হাওয়া ঘুরছে
এবারে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলকে পরাস্ত করতে ও বিজেপিকে জনবিচ্ছিন্ন করতে এবং 'লুটেরাদের হঠিয়ে জনগণের পঞ্চায়েত গড়তে' রাজনৈতিক সংগ্রামে পার্টি অবতীর্ণ হয়েছিল। "চোর ধরো-জেল ভরো" এই স্লোগান সহ জীবন- জীবিকার ইস্যুগুলি নিয়ে গণফ্রন্টগুলি ও পার্টির নানা কর্মসূচি রাজ্যজুড়ে পালিত হয়েছিল। বিভিন্ন জেলাতে কর্মসূচি রূপায়ণের পর ৩১ শে আগস্ট'২২ ব্যাপক জমায়েত করে আইন অমান্য আন্দোলন এবং দুর্নীতির প্রতীক 'ব'কে উপড়ে দিয়ে- আন্দোলন সংগ্রামে এক উৎসাহব্যঞ্জক নয়া মেজাজ তৈরি হয়েছিল। নভেম্বরে "চোর তাড়াও-গ্রাম বাঁচাও" স্লোগানে গ্রামে গ্রামে নিবিড় পদযাত্রার কর্মসূচি সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনের জমি তৈরি করে। শুরুতেই পার্টি বলেছিল, এটা ২০১৮ নয় ২০২৩। নির্বাচনী প্রস্তুতি, লড়াই-প্রতিরোধ, প্রার্থী দেওয়া - রক্ষা করার চ্যালেঞ্জ কমরেডরা গ্ৰহন করে। শুধুমাত্র পূর্ব বর্ধমান জেলায় এই সংগ্রামে দুজন শহীদ হয়েছেন, ৬০ জনের বেশি আহত হয়েছেন, ৬জন গুরুতর আহত। কমরেডরা জান কবুল লড়াই করেছেন। কমরেডদের কুর্নিশ। লুটের ভোট ও গণনায় ডাকাতির ফলাফলেও পার্টির অগ্রগতির, স্বাধীন শক্তি হিসেবে বৃদ্ধির প্রতিফলন স্পষ্ট - কিন্তু আত্মসন্তুষ্টির জায়গা নেই। পার্টির যে শ্রেণিভিত্তি তার কিছুটা হলেও আমাদের দিকে ফিরছে। আত্মবিশ্বাস, জেদ, সাহসে ভর করেই সামনের লড়াইয়ে আরো আরো এগোতে হবে। শ্রেণিমিত্রদের আমাদের ফেরত আনতেই হবে। এটা ঠিক বিধানসভা ভোটের পর- শান্তিপুর, বালিগঞ্জ, চন্দননগর, তাহেরপুর ও সাগরদিঘীতে আমাদের অগ্রগতি স্পষ্ট। এবারেও পঞ্চায়েত ভোটের তিনটি বৈশিষ্ট্য - প্রতিরোধের মেজাজ, আমাদের ভোটের হারে ক্ষয়ের বিপরীতে ভোট বৃদ্ধি আর বিজেপি- টিএমসির জনসমর্থনে ক্ষয়।জনসমর্থনে ধ্বস - তৃণমূলের ও প্রশাসনের যৌথ বেপরোয়া মনোভাব
ইতিমধ্যেই ফল প্রকাশের সাথে সাথে জেলা শাসকের কাছে জেলা বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে জমায়েত করে ২৪ জুলাই,২৩ ডেপুটেশন কর্মসূচি নেওয়া ছিল গুরুত্বপূর্ণ। জেলাশাসক লজ্জায় আমাদের মুখোমুখি হতে পারেননি। অতিরিক্ত জেলা শাসক (জেলা পরিষদ) ডেপুটেশন গ্রহণ করেন। আদালতে নানা প্রশ্নের, তীক্ষ্ণ সমালোচনার সম্মুখীন নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, পুলিশ। প্রকৃত অর্থে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন চিহ্নিত হয়েছে ভোট লুট ও গণনায় ডাকাতি হিসাবে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন এখনো তার ওয়েবসাইটে পূর্ণাঙ্গ ফলাফল প্রকাশ করতে পারেনি, প্রকাশিত ফলাফলেও নানা কারচুপি আছে। সারা রাজ্যে আসন সংখ্যা ও ভোটের শতাংশে বিজেপি দ্বিতীয় হলেও বিজেপির ভোট হ্রাস ১৬ শতাংশ - বাম, কংগ্রেস, আইএসএফের বৃদ্ধি ১২ শতাংশ। এটা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। আবার লুটের ভোটেও আমাদের জেলায় শুধু বামফ্রন্টের ভোট ২৩.৩৮ শতাংশের ওপর। বিজেপি ১৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে - আসন সংখ্যা ও শতাংশের হারে তৃতীয়। আত্মসন্তুষ্টির কোন জায়গা নেই। বিজেপিকে আরও জনবিচ্ছিন্ন করতেই হবে। এখন প্রশ্ন হল ভোট লুট ও গণনায় ডাকাতির জন্য সারা রাজ্যে তৃণমূল ও প্রশাসনের সম্মিলিতভাবে এই অতি-সক্রিয়তা কেন? আসলে গ্রাউন্ড জিরো তে "বাস্তবতা ভিন্ন"। এই বাস্তবতা আমাদের অনুসন্ধান করতে হবে এবং তদনুযায়ী রাজনৈতিক, সাংগঠনিক পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজ্যজুড়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে, দুর্নীতি রোধে ও বিভাজনের রাজনীতিকে পরাস্ত করতে রাজনৈতিক সংগ্রামের একটা পর্যায় আমরা অতিক্রম করলাম। লুটেরাদের তাড়িয়ে জনগণের পঞ্চায়েত গড়ার যে ডাক আমরা দিয়েছিলাম তাতে মানুষ সাড়া দিয়ে সাহসের সঙ্গে লড়াই করেছেন গণতন্ত্র, আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে। ভোট লুট ও গণনায় লুটের পরে এখন মানুষ লুটেরাদের সাথী বিডিও, এসডিওদের সার্টিফিকেট মানতে নারাজ। পার্টি রাজ্য কমিটির আহ্বান অনুযায়ী,এই মানুষরা যাতে বিকল্প ভাবনায় জনগণের পঞ্চায়েত গড়ে তুলতে পারেন - অর্থনৈতিক, সামাজিক পুনর্গঠনে, ২৭ টি কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের দপ্তরের প্রকল্প যাতে স্বচ্ছভাবে রূপায়িত হয় তার জন্য মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে আমাদের আন্দোলন সংগ্রামের কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। শ্রেণী আন্দোলন, গণ আন্দোলনকে আরো শক্তিশালী করে আমাদের আগামী লোকসভা নির্বাচনে - রাজনৈতিক সংগ্রামের আরও একটি নতুন পর্যায়ে অবতীর্ণ হতে হবে।পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর কর্পোরেট-হিন্দুত্ববাদের, মিডিয়ার বিভ্রান্তি সৃষ্টির তৎপরতা কেন?
ফলাফল সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ হতে না হতেই বিভ্রান্তি/সংশয় সৃষ্টিতে অতিতৎপরতা লক্ষ্য করলাম বিজেপি সহ মেন স্ট্রিম মিডিয়াকে। পাটনা- ব্যাঙ্গালোর বৈঠক ঘিরে- ইন্ডিয়া (I.N.D.I.A.) জোটে সিপিআই(এম) ও টিএমসির উপস্থিতি ঘিরে। পাটনা বৈঠকের পরে এ রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামপন্থীদের অগ্রগতি আটকাতে ব্যর্থ হয়ে ব্যাঙ্গালোরের বৈঠকের পর বিভ্রান্তির প্রচার তীব্র করা হলো। এ প্রশ্ন ধেয়ে এলো - এক টেবিলে সীতারাম-মমতা কেন? তাহলে বাম- কংগ্রেসের ভোট আবার বিজেপি দিকে যেতে পারে? ব্যাঙ্গালোরের পর একুশে জুলাইয়ের সভায় অধীর ও সেলিমকে দেখা যাবে কি? না, বরং বিজেপির এমএলএ মুকুল রায় কেই সভায় দেখা গেল। কয়েকদিনের মধ্যেই অভিষেক নিশ্চিন্তে দুবাই যাত্রা করল। রাজ্যে বাম শক্তির উত্থান আটকাতে মিডিয়া সৃষ্ট বাইনারির চোরাস্রোত ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা রুখতে হবে ।সাধারণ মানুষ-বাম কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে যাতে কোন বিভ্রান্তি না থাকে তার জন্য আমাদের বিজ্ঞান ও যুক্তির বাঁধ তৈরি করে বিভ্রান্তির মাকড়সার জালকে ছিন্নভিন্ন করা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বিজেপিই পারে তৃণমূলকে ঠেকাতে- এই নেতিবাচক চিন্তা ও মেরুকরণের রাজনীতিকে পরাস্ত করতেই হবে।পার্টি কর্মসূচি ও পার্টি কংগ্রেসের গৃহীত সিদ্ধান্তের সড়কেই পথ চলা
পার্টির রাজনৈতিক লাইন সম্পর্কে পরিষ্কার, স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে। পার্টির রাজনৈতিক লাইন কখনো ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হয় না। কোন মিডিয়া হাউস, অন্য কোন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী তৈরি করে দেয় না। চা-কফি হাউসেও পার্টির লাইন ঠিক হয় না। পার্টি কংগ্রেসে রাজনৈতিক প্রস্তাব বহু আলোচনার পর সম্মেলনে গৃহীত হয়। তাকে সামনে রেখেই ৩-৪ বছর পার্টির রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালিত হয়, পার্টির নির্বাচনী কৌশল তৈরি করা হয়। ২৩ তম কংগ্রেসে পার্টির গৃহীত রাজনৈতিক লাইন কি? পাটনা-ব্যাঙ্গালোর বৈঠক কি এই রাজনৈতিক লাইনের বাইরে? না। এটা কি নির্বাচনী জোট? সীতারাম ইয়েচুরি স্পষ্ট করেছেন - না। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতান্ত্রিক চরিত্র-কাঠামো রক্ষা করতে একসঙ্গে কাজ করার বোঝাপড়া। ব্যাঙ্গালোরের সভায় ২৬ দলের জোটের বিবৃতিতে স্পষ্ট। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর তিনটি - ২১, ২২ ও ২৩ তম পার্টি কংগ্রেস সম্পন্ন হয়েছে। ২২ তম কংগ্রেসের রাজনৈতিক লাইনে পার্টি আটটি পয়েন্ট উল্লেখ করেছে: বিজেপি বিরোধী ভোট সর্বোচ্চ মাত্রায় এক জায়গায় জড়ো করার জন্য যথাযথ নির্বাচনী রণকৌশল নিতে হবে - কংগ্রেসের সাথে কোনো রাজনৈতিক আঁতাত তৈরি না করে। ২৩ তম কংগ্রেসের রাজনৈতিক লাইনে ১০ টি পয়েন্ট উল্লেখ করা হয়েছে: প্রধান কাজ বিজেপিকে জনবিচ্ছিন্ন করা ও পরাস্ত করা। আমাদের স্বাধীন শক্তির বিকাশ, বামেদের শক্তি বৃদ্ধি, সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে ব্যাপকভাবে সমবেত করা। কর্পোরেট হিন্দুত্বের শাসনের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি ও নয়া উদারনীতি উভয়ের বিরুদ্ধে সমান্তরাল ভাবে লড়াইয়ে, সম্মত বিষয়ে ধর্মনিরপেক্ষ বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিসমূহের সাথে সংসদের অভ্যন্তরে সহযোগী ভূমিকায় ও বাইরে সমাবেশ ঘটাতে পার্টি সক্রিয় থাকবে। নির্বাচনী কৌশল অবলম্বন করতে হবে এই লাইন অনুসারে, বিজেপি বিরোধী ভোটকে এক জায়গায় টেনে আনার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা জারি থাকবে। আঞ্চলিক দলগুলির প্রশ্নে পার্টি ২৩ তম কংগ্রেসে ২.১৪২ ও ২.১৪৩ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করেছে যথাক্রমে: কোন আঞ্চলিক দল যদি কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে যৌথ সংগ্রামে যুক্ত হতে চায় অথবা সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার প্রশ্নে আমাদের সাথে একজোট হতে চায় আমরা সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক বটে, কিন্তু নিজেদের রাজ্যে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় রেখে তবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ২.১৪৩: যে সমস্ত রাজ্যে আঞ্চলিক দলগুলি সরকার পরিচালনা করছে সেখানে যে সকল নীতির আমরা বিরোধিতা করি, তার ভিত্তিতে নিজেদের সামর্থ্য এবং বাম দলগুলির সাথে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যদিও এ প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে এই সকল রাজ্য সরকার এবং বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকারগুলিকে ও কেন্দ্রীয় সরকার কে আমরা একই দৃষ্টিতে বিচার করি না। পার্টি কর্মসূচিতে বিজেপি সম্পর্কে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। ৫.৭ এ বলা আছে সাম্প্রদায়িক ও ফ্যাসিস্ত ধাঁচের আরএসএস পরিচালিত জোটের শক্তি বৃদ্ধি ও কেন্দ্রে তাদের ক্ষমতা দখলের ফলে ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তির বিপদ গুরুতর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৫.৮ এ বলা আছে, আমাদের পার্টি ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির ধারাবাহিক রূপায়ণের জন্য আপোসহীন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই নীতি থেকে সামান্যতম বিচ্যুতিও উন্মোচিত করে দিতে হবে, তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। ৫.৯ এ উল্লেখিত, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সংবিধানে স্বীকৃত অধিকারসমূহ ধনতান্ত্রিক শোষণের পরিস্থিতিতে কার্যকর হয় না। গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে শক্তিশালী করার সংগ্রামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সংখ্যালঘুদের অধিকারের সপক্ষে দাঁড়ানো। ৭.১৪ এ বলা হয়েছে, বিজেপি কোন সাধারণ বুর্জোয়া দল নয় কেননা ফ্যাসিস্ত ধাঁচের আরএসএস তাদের পরিচালনা করে, আধিপত্য করে।বিজেপি ক্ষমতায় আশায় রাষ্ট্র ক্ষমতা ও রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন সংস্থায় প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে আরএসএস। সুতরাং পাটনা-ব্যাঙ্গালোরের বৈঠকে আমাদের পার্টির উপস্থিতি কখনোই উপরোক্ত বোঝাপড়ার বাইরে নয়।গত ৯ বছরের বিজেপির চাল, চেহারা, চিন্তন –
সামগ্রিকভাবে ২৩ তম পার্টি কংগ্রেসে জাতীয় পরিস্থিতির মূল্যায়নে বিজেপির দ্বিতীয়বার ক্ষমতাসীন হওয়ায় ফ্যাসিস্ট ধাঁচের আরএসএসের হিন্দুত্ববাদী কর্মসূচির আরো আগ্রাসী রূপ সবিস্তারে আলোচিত। ভারতীয় সংবিধানের উপর আক্রমণ এবং দেশের আর্থিক সার্বভৌমত্ব ও দেশের ভবিষ্যৎ ধ্বংস প্রতিহত করার চ্যালেঞ্জই আমাদের কাছে মুখ্য। আমরা দেখেছি, গত ৯ বছরে বিজেপির রাজনীতিতে নতুন ভারতের ভাষ্য তৈরি হয়েছে তার তিনটে ধারা: এক, অর্থনৈতিক বিকাশ যা বর্তমানে মোদি প্রায় প্রতিটি বক্তৃতাতেই বলছেন - তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হলে ভারতকে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করবেন। দুই, সুদৃঢ় নেতৃত্ব। তিন, হিন্দু জাতীয়তাবাদ। এই তিনটে ধারাতেই অসংখ্য চিড়, ফাটল আছে - তা উন্মোচন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে এই 'নতুন ভারতের' ভাষ্যে কি বলেছেন? ২০১৯ এর ৫ ই আগস্ট ৩৭০ নম্বর ধারা ও ৩৫-এ ধারা বিলোপ আর ২০২০-র ৫ই আগস্ট রাম মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হল- এই দিনে ভারত প্রকৃত স্বাধীনতা পেল। এমনকি জাতীয় প্রতীক অশোক স্তম্ভে সিংহের চেহারায় অগ্রাসী ছাপ এল। পুলওয়ামায় ৪০ জন জওয়ানের শহীদ হওয়ার প্রশ্নে, তৎকালীন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের এবছরের এপ্রিল মাসে বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে: ভুয়ো-জঙ্গী জাতীয়তাবাদের আসল চেহারা উন্মোচিত হয়েছে। মোদি সরকারের অপদার্থতায়, ভুলের কারণে, ১১ বার (২ জানু-১৩ ফেব্রু'১৯) গোয়েন্দা তথ্যকে উপেক্ষা করায় এই মর্মান্তিক ঘটনা। তৎকালীন রাজ্যপালকে মুখ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল পিএমও। ত্রিপুরাতে বামপন্থী কর্মীসহ জনগণের উপর বিজেপির ভয়ংকর অত্যাচার আমাদের জানা - এমন কি ভোট লুট, নির্বাচন বাতিল ও ব্যাপক পুনর্নির্বাচন ত্রিপুরাতে আমরা দেখলাম। আর এখন মনিপুরের গত ৩ মাসে হিংসা বেনজির ও ভয়ঙ্কর, ২০০ উপর মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ ঘর ছাড়া- 'ডাবল ইঞ্জিন' সরকারকে প্রকাশ্য এজলাসে সুপ্রিম কোর্টও বিবস্ত্র করেছে। এ হলো "ন্যূনতম শাসন - সর্বোচ্চ নীরবতা"। আমরা কি ভুলে যাবো - ১৯৯২, ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা - টানা চারদিন দেশের বিভিন্ন অংশে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়ে দিয়েছিল - অন্তত ২০০০ মানুষ দাঙ্গায় প্রাণ হারিয়েছিলেন। তারপরও মুম্বাইয়ে মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ১০ দিন ধরে নজীরবিহীন হিংসাত্মক অভিযান চালানো হয় – ১০০০ এর বেশি মানুষ দাঙ্গায় প্রাণ হারিয়েছিলেন। ২০০২ সালের গুজরাটের দাঙ্গার বীভৎস ক্ষত এখনো মুছে যায়নি। এই অসভ্য, বর্বর দলের রবীন্দ্রনাথ - নজরুলের রাজ্যে ভোট পাওয়াটাই তো লজ্জার। ভারতের ভাষাগত, ধর্মীয়, নৃতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য পৃথিবীর যে কোনো দেশের থেকে অনেক অনেক বেশি। সরকারিভাবে নথিভুক্ত যে ভারতে অন্তত ১৬১৮ ভাষা আছে, ৬৪০০ জাত,৬টি বড় ধর্ম, নৃতাত্ত্বিকভাবে সংজ্ঞায়িত ৬টি জনগোষ্ঠী-- একটি দেশ হিসেবে রাজনৈতিক প্রশাসনের অধীনে রয়েছে। এই বহুত্ব ও বৈচিত্র্যই ভারতের সংবিধানে প্রতিফলিত। ভারতের ঐক্যকে তখনই সংহত করা যায় যখন এই বৈচিত্রের মধ্যে অভিন্নতার বন্ধনকে শক্তিশালী করা যায়, এই বহুত্বের সমস্ত ক্ষেত্রকে - ভাষা, জনগোষ্ঠী, ধর্মীয় পরিচিতি-সম্মান দেওয়া হয়, সমতার ভিত্তিতে দেখা হয়। আরএসএস ও তার রাজনৈতিক শাখা বিজেপি বৈচিত্র্যের উপরে হিন্দু-হিন্দি-হিন্দুস্তানের একশৈলিক অস্তিত্বকে চাপিয়ে দিতে চাইছে সরকার ও রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন(সিএএ), এনআরসি, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি(ইউসিসি), জ্ঞানবাপি মসজিদ বিতর্কে বিভাজন ও মেরুকরণের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ২১ তম আইন কমিশনের ভাষায় অভিন্ন দেওয়ানি বিধি "নিষ্প্রয়োজন ও অবাঞ্ছিত।" স্বাভাবিকভাবেই ২২ তম কমিশন ২১ তম কমিশনের সুপারিশগুলি যাতে উল্টোতে না পারে তার জন্য আমাদের জনমত সংগঠিত করতেই হবে। ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের চরিত্র পরিবর্তনের ধারাবাহিক প্রয়াস চলছে। সংবিধানের মূল চারটি স্তম্ভ - ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, সামাজিক ন্যায় এবং আর্থিক সার্বভৌমত্ব আজ আক্রান্ত হচ্ছে। মোদির জামানায় ৫২-৫৪ দিনের বেশি বছরে সংসদ বসে না - সংসদীয় বিধি, গণতন্ত্র, কমিটির কাজ সবই খর্ব করা হচ্ছে। সরকার আর আইন সভার কাছে দায়বদ্ধ নয়, কোথাও তাকে জবাবদিহি করতে হয় না। গণতন্ত্রের উপর কার্যত বুলডোজার চলছে। এই জমানায় কর্পোরেট -সাম্প্রদায়িক শক্তির আঁতাত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। সামগ্রিক অবক্ষয় বড় আকারে দুর্নীতি ও ধান্দার ধনতন্ত্রের রাস্তা চওড়া করে দিচ্ছে - নির্বাচনী বন্ডে শাসক দল বিপুল অর্থশক্তি সঞ্চয় করছে, কর্পোরেট মিডিয়াকে ব্যবহার করছে। জাতীয় সম্পদ নির্বিচারে লুট চলছে, ভারতের খনিজ সম্পদ, অরণ্য ও সবুজভূমি, এয়ারপোর্ট, রেল, রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। দেশের অন্নদাতাদের দুর্দশা বেড়েই চলেছে, খাদ্যের অভাবের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। দেশি-বিদেশি কর্পোরেটের মুনাফা সর্বোচ্চকরণের জন্য ভারতের জাতীয় সম্পদকে পুরোপুরি উজাড় করে দেওয়া হচ্ছে। গত ৯ বছরে অর্থনৈতিক বিকাশের পরিবর্তে ভারতীয় অর্থনীতির কোমর ভাঙতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি। ডলারের তুলনায় টাকার অবমূল্যায়ন ঘটেই চলেছে। কর্পোরেটদের কর, ঋণ মুকুব বেড়েই চলেছে, বিপরীতে জনগণের জীবন জীবিকার উপর ক্রমান্বয়ে আঘাত নেমে আসছে। বেকারি, মূল্যবৃদ্ধি, ক্ষুধা নয়া ভারতে মহামারীর আকার নিয়েছে। কৃষি, শিল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের একদিকে প্রকৃত আয় কমেছে অন্যদিকে জীবন যাপনের ব্যয় বেড়েছে। নজরদারি মূলক রাষ্ট্র নির্মাণ, স্বৈরতন্ত্র, দক্ষিণপন্থার বাড়বাড়ন্তে বিধায়ক কেনাবেচা, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা, গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব, বিভাজনের বিদ্বেষ, ভোটলুট, গণনা কেন্দ্র দখল সবই সম্ভব। কি হচ্ছে হরিয়ানাতে? নূহ, গুরগাঁও সহ অন্যত্র সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা পরিকল্পনা মাফিক সংগঠিত দাঙ্গারই প্রতিফলন। আসলে লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজস্থান সহ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন - তাই আগাম পরিকল্পনা করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল, সংঘ পরিবারের নানা বাহিনীকে নামানো হয়েছে। আরএসএস - বিজেপির ধর্মান্ধতা, মুসলিম বিদ্বেষ ও ঘৃণার চাষ সমাজের এক অংশের মানুষের মস্তিষ্ককে কিভাবে বিকৃত ও অধঃপতিত করছে তার সর্বোৎকৃষ্ট নমুনা - মহারাষ্ট্রে চলন্ত ট্রেনে গুলি চালিয়ে এক আরপিএফ কনস্টেবল যে হত্যালীলা সংগঠিত করেছে। উগ্র সম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে মেরুকরণের মহড়া শুরু করেছে। মানুষের জীবন-জীবিকার জ্বলন্ত ইস্যুগুলিকে চাপা দিয়ে ধর্মীয় হিংসা ও বিদ্বেষের মাদকতায় ডুবিয়ে দিতে চাইছে। ঐক্য ও সংহতির এই ভয়ংকর অভ্যন্তরীণ বিপদ রুখতেই হবে। দেশের স্বার্থে, জনস্বার্থে এই ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটানো অত্যন্ত জরুরি। এর জন্য দেশ জুড়ে প্রচার চালানো ও জনগণকে সমবেত করতে হবে। বামপন্থীরা একা সে কাজ করতে পারবে না।দেশ ও সংবিধান বাঁচাতে -
এখন বিজেপি বিরোধী অধিকাংশ দল একজোট হচ্ছে। এদের সবার ইতিহাস অতীতে বিজেপি বিরোধিতায় একই রকম নয়। এই মুহূর্তে অনেকেই বলছে আমরা বিজেপি বিরোধী। সন্দেহের অবকাশ কি নেই? আছে। এই জোটের অনেক দলই আছে যারা এনডিএ জোটের শরিক ছিল বা মন্ত্রিসভার অংশগ্রহণকারী ছিল। হ্যাঁ, ২৬ দলের অনেকেরই নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে। পাঞ্জাব ও দিল্লিতে আপের সাথে কংগ্রেসের দ্বন্দ্ব আছে, উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির সাথে কংগ্রেসের দ্বন্দ্ব আছে; কেরালায় আমাদের সাথে কংগ্রেসের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। রাজ্যস্তরে রাজ্যের প্রশ্ন মীমাংসিত হবে, দেশের প্রশ্ন জাতীয় স্তরে মীমাংসা করতে হবে। ভারতের রাজনীতিতে এই ঘটনা কি নতুন? না। ২০০৪ সালে অনেক আসনে কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের লড়াই হয়, আমরা জয়ী হই এবং ইউপিএ সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন জানাই। এখন আমরা কি করব - অংশগ্রহণ বা যোগ দেব না? ২৬ দলের "ইন্ডিয়া"তে তৃণমূল কংগ্রেস যোগ দিচ্ছে বলে সিপিআই(এম) বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মঞ্চে অনুপস্থিত হবে এমন কথা পার্টি কংগ্রেস বলেনি।জ্যোতি বাবু বলতেন- "বিজেপি অসভ্য, বর্বর দল।" বিজেপিও কমিউনিস্টদের প্রধান শত্রু মনে করে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী এক সাক্ষাৎকারে আমাদের মতাদর্শকে বিপজ্জনক বলে আখ্যায়িত করেছেন। সঠিকভাবেই ২৩ তম কংগ্রেসের রাজনৈতিক লাইনের আহ্বান- আমাদের প্রধান কাজ বিজেপিকে বিচ্ছিন্ন ও পরাস্ত করা।
রাজ্যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে -
শ্রদ্ধেয় জ্যোতি বাবু এও বলতেন - 'মমতা ব্যানার্জির বড় অপরাধ কি? উনি পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে ডেকে এনেছেন।' আর এখন সাম্প্রদায়িকতার চাষে সব উপকরণ জুগিয়ে চলেছে। মমতার রাজত্বে আরএসএসের শাখা-প্রশাখা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এমএলএ-এমপির সংখ্যা বেড়েছে। এ রাজ্যে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা বাড়ছে। মোদি-মমতাকে হারাবার যে কোন চেষ্টায় সিপিআই(এম) তাই অগ্রণী ভূমিকা নেবে। আবার রাজ্য পার্টি সাংগঠনিক প্লেনামে তৃণমূল কংগ্রেস এর চরিত্র স্পষ্টভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে: "তৃণমূল কংগ্রেস ভারতে এমন এক ব্যতিক্রমী আঞ্চলিক দল রাজ্যে ক্ষমতায় এসে যারা একতরফা ফ্যাসিস্টসুলভ সন্ত্রাসের পদ্ধতিতে নজিরবিহীন শাসন পরিচালনা করছে। আন্তর্জাতিক কি জাতীয় স্তরে দক্ষিণপন্থী, নয়া ফ্যাসিবাদী, মৌলবাদী শক্তি ও দলগুলি সাম্রাজ্যবাদী নয়া উদারনীতির অনুগামী। তৃণমূল কংগ্রেসও ব্যতিক্রম নয়। সমাজের নিকৃষ্ট সমাজবিরোধীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত এই দল, দেশের প্রতিক্রিয়াশীল ও কর্পোরেট শক্তির মদতপুষ্ট এবং রাজ্যের কায়েমী স্বার্থের মুখ্য রাজনৈতিক প্রতিনিধি বর্তমানে ধান্দার ধনতন্ত্রের সৃষ্ট রাজনীতির উগ্ররূপ। গ্রাম ও শহরে গজিয়ে ওঠা নব্য ধনী ও তাদের পোষ্য লুম্পেন বাহিনী এদের অন্যতম শ্রেণীভিত্তি। চিটফান্ডের কার্যকলাপ, দুর্নীতি, কেলেঙ্কারি, ঘুষ, তোলাবাজিকে সর্বস্তরে এই দল প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। এরা পশ্চিমবঙ্গকে প্রতিবাদশূন্য ও বিরোধীশূন্য করার চেষ্টা করছে।" - তাই আমাদের রাজ্যে তৃণমূলকে পরাস্ত করাই অন্যতম কাজ। কোন সন্দেহ নেই তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে বামপন্থীদের রুখতে বিজেপিকে জায়গা করে দিচ্ছে। রাজ্যে সমাজ ও অর্থনীতির শোচনীয় অবস্থা ২৬ তম রাজ্য সম্মেলনের রিপোর্টে বিস্তৃতভাবে আলোচিত। রাজ্যের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে ভয়ংকর অবনতির দিকে- এখন সাড়ে ছয় লক্ষ কোটি টাকার উপর ঋণের বোঝা। রাজ্যে কাজ নেই - লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষ কাজের সন্ধানে কেরালা সহ বিভিন্ন রাজ্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কৃষি অর্থনীতি ও কৃষক, খেতমজুরের সংকট মারাত্মক আকার নিয়েছে-সমবায় সমিতি ধ্বংস, মাইক্রোফিনান্সের জালে কৃষক, খেতমজুর - আত্মহত্যা বাড়ছে। যতই বিভ্রান্তি আনার চেষ্টা হোক রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক ইঞ্চি জমি ছাড়ার কোন প্রশ্নই নেই। তৃণমূলের চরিত্রের মূল্যায়নের কোন পরিবর্তন হয়নি। গণশক্তিতে কমরেড সীতারাম ইয়েচুরির সাক্ষাৎকার, পার্টি রাজ্য সম্পাদক কমরেড সেলিমের সাংবাদিক সম্মেলনে স্পষ্ট বক্তব্যে তা প্রতিফলিত। এছাড়াও কমরেড প্রকাশ কারাট, কমরেড বৃন্দা কারাট ও কমরেড সূর্যকান্ত মিশ্র সহ আমাদের নেতৃত্ব এ বিষয়ে পার্টির রাজনৈতিক লাইন পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছেন।তৃণমূলের নির্লজ্জ U-turn
বর্তমান সময়ে পার্লামেন্টের অভ্যন্তরে এবং বাইরেও তৃণমূল ও বিজেপি কিভাবে পরস্পরকে সাহায্য করেছে তার নানা উদাহরণ আছে। এটা তো ঠিক RSS’র 'দেবী দুর্গা' নাগপুরেরই প্রোডাক্ট। বিজেপির মন্ত্রী সভায় তিনি ও তাঁর দলের অংশগ্রহণ সকলের জানা। আরএসএসকে তৃণমূল সুপ্রিমো 'দেশপ্রেমিক' শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেন। নারদকান্ডে সংসদে আদবানির নেতৃত্বে গঠিত এথিক্স কমিটির একটিও সভা হলো না কেন? কেন ইডি, সিবিআই-এর বারংবার সমন পাঠানো সত্ত্বেও তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা হাজির না হওয়ার সাহস পাচ্ছেন? আদালতের ধমক সত্ত্বেও ইডি, সিবিআই দুর্নীতির পর্দা উন্মোচনে সক্রিয় নয় কেন? দীর্ঘসূত্রিতা কিসের? উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূল ভোটদানে বিরত ছিল কেন - আসলে পারস্পরিক বোঝাপড়া স্পষ্ট। এমনকি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও শেষ মুহূর্তে দ্রৌপদী মুর্মুর সমর্থনে মমতা বক্তব্য রেখেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য বিধানসভার আসন বিন্যাস অনুযায়ী বিজেপি দুটি আসনে প্রার্থী দিতে পারতো কিন্তু তৃণমূলকে একটি আসন ছেড়ে দিয়েছে। কেন? অমিত মিত্রকে জিএসটির কাউন্সিলের চেয়ারপার্সন করেছিল। এই মার্চ ২০২৩-এ তৃণমূলের রাজনৈতিক অবস্থান কী ছিল? গত ৪-৫ মাসে বারংবার মমতা ব্যানার্জির রাজনৈতিক অবস্থানের পরিবর্তন কেন? তারা বলেছিল যে তারা ইকুইডিস্টান্স মেনটেইন করবে বিজেপি ও কংগ্রেস থেকে। বর্তমান যে সংসদ অধিবেশন চলছে, সেখানে তার প্রতিফলন দেখা যাবে। ন’টি বিরোধী রাজনৈতিক দলের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি দিয়েছিল এজেন্সিগুলির সক্রিয়তাকে নিয়ে, যাতে কংগ্রেস, বাম, ডি এম কে, জেড ইউ, জেডিএস ছিল না। মাত্র কয়েক মাস আগেই তৃতীয় ফ্রন্ট খোলার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নবীন পট্টনায়ক, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, কুমার স্বামী, নিতিশ কুমার-এর কাছে দরবার করলেন কিন্তু পারলেন না। সাগরদিঘী নির্বাচনে হারার পর নবান্নে বলেছিলেন - আমরা কোন বিরোধী জোটে নেই, একাই লড়বো। আর U-turn নিয়ে তিনিই পাটনা ব্যাঙ্গালোরের সভায় উপস্থিত হয়েছেন সম্পূর্ণ নিজেকে বাঁচাতে, নিজের স্বার্থে। একইভাবে মোদির "সুদৃঢ় নেতৃত্বে"র বেলুনও চুপসে গেছে - ব্যাঙ্গালোরের ২৬ দলের সভার দিনই তথাকথিত ৩৮ দলের সভা দিল্লিতে ডাকতে হয়েছে। আসলে দুজনেই ভীত, সন্ত্রস্ত। দুদিন আগেও, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টার সেখানে সাম্প্রদায়িক হিংসার পরিপ্রেক্ষিতে যে উক্তি করেছিলেন, "সবাইকে নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।" নবান্ন থেকে রাজধর্ম পালনের অঙ্গীকারের বিপরীতে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীকে তারিফ করে প্রতিক্রিয়া দিলেন - আই আ্যপ্রিসিয়েট ইট। আসলে তৃণমূলে ও বিজেপির এই পারস্পরিক অ্যাপ্রিসিয়েশনের রসায়নই ওদের আসল ডিএনএ। দেশের স্বার্থে বিজেপিকে বিচ্ছিন্ন ও পরাস্ত করতেই হবে। আর রাজ্যের স্বার্থে তৃণমূলকে পরাস্ত করাই সবচেয়ে জরুরী কাজ।শেয়ার করুন