Site icon CPI(M)

27 State Conference: The Report

27 Conf Report Cover

ওয়েবডেস্ক

কমরেড সীতারাম ইয়েচুরি মঞ্চ এবং কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নগর হুগলী জেলার ডানকুনিতে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র ২৭তম রাজ্য সম্মেলন হতে চলেছে। হুগলী জেলায় এই প্রথমবার রাজ্য সম্মেলনের আয়োজনকে সামনে রেখে প্রস্তুতিতে কর্মীদর উৎসাহ কতটা? সে কাজে অভিজ্ঞতা কেমন?

দেবব্রত ঘোষ    

অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সময় একবার এ সম্মেলন হয়েছিল, ১৯৩৮ সালে। সেই সময়ের নিরিখে ঐ সম্মেলন ছিল এক অন্য অভিজ্ঞতা। পরাধীন ভারতবর্ষে ব্রিটিশদের চোখে ধুলো দিয়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেটাকে আন্ডার গ্রাউন্ড সম্মেলনই বলা যায়, কাকাবাবু সভাপতিত্ব করেছিলেন। সম্মেলন থেকে কমরেড নৃপেন চক্রবর্তী সম্পাদক হয়েছিলেন। পরবর্তী সময় আমাদের রাজ্যের আর কোনও কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি, সিপিআই(এম) তৈরী হওয়ার পরেও হয়নি। কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাসে যে সম্মেলনগুলি অনুষ্ঠিত হয়েছে সেগুলো যে খুব বেশি জেলাগুলিতে ছড়িয়ে হয়েছে এমন নয়। কলকাতা, হাওড়া, চব্বিশ পরগণা, মেদিনীপুর মোটামুটি এর মধ্যেই ঘোরাফেরা করেছে। ২০১১ সালের পর থেকে মূলত কলকাতাতেই রাজ্য সম্মেলন হয়েছে। এবারে রাজ্য কমিটি স্থির করেছিল বর্তমান পরিস্থিতিতে কলকতার বাইরে সম্মেলন আয়োজিত হবে। অগ্রাধিকারের বিচারে  প্রথমেই ছিল হুগলী জেলার নাম। রাজ্যের নেতৃত্ব আমাদের প্রস্তাব দেয় হুগলী জেলা এই সম্মেলন করুক। আমরাও সঙ্গে সঙ্গে সে প্রস্তাব গ্রহণ করি। জেলার কমরেডরাও প্রস্তুত হন। আমরা চেয়েছিলাম এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আমাদের জেলায় রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক কর্মতৎপরতা তৈরী করতে। উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথেই আমরা এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত করতে পারছি। কিন্তু এ আয়োজনের সময় জেলার পরিস্থিতিকে অস্বীকার করলে চলে না। আজ থেকে ৪-৫বছর আগে অবধি এমন সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তাব এলে আমাদের পক্ষে তা গ্রহণ করা সম্ভব ছিল না। পাঁচ বছর আগেও আমাদের জেলায় পরিস্থিতি অন্যরকম ছিল। ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমাদের রাজ্যে ব্যাপক সন্ত্রাস চলেছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত জেলাগুলির মধ্যে হুগলী এক, দুই বা তিন নম্বরে থাকবে, জেলার অধিকাংশ অঞ্চলই ছিল সন্ত্রাসকবলিত। ঐ সময় পার্টিকে রক্ষা করা, পার্টি কর্মীদের রক্ষা করাই আমাদের প্রধাণ কাজ ছিল। গত চার পাঁচ বছর ধরে এ পরিস্থিতিকে পরিবর্তন করার জন্য আমাদের কর্মী সহ নেতৃত্ব অসম্ভব ভালো ভূমিকা পালন করেছেন। অনেক ধৈয্যের সাথে কাজ করেছেন এবং সাহসী ভুমিকা পালন করেছেন। এখন সমগ্র জেলা জুড়েই আমরা সাংগঠনিক কাজ করতে পারি। সমস্ত জায়গায় আমাদের কর্মতৎপরতা বদ্ধি পেয়েছে, এই পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা রাজ্য সম্মেলনের জন্য সম্মত হই।

ওয়েবডেস্ক

সম্মেলনের আয়োজনে শেষ পর্বের প্রস্তুতি দেখতে আসার সময় আমরা খেয়াল করলাম, প্রায় প্রত্যেকটি এলাকাই সেজে উঠেছে। এবারের সম্মেলনর রাজনৈতিক বার্তা কী? জনসাধারণের মধ্যে কতদূর প্রচার নিয়ে যাওয়া সম্ভব হলো? বিশেষ করে গ্রামীন এলাকায়।

দেবব্রত ঘোষ  

আমরা সম্মেলনকে নিছক কোনও ইভেন্ট হিসাবে দেখিনি। রাজনৈতিক, সাংগঠনিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মতৎপরতার মধ্য দিয়ে এই দায়িত্ব পালিত হয়েছে। কারণ আমরা মনে করি কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলন হবে, নেতৃত্বরা আসবেন, একটা জায়গায় সভা হবে, একটা এলাকাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, সেই এলাকা টাকা-পয়সা তুলবে, পার্টিকর্মীরা মানুষের কাছে যাবেন আর সম্মেলন হয়ে যাবে এমনটা সঠিক না। সেভাবে কাজ করলে কোনও রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি হয় না। সম্মেলন হলের ভিতর হতে পারে কিন্তু সম্মেলনর বার্তা যদি জনগণের কাছে পৌঁছতে দিতে না পারি তবে আন্তঃপার্টি গণতন্ত্রের অনুশীলনে ফাঁক রয়ে যায়, সম্মেলনের কাজে সর্ম্পূণ সাফল্য পেতে মানুষের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। কমিউনিস্ট পার্টির কোনও কিছুই মানুষকে বাদ দিয়ে হয় যত বেশি মানুষের অংশগ্রহণ হবে তত বেশি বেশি কমিউনিস্ট পার্টি মানুষের কাছে এগিয়ে যাওয়ার রসদ তৈরী হবে। তাই সম্মেলনের জায়গা ডানকুনি হলেও সম্মেলনের দৃশ্যমানতা ডানকুনির পাশাপাশি সারা জেলা জুড়ে ছড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। জেলার যে প্রান্তেই যাবেন সেখানেই আমাদের প্রচার দেখতে পাবেন। জেলার প্রতিটি রেল স্টেশন এলাকায় সুসজ্জিত তোরণ রয়েছে। এটাই সব না, কমিউনিস্ট পার্টিকে প্রাণবন্ত চেহারায় মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হয়- তার জন্য প্রয়োজন গভীর গণসংযোগ। একথা স্বীকার করতে আমাদের কোনও বাধা নেই। জনসংযোগ কমে যাওয়ার ফলেই আমাদের  দুর্বলতা তৈরী হয়েছে, আমাদের পার্টি দলীলেও বারেবারে সেকথাই বলা হয়েছে। তাই প্রতিটি ব্লক ধরে এরিয়া কমিটিগুলির মধ্যে বলশেভিক প্রতিযোগীতার নিরিখে কাজের গতি বিবেচনার সিদ্ধান্ত হয়। কারা কতগুলি বাড়িতে যেতে পারল, সম্মেলনের প্রচারকে কতদূর পৌঁছে দিল? অর্থসংগ্রহকে এই প্রতিযোগীতার বাইরে রাখা হয়। জেলা কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয় পার্টির তহবিল সংগ্রহের সময় মানুষ কত অর্থ দিচ্ছেন তাকে বাড়তি গুরুত্ব না দিয়ে কত পরিবারে, কতজনের কাছে পৌঁছানো যাবে তাকেই আসল লক্ষ্য হিসাবে স্থির করা। এখনও পর্যন্ত আমার কাছে যা খবর এসেছে তাতে বলা চজায় প্রায় ৫লক্ষ পরিবারের কাছে আমরা পৌঁছতে পেরেছি। এই পাঁচ লক্ষ পরিবারে পৌঁছানোর জন্য প্রায় ৬লক্ষ বাংলা প্রচারপত্র ব্যবহৃত হয়েছে। এর মধ্যে হিন্দি ভাষায় প্রকাশিত প্রচারপত্রের সংখ্যা ৫০ হাজার, উর্দু ভাষার ২০ হাজার। এই প্রচারপত্র হাতে নিয়ে আমরা পার্টির বক্তব্য মানুষের কাছে হাজির করতে পেরেছি, সাহায্য, সহযোগীতার জন্য আবেদন জানাতে পেরেছি। সবটা মিলিয়ে একটা রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল তৈরী করা গেছে। এই সাফল্য সহজে মেলে না। এর আগে জনসংযোগে কর্মসূচীতে আমরা সাড়ে তিন-চার লাখ পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছিলাম। একটা বিরাট অংশের সমথর্ক-দরদীরা এ কাজ করছেন। তারা যদি প্রতিনিয়ত সক্রিয় না হতেন তবে একাজ করা সম্ভব হতো না। সাংগঠিকভাবে এ প্রক্রিয়ায় আমরা অবশ্যই লাভবান হয়েছি। রাজনৈতিক প্রচারের সময় মানুষের সাথে হওয়া কথাবার্তাও একটা বাড়তি সুযোগ। সমাবেশ এবং সম্মেলন উপলক্ষ্যে আমরা পাড়া বৈঠক আয়োজন করেছি। এই বৈঠক আয়োজনের সময় যে শ্রেণীর পার্টি সেই শ্রেণীর কাছে পৌঁছানকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। শ্রমজীবীদের কাছে পৌঁছাও, খেতমজুরের কাছে পৌঁছাও, কৃষকের কাছে পৌঁছাও, তাদের অভাব অভিযোগ শুনে তাদের লড়াইয়ে সামিল হওয়াই আমাদের কাজ। এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আমরা সেই লক্ষ্যেও এগোতে পেরেছি। সবটা মিলিয়ে একটা রাজনৈতিক বাতাবরন তৈরী হয়েছে।

ওয়েবডেস্ক  

রাজ্য এবং দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক একটা অবক্ষয় আমরা দেখতে পাচ্ছি। এই প্রেক্ষিতে রাজ্য সম্মেলনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মঞ্চে সাংস্কৃতিক লড়াই সম্পর্কে কী বলবেন?

দেবব্রত ঘোষ

এই সাংস্কৃতিক লড়াইকেও আমরা অর্ন্তভুক্ত করেছি। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ব্যপকতা অনেক। আমাদের গ্রামীন যে সংস্কৃতি তার যে লোকাচার আছে যেগুলো হারিয়ে যেতে চলেছে বা হারিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তার সাথে এবছরে সলীর চৌধুরী জন্ম শতবর্ষ, ঋত্বিক ঘটকের জন্মশতবর্ষ হচ্ছে, সুকান্ত ভট্টাচার্যরও আগষ্ট মাস থেকে শুরু হবে। এইসবটা মিলে একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কিছু কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা হয়েছে। আগামী ২০-২১-২২-২৩-২৪ ডানকুনিতে একটি হল আছে বিনোদীনি নাট্য মন্দির সেখানে বিভিন্ন ধরণের সিনেমা, নাটক, গান এই ধরণের কর্মসূচী হবে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আমরা বিভিন্ন পাড়ায় বিভিন্ন মহল্লায় সেখানে আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মসূচী অনুষ্ঠিত করেছি। গণনাট্য সংঘও যেমন এই ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছে তেমনই লোকাল রিসোর্স তারাও কিছু পরিকল্পনা করে সাংস্কৃতিক কর্মসূচী অনুষ্ঠিত করেছে। গ্রামীন শ্রমজীবী ক্রিয়া আমরা যেমন করেছি তার সাথে আদিবাসী নিষ্ঠ ধামসা-মাদল এই সমস্ত বিষয় প্রতিযোগীতা আমাদের জেলায় আমরা করেছি। আর একটা বিষয় আছে যেটাতে আমাদের বিশেষ করে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন এবং পার্টির নির্দিষ্ট ভাবে ভ‚মিকা থাকা দরকার। সেটা হচ্ছে স্পোর্স। আমার নিজের মনের মধ্যে প্রশ্ন আসে পৃথিবীতে সবচেয়ে জনপ্রিয় যে স্পোর্স আছে সেটা হলো ফুটবল। যে ফুটবল নিয় আমাদের বিশেষ কিছু করা উচিত। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ফুটবল খেলা দারুনভাবে হয়েছে। আমাদের জেলায় ৪টি সাবডিভিশন আছে। সেই ৪টি সাবডিভিশনের টীমই এই ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করেছে। দুদিন ধরে প্রতিযোগীতা হয়েছে। হাজার হাজার দর্শক তারা মাঠে হাজির থেকে খেলা উপভোগ করেছেন। সন্তোষ ট্রফি খেলেছেন এমন ৩জন খেলোয়ার  তারা ভালোবেসে এই খেলায় অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়া দুটো জায়গায়  হরিপাল এবং জাঙ্গীপাড়ায় গ্রামাঞ্চলে মহিলাদের ফুটলবল খোলা হয়েছে। ভলিবল প্রতিযোগীতা হয়েছে। ন্যাশনাল টীমে খেলেন এমন বেশ কিছু খেলোয়ার সাথে সাধারণ খেলোয়ার ভলীবল প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়েছেন। ম্যরাথন দৌড় হয়েছে,  গ্রামের বিভিন্ন মাঠে স্পোর্সও হয়েছে।

ওয়েবডেস্ক  

দেশ ও রাজ্যের সাম্প্রদায়িক বিষ রাজনীতির আবহে এই সম্মেলন কোন বিকল্পের কথা তুলে ধরবে?

দেবব্রত ঘোষ

বিকল্পের জন্যই তো আমাদের লড়াই। বিকল্প কথটা বলা হয় ঠিকই কিন্তু আমাদের রাজনীতিই তো বিকল্প। কমিউনিস্ট পাার্টির যে লক্ষ্য, কমিউনিস্ট পার্টির যে মতবাদ, কমিউনিস্ট পার্টির যে বক্তব্য, লড়াই-আন্দোলন সেটাই তো বিকল্প। আলদা করে বিকল্প চেনাবার কিছু নেই। আমি অন্তত: মনে করি না। ওরা ধর্ম নিয়ে জাতপাতের রাজনীতি করছে। সেটা ওদের রাজনীতি। মানুষকে বিভাজন করতে চায় ওরা। কমিউনিস্ট পার্টি জন্মলগ্ন থেকে একটাই কথা মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করো। আমরা বলছি মানুষকে এক করো আর ওরা বলছে মানুষকে বিভাজিত করো। কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে এটাই ওদের পার্থক্য। মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধ না হয় মানুষের প্রতি পুঁজিবাদীদের শোষণ প্রক্রিয়া তীব্র হয়। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। মানুষকে ভাষা-ধর্ম-বর্ণ সবকিছু দিয়ে ভাগ করতে চাইছে ওরা। মানুষে মানুষে ভাগ করে মানুষের যে মৌলিক চাহিদা খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান -শিক্ষা-স্বাস্থ্য তার জন্য যে লড়াই সেই লড়াইকে ভুলিয়ে দিয়ে ভাষা-ধর্ম-বর্ণ সবকিছুতে ভাগ করতে চায়। শাসক গোষ্ঠী এই ভাবেই সমাজটাকে দেখতে চায়। আর বামপন্থীরা এরই বিকল্পের কথা বলে। কমিউনিস্ট পার্টি চায় মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা।

ওয়েবডেস্ক

এ ধরণের সম্মেলনের আয়োজনে বিপুল খরচ হয়। শ্রমজীবী মানুষের পার্টি, কর্মী-সমর্থক-দরদী এবং মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সেই কর্মকান্ড সম্পন্ন করতে হয়। এ কাজে পার্টি কর্মী-সমর্থক-দরদী এবং মানুষের কাছ থেকে কেমন সহযোগিতা এসেছে?

দেবব্রত ঘোষ 

২০১১ সালের পর থেকে অনেক কমরেডই নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছিলেন। ভয় ভীতি সন্ত্রাসের কারণে যে সমস্ত কমরেড নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিলেন এই সম্মেলনের কাজকে কেন্দ্র করে তাদের পুনরায় সক্রিয় করে তোলা গেছে।

প্রথম থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিল বাহুল্য সরিয়ে রেখে কতটা কার্যকরীরূপে এ সম্মেলন আয়োজন করা যায়। প্রচারের ক্ষেত্রে সাজানো গোছানোর ক্ষেত্রে আমরা কার্পণ্য করিনি। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে আমরা বাড়তি খরচকে প্রশ্যয় দিইনি। মানুষের খিদে মিটবে এমন খাবারের ব্যবস্থাই করা হয়েছে, তাও যে সবকিছু আমাদের টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে এমন নয়। বিভিন্ন এরিয়া কমিটিকে বিভিন্ন দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। কোনও জায়গা থেকে মিষ্টি আসবে আবার কোনও জায়গা থেকে শাকসব্জি আসবে। সহায়তা হিসাবেই তারা সেসব পাঠাবেন। হল-মাঠ সবটা মিলে প্রতিদিন ৮০হাজার টাকা ভাড়া হিসাবে খরচকে আর কমানো যায়নি। আর একটি খরচ বেড়েছে যা আগে ছিল না। আগে সম্মেলন হলে স্কুল বাড়িগুলিতে কমরেডদের ঢালাও বিছানা করে থাকার বন্দোবস্ত হতো। কিন্তু তৃনমূল সরকারের জামানায় আমরা স্কুল বা কলেজের বাড়ি ভাড়া পাই না। কোলইন্ডিয়ার ভিতর কিছু খালি কোয়াটার আছে যেগুলি আমরা পেয়েছি। বড় পার্টি অফিসের ঘরে ঢালা বিছানা পাতা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচশো জন প্রতিধিনি-দর্শক রাত্রিবাস করবেন। সবাইকে তো একই জায়গায় রাখা সম্ভব নয় তাই বাধ্য হয়ে কিছু হোটেল, লজ ইত্যাদি ব্যবস্থা করতে হয়েছে, সেক্ষেত্রেও খরচও খানিক বেড়েছে। জনগণের থেকে যেমন অর্থসংগ্রহ করা হয়েছে, তেমনই আমরা ঠিক করেছিলাম পার্টির সদস্য-কর্মী-সমর্থক-দরদী যারা রয়েছেন তারাও ঐ তহবিলে নিজেদের সাধ্যমত অর্থ জমা করবেন। পার্টি সদস্য, এজি সদস্যদের তরফে তহবিলে জমা করার পরে জনগণের কাছে যাওয়া হবে। আমাদের জেলায় ১০,১৭৭ জন পার্টি সদস্য সহ ৩ হাজারেরও বেশি এজি সদস্য আছেন। এই ১৩ হাজার জনের প্রত্যেককেই কিছু না কিছু সাহায্য করতে হবে। নিজেরা অর্থ দেবেন এমনকি পরিবারকেও সে কাজে যুক্ত করতে হবে। এ কাজে এক অভিনব পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। সাধারণত বড় কোন কর্মসূচীর বেলায় পার্টি সদস্যদের এক বা দুদিনের আয় জমা করতে (ওয়ান ডে বা টু ডে কল করা) বলা হয়। সে পদ্ধতির বাইরে গিয়ে পার্টি এবং এজি সদস্যদের হাতে একটি করে খাম দেওয়া হয়েছে। সম্মেলনকে সফল করতে আপনি আপনার সাধ্যমত সহযোগিতা করুন এলখা একটি আবেদনপত্র এর মধ্যে ছিল। অর্থ সংগ্রহের পরে এরিয়া কমিটি নেতৃত্বের হাতে জমা দিলে তারা যে অর্থ পেয়েছেন তার রশিদ দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। আমরা এতে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। এক বা দুই দিনের আয় জমা করলে যা হতো তার চাইতে অনেক বেশি অর্থ সংগ্রহ করা গেছে। শহর-গ্রাম মিলিয়ে মানুহসের মধ্যেকার শ্রমজীবী অংশ যাদের পারিবারিক মাসিক আয় ৫-৬ হাজার টাকা, তারাও কেউ কেউ ৩০০-৪০০ টাকা অবধি সাহায্য করেছেন। আমাদের পার্টির প্রতি শ্রমজীবী বা গরীব অংশের মানুষের আস্থা ফিরছে বলেই লক্ষ্য করা গেছে। আর্থিক সহযোগিতা চাইলে মানুষ আমাদের ফিরিয়ে দিয়েছেন এমন একটিও ঘটনা ঘটেনি।

ওয়েবডেস্ক

২৭তম সম্মেলনের শেষ দিন ২৫ ফেব্রুয়ারী ডানকুনিতে সমাবেশ। এই সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার জন্য মানুষের কাছে কি আহ্বান জানাচ্ছেন?

দেবব্রত ঘোষ

নিবিড় জনসংযোগের মাধ্যমে আমরা এবারের সমাবেশের প্রচার করেছি। মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে, তাই সমাবেশকে কেন্দ্র করে ছোট ছোট মাইক সভা আমরা করতে পারিনি। একটা সমাবেশ হওয়ার আগে অনেক মাইক সভা, প্রচার সভা করতে হয়, যা আমরা করতে পারে নি। তাই সরাসরি মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে প্রচার চলেছে। রাজ্য পার্টির পক্ষ থেকে এই সমাবেশকে বড় আকারে আহ্বান জানানো হয়নি। বলা যায় এটা অনেকটাই হুগলী জেলার সমাবেশ। তার পাশাপাশি হওড়া, ২৪পরগনা থেকে কিছু মানুষ সমাবেশে আসার কথা। ইতিমধ্যে ৩টি শ্রমজীবী সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হয়ে ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দিয়েছে। সে কাজের আলাদা প্রস্তুতি আছে, অনেক বড় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে যে সমাবেশে হবে তার চেহারা সাম্প্রতিক কালে হুগলী জেলার বৃহত্তম সামবেশ হবে- এটুকু আমি বলতে পারি। ঐতিহাসিক সমাবেশ বলে কোনও বিশেষ তকমা দিতে চাইছি না। এবারের সম্মেলনই ইতিহাস হতে চলেছে, ঐতিহাসিক দলিলে তার উল্লেখ থাকবে। মেটিয়াবুরুজ চন্দননগরের মতো ডানকুনির সম্মেলনও ইতিহাসের পাতায় নিজের জায়গা করে নেবে।

এবারের রাজ্য সম্মেলন পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতে নতুন পদ্ধতিতে লড়াইয়ের দিকনির্দেশ করবে।

শেয়ার করুন