Site icon CPI(M)

The State & Its Inhibitions: How Marx Showed the Way

marx-eighteenth brumaire

সৌম্যদীপ রাহা

১৮৫২ সালে কার্ল মার্কসের বয়স ৩৪ বছর। পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসের মানচিত্রটা তখন অনেকটাই অন্যরকম । ফরাসি বিপ্লব সম্পন্ন হয়েছে ৬৩ বছর আগে, তার প্রভাবে গোটা বিশ্ব তখনও উত্তাল। সাম্য, মৈত্রী আর স্বাধীনতার স্লোগান তখনও জোয়ারে। ১৮৫১-তে আবার ফরাসি অভ্যুত্থান ঘটে। এইবার দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি এবং নেপোলিয়ন বোনাপার্ট’র ভাইপো ল্যুই নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, তৃতীয় নেপোলিয়ন হিসাবে দ্বিতীয় সাম্রাজ্যের সম্রাট হয়েছিলেন।  আর এর ফলে ফ্রান্সে কায়েম হয়েছিল এক স্বৈরাচারী শাসন। ১৮৫১-এর ডিসেম্বর থেকে ১৮৫২-এর মার্চ পর্যন্ত ‘নিউ ইয়র্ক সিটি’তে একটি ধারাবাহিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হয়নি। ঐ বছরই জোসেফ ভেইডেমেয়ার সম্পাদিত Die Revolution নামে এক মাসিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ‘লুই বোনাপার্টের অষ্টাদশ ব্রুমেয়ার’। ১৮৪৮ থেকে ১৮৫১ সালের ফ্রান্সের বৈপ্লবিক ঘটনাবলীর বাস্তব বিশ্লেষণের ভিত্তিতে মার্কসের বিশ্লেষণ।

এ কি শুধুই ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা? না। কয়েকটি বিষয়ের উপর মনোযোগ দিলেই পাঠক সে কথা বুঝবেন। শ্রেণি সংগ্রাম এবং সর্বহারা বিপ্লবের তত্ত্ব , রাষ্ট্র এবং সর্বহারা একনায়কত্ব এবং ঐতিহাসিক বস্তুবাদ- এমনই বুনিয়াদী নীতিসমূহের আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা মার্কস এই রচনায় দিয়েছেন। এর আশি বছর পর ‘The Doctrine Of Fascism’ শিরোনামে জিওভানি জেন্টাইল ও বেনিটো মুসোলিনি ফ্যাসিবাদ’কে ব্যখ্যা করেন। ১৮৫২ সালে লেখা বইতে মার্কস জখন স্বৈরাচারী শাসকের সর্বোচ্চ রূপকে ব্যখ্যা করছেন তখনও ফ্যাসিবাদ শব্দটি অজানা। কিন্তু তিনি দেখালেন স্বৈরাচারী শাসক কীভাবে নিজের বৈশিষ্ট্যগুলিকেঅতিক্রম করে শোষণের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যায়। বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী Robert C Tucker মার্কসের লেখা বইটির বিশ্লেষণ করে বলেছেন- ’prologue to later Marxist thought on the nature and meaning of fascism.’ 

১৮৮৫ সালে হামবুর্গ থেকে প্রকাশিত হয় বইটির তৃতীয় সংস্করণ। সেই সংস্করণের ভূমিকায় ফ্রেডরিক এঙ্গেলস লিখলেন- ‘প্রথম প্রকাশের তেত্রিশ বছর পরেও যে ‘অষ্টাদশ ব্রুমেয়ার’-এর নতুন সংস্করণের প্রয়োজন হলো, এর থেকে প্রমাণ হয় যে এই ক্ষুদ্র পুস্তিকাটির মূল্য আজও একটুও হ্রাস পায় নি।………. প্রথম মার্কসই ইতিহাসের গতির এই প্রধান নিয়মটি আবিষ্কার করেন যে, রাজনীতি, ধর্ম, দর্শন অথবা ভাবাদর্শের অন্য যেকোনো ক্ষেত্রেই চলুক না কেন, সমস্ত ঐতিহাসিক সংগ্রামই প্রকৃত পক্ষে সামাজিক শ্রেণীগুলির মধ্যে সংঘর্ষ কেও আবার নিয়ন্ত্রিত করে সেগুলিরই অর্থনৈতিক অবস্থার বিকাশের মাত্রা, উৎপাদনের চরিত্র প্রণালী,সেটা দিয়ে নির্ধারিত বিনিময় – প্রণালী। প্রকৃতি বিজ্ঞানের রাজ্যে শক্তির রূপান্তরের নিয়ম যেমন , ইতিহাসের ক্ষেত্রে এই নিয়মটিও তেমনই গুরুত্বপূর্ণ….।’

Karl Marx Monument in Chemnitz – Saxony, Germany

মার্কসের বইতে মোট ছটি পর্ব। প্রথম পর্বে ইতিহাসের বস্তুবাদী ব্যাখ্যা, বুর্জোয়া প্রজাতন্ত্রের তাৎপর্য এবং বৈপ্লবিক শিক্ষা- এই তিনটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। অধ্যায়ের শুরুর দিকে লিখছেন- ‘মানুষ নিজেই তার ইতিহাস রচনা করে বটে, কিন্তু ঠিক নিজের খেয়াল খুশিমতো নয়, নিজেদের নির্বাচিত পরিস্থিতিতে নয়, অতীত থেকে প্রদত্ত ও আগত পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে। মৃত পূর্বপুরুষদের সমস্ত ঐতিহ্য জীবিত লোকের মাথায় দুঃস্বপ্নের মতো চেপে বসে থাকে। ঠিক যখন মনে হয় তারা নিজেদের মধ্যে ও বস্তুজগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধনে, তথা অভূতপর্ব কোনও সৃষ্টির কাজে প্রবৃত্ত হয়েছে,সেইসব বৈপ্লবিক সন্ধিক্ষণেই তারা উদ্বেগাকুল হয়ে অতীতের ভূত নামিয়ে নিজেদের কাজে লাগাবার জন্যে ব্যাকুল হয়ে ওঠে এবং তাদের নাম, রণধ্বনি ও সাজসজ্জা ধার করা ভাষায় উপস্থিত করতে চায়।’

ঐতিহাসিক বস্তুবাদের এক বস্তুনিষ্ঠ ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন এই ক্ষুদ্র অংশে। আবার ঊনিশ শতকের সমাজ বিপ্লবের একটি অন্যতম প্রধান কাজ সমস্ত ধরণের কু সংস্কারকে মোচন করা। তাদেরকে সমাধিস্থ করে ভবিষ্যতের পথকে প্রশস্ত করা। আবার বুর্জোয়া প্রজাতন্ত্র সম্পর্কে তিনি লিখছেন, ‘অন্যান্য শ্রেণীগুলোর উপর একটি শ্রেণীর সীমাহীন স্বৈরাচার। …… শাসক গোষ্ঠীর পরিধি যতবার সংকুচিত হয়েছে, যখনই কোনো ব্যাপকতর স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনো অপেক্ষাকৃত সংকীর্ণ একচেটে স্বার্থ রক্ষিত হয়েছে, ঠিক ততবারই সমাজের পরিত্রাণ ঘটেছে । মামুলি বুর্জোয়া আর্থিক সংস্কার, অতি সাধারণ উদারনীতি, অতি আনুষ্ঠানিক প্রজাতান্ত্রিকতা, অতি ভাসাভাসা গণতন্ত্রের প্রতিটি দাবিই একসঙ্গে সমাজের উপর হামলা হিসাবে এবং সমাজতন্ত্র বলে কলঙ্ক চিহ্নিত হয়েছে।’

দ্বিতীয় অধ্যায়ে জাতীয় সংবিধান সভার উপর আলোচনার সঙ্গেই বুনিয়াদী আইন,শিক্ষা, ধর্মাচার সংক্রান্ত আইনগুলিকে স্বেচ্ছাচারী কায়দায় ব্যবহার করা প্রসঙ্গে ব্যখ্যা রয়েছে।

তৃতীয় অধ্যায়ে সোশ্যাল ডেমোক্রাটিক ভাবনা, সংসদীয় ইতিহাস নিয়ে আলোচনা, বুর্জোয়াদের ভাগ ও গণতন্ত্রীদের কথা রয়েছে। সমাজ বিকাশের ধারায় বুর্জোয়া হয়ে ওঠার ধাপ প্রসঙ্গে তিনি দেখাচ্ছেন, ‘….বুর্জোয়ারা যে দুটি বৃহৎ স্বার্থে দ্বিধাবিভক্ত – ভূসম্পত্তি এবং পুঁজি তার প্রত্যেকটা আপন আধিপত্য পুন:স্থাপন করে অন্যটিকে অধীন করতে চাইছিল। দুটি বুর্জোয়া স্বার্থের কথা বলছি, তার কারণ সামন্ততান্ত্রিক ন্যাকামি আর বংশাভিমান সত্ত্বেও বৃহৎ ভূমিসম্পত্তি সম্পূর্ণভাবে বুর্জোয়া হয়ে পড়েছে আধুনিক সমাজের বিকাশের ফলে।’

সোশ্যাল ডেমোক্রেসির সম্পর্কে লিখছেন- ‘প্রলেতারিয়েতের সামাজিক দাবিগুলির বৈপ্লবিক সূচি মুখটাকে ভেঙে ফেলে সেগুলিকে মুচড়ে গণতান্ত্রিক করে তোলা হয়েছিল, আর পেটি বুর্জোয়াদের গণতান্ত্রিক দাবিদাওয়ার বিশুদ্ধ রাজনৈতিক রূপটি খসিয়ে সামনে আনা হয়েছিল সেগুলির সমাজতান্ত্রিক সূচিমুখটাকে। এইভাবে উদয় হয় সোশ্যাল ডেমোক্রেসির । ….. সোশ্যাল ডেমোক্রেসির বিশিষ্ট চরিত্রটা সংক্ষেপে এই যে, গণতান্ত্রিক-প্রজাতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানাদিতে দাবি করা হয় পুঁজি আর মজুরি শ্রম এই দুই চরম বিপরীতের অবসানের উপায় হিসেবে নয়- এই দুইয়ের বিরুদ্ধতা লাঘব করে সেটাকে সামঞ্জস্যে রূপান্তরিত করার উপায় হিসেবে। এই লক্ষ্য সাধনের প্রস্তাবিত উপায় যতই বিভিন্ন হোক, অল্প বিস্তর বৈপ্লবিক ধারণা দিয়ে তা যতই সজ্জিত থাক, মর্মবস্তুটা থেকে যায় একই। সে মর্মবস্তু হলো গণতান্ত্রিক উপায়ে সমাজের রূপান্তর , কিন্তু সে রূপান্তর পেটি বুর্জোয়াদের চৌহদ্দির ভিতরেই। এমন সংকীর্ণ ধারণা কিন্তু চলে না যে, পেটি বুর্জোয়ারা নীতিগতভাবেই আত্মসর্বস্ব শ্রেণি – স্বার্থ বলবৎ করতে চায়। তারা বরং বিশ্বাস করে যে, তাদের নিজেদের মুক্তির বিশেষ পরিবেশই হলো সেই সাধারণ পরিবেশ, একমাত্র যেটার কাঠামোর ভিতরেই আধুনিক সমাজের পরিত্রাণ এবং শ্রেণী সংগ্রাম এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।’

আবার গণতন্ত্রীদের সম্বন্ধে লিখছেন- ‘গণতন্ত্রীরা যেহেতু পেটি বুর্জোয়াদের প্রতিনিধি, অর্থাৎ এমন একটি পরিবর্তনশীল শ্রেণির প্রতিনিধি যেটার ভিতরে দুটি শ্রেণীর স্বার্থ যুগপৎ পরস্পরের ধার ভোঁতা করে দেয়, তাই তারা নিজেদের সাধারণভাবে শ্রেণী বৈরিতার ঊর্ধ্বে অবস্থিত বলে কল্পনা করে থাকে। গণতন্ত্রীরা একথা স্বীকার করে যে, বিশেষ অধিকারপ্রাপ্ত একটি শ্রেণি তাদের বিরুদ্ধে সম্মুখীন, কিন্তু জাতির বাদবাকি সমগ্র অংশের সঙ্গে মিলে তারাই জনগণ। তারা প্রতিনিধিত্ব করে জনগণের অধিকারেরই , জন স্বার্থের সাথে তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। তাই যখন সংগ্রাম আসন্ন তখন বিভিন্ন শ্রেণীর অবস্থিতি এবং স্বার্থ বিশ্লেষণের কোনও প্রয়োজন তাদের হয় না। নিজেদের উপায় উপকরণ খুঁটিয়ে বিচার করাও তাদের কাছে অনাবশ্যক। তারা শুধু সংকেতটা দিলেই অমনি জনগণ অফুরন্ত উপায় উপকরণ নিয়ে অত্যাচারীদের আক্রমণ করবে। তাই কার্যক্ষেত্রে যদি দেখা যায় তাদের স্বার্থ আগ্রহ জাগাবার মতো নয় এবং তাদের ক্ষমতা ক্লীবতা মাত্র, তবে তার জন্য দায়ী হচ্ছে হয় সেই অপকারী কূট তার্কিকেরা যারা অবিভাজ্য জনগণকে বিভিন্ন বিরুদ্ধ শিবিরে বিভক্ত করে, নয়ত সৈন্যবাহিনী, যাদের এতই বর্বর আর অন্ধ করে ফেলা হয়েছে যাতে তারা বুঝতেই পারিনি যে, গণতন্ত্রের বিশুদ্ধ লক্ষ্যগুলি তাদের নিজেদেরই পক্ষে সর্বোৎকৃষ্ট, কিংবা কার্যকালে কোনও খুঁটিনাটি ভুলের জন্যেই সমস্ত পন্ড হলো, অথবা অভাবিত কোনও আকস্মিকতার ফলেই এবারের খেলটা মাটি হয়ে গেলো।’

চতুর্থ অধ্যায়ে রাষ্ট্র সম্বন্ধে তাঁর বিশ্লেষণ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গেই রয়েছে নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচনী কৌশল সম্পর্কে আলোচনা।

রাষ্ট্রযন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখা হয় কেন? মার্কস লিখেছেন- ‘…. এখানে তারা নিজেদের অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্যে কর্মসংস্থান করে, এবং মুনাফা, সুদ, খাজনা আর নানাবিধ দক্ষিণার রূপে যেটুকু পকেটস্থ করা যায় না সেটাকে সরকারি মাইনের আকারে পুষিয়ে নেয়। পক্ষান্তরে, তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ তাদের বাধ্য করেছে দমন-পীড়নের ব্যবস্থাবলি এবং কাজেই রাষ্ট্র শক্তির উপায় উপকরণ আর লোক-লশকর প্রতিদিন বাড়িয়ে চলতে আর তার সঙ্গে সঙ্গে জনমতের বিরুদ্ধে অবিরাম লড়াই চালাতে হয়েছে এবং সামাজিক আন্দোলনের স্বতন্ত্র সংস্থাগুলিকে যখন কেটে একেবারে বাদ দিতে পারেনি সেক্ষেত্রে সন্দিগ্ধ চিত্তে সেগুলির অঙ্গচ্ছেদ করতে করতে, সেগুলিকে পঙ্গু করে ফেলতে হয়েছে।’

এর পরে উল্লেখ করেছেন- ‘বুর্জোয়া শ্রেণীর এটা বোঝার মতো যথাযথ অন্তর্দৃষ্টি ছিল যে, সামন্ততন্ত্রের বিপক্ষে তাদের নির্মিত সমস্ত অস্ত্রের সূচিমুখ তাদেরই বিরুদ্ধে ঘুরে গেছে, শিক্ষাদীক্ষার যত উপায় তারা পয়দা করেছিল সবই বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে তাদের নিজস্ব সভ্যতার বিরুদ্ধে, তাদের সৃষ্টি করা সমস্ত দেবতা তাদের ত্যাগ করেছে। তারা বুঝেছিল সমস্ত তথাকথিত বুর্জোয়া স্বাধীনতা আর প্রগতির সংস্থা তাদের শ্রেণী শাসনকে সেটার সামাজিক ভিত্তিমূলে এবং রাজনৈতিক শীর্ষদেশে যুগপৎ আক্রমণ করে বিপন্ন করছে, কাজেই সেগুলো সমাজতান্ত্রিক হয়ে পড়েছে।’ এ কথা রাষ্ট্র সম্বন্ধে মার্কসীয় শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।

পঞ্চম অধ্যায়ে রয়েছে রাষ্ট্রের সৈন্যবাহিনী, শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে শাসকের স্বৈরাচারী চরিত্রের বিশ্লেষণ। আর সর্বশেষ অর্থাৎ ষষ্ঠ অধ্যায়ের গুরুত্ব এই যে সেখানে কৃষক সমাজকে তিনি শ্রমিকশ্রেণীর সম্ভাব্য মিত্র হিসাবে বিশ্লেষণ চালিয়েছেন। রাষ্ট্রের কেন্দ্রিকরণের বিষয়টিও তুলে ধরেছেন। সমাজে নেমে আসা অর্থনৈতিক সংকটের বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ করে তিনি লিখছেন- ‘…. ঊনিশ শতকের গতিপথে সামন্ত মনিবদের স্থান নিলো শহুরে মহাজনের দল; জমির সঙ্গে জড়িত সামন্ততান্ত্রিক বাধ্যবাধকতার জায়গায় এল মর্টগেজ প্রথা; অভিজাতদের ভূমিসম্পত্তির জায়গা নিল বুর্জোয়া পুঁজি। কৃষকদের খুদে জোত-জমা তখন হলো জমি থেকে পুঁজিপতিদের লভ্য সুদ আর খাজনা আদায়ের অছিলা মাত্র, আর জমির চাষী কী করে মজুরি তুলবে সেটা ছেড়ে দেওয়া রইল তারই উপর।  ……  পুঁজি যে মর্টগেজ চাপাচ্ছে সেটা ছাড়াও খুদে জোত-জমা নানা করে ভারাক্রান্ত। আমলাতন্ত্র, সৈন্যদল, যাজকেরা, দরবার, এককথায় নির্বাহী ক্ষমতার সমগ্র যন্ত্রটার জীবনের উৎসাহ হলো কর। শক্তিশালী সরকার এবং গুরুভার কর অভিন্ন।’

আজ একবিংশ শতাব্দীর পুঁজিবাদ এক নতুন চরিত্রে এসেছে। ধান্দার ধনতন্ত্রের রমরমা, মুনাফা শুধুই মুনাফা। দেশের মাটিতে নয়া ফ্যাসিবাদী প্রবণতা। রাষ্ট্রীয় কাহামকে ব্যবহার করে ধর্মীয় এক উন্মাদনাকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখার এক দীর্ঘ প্রচেষ্টা। মুক্ত চিন্তা আর মুক্ত মনকে কবরে পাঠানোর দীর্ঘস্থায়ী এক চলছে গোটা দেশের ভিতর। ঠিক এ সময়েই আজ থেকে ১৭৩ বছর আগে প্রকাশিত বইটি আরেকবার পড়তে হবে, বিশ্লেষণ করতে হবে। ইতিহাসের বস্তুবাদী গতিপ্রকৃতি, তার নিজস্ব বৈশিষ্টকে বুঝতে হবে, রাষ্ট্রের গোটা চরিত্রকে উপলব্ধি করতে হবে। তৎকালীন ফ্রান্সের পরিস্থিতি ছিল প্রাক-ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারের পদধ্বনি। নিজেদের মতাদর্শগত ধারণাকে শক্তিশালী করা দরকার। মার্কসীয় দর্শন অর্থাৎ দ্বন্দ্বমূলক- ঐতিহাসিক বস্তুবাদ, সেই শিক্ষায় নিজেদের শাণিত করে যাবতীয় ঘটনাকে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করার চর্চা প্রয়োজন। মার্কসবাদ হল সেই বিজ্ঞান যা তত্ত্ব ও প্রয়োগের সংশ্লেষে সার্থক হয়ে ওঠে।

শেয়ার করুন