রেলের ব্যর্থতা ঢাকতেই সিবিআই তদন্ত

শমীক লাহিড়ী

২রা জুন, ২০২৩ ভারতীয় রেলের ইতিহাসে অন্যতম মর্মান্তিক ও ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৭৫জন যাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন এবং ১১৭৫জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে শতাধিক ব্যক্তি অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। নিখোঁজ যাত্রীর সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ভারতীয় রেল সরকারীভাবে জানায় নি। যদিও আগে ভারতীয় রেলের মুখপাত্র জানিয়েছিলেন মৃতের সংখ্যা ২৮৮জন।

শালিমার থেকে চেন্নাই গামী করোমন্ডল এক্সপ্রেস তার নিজস্ব লাইন থেকে পার্শ্ববর্তী ল্যুপ লাইনে ঢুকে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়ীতে ধাক্কা মারে এবং এর ফলশ্রুতিতে করোমন্ডল এক্সপ্রেসের অনেকগুলি বগি লাইনচ্যুত হয়। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে যশবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেস পাশের লাইনে চলে আসে এবং করোমন্ডলের লাইনচ্যুত বগিগুলির ওপর আছরেলের ব্যর্থতা ধাপাচাপা দিতেই সিবিআই তদন্তড়ে পড়ে। এর ফলেই এই মর্মান্তিক ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে, এটাই প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে।

গতকাল অর্থাৎ ৪ঠা জুন বিকালে রেলমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে উদ্ধারকার্য শেষ হয়েছে। দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া বগিগুলির ভিতরে আর কোনও যাত্রী জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় নেই।

গোপনীয়তা কেন?

সমগ্র এলাকার দায়িত্ব ওড়িষ্যা পুলিশের কাছ থেকে রেলের পুলিশ গ্রহণ করেছে। এখন আর উদ্ধারকারী স্থানীয় মানুষ, ওড়িষ্যা পুলিশ এমনকি সাংবাদিকদেরও দুর্ঘটনাস্থলে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। রেল বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে রেল লাইন পুর্ননির্মানের কাজ পরিচালনা করার জন্যই নাকি দুর্ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে রেলের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী।

অথচ দুর্ঘটনার পর রেলওয়ে আধিকারিক বা উদ্ধারকারী দল পৌঁছানোর অনেক আগে স্থানীয় মানুষই মূল উদ্ধার কার্য পরিচালনা করেছিলেন নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। বহু আহত মানুষদের দুর্ঘটনাগ্রস্ত বগিগুলো থেকে উদ্ধার করে নিজেরাই তাদের নিয়ে হাসপাতাল পৌঁছে দিয়েছিলেন। ওড়িষ্যা সরকারের প্রশাসনও দ্রুততার সাথে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রাথমিক উদ্ধারকার্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। সংবাদিকদের মাধ্যমেই দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেন ২টির যাত্রীদের আত্মীয়স্বজনরা সহ দেশবাসী এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর পেয়েছিল। হঠাৎ দুদিনের মাথায় রেল কর্তপক্ষ স্থানীয় মানুষ, সাংবাদিক, রাজ্য প্রশাসনের দুর্ঘটনাস্থলে প্রবেশ কেন নিষিদ্ধ করা হলো তা বিষ্ময়কর!!

বিশেষত দুটি ট্রেনেরই জেনারেল কম্পার্টমেন্ট এবং আরও দুটি কোচ থেকে এখনও মৃতদেহের পচা গন্ধ বেরানোর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তড়িঘড়ি রেলমন্ত্রী 'উদ্ধারকার্য শেষ' ঘোষণা করলেন কেন এবং দুর্ঘটনাস্থল গোপনীয়তার জালে মুড়ে ফেলা হলো কেন – এই পদক্ষেপগুলোই অনেক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।

‘রেলওয়ে সেফটি কমিশন’ এই দুর্ঘটনার তদন্ত করবে রেলবোর্ড একথা ঘোষণার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই রেলমন্ত্রী হঠাৎ কেন এই দুর্ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন, তাও বিষ্ময়কর।

সিবিআই মূলত বিভিন্ন রকম অপরাধের তদন্ত করে থাকে। রেলের দুর্ঘটনা যদি কোনোরকম প্রযুক্তিগত অথবা ব্যক্তিগত ত্রুটির কারণে ঘটে থাকে, তার তদন্ত সিবিআই-এর অফিসাররা কিভাবে করবেন? রেলের প্রযুক্তি অত্যন্ত জটিল যা বোঝবার জন্য অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার ও রেল আধিকারিকদের প্রয়োজন। তাহলে কি রেলের কোনও ত্রুটি ধামাচাপা দেওয়ার তাগিদেই  তড়িঘড়ি অর্ন্তঘাতের তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য সিবিআই-এর হাতে তদন্ত ভার তুলে দেওয়া হলো - এই প্রশ্ন অত্যন্ত সঙ্গত।

দুর্ঘটনার কারণ

রেলের দুর্ঘটনা নানা কারণেই ঘটতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলি হলো - রেল লাইনের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষনের অভাব, সিগন্যাল ব্যবস্থার ত্রুটি, রক্ষী বিহীন রেলওয়ে ক্রসিং গেট, রেলের বিভিন্ন দপ্তর কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় ও কর্মী সংখ্যার অভাব, রেলরুটের ওপর অত্যাধিক চাপ, মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল সহ নানা প্রযুক্তিগত ত্রুটি ইত্যাদি। এইগুলির কোনও একটি অথবা একাধিক কারণ যদি দায়ি হয়ে থাকে এই দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে, তাহলে তার তদন্ত সিবিআই কিভাবে করবে, এ বোঝা সত্যিই দুস্কর।

২০১৮-১৯ সাল থেকে ২০২০-২১ সাল পর্যন্ত রেলে মোট ২,০১৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে লাইনচ্যুতির ঘটনা ১,৩৯২টি (৬৯%) (সিএজি রিপোর্ট-২০২২)। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে লাইনচ্যুতিগত কারণেই মূলত রেলের দুর্ঘটনাগুলি ঘটেছে। এটা ঠিক প্রাণহানীকর দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ২০১৮-১৯ সালে ৭১৯টি যা কমে ২০২০-২১ সালে হয়েছে ৩১৮টি। রেলের পরিভাষায় এই ধরণের দুর্ঘটনাকে বলা হয় Consequential Accidents যা নি:সন্দেহে বিগত ৪ বছরে কমেছে। ২০২২ সালের সিএজি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল সাধারণভাবে রেলের দুর্ঘটনা কোনও একটি নির্দিষ্ট ত্রুটির কারণে ঘটেনা। মেকানিক্যাল-ইলেকট্রিক্যাল-সিভিল-সিগন্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন সংক্রান্ত ইঞ্জিনিয়ারিং ত্রুটি, অপারেশন সংক্রান্ত ত্রুটি, রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটি এসবের সম্মিলিত কারণেই লাইনচ্যুতির মত ঘটনা ঘটে। এছাড়াও একটি রেল রুটের ওপর গাড়ীর সংখ্যা অত্যাধিক বেড়ে যাওয়া, কর্মী সংখ্যার অভাব, বগিগুলির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষনের অভাব ইত্যাদি কারণেও লাইনচ্যুতি ও দুর্ঘটনা ঘটে।

ঐ একই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল প্রতি ৪টি লাইনচ্যুতির ঘটনার মধ্যে ১টি ঘটে মূলত রেললাইন যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষন না করার কারণে। ২০১৭-১৮ সাল থেকে ২০২১-২২ সালের মধ্যে ১১২৯টি লাইনচ্যুতি ঘটনার মধ্যে ২৮৯টি ঘটেছিল রেললাইনের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে। এই রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের মূল কারণ প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না করা এবং রেলরুটের ওপর অত্যাধিক বেশি সংখ্যক ট্রেন চালানোর জন্য। এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ অনেক বছর ধরেই চিহ্নিত হওয়া সত্ত্বেও ভারতীয় রেল তা দূর করবার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

একই রেল রুটের ওপর দিয়ে অত্যাধিক সংখ্যার ট্রেন চালানোকে রেলের পরিভাষায় বলা হয় – High Density Network (HDN)। প্রতিটি রেল রুটের ওপর দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ট্রেনই যাতায়াত করতে পারে। যদি কোনও রেলরুটে সর্বোচ্চ সংখ্যক ট্রেন চলে তাহলে সেক্ষেত্রে সেই রুটকে বলা হয় HDN ১০০%। ভারতীয় রেলের জাতীয় রেল পরিকল্পনা রিপোর্ট ২০২০ থেকে জানা যাচ্ছে দেশের মোট রেলরুটের ৮০%ই HDN। সিএজি রিপোর্ট ২০২২ উল্লেখ করেছে চেন্নাই-কলকাতা-মুম্বাই-দিল্লী-গুয়াহাটি এই রেলরুটগুলি HDN রেলরুট হিসাবে চিহ্নিত। এর মধ্যে কয়েকটি রেলরুটের HDN ১৬০%। দেশের মোট ১০,৯৭৪ টি ট্রেনের মধ্যে ৮৭৮২টি ট্রেনই চলে ১০০% এর বেশি HDN রুটে। অর্থাৎ এই রেলরুটগুলি ট্রেন সংখ্যার চাপে নাজেহাল।

এর ফলে এই রেলরুটগুলির রেললাইন, সিগন্যাল ব্যবস্থা সহ বিভিন্ন বিষয় রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কার্যত কোনও সময়ই পাওয়া যায় না। মন্ত্রী বা প্রভাবশালীদের চাপে নিজ নিজ রাজ্য বা এলাকায় রেলরুটের ক্ষমতার বাইরে গিয়ে ইচ্ছামত সংখ্যায় নতুন নতুন ট্রেন চালানো হচ্ছে, প্রযুক্তি ও ক্ষমতাকে বিচার না করেই। নতুন ট্রেন তো অবশ্যই চালাতে হবে, কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত রেললাইন পাতার। অতিরিক্ত রেললাইন পাতার জন্য প্রয়োজন অর্থ ও সময়। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান না করেই পরিকল্পনাহীনভাবে নতুন নতুন ট্রেন ইচ্ছামত চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা ব্যস্ততম রেলরুটগুলিকে বিপজ্জনকভাবে দুর্ঘটনাপ্রবণ করে তুলছে।

রেল সুরক্ষা তহবিল

২০১৭-১৮ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলি ঘটা করে ঘোষণা করেন - রেলের সুরক্ষার জন্য রাষ্ট্রীয় রেল সংরক্ষণ কোষ (RRSK) গঠন করা হলো এবং আগামী ৫ বছরের মধ্যে ১লক্ষ কোটি টাকা এর জন্য ব্যয় করা হবে। রেলের সুরক্ষার জন্য নরেন্দ্র মোদীর সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ - এই ছিল অরুন জেটলির ঘোষণা। বাৎসরিক ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট থেকে দেওয়া হবে ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং রেল তার অভ্যন্তরীন আয় থেকে দেবে বাকি ৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকার ৫ বছরে দেবে মোট ৭৫ হাজার কোটি টাকা এবং রেল দেবে ২৫ হাজার কোটি টাকা।

২০১৭-১৮ থেকে ২০২০-২১ এই ৪ বছরে রেল তার আভ্যন্তরীণ আয় থেকে মোট খরচ করেছে ৪২২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১৫৭৭৫ কোটি টাকা ঘাটতি ছিল রেলের তরফে। ২০১৮-১৯ সালে রেললাইন পুনঃস্থাপন বাবদ অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৯৬০৭ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ সালে এই বাবদ অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ কমে হয় ৭৪১৭কোটি টাকা। এই বরাদ্দের সম্পূর্ণ অর্থও খরচ করা হয়নি। সিএজি’র রিপোর্ট - ২০২২-এ উদ্বেগের সাথে উল্লেখ করা হয়েছিল RRSK তহবিলের ৮১.৫৫% খরচ করা হয়েছিল অগ্রাধিকার সম্পন্ন কাজগুলোর জন্য, যা ২০১৯-২০ সালে কমে দাঁড়ায় ৭৩.৭৬%-এ। পশ্চিম রেলওয়ে ২০১৯-২০ সালে রেললাইন পূনঃস্থাপন বাবদ বরাদ্দকৃত অর্থের মাত্র ৩.০১% খরচ করেছিল।  এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে রেলের সুরক্ষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় রেলের কাছে। রেলের নিজস্ব পরিসংখ্যানই বলছে ২০১৭-২১ এই ৪বছরে ১১২৭টি লাইনচ্যুতির ঘটনার মধ্যে ২৮৯টি ঘটনাই ঘটে রেললাইন পূনঃস্থাপন না করার কারণেই।

