কাকাবাবুর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে আজকের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে

মহম্মদ সেলিম

আমরা কমরেড মুজফ্ফর আহ্‌মদের, অর্থাৎ কাকাবাবুর জন্মদিন পালন করি ১৯৬৩ সাল থেকে। একজন ব্যক্তিকে স্মরণ করার জন্য আমরা কাকাবাবুর জন্মদিন পালন করি না। জন্মদিন উপলক্ষ্য। লক্ষ্য হলো যে কোনও পরিস্থিতিতে, সেই পরিস্থিতির উপযোগী সংগঠন গড়ে তুলে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় তাঁর অবদান থেকে শিক্ষা নেওয়া। আজ আমাদের পার্টির সামনে ভিন্ন চ্যালেঞ্জ হাজির হয়েছে। এই সময়ে কমিউনিস্টদের কাকাবাবুর যে কথা বারবার স্মরণ করতে হবে, ‘‘ আমাদের পার্টিকে আরও সংহত হতে হবে, পার্টির কায়দা-কানুনের বাঁধনকে আরও মজবুত করতে হবে; পার্টি সভ্যদের জীবন সৈনিকের জীবন, আজকের দিনে পার্টি সভ্যদের মনে এটা যদি একান্ত চিন্তা না হয় তাহলে চারদিকের আক্রমণে পার্টি ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে।’’একটি শক্তিশালী পার্টি মানে স্বআরোপিত শৃঙ্খলায় উদ্বুদ্ধ একটি পার্টি।

কমরেড মুজফ্ফর আহ্মদ, কাকাবাবু জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৮৮৯ সালে বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ দ্বীপের মুসাপুর গ্রামে। তবে সন্দ্বীপ দ্বীপ তাঁর জন্মের সময় নোয়াখালি জেলার অন্তর্গত ছিল। ১৯১৩ সালে তিনি কলকাতায় আসেন। যুক্ত হন বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতিতে। তবে সেই সমিতি তখন নিষ্ক্রীয় ছিল। সেই সমিতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে কমরেড মুজফ্ফর আহ্মদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। ১৯২০ সালের গোড়ায় তিনি স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, রাজনীতিই হবে তাঁর ‘জীবনের পেশা।’যদিও ১৯১৬ থেকেই তিনি রাজনৈতিক সভা, মিছিলে অংশ নিতে শুরু করেছিলেন।

১৯০৫ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ স্বাধীনতা সংগ্রামকে রোধ করতে, বাংলা তথা সারা দেশে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের লক্ষ্যে বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা করেছিল। সেই বঙ্গভঙ্গের চক্রান্তের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হয়েছিল, তা তরুণ মুজফ্ফর আহ্মদের মনে গভীর রেখাপাত করেছিল। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময়েই ব্রিটিশ পণ্য বর্জন ও দেশে তৈরি দ্রব্য সামগ্রী ব্যবহারের আন্দোলন শুরু হয়েছিল। বঙ্গভঙ্গের সেই চক্রান্ত সম্পর্কে কাকাবাবু লিখেছেন, ‘‘ বঙ্গ ব্যবচ্ছেদ কার্যত হয়ে দাঁড়াল বঙ্গ সংস্কৃতিরও ব্যবচ্ছেদ। তাই বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে এমন প্রচন্ড আন্দোলন শুরু হয়ে গেল যে তাতে সমস্ত ভারতবর্ষ কেঁপে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনও জোরদার হয়ে উঠল উভয় বাঙলায়।’’একইসঙ্গে বঙ্গভঙ্গের উদ্যোগের পিছনে কীভাবে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের চক্রান্ত লুকিয়ে ছিল, কীভাবে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী অংশ এই চক্রান্তে উৎসাহিত হয়েছিল, দুই ধর্মের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে উঠেপড়ে লেগেছিল, তাও কাকবাবু তুলে ধরেছেন ‘আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’ বই-এ। আজ আমাদের রাজ্যেও আমরা দেখছি কীভাবে বাংলাভাগের ইস্যুকে বিজেপি, আরএসএস, তৃণমূল একযোগে মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরির লক্ষ্যে ব্যবহার করতে চাইছে। অথচ রাজ্যে, দেশে কাজের নিদারুণ হাহাকার। শিল্প নেই, কৃষকরা ফসলের দাম পাচ্ছেন না, গ্রামে একশো দিনের কাজের প্রকল্প বন্ধ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে, দুষ্কৃতীদের তান্ডবের সামনে মানুষের অসহায়, পুলিশ, প্রশাসন নিষ্ক্রীয়। এমন সময় বাংলা ভাগের নামে আবার মানুষকে বিভ্রান্ত, বিভক্ত করার খেলায় নেমেছে দেশ এবং রাজ্য সরকারে আসীন দুই দল। এই সময়ে আমাদের দায়িত্ব গরিব, শ্রমজীবী, কৃষক, খেতমজুর, মধ্যবিত্ত সহ সমাজের বিভিন্ন অত্যাচারিত অংশের মানুষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ তৈরি করা। তাঁদের সংঘবদ্ধ করা। এই শিক্ষাও আমরা কাকাবাবুর জীবন থেকেই পাই।

কাকাবাবু শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার কাজ করেছেন। কৃষক আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত হয়েছেন। পাশাপাশি তিনি বরাবর তরুণ প্রজন্ম এবং মহিলাদের সংগঠিত করার বিষয়ে নজর দিয়েছেন। তিনি যখন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে যুক্ত হচ্ছেন, তখন তিনিও যুবক। কিন্তু তখনও কমিউনিজমের তত্ব, সোভিয়েত বিপ্লবের আদর্শ সম্পর্কে বইপত্র আমাদের দেশে সহজে পাওয়া যেত না। যুব সমাজের মধ্যে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ধারণা পৌঁছোয়নি। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে, পুরাতন সমাজ, ধারণাকে ভেঙে উন্নত চেতনা প্রতিষ্ঠা করতে তরুণ প্রজন্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কাকাবাবু তেমনই মনে করতেন। কিন্তু কেমন হবে সেই তরুণ প্রজন্ম? ‘গণবাণ’পত্রিকার লেখায় কিংবা সেই সময়কার বিভিন্ন সভায় মুজফ্ফর আহ্মদের বক্তব্যে তরুণ প্রজন্ম নিয়ে তাঁর চিন্তার প্রকাশ পাওয়া যায়। তাঁর লেখা, বক্তব্যে কয়েকটি দিকনির্দেশ ছিল স্পষ্ট। তিনি মনে করতেন, ‘ধর্মের নামে ভন্ডামির নিকট যাঁরা দাসখৎ লিখে দিয়েছেন’, ‘হাজার হাজার বছরের জীর্ণ পুরাতন জিনিসের প্রতি যাদের অনুরাগ’তাঁরা যুবক হতে পারেন না, তাঁরা তরুণ সমাজের অংশ হিসাবে দেশ গড়ে তোলার কাজে ভূমিকা পালনে অনুপযুক্ত। আবার সেই সময়ে যখন দেশে সশস্ত্র সংগ্রামীদের পথ যুব সমাজের একাংশের কাছে স্বাধীনতা অর্জনের পথ বলে বিবেচিত হচ্ছে, সেই সময়ে কাকাবাবু যুব সমাজকে সংগঠিত আন্দোলনে নিয়োজিত হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। চেষ্টা করেছেন তাঁদের শ্রমিক, কৃষক সহ মেহনতী মানুষের লড়াইয়ে যুক্ত করতে। আমরা দেখতে পাই তাঁর এই ধারাবাহিক প্রয়াস সফল হয়েছিল। অনেক তরুণ কমিউনিস্ট পার্টিতে যুক্ত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন সশস্ত্র সংগ্রামীদের বিভিন্ন গ্রুপের সদস্য। অর্থাৎ পার্টি গড়ে তোলার এই পর্যায় থেকেই কাকাবাবু সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, সমাজের মধ্যে প্রচলিত পিছিয়ে থাকা মানসিকতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। যা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আবার সঠিক রাজনৈতিক পথের দিশা তুলে ধরতে মতাদর্শের প্রচারে কাকাবাবু ছিলেন নিরলস। নারীদের সংগঠিত করার উপর কাকাবাবু খুবই গুরুত্ব দিয়েছেন। আমাদের দেশে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়েই গড়ে উঠেছিল মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি। মুজফ্ফর আহ্মদের পরামর্শ, উদ্যোগেই তা হয়েছিল। মুজফ্ফর আহ্মদের শিক্ষা ছিল, নারীদের প্রকৃত গণসংগঠন গড়ে তুলতে হলে গরিব মানুষের সঙ্গে তাদের একাত্ম হতে হবে। যেতে হবে বস্তিতে, শ্রমিকদের ঘরে ঘরে, কৃষক রমণীদের মধ্যে। খেটে খাওয়া মহিলারাই হবেন গণ সংগঠনের প্রধান ভিত্তি। আজ আমাদের দেশের সরকার পরিচালনায় আরএসএস চালিকাশক্তি। গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও শরিকদের সাহায্যে সরকার তারা গঠন করেছে। কিন্তু আরএসএস-র তৎপরতা তাতে কমেনি। শিক্ষা সহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সঙ্ঘ সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বীজ রোপণ করার কাজ করে চলেছে। আমাদের রাজ্যেও তৃণমূলের সরকারের সময়ে তাদের শক্তি অনেকগুণ বেড়েছে। ছাত্র, যুব, মহিলা সহ সমাজের প্রতিটি অংশের মধ্যে হিন্দুত্ববাদ ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছে তারা। সমাজকে পিছনের দিকে নিয়ে যেতে চাইছে তারা। এই সময়ে ধারাবাহিকভাবে তার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আর এই ক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মর মধ্যে মতাদর্শের প্রচার, তার ভিত্তিতে তাদের সংগঠিত করার কাজ আমাদের কর্তব্য। মহিলাদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রেও আমাদের কাকাবাবুর দেখানো সেই পথেই এগোতে হবে। সাম্প্রতিককালে কেন্দ্র এবং রাজ্যের সরকার বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পকে নিজেদের সাফল্য হিসাবে প্রচার করে গরিব মানুষকে আন্দোলন বিমুখ করতে চাইছে। অনেক সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প আমাদের রাজ্যে এবং বিশেষত কেন্দ্রে প্রথম ইউপিএ সরকারের সময়ে দেশে চালু হয়েছে। এগুলি কোনও দলের দান নয়। এটি সরকারের দায়িত্ব। আমরা এই প্রকল্পের কোনদিনই বিরোধী নই। আমাদের দায়িত্ব গরিব, মধ্যবিত্ত সহ শোষিত সব মহিলাদের সাম্প্রদায়িকতা, কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে সংগঠিত করা।

আমরা দেখি একদিকে কাকাবাবু যখন কৃষক এবং শ্রমিকদের মধ্যে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছেন, তাঁদের মধ্যে প্রচার করছেন, সেই সময়েই বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গেও সম্পর্ক গড়ে তুলছেন। তিনি ছিলেন সাংবাদিক এবং সাহিত্যিক। জীবনচর্চার মতো কাকাবাবুর গদ্য ছিল সহজ সরল কিন্তু আকর্ষণীয়। কাকাবাবুর গদ্য সম্পর্কে শিবরাম চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘‘ গণবাণীর ওঁর গদ্যরচনায় আমি যেমন চমৎকৃত তেমনি বিমুগ্ধ হয়েছিলাম। সে কথা তাঁকে তখনি আমি জানাতে দ্বিধা করিনি। এমন আশ্চর্য গদ্য তখনকার বাংলা সাহিত্যে আর দেখা যায়নি।’’ আসলে সঙ্কটের চরিত্র সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকলে, কী বলতে এবং করতে চাই আর কাদের জন্য সেই বলা এবং কাজ, তা স্পষ্ট না থাকলে এমন গদ্য লেখা যায় না। প্রশ্নটি যতটা গদ্যরচনার, তার চেয়েও বেশি রাজনীতির, মতাদর্শ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণার। যার ভিত্তিতে বাস্তব পরিস্থিতি বিচার করে সেই অনুসারে দায়িত্ব পালন করা, নীতি এবং কৌশল নির্দ্ধারণ করার কাজ করতে হয়। এই প্রশ্নে বারবার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন মুজফ্ফর আহ্মদ। বিভিন্ন বিচ্যুতি থেকে পার্টিকে রক্ষার জন্য সংগ্রাম করেছেন।

