অনুষ্টুপ রায় বর্মণ
চিত্র ১
পুলিসের সামনে বসে এক ২২ বছরের পরীক্ষার্থী। স্বীকার করে নিচ্ছে ৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তাঁর আত্মীয় কিনেছে নিটের প্রশ্নপত্র। সব ব্যাবস্থা হয়ে গিয়েছে জেনে কোটা থেকে ফিরে আসে সমস্তিপুরে। পরীক্ষার আগের রাতে হাতে চলে আসে প্রশ্নপত্র। এবার পালা এক রাতে সব উত্তর মুখস্থ করার। ফলাফল, অনুরাগের স্কোর ৭২০-র মধ্যে ১৮৫, পার্সেন্টাইল স্কোর ৫৪.৮৪। তার স্কোরে দেখা গিয়েছে পদার্থবিদ্যায় তার পার্সেন্টাইল ৮৫.৮, জীববিজ্ঞানে ৫১ পার্সেন্টাইল, কিন্তু রসায়নে মাত্র ৫ পার্সেন্টাইল। বোঝা যাচ্ছে মাত্র একরাতে সব উত্তর মুখস্থ করা হয়ে ওঠেনি তার।
চিত্র ২
১৯ জুন ২০২৪ রাতে দুই বন্ধুর আড্ডা পাড়ার চায়ের দোকানে। চেনা দোকানদার কাকুর প্রশ্ন ‘কিরে কাল পরীক্ষা কেমন হল? এবার হয়ে যাবে তো?’ চায়ের শেষ চুমুকটা দিয়ে পাশের ডাস্টবিনে কাপটা টিপ করেতে করতে এক ঝটকায় উত্তর ‘বিন্দাস, এবার মনে হচ্ছে হয়ে যাবে’। ডাস্টবিনে টিপ করে ভাঁড় ফেলাটা আর পরীক্ষা পাশ যেন সমতুল্য। হঠাৎ ঝনঝন করে বেজে উঠল ফোন। একের পর এক মেসেজ। পাত্তা না দিয়ে একমনে সিগারেট ধরাচ্ছিলো একজন হঠাৎ পাশ থেকে বন্ধুর চিৎকার, ‘ভাই আমাদের ইউজিসি নেট পরীক্ষাটাও বাতিল!’ হাতে ধরা দেশলাইয়ের আগুনের সঙ্গেই যেন নিভে গেল বুকের আগুনটাও -‘কপালটাই খারাপ’।
বাতিলের বছর
২০২৪ যেন ‘বাতিল বছর’। একের পর এক পরীক্ষা বাতিলের জেরে জেরবার সাধারণ মানুষ। একেরপর এক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস থেকে শুরু করে অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দেওয়া, সাম্প্রতিক দিনে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় বিভিন্ন পরীক্ষায় যেভাবে দুর্নীতি জাঁকিয়ে বসেছে তাতে সাধারণ মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। রাস্তায় চাকরিপ্রার্থীদের হাহাকার সবার কানে পৌঁছালেও নবান্নের বা দিল্লির নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেদ করতে ব্যর্থ।
NEET এবং NET স্ক্যাম, সাধারণ ছাত্ছাত্রীদের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। তাদের ভবিষ্যৎকে এক লহমায় বিপুল অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড় করিয়েছে। দেশের প্রতিটি দুর্নীতি যা এখনও অবধি সামনে এসেছে এবং সাধারণ মানুষের উপরে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে, তা শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক চাপানউতোরে পরিণত হয়েছে প্রতিবার। কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার কারোরই এই সমস্যার গভীরে গিয়ে সমাধানের কোনও সদিচ্ছা চোখে পড়েনি। যদিও এই চেষ্টা চোখে না পরাই স্বাভাবিক। কারণ সমস্যার সমাধান মানেই পার্টির ভাঁড়ারে টান। মাফিয়াদের উপার্জনের রাস্তায় কাঁটা।
