বিজেপি কেন্দ্রে সরকারে এলে বছরে ২ কোটি বেকারের কাজ হবে - নভেম্বর ২০১৩,আগ্রা। গুজরাট, হিমাচলের ভোটের আগের কথা, সামনের বছর(২০২৩) এর মধ্যে ১০ লাখ কেন্দ্রীয় পদে লোক নিয়োগ করা হবে - জুন,২০২২, ট্যুইটার পোস্ট । এরপরে অক্টোবরে বলা হল ইতিমধ্যেই নাকি ৭৫,০০০ মানুষের হাতে ‘রোজগার মেলা’ থেকে চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হয়ে গেছে। এই সমস্ত কথার বক্তা কে ! না এটার উত্তর দেওয়ার জন্য কেষ্টর মতন কোন কোটি টাকার লটারি জেতার সুযোগ নেই। সবাই জানি কে বলতে পারে, নরেন্দ্র মোদি।
কিন্তু বাস্তবের পরিসংখ্যানের সাথে এইসব কথার কোন মিলই নেই। সারা বছর ধরে যে সংস্থা বেকারত্ব সহ অর্থনৈতিক হালহকিকতের ওপর গবেষণা করে এবং যাদের পরিসংখ্যানকে চ্যালেঞ্জ করার মুরোদ কোন সরকারের হয়নি সেই Centre for Monitoring Indian Economy (CMIE) কী বলছে ! দেশে এই মুহূর্তে বেকারের সংখ্যা ৫ কোটি ছাড়িয়ে গেছে !
এটি ২০২০ নাগাদ মানে মহামারীর প্রথম বছর যখন বারবার লকডাউন এবং সামগ্রিক পরিস্থির ভয়াবহতার জন্য অর্থনীতি পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে গেছিল সেই সময়ের তুলনায় সামান্যই কম । সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি (CMIE) দ্বারা তৈরি এই পর্যবেক্ষণগুলো পর্যায়ক্রমিক নমুনা সমীক্ষা থেকে নেওয়া হয়েছে।
এই পরামর্শদাতা সংস্থার দেওয়া হিসাব অনুসারে দেখানো হয়েছে, ২০২২ সালে ভারতের শ্রমশক্তি এখনও প্রাক-মহামারী স্তরের থেকে কম। ২০১৯ সালে, ভারতের শ্রমশক্তি অনুমান করা হয়েছিল ৪৪.২ কোটি। মহামারীর প্রথম বছরে এটি নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছিল এবং তারপর থেকে ক্রমশ পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হচ্ছিল । কিন্তু ২০২২ সালের নভেম্বরে এসে দেখা গেল, ভারতের আনুমানিক শ্রমশক্তি কমে দাঁড়িয়েছে অনুমান ৪৩.৭ কোটি।
শ্রমশক্তিকে সংজ্ঞায়িত করা হয় যারা কাজ করে এবং সেই সাথে যাদের কাজ নেই কিন্তু কাজ করতে ইচ্ছুক এমন জনসমষ্টির যোগফল হিসাবে। শেষোক্ত অংশে যারা সক্রিয়ভাবে কাজ খুঁজছেন এবং যারা সমীক্ষার সময় কাজ খুঁজছিলেন না কিন্তু কাজ করতে ইচ্ছুক তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সুতরাং, এটা বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না যে ভারতের শ্রমশক্তি বৃদ্ধি আসলে বেকারদের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে যতটা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি দিয়ে হচ্ছে।
কর্মহীনতার উচ্চ হার
গত কয়েক বছর ধরে ভারতে বেকারত্বের হার ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলেছে । ২০১৯ সালে এই হার ছিল গড়ে ৭.৪ শতাংশ। ২০২০ সালে একধাক্কায় বেড়ে হয়ে যায় ১০% এর বেশই , প্রসঙ্গত বলা দরকার প্রথম লকডাউনের সময় এই হার ২৫% ছুঁয়ে ফেলেছিল। তারপর ২০২১ সালে প্রায় ৭.৮ শতাংশে নেমে আসে এবং বর্তমানে, আজকের দিনে,২৩ ডিসেম্বর,২০২২ CMIE এর ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে সারাভারতে এই হার ৯%। শহরাঞ্চলে ৯.৯%, গ্রামভারতে ৮.৬% । এইক্ষেত্রে বলা দরকার যে এগুলো সারা বছরের গড় থেকে মাসিক হার হিসাবে গণনা করা হয়। ঠিক এক বছর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসেই এই বেকারত্বের হার ছিল ৭.৯%। পরিস্থিতির বদল এক চুলও হয়নি !
কর্মক্ষেত্রে স্থবিরতা
২০২২ সালের নভেম্বরের শেষে দেশে মোট কর্মরত ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় আনুমানিক ৪০.১৮ হিসাব করা হয়েছিল। তিন বছর আগে, ২০১৯ সালের নভেম্বরের শেষে এই সংখ্যা ছিল ৪০.৩ কোটি। ২০২০ সালে মহামারীর প্রথম বছরে, এটি ছিল ৩৯.৪ কোটি, যা ২০২১ সালে কিছুটা বেড়ে ৪০.২৭ কোটিতে দাঁড়ায়। এর মানে হল যে কর্মরতদের সংখ্যা গত তিন বছর ধরে প্রায় ৪০-কোটির আশেপাশেই স্থির হয়ে আছে। অথচএই একই সময়কালে ভারতের জনসংখ্যা বেড়েছে ৪ কোটি ৮০ লক্ষের মত (https://www.worldometers.info/world-population/india-population/ এর তথ্য অনুসারে ), অর্থাৎ কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে, কিন্তু কাজের সুযোগ বাড়েনি বরং কমেছে। এদেশের বেশিরভাগ মানুষের চোখের সামনে বাস্তবেই কোন ‘আচ্ছে দিন’ নেই, অন্তত ২০২৪ এর আগে।
নিষ্ঠুর নীরবতা
অক্টোবরেই তার ভাষণে, মোদি বলেছিলেন যে পরিকাঠামো প্রকল্পগুলি কাজের সুযোগ তৈরি করতে বাধ্য এবং এমএসএমই (মাঝারি, ক্ষুদ্র এবং অতি ক্ষুদ্র উদ্যোগ) ক্ষেত্রের জন্য ঋণও স্বনির্ভরতা তৈরি করেছে। আশ্চর্যজনকভাবে, তথাকথিত পরিকাঠামো বৃদ্ধি এবং এমএসএমই-কে ঋণ দেওয়ার বিষয়টি গুরুতর বেকারত্বের হারকে সম্পূর্ণরূপে তুলে ধরেছে বলে মনে হয় না, অন্তত CMIE এর দেওয়া তথ্য এই দাবিগুলোর কোন সারবত্তা প্রমাণ করেনা।
আর এমএসএমই ক্ষেত্র ঋণ নিয়ে কতটা উপকৃত হয়েছে আমরা জানিনা কিন্তু মিডিয়া থেকে পাওয়া খবর অনুসারে ২৩ ডিসেম্বর,২০২২-এ, এক সময় এই দেশের কর্পোরেটদের BLUE-EYED-GIRL, নারী মুক্তির ক্ষেত্রেে এই নয়া উদারবাদই নতুন দিগন্ত খুলে দেবে বলার ব্রান্ড এ্যাম্বাস্যাডর, প্রাক্তন ICICI ব্যাঙ্কের সিইও চন্দা কোচার এবং তার স্বামী দীপক কোচার শুক্রবার CBI এর হাতে গ্রেফতার হয়েছে ভিডিওকন গ্রুপকে সম্পূর্ণ বেআইনী ভাবে ৩,০০০ কোটিরও বেশি ঋণ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো এটি একটি ৪০,০০০ কোটি টাকা ঋণের অংশ যা ভিডিওকন স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার নেতৃত্বে ২০টি ব্যাঙ্কের একটি কনসোর্টিয়াম থেকে পেয়েছিল ৷ এই মোদি সরকার জি-২০ এর সভাপতিত্ব থেকে মন্দিরের নির্মাণ, বন্দে ভারত সব কিছু নিয়েই ভাবতে পারে শুধু এই দেশের আম-আদমির কথা বাদে দিয়ে। এই মোদি জমানা কাদের জন্য ভালো দিন আর কাদের জন্য খারাপ দিন আনছে আশা করি নতুন করে আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
ওয়েবডেস্ক-এর পক্ষে সরিৎ মজুমদার