একজন কমিউনিস্ট কর্মী হিসাবে কাকাবাবু কংগ্রেসের মধ্যে থেকে স্বাধীনতা আন্দোলন সংগঠিত করেছেন। আবার কংগ্রেসকে সংগ্রামী পথে পরিচালিত করার জন্যও সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে ‘পূর্ণ স্বরাজ’র দাবি তুলেছিল কমিউনিস্টরাই। কাকাবাবুর সেক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সেই কারণে ব্রিটিশ পুলিশের কড়া নজরদারির মধ্যে থেকেই তাঁকে কাজ করতে হয়েছে। মূলত কমিউনিস্টদের রুখতে ১৯২১ সালে পেশোয়ার, ১৯২৪ সালে কানপুর এবং ১৯২৯ সালে মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের কৌশলের অংশ। কমরেড মুজফফর আহমদ মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অন্যতম আসামী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। কাঠগড়া থেকে তাঁর বিবৃতিতে মুজফ্ফর আহ্মদ ‘আমি একজন বিপ্লবী কমিউনিস্ট’ বলে নিজের পরিচয় দিয়ে স্পষ্ট নিজেদের লক্ষ্যের কথা তুলে ধরেন। কমিউনিস্টরা লক্ষ্য গোপন করে না, কাকাবাবুর জীবন সেই প্রশ্নেও এক শিক্ষা।

ভারতে যাঁরা কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, কাকাবাবু তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য। ১৯২০ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে ওঠে। তা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নতুন এক উপাদান যুক্ত করে। সেদিন সেই নতুন পার্টি, নয়া পথ নতুন দাবিও উত্থাপন করেছিল। স্বাধীনতাই অন্তিম লক্ষ্য নয়, তার পরে স্বাধীন দেশ কেমন হবে, তার অর্থনীতি, রাষ্ট্রকাঠামো কেমন হবে, সেসব নিয়েও কাকাবাবু লিখে গেছেন। আবার তা করেও দেখিয়েছেন। ১৯২৬ সালের সেপ্টেম্বরে ‘গণবাণী’ পত্রিকায় তিনি সেই লক্ষ্যগুলির কথা তুলে ধরেছিলেন। তার মধ্যে ছিল সর্বজনীন ভোটাধিকার, জমিদারী উচ্ছেদ, শ্রমিকের মজুরির হার ও কাজের সময়, সামাজিক কুপ্রথাগুলির অবসান, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, প্রেস ও বক্তব্যের স্বাধীনতা, নারী পুরুষের সমানাধিকার, সাধারণের হিতকারী সব ব্যবস্থার মালিকানার সামাজিকীকরণ। স্বাধীন ভারত কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে তখন এগুলিই ছিল কমিউনিস্টদের বক্তব্য। আজও সেই দাবিগুলি প্রাসঙ্গিক। শুধু প্রাসঙ্গিকই নয়, স্বাধীনতার ৭৭ বছর পর এর সবকটিই এখন বিপন্ন। দেশের সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ আক্রান্ত। অথচ এগুলি ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। আর গণতন্ত্র যখন বিপন্ন, তখনই সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ পায়।

কাকাবাবু তাঁর জন্মদিন পালনের এই উদ্যোগের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে বামপন্থী কর্মীদের মত তিনি মেনে নেন। দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলন তখন এক সঙ্কটে ছিল। শাসক দল এবং শোষণকারী শ্রেণীগুলিও তখন কমিউনিস্ট কর্মীদের বড় অংশের উপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছিল। অনেক বামপন্থী নেতা, কর্মী তখন জেলে। সেই সময়ে বামপন্থী কর্মীদের মতাদর্শগতভাবে সংগঠিত করতে কাকাবাবুর জন্মদিন পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। রামমোহন লাইব্রেরি হলে সেবার কাকাবাবুর জন্মদিন পালন হয়। আজ রাজ্য তথা দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। এই সময়ে বামপন্থার পুনর্জাগরণের লক্ষ্যে কাকাবাবুর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়েই আমাদের এগোতে হবে।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন