তারিখঃ ১৩ এপ্রিল, ২০২২ - বুধবার
নয়া দিল্লীর একেজি ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন চলাকালীন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি নিম্নলিখিত প্রেস বিবৃতি পেশ করেছেন।
কেরালার কান্নুরে গত ৬-১০ এপ্রিল, পাঁচ দিনে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী) ২৩তম পার্টি কংগ্রেস সাফল্যের সম্পন্ন হয়েছে। পার্টি কংগ্রেস থেকে ৮৫ জন সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচিত হয়, সীতারাম ইয়েচুরি সাধারণ সম্পাদক এবং ১৭ জন সদস্যের পলিট ব্যুরোও নির্বাচিত হয়েছে। পার্টি কংগ্রেসের চূড়ান্ত পর্বে এক বিশাল জনসমাবেশে অগনিত মানুষকে মিলিত হতে দেখা যায়। এই সমাবেশই কেরালার জনগণের সাথে সিপিআই(এম)-র সম্পর্কের গভীর শিকড়ের সাক্ষ্য দেয়। পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হিসাবে "বিজেপিকে বিচ্ছিন্ন এবং পরাজিত করা"ই প্রধান কাজ হিসাবে নির্ধারিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারকে ব্যবহার করে ফ্যাসিবাদী আরএসএসের হিন্দুত্ববাদী-সাম্প্রদায়িক এজেন্ডাকে আক্রমনাত্মক কায়দায় এগিয়ে নিয়ে চলেছে বিজেপি। একই সাথে, এই সরকার “সাম্প্রদায়িক শক্তি ও কর্পোরেটদের মধ্যেকার আঁতাতকে শক্তিশালী করে নয়া-উদারবাদী সংস্কারের পথে চলে জাতীয় সম্পদের লুণ্ঠন চালাচ্ছে, ধান্দাবাজ পুঁজিবাদের প্রচার করছে, রাজনৈতিক দুর্নীতিকে বৈধতা দিয়ে চলেছে এবং সর্বব্যাপী কর্তৃত্ববাদ চাপিয়ে দিচ্ছে। বিজেপিকে বিচ্ছিন্ন এবং পরাজিত করার লক্ষ্য অর্জনের জন্য অপরিহার্য হল সিপিআই(এম)-র নিজের স্বাধীন শক্তির বৃদ্ধি। বিভিন্ন ঘটনায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ক্ষমতাকে আরও অধিক কার্যকর করে তুলতে হবে। ২৩ তম পার্টি কংগ্রেস বিভিন্ন রাজনৈতিক-সাংগঠনিক কাজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এসবই পার্টি কংগ্রেস থেকে নির্ধারিত রাজনৈতিক সাংগঠনিক প্রতিবেদনে গৃহীত হবে।
শাসক শ্রেণীর নীতির বিকল্প হিসাবে সারা দেশে বামপন্থীদের ঐক্যকে শক্তিশালী করার ভিত্তিতে জনগণের সংগ্রামকে আরও শাণিত করতে এক বিকল্প কর্মনীতি-কর্মসূচির ভিত্তিতে বাম ও গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২৩ তম পার্টি কংগ্রেস। একই সাথে, হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির ব্যাপক সংহতি গড়ে তোলার জন্যেও কাজ করবে পার্টি। রাজনৈতিক, মতাদর্শগত, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাংগঠনিক - সকল স্তরে হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িকতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিআই(এম)-র ২৩ তম পার্টি কংগ্রেস। বিভিন্ন জরুরী ইস্যুতে পার্টির নিজস্ব অবস্থান তুলে ধরতে এবং তাকে প্রসারিত করার জন্য ২২টি প্রস্তাব গৃহীত হয়। খসড়া রাজনৈতিক প্রতিবেদনের উপরে পার্তি কংগ্রেসের আগেই সারা দেশের পার্টি সদস্যরা মোট ৪০০১টি সংশোধনী নথিভুক্ত করেন। পার্টি কংগ্রেসে উপস্থিত প্রতিনিধিদের দ্বারা মোট ৩৯০টি সংশোধনী এবং ১২টি পরামর্শ নথিভুক্ত করা হয়৷ এই সমস্তকিছুকে বিবেচনা করে গৃহীত সংশোধনগুলি অন্তর্ভুক্ত করেই খসড়া প্রতিবেদন সমৃদ্ধ করা হবে। ভারতের সাধারণতন্ত্রের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক চরিত্র অক্ষুণ্ণ রাখতে, দেশের সংবিধানকে রক্ষা করতে, হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির আক্রমণে জর্জরিত জনগণের সাংবিধানিক অধিকারসমূহ রক্ষার সংগ্রাম আরও তীক্ষ্ণ করতে আমাদের সকল দেশপ্রেমিককে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে পার্টি কংগ্রেস। সকল জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে শ্রেণীসংগ্রাম ও গণসংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সিপিআই(এম)-র কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর হতে প্রকাশিত বিবৃতি