শুধুমাত্র বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ কমানো বা খরচ না করাকেই সমালোচনা করেছিল সিএজি রিপোর্ট তাই নয়, এই রিপোর্ট কঠোর সমালোচনা করেছিল, অপ্রয়োজনীয়ভাবে অনগ্রাধিকার কাজে ২০১৯-২০ সালে রেল ২৩০০কোটি টাকা খরচ করায়। এই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছিল রেল লাইন ও ট্রেনগুলির পরিদর্শন করার কাজে গুরুতর গাফিলতি ছিল। ৩০-১০০% পর্যন্ত পরিদর্শনের ঘাটতি ছিল ভারতীয় রেলের।

শূন্য পদ

যথাযথ পরিদর্শন বা দেখভালের অভাবের একটা বড় কারণ বিপুল সংখ্যক শূণ্য পদ। কার্যত কোনও খালি পদে স্থায়ী লোক নিয়োগ করা হচ্ছে না দীর্ঘদিন। ফলে ভারতীয় রেলের ১৮টি জোনে মোট ৩লক্ষ ১৫হাজার ৭৮০টি শূণ্যপদ রয়ে গেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২১হাজার ৮৩৭টি বেশি – এই তথ্য ভারতীয় রেল কতৃপক্ষ ১লা ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ স্বীকার করে নিয়েছে তাদের রিপোর্টে। ২০১৯-২২ এই ৩বছরে মোট ১লক্ষ ৪১হাজার ৮৮৬জন আধিকারিক, প্রযুক্তিবিদ ও কর্মচারী নানান পদ থেকে অবসরগ্রহণ করেছেন। কিন্তু নতুন লোক নিয়োগ প্রায় বন্ধ।আধিকারিক, প্রযুক্তিবিদ, কর্মচারী সহ সর্বত্র হাজার হাজার পদ শূণ্য, কাজ করবে কে? কোনওক্রমে কাজ চালানো হচ্ছে চুক্তিভিত্তিক সাময়িকভাবে লোক নিয়োগ করে। এইসব থেকেই বোঝা যাচ্ছে আসলে রেলের সিংহভাগ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী রেলমন্ত্রক নিজেই।

বন্দেভারত ও মানুষের লাশ

একদিকে বন্দেভারতের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মজে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, আর অন্যদিকে রেলের চূড়ান্ত গাফিলতিতে ৩০০ জনের নিথর লাশ ছিটকে পড়ে থাকে রেল লাইনের ওপর একই দিনে। আরও ১০০০জন আহত যাত্রী হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণাকাতর দিন কাটাচ্ছে। আর নরেন্দ্র মোদীর সরকার নিজেদের গাফিলতি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য অন্তর্ঘাতের তত্ত্ব আমদানির চেষ্টা চালাচ্ছে।

নিজেদের গাফিলতি ধামাচাপা যে দেবেই বিজেপি সেটা বোঝা গিয়েছিল দুর্ঘটনার দিন রাতেই।

ঘৃণ্য মিথ্যাচার

একদিকে যখন স্থানীয় মানুষ নিজেদের জীবন বাজি রেখে মানুষ উদ্ধারের কাজ চালাচ্ছে, ওড়িষ্যার মানুষ রক্ত দেওয়ার জন্য হাসপাতালের সামনে লাইনে জড়ো হচ্ছে, রেড ভলান্টিয়ার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছে নিহত-আহতদের পরিবারগুলির পাশে দাঁড়াবার জন্য, সেই সময়েই বিজেপি’র আই.টি সেল ঘৃণ্য মিথ্যাচারে ব্যস্ত ছিল। ‘পলাতক স্টেশন মাস্টার মুসলমান’, ‘পাশেই মসজিদ’, ‘আজ জুম্মাবার’ ইত্যাদি অজস্র অসত্য প্রচারে মেতে উঠেছিল সংগঠিত ভাবে বিজেপি বাহিনী। খুঁজে না পাওয়া সহকারী স্টেশন মাস্টারের নাম না কি শরাফ আলি, অথচ তাঁর আসল নাম বি মহান্তি। দুর্ঘটনাস্থলের পাশেই একটি বাড়ির ছবি দিয়ে প্রচার করা হ’লো ওটা নাকি একটা মসজিদ, অথচ ইস্কন নিজেই জানিয়েছেন যে এটা ওদেরই মন্দির।

এই ফ্যাসিবাদী পদ্ধতিতে চলা দল ও সরকারের হাতে শুধু রেলের সুরক্ষাই যে বিপন্ন তাই নয়, দেশের ১৩৮কোটি মানুষের সুরক্ষা, দেশের ঐক্য, সম্প্রীতি সবই বিপন্ন আজ।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন