৮ মার্চ: অর্ধেক আকাশ রক্তিম আলোকে উদ্ভাসিত হবেই - জাহানারা খান

৮ ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে এই দিনটিকে বিশেষভাবে পালন করা হয়। এই দিবসটি পালনের পশ্চাতে রয়েছে নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের এক সংগ্রামী ইতিহাস।

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কের দর্জি মেয়েরা মজুরি বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং কাজের ঘন্টা কমানো ও কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে এবং মিছিলে সামিল হয় ।সেই মিছিলে সরকারের লেঠেল বাহিনী অমানবিক দমন পীড়ণ চালায়। এই আন্দোলন নারী সমাজের কাছে এক দৃষ্টান্তকারী মাইল ফলক। শুরু হয় নতুন অধ্যায়।

১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে প্যারি কমিউন এর লড়াইয়ে মেয়েরা বীরত্বপূর্ণ ভাবে রাজনৈতিক সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে। শুরু হয় নারীর পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অধিকার, মর্যাদা আদায়ের সংগ্রাম।

১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে জার্মানের  স্টুট গার্ড শহরে  ক্লারা জেটকিন এর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলন।

 ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের  ৮ই মার্চ নিউইয়র্কের দর্জি মেয়েরা মেয়েদের ঐতিহাসিক ভোটাধিকার আন্দোলন শুরু করে ।

১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেন  হেগেন শহরে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। এই সম্মেলনে বিশ্বের ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। এই সম্মেলনে প্রবাদপ্রতিম দুই কমিউনিস্ট নেত্রী ক্লারা জেটকিন এবং  কোলনতাই আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের প্রস্তাব দেন। সেই প্রস্তাব অনুসারে ৮ই মার্চ তারিখটিকে  আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

১৯১১ থেকে ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শ্রমজীবি নারীরা মার্চ মাসের বিভিন্ন দিনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করেন। কোথাও ৮ই মার্চ দিনটিকে নারীদের সম অধিকার দিবস হিসাবে পালিত হতে শুরু করে। এর পরবর্তীকালে নারীদের আন্দোলন বৃদ্ধি পায়। এবং আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনে দেশের সংখ্যা ও বৃদ্ধি পায় । অবশেষে জাতিসংঘ ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮ই মার্চ দিনটিকে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। সময়ের সাথে সাথে ঘটনার নানান উথাল পাথালে নারীর ভূমিকা সমাজ বিজ্ঞানের পাতায় আলোড়িত  হয়েছে।

এ বছরের আন্তর্জাতিক নারী দিবস-এর  থিম হল "DigitALL: Innovation and technology for gender equality". The theme highlights the need for inclusive and transformative technology and digital education. অর্থাৎ প্রযুক্তির সাহায্যে সমাজে লিঙ্গ সাম্যের প্রতিষ্ঠা।

একদিকে নারীর স্বাধীনতা যেমন হরণ করা হচ্ছে, তেমনি আবার মহিমান্বিত ও করা হয়েছ, বড় অদ্ভুত ভাবে দেবী প্রতিমার ব্যঞ্জনায়। উনিশ শতকের প্রথমে সমাজে নারীর অবস্থান জনিত অসাম্যের বিরুদ্ধে প্রথম সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন রাজা রামমোহন রায়। তারপর জল গড়িয়েছে অনেক দূর। প্রমাণও হয়েছে নারীর প্রাণের প্রেরণা ছাড়া সভ্যতা এগোই না। আজ পঞ্চায়েতে নারীর সংরক্ষণ অবশ্যই উন্নয়নের পথ দেখায়। বর্তমানে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারি মহিলা বিরোধী সরকার যারা মনুবাদকে নিজেদের দর্শন বলে মনে করেন, তারা স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে বড় বড় ভাষণ দিয়ে ,বিলকিস বানোর ধর্ষকদের ফুলমালা চন্দন দিয়ে বরণ করে নেন, দেশের রাষ্ট্রপতি আদিবাসী রমনীর প্রচারে ফানুস ওড়াবেন, অথচ নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনে আমন্ত্রণ জানাবেন না, এতে আশ্চর্যের কি আছে।

একের পর এক নারীর ধর্ষণ বাড়বে, মহিলা কুস্তিগীরদের হয়রানি করা হচ্ছে ধর্মের নামে বিভেদ তৈরি করে মনিপুরে মহিলাদের রাস্তাতে বিবস্ত্র করে ঘোরানো হবে, মুখে শুধু 'বেটি পড়হাও ,বেটি বাঁচাও' বিজ্ঞাপন হয়ে থাকবে। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল করে সেখানকার ফর্সা সুন্দরী মহিলাদের বিয়ে করতে কোন বাধা থাকবে না, বলে যারা ইচ্ছা প্রমাণ উল্লাস করেন তারা মহিলাদের কোন দৃষ্টিতে দেখেন তা সহজে অনুমান হয়।

sandeshkhali

রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা নেই ,২০১১ সালের পার্ক স্ট্রিটে ঘটনা থেকে শুরু করে সারা রাজ্য জুড়ে মহিলারা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন, যার জ্বলন্ত উদাহরন সন্দেশখালি । বাড়ীর মহিলাদের রাতের অন্ধকারে তৃনমূলের পার্টি অফিসে ডেকে, মহিলাদের উপর শারীরিকও মানসিক নিগ্রহ করা হয়েছে দিনের পর দিন। বাংলার মেয়েদের পন্যে পরিণত করেছে এই তৃণমূল সরকার । সাবালিকা বা নাবালিকা মেয়েরা নিগ্রিহিত হলে, ক্ষতিপুরন দিয়ে মেয়েদের মুখ বন্ধ রাখতে চেয়েছে এই সরকার ।সন্দেশখালির মেয়েদের মিলিত প্রতিরোধে, প্রতিবাদে সন্ত্রাসমুক্ত করার সার্বিক চেষ্টা চলছে সন্দেশখালিতে। একইভাবে সারা পশ্চিমবঙ্গে মেয়েদের উপর নিগ্রহের বিরুধ্যে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের আগুন স্ফুলিং থেকে মশালের রূপ নিচ্ছে।

 রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে, হাসপাতালে নগ্ন অবস্থা করোনা কালে সকলেই দেখেছি। বাবা তার মৃত সন্তান কে শববাহী গাড়ী না পেয়ে থলিতে করে বাড়িতে আনতে বাধ্য হয়। স্কুল ছুট ছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। কম বয়সী মেয়েদের কাজের লোভ দেখিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।

 ৮ ই মার্চ বিশ্বের নারীদের কাছে সমান অধিকার আদায়ের ও লিঙ্গ সাম্যের এক যুগান্তকারী মাইল ফলক। মহিলারা আজও তাদের অধিকার বুঝে নিতে নিরাপত্তা, মর্যাদা রক্ষার জন্য রয়েছে লড়াইয়ের মাঠে, ময়দানে, কর্মক্ষেত্রে, ঘরে এবং বাইরে লড়াই চলছে সম কাজে সম বেতনের জন্য । অর্ধেক আকাশ রক্তিম আলোকে উদ্ভাসিত হবেই লড়াই এর মধ্য দিয়ে।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন