লকডাউন (Lockdown) শুরু হওয়ার পর থেকে লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক খাদ্যকষ্টে ভুগছেন। গত কয়েক সপ্তাহে এই বিতর্ক ক্রমে বেড়েছে যে, দেশব্যাপী লকডাউনের ফলে দরিদ্রদের মুখে খাদ্য জুটছে না। অথচ ফুড কর্পোরেশনের গুদামঘর ভর্তি রয়েছে। CPI(M) পার্টির পক্ষ থেকে পূর্বেই দাবি তোলা হয়েছিল, গোটা দেশে খাদ্য ভাণ্ডারে মজুত থাকা ৭.৫ কোটি টন খাদ্যশস্য রেশন কার্ড থাকা না থাকার উপর নির্ভর না করে সব পরিযায়ী শ্রমিক ও গরিব মানুষদের মধ্যে পরিবার পিছু ৩৫ কেজি হিসাবে কেন্দ্রকে অবিলম্বে বন্টন করতে হবে। কিন্তু কেন্দ্র সরকার সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা না করে, বাড়তি চাল দিয়ে স্যানিটাইজার বানানোর কাজে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নিন্দনীয়।
জৈব জ্বালানি সংক্রান্ত জাতীয় নীতি, ২০১৮-র উল্লেখ করে সরকার এদিন জানিয়েছে, NBCC-র এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই বৈঠকে নেতৃত্ব দেন পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। প্রসঙ্গত, সরকারের ওই নীতিতে অতিরিক্ত খাদ্যশস্যকে ইথানলে রূপান্তরিত করার কথা বলা হয়েছিল। মন্ত্রকের তরফে পেশ করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া থেকে প্রাপ্ত অতিরিক্ত চাল থেকে অ্যালকোহল-যুক্ত স্যানিটাইজার নির্মাণ এবং ইথানলের সঙ্গে পেট্রোল মেশানোর পরিকল্পনায় সম্মতি মিলেছে।'' জৈব জ্বালানি সংক্রান্ত জাতীয় নীতিতে বলা হয়েছে, যদি কোনও বছর কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়, তাহলে এই নীতি অনুসারে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য থেকে ইথানল তৈরি করায় অনুমতি দেওয়া যাবে জাতীয় জৈব জ্বালানি সমন্বয় কমিটির অনুমোদন পেলে।
লকডাউন শুরু হওয়ার পর অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন দরিদ্রদের অতিরিক্ত খাদ্যের প্রতিশ্রুতি দেন। ৫ কেজি গম বা চাল দেওয়া হবে তাঁদের। তবে কেবল তাঁরাই এটা পাবেন, যাঁদের রেশন কার্ড রয়েছে। কিন্তু এখনো এই ঘোষণা কার্যকর হয়নি। তাই সাধারণ মানুষ কটাক্ষ করে বলছে, রেশন নেই ,ভাষণ আছে।
বহু পরিযায়ী শ্রমিক ভিন রাজ্যে আটকে রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে তাঁদের রেশন কার্ড নেই। অনেকের রেশন কার্ড হয়নিই। এই বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক খাবার বিতরণের কি হবে, তার কোনো সুস্পষ্ট পদক্ষেপ লক্ষণীয় হয়নি। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে, করোনার জন্য মানুষ মারার আগে, ক্ষিদের জ্বালায় মরবে।
ছবি - সতীশ আচার্য্য
শেয়ার করুন