নি।

                    ওদুদ শতবর্ষে(১৯৯৪) কলকাতা কর্পোরেশন বহু চেষ্টা করেছিল তারক দত্ত রোড টির আংশিক ওদুদের নামে নামাঙ্কিত করতে। এ নিয়ে খবরের কাগজে বিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছিল।কিন্তু বিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলির অসহযোগিতায় কলকাতার তৎকালীন মেয়র প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত সফল হয় নি।বিদেশি পন্ডিতদের কাছে বিনীত প্রশ্ন, তারপরেও তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত প্রিয় পাত্র সুব্রত মুখোপাধ্যায় কলকাতার মেয়র হয়েছিলেন।তিনি কেন একটিবারের জন্যে ও ওদুদের নামে রাস্তার নামকরণ ঘিরে ভাবলেন না? মাটির সঙ্গে সম্পর্কশূন্য যেসব।সমাজতাত্ত্বিকেরা সামাজিক বিভাজন ঘিরে সন্দর্ভ রচনা করছেন বামপন্থীদের জন্যে একফোঁটা কলমের কালি ও খরচ না করে, এই প্রশ্নের উত্তর তো তাঁদের দিতেই হবে।

Muslims in Bengal

                  মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন এইসব তাত্ত্বিকদের কথা না হয় তর্কের খাতিরে ধরে নিয়েই বলা গেল, বামপন্থীরা খুব খারাপ শাসনকার্য পরিচালনা করেছিল।কিন্তু ওদুদের মতো 'বাংলার জাগরণে' র স্রষ্টা কে ঘিরে কি করলেন মমতা? বামফ্রন্টের আমলে ওদুদের জন্মশতবর্ষে বাংলা আকাদেমি থেকে অধ্যাপক তরুণ মুখোপাধ্যায়ের লেখা একটি জীবনী গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল।মমতার শাসন কালে তো ওদুদের একশো পঁচিশ তম জন্মবার্ষিকী অতিবাহিত হল।কি করলেন মমতার সরকার? বাংলা আকাদেমি থেকে তৃণমূলের ঘরের লোকেদের বই প্রকাশিত হলেও ওদুদের একটি বই ও এই দশ বছরে প্রকাশিত হয় নি।ওদুদের নামে রাস্তার নামকরণ তো দূরের কথা।

                           স্ত্রী শিক্ষা বিস্তারে বিদ্যাসাগরের সাথে তুলনীয় বেগম রোকেয়া।তাঁর সামাজিক কাজকর্মের বেশিরভাগটাই এই কলকাতা শহর ঘিরে।বামফ্রন্টের আমলে রোকেয়ার স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিল বাম নেতৃত্বাধীন কলকাতা কর্পোরেশন।তারপর? সুব্রত মুখার্জী, শোভন চ্যাটার্জী, ফিরহাদ হাকিম- এইসব তৃণমূলের মেয়রদের আমলে রোকেয়াকে নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কলকাতা কর্পোরেশন? আজ ও কলকাতায় রোকেয়ার নামে একটা রাস্তাও নেই।এই লজ্জার কথা মমতাপন্থী পন্ডিতেরা কিভাবে আড়াল করবেন?


শেয়ার করুন

উত্তর দিন