পার্লামেন্টে ক্ষোভ-বিক্ষোভ, রাজনৈতিক দোষারোপের খেলায় ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষের আর্তি চাপা পড়ে যায়। যদিও চলতে থাকে এই ‘খারাপ কপাল’ ভাঙিয়ে নেতাদের পয়েন্ট কুড়ানোর খেলা।
NEET এবং NET: পরীক্ষা বাতিল
NTA-র তত্ত্বাবধানে NEET-UG পরীক্ষা হয় ৫ মে। দেশের মোট ৪,৭৫০টি পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রায় ২৪ লক্ষ পরীক্ষার্থী এতে অংশ নেয়। প্রাথমিকভাবে এই পরীক্ষার ফল প্রকাশের কথা ছিল ১৪ জুন। কিন্তু ৪ জুন নির্ধারিত সময়ের আগেই ফল প্রকাশ করা হয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, ৬৭ জন পড়ুয়া ৭২০ নম্বরের পরীক্ষায় ৭২০ পায়। এর মধ্যে হরিয়ানার ফরিদাবাদের একটি কেন্দ্র থেকেই ছিলেন ছয়জন পড়ুয়া। আর এখানেই পাওয়া যায় সম্ভাব্য অনিয়মের গন্ধ। পর্যালোচনার পরে, শিক্ষা মন্ত্রক একটি বিস্তারিত তদন্তের জন্য বিষয়টি সিবিআইকে হস্তান্তর করেছে।
কিন্তু পড়ুয়াদের ভোগান্তি এখানেই শেষ নয়। এরপরেই, “পরীক্ষায় আপোস করা হয়েছে” এই উদ্বেগের কথা জানিয়ে UGC NET বাতিল করা হয়েছিল। এবং পাশাপশি বাতিল হয় CSIR UGC NET 2024-এর পরীক্ষা। ডার্কনেটে UGC NET এবং CSIR UGC NET-এর প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
নিট পরীক্ষায় অনিয়মের কথা সামনে আসার পরেও এই পরীক্ষা বাতিলের বিষয়ে দেখা যায় কেন্দ্রীয় সরকারের অনাগ্রহ। এর বদলে ‘গ্রেস মার্কস’ পাওয়া পড়ুয়াদের পরীক্ষা নতুন করে নেওয়ার কথা বলা হয়। নতুন করে নেওয়া এই পরীক্ষায় ১,৫৬৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৮১৩ জন ফের পরীক্ষা দেন। বাকি ৪৮ শতাংশ প্রার্থীরা গ্রেস মার্কস বাদ দিয়ে তাদের যা স্কোর তাই মেনে নিয়েছেন।
এটি গুরুত্বপূর্ণ যে হরিয়ানার ঝাজ্জার কেন্দ্র, যেখান থেকে একসঙ্গে বেশ কয়েকজন পরীক্ষায় শীর্ষস্থান পাওয়ায় তদন্তের মুখে পড়েছে সেখানকার ৪৯৪ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ২৮৭ জন ফের পরীক্ষা দিয়েছে। যা প্রায় এই কেন্দ্রের মোট পরীক্ষার্থীর প্রায় ৫৮ শতাংশ।
NTA কী? খায় নাকি মাথায় দেয়?
ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি, ম্যানেজমেন্ট এবং ফার্মেসির মতো ক্ষেত্রগুলিতে ভর্তি এবং নিয়োগের জন্য জাতীয়-স্তরের পরীক্ষাগুলি পরিচালনা করার জন্য NTA তৈরি করা হয়। ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রতিষ্ঠা হয় এই সংস্থা। এটি কাজ করা শুরু করে ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। এর ২,৫৪৬টিরও বেশি কেন্দ্র রয়েছে দেশজুড়ে।
২০১০ সালে, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (IIT) এর ডিরেক্টরদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এডুকেশনাল টেস্টিং সার্ভিস (ETS)-এর আদলে এর স্বায়ত্তশাসন এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য আইনের মাধ্যমে NTA প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে। যদিও এই সংস্থার স্বচ্ছতাই এখন প্রশ্নের মুখে।
এনটিএ গঠনের আগে, বিভিন্ন সরকারী সংস্থা যেমন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই), এবং কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় যেমন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ) তাদের নিজস্ব প্রবেশিকা পরীক্ষা নিত।
উলুখাগড়ার প্রাণ যায়
NEET UG 2024-এর ফলাফল, UGC NET বাতিল, এবং CSIR UGC NET 2024 স্থগিত করার ঘোষণাকে ঘিরে তুমুল বিতর্কের মধ্যেই জাতীয় পরীক্ষা সংস্থা (NTA)-র ডিরেক্টর জেনারেল সুবোধ কুমার সিং-কে “কম্পালসারি ওয়েটিং”-এ পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ছত্তিশগড় ক্যাডারের IAS অফিসারকে সরিয়ে দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলে দিতে চাইলেও এই দুর্নীতির নাগপাশ থেকে মুক্তি পাওয়া এতো সহজ হবে না বিজেপি সরকারের জন্য। ডিরেক্টর জেনারেল নয়, এই দুর্নীতির জাল ছড়িয়ে রয়েছে আরও গভীরে। শুধু গদি বাঁচানোর লড়াইয়ে প্রাণ গেল উলুখাগড়ার।
ছত্তিশগড় ক্যাডারের আইএএস অফিসার সুবোধ কুমার সিংকে ২০২৩ সালের জুন মাসে এনটিএ-র ডিজি পদে নিযুক্ত করা হয়। এর আগে, তিনি উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রকের অধীনে খাদ্য ও পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।
উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা, সুবোধ কুমার সিং ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ছত্তিশগড়ের সিএমও-তে বিজেপির সরকারের আমলে মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংয়ের সময়ে কাজ করেছিলেন।
কিন্তু প্রদীপ কুমার যোশী,যাকে NTA এর চেয়ারপার্সেন করে রাখা হয়েছে, তাকে সম্পূর্ণ আলোচনার বৃত্ত থেকে বাইরে রাখা হচ্ছে। এই ড.যোশী কোন খ্যাতিমান বিজ্ঞানী নন বা সমাজবিজ্ঞান বা উচ্চশিক্ষার অন্য কোন বৃত্তে তাঁর বিরাট কোন অবদান আছে এমনটাও নয়। তাঁর সবথেকে বড় পরিচয় তিনি RSS ঘনিষ্ঠ এবং ব্যাপম কেলেঙ্কারির সময়ে তিনি ছিলেন মধ্যপ্রদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান। স্বাভাবিক ভাবেই তাকে NTA-তে বহাল রেখে কোন নিরপেক্ষ তদন্ত সম্ভব একথা বিশ্বাস করা কঠিন।
সরকারি পদক্ষেপ
পি.কে. খারোলা, প্রাক্তন এভিয়েশন সেক্রেটারি এবং ইন্ডিয়া ট্রেড প্রমোশন অর্গানাইজেশনের (আইটিপিও) বর্তমান চেয়ারম্যান ও সিএমডি-কে এনটিএ ডিজির পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে এভিয়েশন সেক্রেটারি হিসাবে অবসর নিয়েছিলেন। তাকে ২০২২ সালের অক্টোবরে ITPO-র সিএমডি নিযুক্ত হওয়ার আগে, তিনি ন্যাশনাল রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি (NRA)- র চেয়ারম্যান ছিলেন, যা সরকারি চাকরিতে নিয়োগের জন্য কম্পিউটার-ভিত্তিক পরীক্ষা নেয়।
বিরোধীদের চাপ বাড়তেই শিক্ষা মন্ত্রক এনটিএ-র পরিচালিত সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ পরীক্ষার তদারকি করার জন্য ইসরোর প্রাক্তন চেয়ারম্যান ডঃ কে. রাধাকৃষ্ণনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি উচ্চ-স্তরের কমিটি তৈরি করেছে।
একটি উচ্চ-পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করার পাশাপাশি, কেন্দ্র পাবলিক একজামিনেশান (প্রিভেনশন অফ আনফেয়ার মিনস) আইন, ২০২৪ নিয়ে এসেছে। যদিও এর মাধ্যমে গোড়ায় থাকা গলদ সারাই হবে কিনা তা যথেষ্ট প্রশ্ন সাপেক্ষ।
শুধুই টাকার খেলা? নাকি গোড়ায় গলদ?
যদিও সাম্প্রতিক NEET পরীক্ষার দুর্নীতির অভিযোগ সকলের মনোযোগ আকর্ষন করলেও আসল সমস্যা আরও গভীরে। উচ্চ শিক্ষার জন্য NEET এবং অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা এবং লোভনীয় চাকরির জন্য নিয়োগ পরীক্ষাগুলির একটি সত্য বার বার এই দুর্নীতির আড়ালে চাপা পরে যাচ্ছে, তা হল বিস্ময়কর একটি সংখ্যা। ২৪ লাখ শিক্ষার্থী মাত্র ১ লাখ আসনের জন্য যোগ্যতা অর্জন করার জন্য এই নিট পরীক্ষা পরীক্ষার ইঁদুর দৌড়ে নেমেছে। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতন এই ১ লাখ আসনের মধ্যে মাত্র ৫৫,০০০ সরকারি আসন।
প্রকৃত কেলেঙ্কারি আসলে এটাই যে স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরেও আমাদের সিস্টেম আমাদের দেশের যুবসমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষার সম্মান করতে ব্যর্থ। একদিকে ‘৫৬ ইঞ্চির ছাতি’ নিয়ে একজন চিৎকার করছে যে ভারত পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি, অন্যদিকে লক্ষ লক্ষ যোগ্য চাকরিপ্রার্থীকে রাস্তায় বসিয়ে রেখে সিভিক এবং কন্ট্রাকচুয়াল নিয়োগে ব্যস্ত এক সাদা শাড়ি।
এই সমস্যা শুধু চিকিৎসা ক্ষেত্রের নয়। এই সমস্যা উচশিক্ষার প্রতিটি ক্ষেত্রকে আরও সঙ্কুচিত করে আনার যে প্রচেষ্টা কেন্দ্রীয় সরকার প্রথমদিন থেকে করছে তারই অংশ। মানুষের ভাবনা-চিন্তার স্তরকে নিচের দিকে ঠেলে দেওয়ার প্রচেষ্টার একটি অংশ হল নতুন পদ্ধতির নেট। যেখানে একজন পড়ুয়া গবেষণা করার এবং কলেজে পড়াবার যোগ্যটা অর্জন করছে। কিন্তু সেই পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে কোথাও তাদের বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা, বিষয়ের উপরে তাদের দখল বা তার বাস্তব জীবনে প্রয়োগের ক্ষমতার কোনও পরীক্ষা হয় না। পরীক্ষা হয় কার কত মুখস্থ করার ক্ষমতা সেটার। মুখস্থ বিদ্যার মাস্টার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মনে অনুসন্ধিৎসার সঞ্চার করতে পারবে কিনা তা প্রশ্নাতীত নয়।
মূল সমস্যা হল সরকার দেশের যুব সমাজের জন্য সুযোগ তৈরিতে ব্যর্থ। এবং এই ব্যর্থতাকে যেভাবেই হোক এড়িয়ে যেতে হবে এবং মানুষের নজর ঘুরিয়ে দিতে হবে অন্যদিকে। এই দুইয়ের জাঁতাকলে পিষ্ট তরুণ সমাজকে কর্মসংস্থান দিতে ব্যর্থ সরকার তাদেরকে প্রতিদিন নিরুৎসাহিত করে প্রতিযোগিতা থেকে বের করে দিতে পারলে বাঁচে। নিজেদের ব্যর্থতাকে ঢাকা দেওয়ার জন্য ক্রমাগত ভ্রান্ত পরীক্ষা পদ্ধতির মধ্যে ফেলে দুর্নীতির জাল তৈরি করে তাদের নিজেদের “মেরিট”-এর উপর সন্দেহ তৈরি করিয়ে দিচ্ছে।
আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকরা প্রতিদিন নতুন নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করে সাফল্যের একটি অত্যন্ত সংকীর্ণ সংজ্ঞা প্রচার করেছে। সাফল্যকে প্রতিনিয়ত সম্পদ এবং ক্ষমতা লাভের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু ঠিক একই সময়ে দাঁড়িয়ে আমাদের সরকার এবং আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের আকাঙ্খা পূরণে ব্যর্থ। এই সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য, আমাদের সামনে মানদণ্ড হিসাবে “মেধা”-কে দাঁড় করানো হচ্ছে। এই মেধা মাপা হচ্ছে ‘কাট-থ্রোট কম্পিটিশনের’ মধ্যে ফেলে মুখস্থ করার ক্ষমতা যাচাই করে।
এই সমস্যার ফলে তৈরি হচ্ছে বিপুল সংখ্যক হতাশ যুবক-যুবতী। যারা কঠোর পরিশ্রম সত্ত্বেও, পদ্ধতিগত প্রতিবন্ধকতার কারণে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। এই ঘটনা তাদের মনে গভীর হতাশা তৈরি করছে যার বিস্ফোরণ আমরা মাঝে মাঝেই খবরের কাগজের পাতায় দেখতে পাই আত্মহননের খবরে।
দেশের যুব সমাজের চাহিদা এবং জোগানের মধ্যে যে বিস্তর ফারাক রয়েছে তা বিলক্ষণ জানে চা-ওয়ালার সরকার। এরপরেও সরকারের কোনও পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না কোনও স্তরে। ফকির থেকে শুরু করে হাওয়াই চটি কোনও স্তরেই পলিসি পরিবর্তনের কোনও সম্ভাবনা তো দূরের কথা এই বিষয়ে কথা বলাই প্রায় নিষেধ।
মুখে কুলুপ রাজ্য সরকারের
রাহুল গান্ধী লোকসভায় এই বিষয়ে আলোচনা করতে চাইলে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে মাইক। প্রথমদিন থেকে পথে রয়েছে শুধু বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি। দিল্লির রাজপথ থেকে পুলিশ তুলে নিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার দাবি রাস্তায় নামা পড়ুয়াদের। অথচ ঠিক এই সময়ে নীরব রাজ্যের তৃণমূল সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শব্দ নেই। রাজপথে দাবি আদায়ের লড়াইয়ে নিখোঁজ শাসকদলের ছাত্র সংগঠন।
একের পর এক মিছিল, রাজপথে উত্তাল বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি। দিল্লি থেকে কলকাতা, টানা মিছিলে গর্জে উঠছে বিরোধীরা। সাংসদরা চিঠি লিখছেন স্পিকারকে, পার্লামেন্টের অন্দরে ঝড় তোলার চেষ্টা হচ্ছে। এই অবস্থায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী প্রধান চিন্তার কারণ উত্তরবঙ্গের বাড়ির ছাদের টিনের রং কেন লাল এবং গেরুয়া। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে নিট পরীক্ষা ব্যবস্থা বাতিল করে পুরনো ব্যবস্থা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি একমাত্র কাজ হতে পারে না। সামাজিক অবক্ষয়ের এই কঠিন সময়ে রাস্তায় নেমে অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সামিল না হওয়া আসলে বর্তমান ব্যবস্থাকে বকলমে সাহায্য করা। এই সীমাহীন প্রহসন আসলে কিসের আশায়? ঠিক কোন রাজনীতি কাজ করছে এর পিছনে?
প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও তো জানা…