23rd Part4

কোন পথ ধরে ২৩তম পার্টি কংগ্রেস (পর্ব ৪)

সপ্তদশ পার্টি কংগ্রেস (হায়দ্রাবাদ-২০০২)

২০০২ সালের ১৯ থেকে ২৪ মার্চ এই কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। এনডিএ সরকারের জনবিরোধী অর্থনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও সর্বস্তরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলা, গণ-আন্দোলনের পথে পার্টিকে প্রসারিত করা এবং বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারকে পরাস্ত করার আহ্বান জানায় এই কংগ্রেস। এ ছাড়াও বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাদী সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে বিশ্বায়নের নামে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্যকামী আগ্রাসী ভূমিকার উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে জনগণের সংগ্রামকে শাণিত করার আহ্বান জানানো হয়।

এই কংগ্রেস থেকে ৭৭ জনের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়। পলিট ব্যুরো সদস্য নির্বাচিত হন হরকিষাণ সিং সুরজিৎ, জ্যোতি বসু, ই বালানন্দন, ভি এস অচ্যুতানন্দন, প্রকাশ কারাত, সীতারাম ইয়েচুরি, এস রামচন্দ্রন পিল্লাই, পি রামচন্দ্রণ, ই কে নায়নার, আর উমানাথ, এম কে পান্ধে, বিমান বসু, মানিক সরকার, অনিল বিশ্বাস, পিনারাই বিজয়ন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, কোরতালা সত্যনারায়ণ। পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন হরকিষাণ সিং সুরজিৎ।

H K S Surjeet

অষ্টাদশ পার্টি কংগ্রেস (দিল্লি-২০০৫)

৬-১১ এপ্রিল ,২০০৫ এই কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। বিগত কংগ্রেসের পর সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বিজেপিকে উৎখাত করা গেলেও পার্টির শক্তি বাড়িয়ে তৃতীয় বিকল্পের ডাক দেওয়া হয় এই কংগ্রেস থেকে। দেশ জুড়ে গণসংগ্রাম গড়ে তুলে, জমি-মজুরি-কাজের লড়াই তীব্র করে, ধর্মীয় মৌলবাদ, স্বনির্ভরতা ধ্বংসকারী উদারনীতির বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করার সঙ্গে সঙ্গে শ্রেণীসংগ্রামের মধ্য দিয়ে সামাজিক নিপীড়ন ও বিভেদের প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলার আহ্বান জানানো হয়। এই কংগ্রেস চলাকালীন ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাসের প্রথম খণ্ডের (১৯২০-১৯৩৩) প্রকাশ ঘটে। পার্টিকে বিকশিত করে তুলতে নির্ধারিত হয় সাতদফা কর্তব্য।এই কংগ্রেস থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি হয় ৮৫ জন সদস্যকে নিয়ে।

পলিট ব্যুরো সদস্য নির্বাচিত হন প্রকাশ কারাত, হরকিষাণ সিং সুরজিৎ, জ্যোতি বসু, ভি এস অচ্যুতানন্দন, সীতারাম ইয়েচুরি, এস রামচন্দ্রন পিল্লাই, আর উমানাথ, এম কে পান্ধে, বিমান বসু, মানিক সরকার, অনিল বিশ্বাস, পিনারাই বিজয়ন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, চিত্তব্রত মজুমদার, কে বরদারাজন, বি ভি রাঘভুলু, বৃন্দা কারাত। নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন প্রকাশ কারাত।

Prakash Karat

ঊনবিংশতিতম পার্টি কংগ্রেস (কোয়েম্বাটোর-২০০৮)

২৯ মার্চ- ৩ এপ্রিল ২০০৮ এই কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়।মার্কিন আগ্রাসন এবং সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে বিশ্বজোড়া প্রতিরোধের পটভূমিকায় আহূত এই কংগ্রেস ভারতীয় পরিস্থিতির পর্যালোচনায় জোর দেয়। অষ্টাদশ সম্মেলন থেকে ইউপিএ সম্পর্কে পার্টিকে স্বতন্ত্র ভূমিকা পালনের উপর জোর দিতে নির্দেশ দিয়েছিল। ঊনবিংশতিতম কংগ্রেস তৃতীয় বিকল্প গড়ে তোলার আহ্বান জানায়। নির্বাচনী জোট বা আঁতাতের ঊর্ধ্বে অভিন্নভাবে সম্মত হওয়ার নীতি এবং সময়োপযোগী চাহিদার উপর ভিত্তি করে এই বিকল্প গড়ে তোলার প্রয়াস চালানোর কথা বলা হয়। সার্বভৌমত্ব ও সংহতি রক্ষার আপোশহীন ভূমিকা পালনের পাশাপাশি নয়া উদারনীতিবাদের বিরুদ্ধে সর্বভারতীয় বিকল্প নীতির লড়াইয়ে দেশের তিন বামপন্থী সরকারকে বিশেষ ভূমিকা পালনেরও আহ্বান জানানো হয়।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে নির্বাচিত হন ৮৭জন সদস্য। পলিট ব্যুরো সদস্য হন প্রকাশ কারাত, ভি এস অচ্যুতানন্দন, এস রামচন্দ্রন পিল্লাই, সীতারাম ইয়েচুরি, এম কে পান্ধে, বিমান বসু, মানিক সরকার, পিনারাই বিজয়ন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, কে বরদারাজন, বি ভি রাঘভুলু, বৃন্দা কারাত, মহম্মদ আমিন, নিরুপম সেন, কোডিয়ারি বালাকৃষ্ণাণ, জ্যোতি বসু (বিশেষ আমন্ত্রিত)।কেন্দ্রীয় কমিটি : ৮৭

জন সদস্য। পলিট ব্যুরো : প্রকাশ কারাত, ভি এস অচ্যুতানন্দন, এস রামচন্দ্রন পিল্লাই, সীতারাম ইয়েচুরি, এম কে পান্ধে, বিমান বসু, মানিক সরকার, পিনারাই বিজয়ন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, কে বরদারাজন, বি ভি রাঘভুলু, বৃন্দা কারাত, মহম্মদ আমিন, নিরুপম সেন, কোডিয়ারি বালাকৃষ্ণাণ, জ্যোতি বসু (বিশেষ আমন্ত্রিত)। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন প্রকাশ কারাত।

Prakash Karat

বিংশতিতম পার্টি কংগ্রেস (কোঝিকোড়-২০১২)

৪-৯ এপ্রিল ২০১২ এই পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। নয়া উদারনীতির বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণীর বৈপ্লবিক ভূমিকা পালন এবং পার্টির স্বাধীন ভূমিকা বিকশিত করার লক্ষ্যে আহূত হয়েছিল এই কংগ্রেস। পুঁজিবাদের রাজনৈতিক বিকল্প গড়ার সংগ্রামে বাম ও গণতান্ত্রিক জোট গড়ার প্রক্রিয়াও জারি রাখার আহ্বান জানানো হয়। পরিচিতিসত্ত্বার রাজনীতির বিরুদ্ধে জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন গড়ে তোলার যেমন আহ্বান জানানো হয় তেমনি স্থানীয় দাবি আদায়ের আন্দোলনে সম্ভাবনার উপাদান খুঁজে স্বাধীন বিকাশের পথে অগ্রসর হওয়ার কথাও ঘোষিত হয় এই কংগ্রেসে। এই কংগ্রেস থেকে ১৯৯২ এর পরে আবার নতুন একটি মতাদর্শগত দলিল গৃহীত হয়।সাধারণ সম্পাদক পদে তিনটি পূর্ণ মেয়াদের পর আর সেই পদে থাকা যাবে না- এই সিদ্ধান্তও গৃহীত হয় এই কংগ্রেস থেকে। প্রকাশ্য সমাবেশে সমুদ্রপাড়ে মানুষের ঢল নেমেছিল। কেন্দ্রীয় কমিটি হয় ৮৯ জনের।
পলিট ব্যুরো সদস্য নির্বাচিত হন প্রকাশ কারাত, এস রামচন্দ্রন পিল্লাই, সীতারাম ইয়েচুরি, বিমান বসু, মানিক সরকার, পিনারাই বিজয়ন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, কে বরদারাজন, বি ভি রাঘভুলু, বৃন্দা কারাত, নিরুপম সেন, কোডিয়াড়ি বালকৃষ্ণান, এম এ বেবি, সূর্যকান্ত মিশ্র, এ কে পদ্মনাভন।সাধারণ সম্পাদক হন প্রকাশ কারাত।

Prakash Karat
Prakash Karat

একবিংশতিতম পার্টি কংগ্রেস (বিশাখাপত্তনম-২০১৫)

১৪-১৯ এপ্রিল,২০১৫ এই পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়।
তৃতীয় বিকল্পের বাস্তবতা না থাকায় বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে জোরদার ও ঐক্যবদ্ধ করে গড়ে তুলে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সামাজিক ন্যায় এবং বাম ও গণতান্ত্রিক বিকল্পের স্বার্থে সাধারণ মানুষের স্বার্থবাহী বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানায় এই কংগ্রেস। এই কংগ্রেস থেকে Political Tactical Line এর গুরুত্বপূর্ণ দলিলটি গৃহীত হয়। মোদী সরকারের শ্রমিক ও কৃষকবিরোধী পদক্ষেপ সহ মেরুকরণের রাজনীতিকে ধিক্কার জানিয়ে শ্রমজীবী লড়াকু মানুষের জোট গঠনের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইয়ের প্রতি সংহতি জানায় গোটা দেশ। নয়া উদারনীতিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আগামী দিনে সুন্দরতর ভারত গড়তে দেশের তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতিতে নিয়ে আসার কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা ঘোষিত হয়। এই কংগ্রেস থেকে বি আর আম্বেদকরের ১২৫তম জন্মদিবস উপলক্ষে সংসদের বিশেষ অধিবেশনের দাবি জানানো হয়। দেশের ভয়াবহ বেকারি পরিস্থিতিতে কাজের অধিকারকে পুনরায় মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতির দাবি তোলা হয়। কেন্দ্রীয় কমিটি হয় ৯১ জন সদস্যের। পলিট ব্যুরো সদস্য হন সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাত, এস রামচন্দ্রন পিল্লাই, বিমান বসু, মানিক সরকার, পিনারাই বিজয়ন, বি পি রাঘভুলু, কোডিয়ারি বালকৃষ্ণাণ, এম এ বেবি, সূর্যকান্ত মিশ্র, এ কে পদ্মনাভন,বৃন্দা কারাত, মহম্মদ সেলিম, সুভাষিণী আলি, হান্নান মোল্লা, জি রামকৃষ্ণাণ। নবনির্বাচিত সম্পাদক হন সীতারাম ইয়েচুরি।

Sitaram Yechury

দ্বাবিংশতিতম পার্টি কংগ্রেস ( হায়দরাবাদ-২০১৮)

১৮-২২ এপ্রিল ২০১৮ এই পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়।
নয়া উদারনীতির নজিরবিহীন আক্রমণের পাশাপাশি ধর্মীয় মেরুকরণের মধ্য দিয়ে দেশের সামাজিক কাঠামোকে ছিন্নভিন্ন করে দেবার প্রয়াস, সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলির উপর আক্রমণ সহ ভারতের বিদেশনীতির উপর আক্রমণ করে ভারতকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ছোট শরিক করে তোলার প্রেক্ষাপটে আহূত হয় দ্বাবিংশতিতম কংগ্রেস। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার ভয়ানক সময়ে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে যখন ভঙ্গুর করে তোলা হচ্ছে এই অবস্থায় আরএসএস-বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরানোই লক্ষ্য হিসাবে নির্ধারণ করে এই কংগ্রেস। স্বৈরতান্ত্রিক সাম্প্রদায়িক বিজেপির শাসনে পরাস্ত করতে গণতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ও শক্তিশালী পার্টি গড়ে তুলতে বাম ও গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গড়ে তোলার উপর জোর দেওয়া হয়। আইনসভায় মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ বিলকে আইনে পরিণত করার দাবি জানানো হয়।

কেন্দ্রীয় কমিটি হয় ৯৫ জনের।পলিট ব্যুরো সদস্য নির্বাচিত হন- সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাত, এস রামচন্দ্রন পিল্লাই, বিমান বসু, মানিক সরকার, বৃন্দা কারাত, পিনারাই বিজয়ন, হান্নান মোল্লা, কোডিয়াড়ি বালকৃষ্ণান, এম এ বেবি, সূর্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিম, সুভাষিণী আলি, বি ভি রাঘভুলু, জি রামকৃষ্ণাণ, তপন সেন, নীলোৎপল সেন। সাধারণ সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত হন সীতারাম ইয়েচুরি।

Sitaram Yechury

এই পথেই এগিয়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) এর ২৩ তম পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হচ্ছে কেরালার কান্নুরে। নতুন পরিস্থিতিতে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানকে আরো দৃঢ় করে লড়াইয়ের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে এই কংগ্রেস থেকে।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন