অভিনব সালার দে উযানি (Salar de Uyuni)- এর নাম সামনে আসে না, কৌতূহল কারো হয় না । অথচ জানুন, এটা হলো বলিভিয়ার অনেকটা দুর্গম দক্ষিণ-পশ্চিম প্রদেশে অবস্থিত পৃথিবীতে নুনের সর্ববৃহৎ প্রাকৃতিক ভান্ডার (salt pan) নামে পরিচিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৬৬৩ মিটার ওপরে ৪০৫০ বর্গ মাইল বিস্তৃত লবণের এক প্রকান্ড সমতলভূমি। বলা হয়, প্রাগৈতিহাসিক যুগে এটা একটা বড় হ্রদ ছিল, জল বাষ্প হয়ে উবে যায় ।বছরের বেশির ভাগ সময় এটা শুষ্ক থাকে। কিন্তু বর্ষাকালে আশপাশের হ্রদ প্লাবিত হলে এই নুনের সমতলভূমি জেগে ওঠে। আর তখনই ফুটে ওঠে আসল রূপ । এ সময় এটির বিস্তীর্ণ প্রান্তর কাচের মতো স্বচ্ছ, মসৃণ ও সমতল হয়ে যায়।
সেজন্যই সালার দে উযানিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আয়না বলা হয়। তখন আকাশটা যেন মাটিতে নেমে আসে। অর্থাৎ এক নিখুঁত প্রতিবিম্বের সৃষ্টি হয়। সে এক অসাধারণ , দিগন্তবিস্তৃত, বর্ণনাতীত অপরূপ দৃশ্য। হাজার হাজার পর্যটক এ সময়ে বেড়াতে আসেন। এখানে গাড়ী বা সাইকেল চালালে মনে হবে যেন আকাশেই এক মসৃন সমতলে সেটা চলছে । আকাশ আর মাটি এখানে মিশে গেছে। একটা ভিডিও তার সাক্ষী।
এরকম অজস্র দৃশ্য, প্রাকৃতিক বিবর্তনের বিস্ময়কর ঘটনা, মানুষের সমাজ জীবনের পরিবর্তনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা ----সবটা অনাবৃত হয়নি । নতুন নতুন রহস্য ভেদে বিজ্ঞানের কাজ চলতে থাকবে ।
সত্যিই আমাদের এই পৃথিবী গ্রহ এক অগুনতি বৈশিষ্টের সম্ভার । এখনও অনেক রহস্য উন্মোচনের বাকি, বহু বহু বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও সম্মিলিত চেষ্টার সংহতি দরকার এই সুন্দর গ্রহকে রক্ষা করতে । কত মনুষ্যসৃষ্ট বিনাশও ঘটে চলেছে যার পেছনে আছে লুট, সাম্রাজ্য ও ক্ষমতা বিস্তার এবং আগ্রাসনের জন্য যুদ্ধ ও হিংস্রতম অভিযান । ব্রিটিশদের হাতে দু'শতক পরাধীন থেকে ভারতও লুন্ঠিত, নিষ্পেষিত; যেমন গোটা এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকা । স্বাধীন দেশে বর্তমান ভারতীয় শাসকরা সেই লুটেরা সাম্রাজ্যবাদীদের তোষামদকারীতে পরিণত হয়েছে ।
যুগ যুগ ধরে এই গ্ৰহের বিপন্নতা বাড়ছে, এখন দ্রুত বাড়ছে বা বাড়ানো হচ্ছে । বিশ্বব্যাপী এই ঘোর সংকটের মূলে একমাত্র পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদীরাই ।অত কথায় না গিয়ে এই ছোট্ট কোটি খানেক বা একটু বেশি লোকের দেশ বলিভিয়ার কথাই ধরা যাক । ল্যাপটপ, স্মার্ট ফোন, রোবট, বিদ্যুৎচালিত গাড়িতে ব্যাটারি তৈরির মূল্যবান উপাদান খনিজ লিথিয়াম বলিভিয়ায় আছে পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি। যেমন লবন, মূল্যবান লিথিয়াম ঐ স্থান থেকে সংগ্ৰহ করা যায় । লাতিন আমেরিকার দুর্বল দেশ, দারিদ্র পীড়িত, সংখ্যায় আদিবাসীরা বেশি । আমেরিকার চাপ, লুট আর ঘন ঘন সামরিক ক্ষমতার লড়াইতে বিধ্বস্ত দেশ। ১৩ বছর ইভো'র সরকারের সময় কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল।বিরাট ভোটে নির্বাচিত জনপ্রিয় ইভো মোড়ালেস সরকারকে গত নভেম্বরে অস্বচ্ছ নির্বাচনের ধুয়ো তুলে সামরিক বাহিনীতে ক্যু ঘটিয়ে প্রকাশ্য হুংকারে ট্রাম্প প্রশাসন উৎখাত করে। ইভোকে পালাতে হয় মেক্সিকোতে । মার্কিনী ছকে বিরোধী পক্ষের এক মহিলা ঘোষণা করলেন তিনিই প্রেসিডেন্ট, সঙ্গে সঙ্গে স্বীকৃতি দেয় ট্রাম্প প্রশাসন । শুরু হয় বিরোধীদের নিধন ও নির্যাতন । কোভিড সংক্রমন গ্রাস করেছে, মৃত মানুষ এখানে সেখানে পড়ে আছে, অসহায় মানুষ, কোন ব্যবস্থা নেই । তিনমাসের মধ্যে নির্বাচনের আশ্বাস এখন শিকেয় । এই সরকার, মার্কিন কর্পোরেটদের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ব লিথিয়াম-সম্পদের ও অন্যান্য খনিজের দখল নিতে ব্যস্ত । আবার, আমেরিকা অবরোধ ছাড়াও ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে ভেনেজুয়েলার তেল ও অন্যান্য সম্পদ দখল করতে মাদুরো সরকার ওল্টাতে ।এদিকে গুরুতর কোভিড সংক্রামিতদেরও বলিভিয়ায় হাসপাতাল নিচ্ছে না, উপচে পড়ছে জায়গা নেই। ব্রাজিল, কলম্বিয়া, চিলি সহ সর্বত্র কোন চিকিৎসা ও সহায়তা নেই, ভয়াবহ অবস্থা ।
এ কী দেউলিয়া অবস্থা মার্কিন অনুগতদের, গোটা উন্নত পুঁজিবাদী দুনিয়ার !
স্মরণ করা যেতে পারে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান হয়েছে ফ্যাসিস্ট জোট জার্মানি-ইতালি-জাপান এর পরাজয়ে । সর্বাধিক কৃতিত্ব সোভিয়েত ইউনিয়নের, ক্ষয়ক্ষতিও সবচেয়ে বেশি, ২কোটি ৬০লাখ লোকের প্রাণহানি হয়েছে যুদ্ধে।ইউরোপ ফ্যাসিস্ট বর্বরতায় রক্তাক্ত । আমেরিকার মাটিতে গুলিও চলেনি, বোমাও পড়েনি।একদম শেষদিকে জার্মানির বিরুদ্ধে আমেরিকা ইউরোপে যুদ্ধে যোগ দেয় । যুদ্ধশেষে গোটা পৃথিবীকে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ তার আধিপত্যের মুঠোয় আনতে চায় । তারই বার্তা আমেরিকা সব দেশে বিশেষত সোভিয়েত ইউনিয়নের উদ্দেশ্যে পাঠাতে ব্যগ্র ।
৬ এবং ৯ আগস্ট, ১৯৪৫: আমেরিকা পারমানবিক বোমায় ধ্বংসস্তূপ বানিয়ে দেয় পরপর জাপানের দুটি শহর হিরোশিমা ও নাগাসাকিকে । এই অপরাধের কোন ক্ষমা নেই । কিন্তু আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা এ পর্যন্ত এর চেয়ে কয়েক হাজারগুণ বেশি পারমানবিক অস্ত্র মজুত করেছে । পাল্টা রাশিয়াও নিরাপত্তায় এই অস্ত্র বাড়িয়েছে, যদিও এই পারমানবিক বোমা বানিয়েই রাষ্ট্রসঙ্ঘে সোভিয়েত ইউনিয়ন ঘোষণা করেছিল তারা কখনোই পারমাবিক অস্ত্র প্রথম ব্যবহার করবে না । সাত দশকের মধ্যে এরকম ঘোষণা করতে আমেরিকান প্রশাসন অস্বীকার করে আসছে ।
বিশ্ব শান্তি রক্ষায় দুই বিপরীত রাষ্ট্রব্যবস্থার দৃষ্টিভঙ্গির আকাশ পাতাল ফারাক এর মধ্য দিয়েও বোঝা যায় ।
অনেক কম হলেও অন্যদের হাতেও আছে এই অস্ত্র । তবে, অন্য কেউ ধারেকাছে আসে না সবচেয়ে শক্তিধর এই আমেরিকার, যারা গোটা দুনিয়াকে এই অর্থ,ক্ষমতা ও অস্ত্রের জোর খাটিয়ে পদানত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।আমেরিকার ট্রাম্প প্রশাসনের বিশ্বস্ত ও অনুগত এখন মোদি শাসনের ভারতও । সামরিক অস্ত্র, বিশ্ব- আধিপত্যের ক্ষমতা প্রয়োগে এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট করে যারা পৃথিবীর ধ্বংস ডেকে নিয়ে আসছে, সেই বিশ্ব- দুশমন ও তাদের অনুগত দোসরদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সময় উপস্থিত যাতে আর কোন হিরোশিমা নাগাসাকি না হয়।
পারমানবিক অস্ত্র কমানোর জন্য রাশিয়ায় সঙ্গে চুক্তি থেকে সরে আসছে ট্রাম্প প্রশাসন ।গ্রাহ্য করছে না পুঁজিবাদী ব্যবস্থার প্রতিভূ রাশিয়ার পুতিন সরকারের চুক্তি বজায় রাখার অনুরোধ ।
পারমানবিক অস্ত্র ক্রমান্বয়ে হ্রাস ও শেষে নির্মূল করতে আজকে প্রথমে আমেরিকাকে, তারপর সব পরমাণু অস্ত্রধারী দেশকে বাধ্য করতে হবে। পৃথিবীকে রক্ষা করতে ও বিশ্ব শান্তি সুনিশ্চিত করতে সার্বিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা অবশ্যম্ভাবী।।