এবারের মে দিবস

আভাস রায় চৌধুরি

সময় এখন বড় বিষণ্ণ। মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ। শহীদ হয়েছেন বামকর্মী হরগোবিন্দ দাস, চন্দন দাস। পুলিশের গুলিতে নিহত তরুণ পরিযায়ী শ্রমিক ইজাজ আহমেদ। পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিহত পর্যটক। তা রুখতে গিয়ে শহীদ খেটেখাওয়া কাশ্মীরি, দেশের জওয়ান। গাজার রাফা এখন পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্ধভূমি। এত রক্তপাত! কষ্ট যন্ত্রণায় সাধারণ মানুষের ভিতরেও ঘটে চলেছে রক্তক্ষরণ। মনুষ্যত্বের নির্মম নিষ্পেষণ মনে পড়ে যায় 'বিসর্জন'-র গোবিন্দ মানিক্যের সেই সংলাপ, 'গৃহ মাঝে পূণ্য প্রেম বহে, তারও সাথে মিশিয়াছে রক্তধারা! এত রক্ত স্রোত কোন দৈত্য দিয়েছে খুলিয়া— ভক্তিতে প্রেমেতে রক্ত মাখামাখি হয়…' মাথা ঝিম হয়ে আসা এই গুমোট বিষণ্ণতার মাঝেও মানুষ জীবন ও ভালোবাসার জন্য উঠে দাঁড়িয়েছেন। অথচ এই বিষণ্ণতায় রাজনৈতিক হিন্দুত্ববাদী ও কর্পোরেট চালিত মিডিয়ার একাংশ সীমাহীন ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। ঠিক তার পাশেই খেটেখাওয়া হিন্দু-মুসলমানের ঐক্য। কাশ্মীরের সমস্ত মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে। আরএসএস-বিজেপি’র তৈরি করে রাখা ভাষ্যকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে মানুষের সম্প্রীতির বিকল্প ভাষ্য। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এসেছে এবারের মে দিবস।

ফেডারেশন অব অর্গানাইজড ট্রেডস অ্যান্ড লেবার ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে ১৮৮৬ -র ১ মে শিকাগোর হে মার্কেট স্কোয়ারে শ্রমিকদের প্রতিবাদ বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন চারজন শ্রমিক। ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলন হে মার্কেটে শহীদদের আত্মত্যাগ স্মরণ করে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালনের ডাক দেয়। সেই থেকে প্রতি বছর ফিরে আসে 'মে দিবস'। নিয়ে আসে নতুন নতুন পরিস্থিতিতে সংগ্রামের বার্তা।

১৮৮৬-র পর পৃথিবীটা প্রায় একেবারেই বদলে গেছে। বদলে গেছে অর্থনীতি, সমাজ, রাজনীতি। লালসা মেটাতে পুঁজি শুষে নিয়েছে মানুষের শ্রম, প্রকৃতি। লুট করে নিয়েছে মেহনতিদের মেহনতে সৃষ্ট যাবতীয় সম্পদ। বাজার দখল আর বাজারের পুনর্দখল নিয়েই পৃথিবী দেখেছে দুটি বিশ্বযুদ্ধ। তারই মাঝে সফল রুশ বিপ্লব। শ্রমিক শ্রেণির প্রথম সফল সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পৃথিবীতে সমাজতন্ত্রের বিজয় অব্যাহত থেকেছে। আবার তিন দশক আগে পৃথিবী দেখেছে, সোভিয়েত ইউনিয়ন সহ পূর্ব ইউরোপের সমাজতন্ত্রের বিপর্যয় এবং পৃথিবীব্যাপী নয়া উদারবাদী আগ্রাসনের সূচনা।

আজকের নয়া উদারবাদে শ্রমিক শ্রেণির অস্তিত্ব ক্রমশ বিপণ্ণতার দিকে চলেছে। উৎপাদনের ক্ষেত্রকে পিছনে ঠেলে দিয়ে প্রধানত আর্থিক কারবারের মাধ্যমেই মুনাফার পাহাড় উঁচু হচ্ছে। যতটুকু উৎপাদনের ক্ষেত্রে রয়েছে সেখানেও এযাবৎকাল মেহনতিরা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে অধিকারগুলি অর্জন করেছিল তার সবটুকুকেই বাতিল করার বেপরোয়া উদ্যোগ নিয়েছে আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজি। আজ পুঁজি-শ্রমের মৌলিক দ্বন্দ্বে পুঁজির আধিপত্যকে নিরঙ্কুশ ও প্রশ্নহীন করার জন্যই শ্রম সম্পর্কের বদল ঘটিয়ে ফেলা হচ্ছে। সংগঠিত ক্ষেত্রে স্থায়ী শ্রমিকের বদলে ঠিকা ও অনিয়মিত শ্রমিকদের দিয়ে স্থায়ী কাজ (perennial nature of job) করানো এখন সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কোভিড পর্বের মুনাফা অর্জনের অভিজ্ঞতায় পরিষেবা ক্ষেত্রে ওয়ার্ক ফ্রম হোম এখন শ্রমিক শোষণের নতুন লাভজনক প্রতিষ্ঠিত পন্থা। এই সময় থেকেই শ্রমের বাজারে হাজির হওয়া গিগ ওয়ার্কার এখন প্রায় সর্বত্র ব্যাপক হারে বাড়ছে। এদের কাজের ঘণ্টা, মজুরি, কাজের স্থায়িত্ব, সামাজিক সুরক্ষা কিছুই নেই। সারা পৃথিবীতে বিশেষত আমাদের মতো দেশে বিপুল সংখ্যক অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক রয়েছেন।

শ্রম সম্পর্কে এই পরিবর্তন, অর্থনীতির এই নতুন ধরনের সবকটি বৈশিষ্ট্য আমাদের প্রতিদিনের চেনা পরিবেশে বিরাজমান। কর্পোরেট চালিত সংবাদ মাধ্যম যতই উন্নয়ন আর চকচকে জীবনের ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করুক না কেন, দুনিয়া জুড়ে চলছে লুট। সামাজিক সম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ আর মেহনতির গতরের বেপরোয়া লুট। অর্থনীতির পণ্ডিতরা অনেকেই বলছেন সঙ্কটগ্রস্ত নয়া উদারবাদে ক্রমবর্ধমান মুনাফা সংগ্রহের আজকের পদ্ধতি প্রিমিটিভ অ্যাকুমুলেশন অব ক্যাপিটাল অর্থাৎ পুঁজির আদিম সঞ্চয়নের মতোই চলছে। ফলে শোষণ, বৈষম্য লাগামহীন। নয়া উদারবাদে আজকের পুঁজিবাদী অর্থনীতির সঙ্কট সমাধানের কোনও রাস্তা আর খোলা নেই। তিন দশক আগে উৎপাদনের ক্ষেত্রকে লঘু করে কেবলমাত্র ফাটকা পথে মুনাফা খুঁজেছিল নয়া উদারবাদী পুঁজিবাদ। উৎপাদন না থাকলে কাজ থাকে না। কাজ না থাকলে মানুষের রোজগার থাকে না। মানুষের রোজগার না থাকলে বাজার সম্প্রসারিত হয় না, বরং ছোট হয়ে যায়। আজকের সঙ্কটের এটাই মূল কারণ। বেকারির হার ও সংখ্যায় শীর্ষস্থান এখন ভারতের দখলে। সর্বভারতীয় এই অধোগতির সঙ্গেই তাল মিলিয়ে চলছে পশ্চিমবঙ্গ। এখানে শিল্প নেই কাজ নেই। সারা দুনিয়ার সঙ্গে তাল রেখে এদেশ এ রাজ্যেও সার্ভিস সেক্টরে ছাঁটাইয়ের খাঁড়া ঝুলছে।

গ্রামাঞ্চলেও কাজ নেই। দশকের পর দশক কৃষি থেকে আয় কমেই চলেছে। কৃষিতে কর্পোরেটের অনুপ্রবেশ ছোট মাঝারি কৃষকদের সঙ্কট বাড়িয়ে চলেছে। ছোট মাঝারি জমির মালিকদের উল্লেখযোগ্য অংশ সারা বছর কৃষির সঙ্গে যুক্ত থাকছেন না। ফলে কৃষি ক্ষেত্রেও সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র কর্মসঙ্কট। বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের লোক দেখানো ঝগড়ায় দু’বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ ১০০ দিনের কাজ। বিপুল সংখ্যায় গ্রামীণ প্রলেতারিয়েত কার্যত দিশাহারা। গ্রামের পর গ্রাম এখন পুরুষ শূন্য। শহরের বস্তি ও গ্রামাঞ্চল থেকে কয়েক লক্ষ মানুষ কাজের সন্ধানে চলে গেছেন বাইরে। এমনকি মহিলারাও কাজের জন্য বাইরে চলে যাচ্ছেন। গ্রাম কিংবা পাড়ায় তাদের নাম ছিল আলাদা আলাদা এখন সবারই একটা পরিচয়, 'পরিযায়ী শ্রমিক'। ঘর ছাড়ছে রোজগারের আশায়, ফিরছে লাশ হয়ে, না হয় হাত-পা হারিয়ে।

Source: Google

নয়া উদারবাদ কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিকে কার্যত ধ্বংস করে দিয়েছে। ভারতেও তাই। বিশেষত ২০১৯ সালের পর প্রায় সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের অন্তর্জলি যাত্রা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। অথচ ২০০৮ সালে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার প্রভাব ভারতে অতটা সর্বব্যাপী হতে পারেনি। তার একমাত্র কারণ সেই সময়েও জাতীয় অর্থনীতির কোর-সেক্টর রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রকে আজকের মতো ধ্বংস করতে পারেনি আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজি। ঢালাও বেসরকারিকরণের এখনকার চালু পদ্ধতি হলো ‘ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপ লাইন’। এনএমপি’র মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বেসরকারিকরণের অন্যতম ক্ষেত্র ও উদাহরণ এখন ভারতীয় রেল। রেল শ্রমিক-কর্মচারীরা এর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। কয়লা ক্ষেত্রে এনএমডি এবং রেভিনিউ শেয়ার পদ্ধতি হলো ঢালাও বেসরকারিকরণের নতুন হাতিয়ার। এর বিরুদ্ধে লড়াই করছে কয়লা শিল্পের শ্রমিকরা। চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ, ইস্পাত, বিদ্যুৎ, বন্দর, ব্যাঙ্ক, বিমা, টেলিকম সর্বত্র শিল্প ও শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ রক্ষার লড়াই চলছে।

চটকলে চলছে শ্রমিকদের কাজ, মজুরি ও অধিকার বজায় রাখার লড়াই। চা বাগান শ্রমিকরা লড়াই করছেন ন্যূনতম মজুরি আদায়ের জন্য। পাশাপাশি তৃণমূল আশ্রিত জমি হাঙরদের হাত থেকে চা বাগানের জমি রক্ষার জন্যেও জবরদস্ত লড়াই দিচ্ছেন শ্রমিকেরা। বামফ্রন্ট সরকারের সময় ছোট মাঝারি শিল্প স্থাপনে দ্রুত পশ্চিমবাংলা প্রথম স্থান অর্জন করেছিল। রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে নতুন গড়ে ওঠা কারখানাগুলিতে কয়েক লক্ষ শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করতেন। এই শিল্প ক্ষেত্র এখন গভীর সঙ্কটে। নির্বিচারে ছাঁটাই, স্থায়ী কাজে ঠিকাকরণ, কম মজুরিতে বেশি সময় খাটানো এখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়, কিন্তু তা কার্যত লাগু হয় না। নিয়মিত তোলার বিনিময়ে শাসকদলের তথাকথিত ট্রেড ইউনিয়ন মালিকের দালালি করছে।

২০০৮ সালের পর একই সঙ্গে নয়া উদারবাদের সঙ্কট এবং আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির লাগাম ছাড়া লুট প্রায় দুই দশকে পার করতে চলেছে। শ্রমজীবী মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে। আবার তারা লড়াইয়ের রাস্তাতেও হাজির হচ্ছেন। তাই বুর্জোয়া গণতন্ত্রও এখন আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির পথের কাঁটা। দেড় দশক ধরে গোটা পৃথিবীতেই অতি দক্ষিণপন্থী পথে স্বৈরাচারী ও নয়া ফ্যাসিবাদি শক্তি পৃথিবীর দেশে দেশে শাসন ক্ষমতা দখল করেছে। আমাদের দেশ ও আমাদের রাজ্যে এই অতি দক্ষিণপন্থী স্বৈরাচারী শক্তি খেটেখাওয়া ও সাধারণ মানুষের সমস্ত অধিকার পদদলিত করতে বেপরোয়া। আর সে কারণেই বুর্জোয়া গণতন্ত্রের 'সাংবিধানিক-গণতন্ত্র'-র কাঠামো ধ্বংস করা হচ্ছে। ফ্যাসিস্ত চরিত্র সম্পন্ন মোদি সরকারের নয়া শ্রম কোড চালুর উদ্যোগ এর সঙ্গেই সংযুক্ত।

নয়া শ্রম কোডে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার, কাজের সময়, ন্যূনতম মজুরি, সামাজিক সুরক্ষা, কাজের শর্তাবলী সবই আক্রান্ত। শ্রমিক-কর্মচারীদের দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে অর্জিত সংবিধানের মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃত শ্রমিক ইউনিয়নে সংগঠিত হওয়া, যৌথ দর-কষাকষি, ইউনিয়নের স্বীকৃতি, ধর্মঘট সহ আন্দোলন-বিক্ষোভের যাবতীয় অধিকার কেড়ে নেওয়ার স্বৈরাচারী ব্যবস্থা কায়েম করতে তৎপর নয়া শ্রম কোড। এই শ্রম কোডে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য সম্মিলিত ও সংগঠিত পদক্ষেপকে অপরাধ হিসাবে দেখা হয়েছে। অপরাধের শাস্তি হিসাবে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১১১ নম্বর ধারায় জেল সহ পুলিশি ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রাখা হয়েছে। অথচ মালিকদের জন্য সাত খুন মাফ। মোদি সরকার এখনও পর্যন্ত তিনটি শ্রম কোড লাগু করতে না পারলেও প্রতি মুহূর্তে বেপরোয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। শ্রম কোড লাগু হওয়ার আগেই শ্রমিক কর্মচারীদের আন্দোলন করার অধিকার মানতে অস্বীকার করছে বড় বড় কর্পোরেট থেকে প্রায় সব ধরনের মালিকেরা। মুখে শ্রম কোডের বিরোধিতা করলেও তৃণমূল কংগ্রেস সরকারও শ্রম সম্পর্কের ক্ষেত্রে লুটেরা মালিকদের পক্ষেই। শ্রমিকদের ক্রীতদাসে পরিণত করার নয়া শ্রম কোডের বিরুদ্ধে দেশের কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকে আগামী ২০ মে সর্বভারতীয় সাধারণ ধর্মঘট। এবারের মে দিবস খেটেখাওয়া মেহনতিদের কাছে ধর্মঘটকে সফল করার আহ্বান জানাচ্ছে। ঐক্যবদ্ধ লড়াই করেই স্বৈরাচারী নয়া শ্রম কোড প্রতিহত করতে হবে।

স্বৈরাচারী দক্ষিণপন্থী রাজনীতির অন্যতম হাতিয়ার হলো খেটেখাওয়া মানুষকে ঘামের দাম আদায়ের কথা ভুলিয়ে দিয়ে জাত, ধর্ম, ভাষা, সম্প্রদায়ের নামে বিদ্বেষ-বিভাজন রাজনীতির কানাগলিতে আটকে রাখা। সারাদেশে আরএসএস-বিজেপি রাজনৈতিক হিন্দুত্বের মতাদর্শকে দৃঢ় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও বিভাজন রাজনীতিকেই বজায় রেখেছে। মুর্শিদাবাদের ঘটনা কিংবা সাম্প্রতিক পাহেলগাম সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের ঘটনাকে এই লক্ষ্যেই ব্যবহার করা হচ্ছে। পশ্চিমবাংলাতে তৃণমূল কংগ্রেস একই বিদ্বেষ-বিভাজন ভাষ্যকেই বজায় রাখতে চায়। বিজেপি কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের লোক দেখানো রাজনৈতিক বিরোধিতা করলেও আরএসএস-বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস লুটতন্ত্র এবং বিভাজনের রাজনীতিতে এক সূত্রে বাঁধা।

সারা দুনিয়ার মতোই এদেশ, এ রাজ্যের পরিস্থিতি মেহনতিদের কাছে অনুকূল নয়, প্রতিকূল। আক্রমণ বহুমুখী, চ্যালেঞ্জও বহুমুখী। আবার মেহনতিদের ঐক্য গড়ে ওঠা এবং তাকে প্রসারিত করার সম্ভাবনাও আছে। খেটেখাওয়া মানুষ জানেন, লড়াইটা একদিন দু’দিন দু-তিন মাস কিংবা কয়েক বছরের নয়। এ লড়াই শেষ বিচারে শ্রেণি শোষণ আর সামাজিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে। তাই এ লড়াইয়ের পথ দীর্ঘ। ছোট ছোট লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই খেটেখাওয়া মানুষের চেতনা বড় লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হয়। নিজেদের চিনতে পারে, বন্ধুদের খুঁজতে পারে, নিজেদের শক্তিকে বুঝতে পারে, বড় লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে পারে। সেই সম্ভাবনাই তৈরি হচ্ছে। লড়াইয়ের সম্ভাবনাকে সংহত করে সমস্ত খেটেখাওয়া সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাবেই শ্রমিক শ্রেণি।

৮ ঘণ্টার কর্ম দিবসের দাবি পুঁজিবাদী পৃথিবীতে স্বীকৃত হয়েছিল। নয়া উদারবাদী লুটতন্ত্র শুধুমাত্র তাকে অস্বীকার করছে না, শ্রমিকদের কাছ থেকে এই অধিকার কেড়ে নিতে তৎপর। এখন পৃথিবীব্যাপী শ্রেণি ভারসাম্য সাম্রাজ্যবাদের অনুকূলে। শ্রমজীবী মানুষদের শ্রেণি-অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে থাকতে হচ্ছে। প্রতিকূল পৃথিবীতে বদলে যাওয়ার শ্রম সম্পর্কে শুধু টিকে থাকলেই হবে না, শ্রমিক শ্রেণির অস্তিত্ব রক্ষা ও শ্রেণি ভারসাম্য বদলের লড়াই শক্তিশালী করার জন্য নতুন শিল্প স্থাপনের সংগ্রামে নামতে হবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স শ্রমিক শ্রেণির সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ হাজির করেছে। শ্রমিক শ্রেণিকেই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এটা খুবই কঠিন। এ ছাড়া কোনও বিকল্প খোলা নেই। এখানেই সমাজের তরুণ প্রজন্ম, যারা ভবিষ্যতের শ্রমিক, তাদের সঙ্গে ঐক্য গড়ে তোলার প্রশ্নটি সংযুক্ত। এখানেই কৃষক, খেতমজুর সহ সমস্ত অ-শোষক শ্রেণির সঙ্গে ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা। ২০ এপ্রিল মেহনতিদের ব্রিগেডে শ্রেণি ঐক্য গড়ে ওঠার নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। তা সংহত করেই সমুখ পানে এগিয়ে যাওয়ার ডাক দিচ্ছে এবারের মে দিবস।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন