২ এপ্রিল ২০২৩ (রবিবার)
“আমি গাই তারি গান -
দৃপ্ত-দম্ভে যে-যৌবন আজ ধরি অসি খরসান ;
হইল বাহির অসম্ভবের অভিযানে দিকে দিকে। - নজরুল ইসলাম।
এই অসম্ভবের পথেই যৌবনের অন্তহীন যাত্রা, দিকে দিকে তারই নব নব অভিযান। যৌবনই নবযুগের দূত, মহাশ্মশানের বুকে সজীব প্রাণের প্রতিজ্ঞা। চোখে তার সবুজের নেশা, বাহুতে নবীন বল, বুকে দৃপ্ত সাহস, কণ্ঠে নবজীবনের গান, অঙ্গীকার নতুন পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন। যৌবনের দুরন্ত তারুণ্য জোয়ারে ভেসে যায় পুরাতন সব জঞ্জাল। যৌবনই হানে জীর্ণ বৃদ্ধত্বের শাসন-প্রাচীরে হাতুড়ি কাস্তের প্রচণ্ড আঘাতের শব্দ। যৌবন চির অনমিত, উদ্ধত-শির, অনন্তের অভিযাত্রী। শাস্ত্র শৃঙ্খল তাকে বাধতে পারে না, মৃত্যুভয় তার অজানা। সে অশান্ত, প্রমত্ত। এ-হেন যৌবন শক্তিকে অবহেলা করে কার সাধ্য! কে পারে এই প্রমত্ত শক্তিকে স্তব্ধ করতে ? সমাজবদ্ধরা কোথাও এই অনন্ত শক্তিকে ঠেলে দিয়েছে উপেক্ষা অবজ্ঞার তিমিরে। দেশে দেশে কত অশুভ চক্রান্তের হয়েছে শিকার। দেশ ও জাতির উন্নয়নে ছাত্রদের উদ্যম শক্তির প্রয়োজন প্রতি মুহুর্তে অনিবার্য।
এই অনিবার্যকে পাথেয় করেই শোষণ হীন শোষণ মুক্ত সমাজ তৈরি করতে পথে নেমে লড়ে যায় ছাত্ররা…
সেই লড়ে যাওয়া ছাত্রদেরই একজন আমাদের কমরেড সুদীপ্ত গুপ্ত। যে অনন্ত শক্তির আধার নিয়েই নিজ হাতে তুলে নিতে শিখিয়েছিল সমাজের অগ্রগতির মশাল।
যদি হতাশা ব্যর্থতা আত্মবিশ্বাসহীনতা এসে কেড়ে নেয় সেই মশাল, যদি দুঃখ দারিদ্র্য, অনাহার, নিরক্ষতার অভিশাপে তিলে তিলে সেই সম্ভাবনাময় জীবন হয় নিয়ত কুণ্ঠিত, পঙ্গু, যদি স্বাস্থ্যহীনতা, শিক্ষাহীনতা, বেকারত্বের দীর্ঘশ্বাসে ভরে ওঠে সেই জীবন, তবে তা হবে দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি। রুদ্ধ হবে অগ্রগতির পথ। সেই অগ্রগতির পথকে নতুনভাবে উদ্দীপ্ত করার জন্য সেদিন পথে নেমেছিল সুদীপ্ত'রা। বুঝিয়ে দিয়েছিল, সময় এসেছে নতুন প্রাণচেতনায় উজ্জীবিত করার শুভক্ষণ। এসেছে মোহাচ্ছন্ন, সমস্যা- জর্জরিত, ঘুমন্ত ছাত্র সমাজকে জাগরণের মন্ত্র শোনাবার দুর্লভ মুহূর্ত। সেদিন সুদীপ্ত'রা বুঝিয়েছিল জাগ্রত এই ছাত্রসমাজের কাছেই হবে মানবতা-বিরোধী অশুভ শক্তির পরাভব। আমাদের ছাত্রদের বলই হবে দেশের জাতির অগ্রগতির শাণিত হাতিয়ার। হবে শান্তির দূত। আর এই শাণিত হাতিয়ারকে পাথেয় করেই ২০১১' সালে রাজ্যে পালাবদলের পর মমতা ব্যানার্জির স্বৈরাচারী রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে পথে নেমেছিল হাজারো হাজারো কালো মাথার যৌবনের তেজ।
সালটা ২০১৩। দিনটা ২ রা এপ্রিল।
সময়টা অশান্ত। কারণ সেইসময় রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের সরকার ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছিল। সেই ফতোয়ার বিরুদ্ধে পথে নেমেছিল সুদীপ্ত'রা। সেইসময় প্রতিদিন কলেজে এস এফ আই কে লড়তে হতো তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের দাপাদাপির বিরুদ্ধে। কলেজে প্রতিদিন এস এফ আই-কে লড়তে হচ্ছিল তখন তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের দাপাদাপির বিরুদ্ধে। ক্যাম্পাসে গণতন্ত্রের লড়াইটা, আপনার মতপ্রকাশের অধিকারের দাবিতে লড়াইটা, অলিগলি থেকে রাজপথ নাগরিকের গণতন্ত্রের লড়াইটা লড়তে দেখেই তো আমরা সেদিন ২৩ বছরের তরতাজা প্রাণ সুদীপ্ত গুপ্ত কে চিনেছিলাম। আর তাই সেদিনের সেই ২ রা এপ্রিলের 'আইন ভেঙেই আইন রোখার' মিছিল যখন প:ব: এর রাজধানী তিলোত্তমার বুকে আছড়ে পড়েছিল তা মহাসমুদ্রের আকার নিয়েছিল। মিছিল তখন বুঝিয়েও দিয়েছিল অবাধ্যতার চেহারা কতটা ভয়ংকর হ্য়, যৌবনের চেহারা কতটা উদ্ধত হয়। উদ্ধত সেই ব্যারিকেড ভাঙার মিছিলে সু-দীপ্ত দের নেতৃত্বে কলেজ স্ট্রীট থেকে রাণী রাসমণির এক অন্যরকম অন্যকমের আইন ভাঙার মিছিল শুরু হয়েছিল সেদিন। শাসকের ব্যারিকেড ছোঁয়ার পরই নেমে এলো আক্রমণ। অনেক রক্ত ঝরল। তিলোত্তমার পথ শোণিত স্রোতে হল রঞ্জিত। আজও আমরা সুদীপ্ত'র সাথীরা সেই রক্তাক্ত দিনের ভয়ংকর স্মৃতি কে ভুলতে পারি নি। আজও বিভীষিকা ময় সেই মুহুর্ত টাকে স্মরণ করলেই চোখের পাতাগুলো ভিজে যায়।
এই তো সেদিন, সেইসময়ে ৫ই এপ্রিল, ২০১৩ নেতাজীনগর কলেজের ক্লাসরুমের বেঞ্চে একটা ফার্স্ট ইয়ারের মেয়ে গুম হয়ে। তীব্র রাগে খসখস করে খোদাই করছে 'সুদীপ্ত দা SFI করত… সুদীপ্তদা রাজনীতি করত”। তার আগেরদিন লাশ বয়েছে সে তার ২৩ বছর বয়সী দাদার, বাড়ি ফিরেই সে দেখে, বুর্জোয়া সংবাদমাধ্যমে আসর বসেছে 'সুদীপ্ত ভাল গান করত, সুদীপ্ত ভাল কবিতা লিখত, সুদীপ্ত ওর বাবার কোল খালি করে চলে গেল, সুদীপ্ত রাজনীতির শিকার হল তাই ছাত্রদের কি রাজনীতি করা উচিত!!'
মেয়েটা ততোধিক রাগে যখন বেঞ্চে ঐ কথাগুলো খোদাই করছে তখনি ১০০ কিলোমিটার দূরে একটা কলেজে শাসকদল হুমিকি দিচ্ছে 'SFI করলে সুদীপ্ত করে দেব'। একটা খুন খুনীর ভাড়াটেদের আরও উগ্র করেছে কিন্তু খুনী বোঝেনি একটা 'শহীদ' তার সাথীদের কতটা উদ্ধত করতে পারে।
২রা এপ্রিল দিনটা ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের কর্মীদের কাছে অতি স্মরণীয়,শপথেরও বটে।
কি ঘটেছিল ঠিক সেইদিন!!!!
২০১৩ সালে ১২ ফেব্রুয়ারি গার্ডেনরিচের হরিমোহন কলেজে ছাত্রভোটের অশান্তি থামাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) তাপস চৌধুরী। ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ১৫ নম্বর বরোর প্রাক্তন চেয়ারম্যান মহম্মদ ইকবাল ওরফে চেয়ারম্যান সাব ওরফে মুন্না এখন জামিনে মুক্ত। এত বছর কাটলেও মামলার বিচার চলছে এখনও। এমনকি চেয়ারম্যান সাবের বিরুদ্ধে পুলিসই প্রত্যক্ষদর্শী হতে নারাজ। আশ্চর্য শোনালেও একেবারে খাঁটি সত্যি। সমাজবিরোধীদের হাত থেকে বাঁচতে টেবিলের তলায় ফাইল নিয়ে পিঠ বাঁচাতেও দেখা গিয়েছিল পুলিসকে। এই রাজ্যের পুলিস কর্তারাই সেই সময় হয়ে উঠেছিলেন রাজ্যসরকারের তল্পিবাহক।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে, সেইসময়ে ব্রাত্য বসুরা(বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী) বলেছিলেন, কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ থাকবে। আর তার বিরুদ্ধেই কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের মতামতকে প্রতিষ্ঠিত করতে ছাত্রসংসদ নির্বাচন এর দাবি তোলা হয়েছিল SFI এর পক্ষ থেকে। এই দাবির ভিত্তিতেই আইন অমান্য আন্দোলন হয় ২রা এপ্রিল, ২০১৩।
১০ বছর আগে ঠিক এমনই একটা দিনে ক্যাম্পাসে ছাত্রদের গণতন্ত্রের দাবিতে পথে নেমেছিল সুদীপ্ত সহ হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীরা। শাসকদলের লাঠি পেটায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল সুদীপ্ত গুপ্ত। SFI পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির অন্যতম সদস্য ছিল আমাদের সহযোদ্ধা সুদীপ্ত গুপ্ত। তার সাথে গুরুতর আহত হয়েছিল শ'য়ে শ'য়ে ছাত্র-ছাত্রীরা….
তৃণমূলী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি ক্ষমতায় আসীন হয়েই নানাবিধ অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে শুরু করে। এর মধ্যে অন্যতম কলেজগুলিতে সুস্থ নির্বাচন ব্যবস্থা বাতিলও তৃণমূলীদের আখড়ায় পরিণত করার ঘৃণ্য চেষ্টা।
স্বাভাবিকভভাবেই রাজ্যের প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠন এর বিরোধিতা করে ও সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আইন অমান্যের ডাক দেয়। কিন্তু এই আন্দোলনে আক্রান্ত হয় বহু ছাত্র তার মধ্যে সুদীপ্ত গুপ্তর আঘাত ছিল গুরুতর।
১০ বছর আগে এই দিনে পুলিশি হেফাজতে ঝরে গিয়েছিল মিছিলের মুখ সুদীপ্ত গুপ্তর প্রাণ। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক ইউনিয়নের দাবিতে কলেজস্ট্রিট থেকে সেদিন স্লোগান তুলেছিল সুদীপ্ত গুপ্ত রা। কিন্তু মিছিলে নেমে এসেছিল অবশ্যম্ভাবী প্রতিরোধ পুলিশি আক্রমণ ও গ্রেফতার। প্রেসিডেন্সি জেলের পথে পুলিশি নৃশংসতার শিকার হন কমরেড সুদীপ্ত গুপ্ত। কপালে তীব্র লাঠির ঘায়ে গুরুতর আঘাত থেকে চুইয়ে পড়া প্রতিটি রক্ত বিন্দুতে রচিত হয়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের অঙ্গীকার। সুদীপ্ত গুপ্তকে আক্রমণের রূপ এতোটাই নারকীয় যে সুদীপ্ত গুপ্ত সঠিক চিকিৎসার অভাবে শহীদ হয়। এ রাজ্যের সরকার আমাদের সাথী সুদীপ্ত গুপ্ত'র নামের আগে চিরকালের জন্য শহীদ কথাটা বসিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সুদীপ্ত'র লাশের পাশে না থেকে আই পি এল এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মত্ত হয়েছিলেন। আর ঘোষণাও করেছিলেন, কলেজে আর কেউ এস এফ আই করলে, তার অবস্থাও নাকি সুদীপ্ত'র মতোই হবে। আর তারপর থেকে এই বাংলায় সুদীপ্ত'র কসম খেয়ে সুদীপ্ত'র সাথী থেকে সুদীপ্ত'র কথা শোনা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী রা স্কুল-কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে বিরোধী মত প্রতিষ্ঠিত করতে প্রতিনিয়ত লড়ে যাচ্ছে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এর বার্তা প্রতিষ্ঠিত করতে। আর এ বাংলার প্রত্যেকটা ছাত্র-ছাত্রী মননে গেথে যায়, সুদীপ্তরা মরে না। তাঁরা বেঁচে থাকে উত্তরসূরিদের মধ্যে । ক্রমাগত লড়াইয়ের মধ্যে।
সুদীপ্তও সেদিন শাসককে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেছিল 'কলম যার ক্যাম্পাস তার, বহিরাগত গুন্ডাদের জায়গা ক্যাম্পাসে নয়…ছাত্রছাত্রীদের মতপ্রকাশ সুষ্ঠু ও অবাধ হতে হবে, তাই ছাত্র সংসদ নির্বাচন করতে হবে'। সুদীপ্ত জানত এ পচে গলে যাওয়া সমাজটাকে বদলাতে গেলে রাজনীতি লাগে, নীতিনিষ্ঠ পথ। মতাদর্শের নিরবচ্ছিন্ন প্রচারক সুদীপ্ত বলত প্রতি মুহুর্তে, "শাসক তুমি খুনী, দূর হটো এক্ষুনি"। কিন্তু প্রতিমুহুর্তে নেমে আসা রাষ্ট্রের করাঘাতগুলোয় সুদীপ্ত জানত, ওর চেতনারা জানত, কবিতার খাতা বা উড়োচিঠি নয় দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে লিখতে হয় দেওয়াল জুড়ে। দেওয়ালে দেওয়ালেই বিদ্রোহ আসে। তাই তো ছাত্রসংসদ নির্বাচন ও জরুরি।
বর্তমান সময়েও এই দাবিতে রাজ্য উত্তাল।
শিক্ষার উপর সামগ্রিক আক্রমণ গোটা দেশ জুড়েই পরিলক্ষিত হচ্ছে।
যেরকম অশোভন দ্রুততা ও তড়িঘড়ি করে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রবর্তিত হতে চলেছে, তাতে অনেকেই এর প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়েছে। এটি কোন দক্ষ কমিশন নিয়োগ করে তৈরি হয়নি। বিদ্যালয়ে ভিডিও, দূরদর্শন, কম্পিউটার ইত্যাদির প্রয়োগের কথা আছে, আছে আরও অনেক মনোহারী কথার চমক। ভারতের সামগ্রিক শিক্ষা- ব্যবস্থার চিত্র সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলে এগুলোকে খুবই অবাস্তব বলে
মনে হয়। এখনও আমাদের দেশে সাক্ষরতার হার শতকরা ৫৬। গোটা দেশের মানুষকে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারায় শিক্ষিত করতে, যুক্তিবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে, কূপমণ্ডুকতা, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা ও বিচ্ছিন্নতা থেকে মুক্ত করতে সর্বজনীন গণমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দলিলে নেই। নেই স্কুল-ছাত্রদের স্কুলে রাখার কথা। মাধ্যমিক শিক্ষার সম্প্রসারণের কোন উদ্যোগের উল্লেখও দলিলে নেই। তার জন্য অর্থ সংস্থানের কোন প্রস্তাব। নেই। আজও যেখানে বহু বিদ্যালয়ে ব্ল্যাকবোর্ড নেই, চক নেই, ছাদ ফুটো হয়ে জল পড়ে; চেয়ার, বেঞ্চের অভাব, অভাব ভাল স্কুলবাড়ি ও শিক্ষকের, সেখানে দু হাজার গ্রাম শহর পিছু। একটা ঝকঝকে 'মডেল স্কুল দেশের অগ্রগতিকে কতখানি সুনিশ্চিত করবে। শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ সামান্য অর্থের সিংহভাগটাই বায়িত হবে ওই 'মডেল স্কুলের জন্য। জাতীয় দলিলে বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার প্রসারের কথা থাকলেও তার জন্যে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নেই। মেধাবীদের জন্য উচ্চশিক্ষা আর স্বল্প মেধাবীদের জন্য নিম্নতর বৃত্তিশিক্ষা। ফলে সব মেধা কেন্দ্রীভূত হবে কারিগরি শিক্ষায়। কিন্তু মেধাবীদের উচ্চ কারিগরি শিক্ষা দিয়েও কোথাও তাদের জীবিকার সন্ধান দেওয়া হয়নি।
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাছাই ভাল, কিন্তু যারা বাছাইয়ের বাইরে থাকবে, তাদের জন্যে কি ব্যবস্থা? শিক্ষাকে রাজনীতি মুক্ত করার প্রস্তাবের পেছনেও রয়েছে এক গভীর রাজনীতি। এটা অনেকটা দলহীন গণতন্ত্রের মতই সোনার পাথর বাটি। সর্বোপরি যেখানে দেশকে আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এত ঢক্কানিনাদ, সেখানে ভারতে শিক্ষাখাতে ব্যয় জাতীয় আয়ের মাত্র শতকরা তিনভাগ।
এই ভাবে চললে শিক্ষাকে বেসরকারীকরণ এর পথই প্রশস্ত হবে।
তাই এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে।
গত দু'বছরের প্যাণ্ডেমিক পরিস্থিতিতে শিক্ষার হাল তলানিতে এসে ঠেকেছে।
এই পরিস্থিতিতে ড্রপ আউটে হারিয়ে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার মূল স্রোতে ফেরানোর কোন দায়িত্ব নেয়নি এই রাজ্যের সরকার।
মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থী কমেছে ৪ লাখেরও বেশি। এই নিয়ে কোন হেলদোল নেই সরকারের। বরং নিয়োগ দুর্নীতিতে আরো বেশি করে জরিয়ে পড়ছে প্রতিদিন।
সরকারি মন্ত্রীদের নাম দুর্নীতির শীর্ষস্থানে। শিক্ষায় দুর্নীতিবাজ দের বিরুদ্ধে ক্রমাগত লড়াই চালাচ্ছি আমরা।
আমরা জানি, ছাত্ররাই হলো দেশের, জাতির চিরজাগ্রত প্রহরী। ঠিক যেমন করে সুদীপ্ত'রা দিন বদলের কথা বলতো। দিন বদলের কথা বলার কারিগর দের ওপরেই অসীম দায়িত্ব ।
দেশ ও জাতিগঠনের মহান সৈনিক সুদীপ্ত'রা। আজ দিকে দিকে যখন সাম্প্রদায়িকতার নির্লজ্জ মত্ততা, যখন অশুভ শক্তির রাহুগ্রাস, যখন মনুষ্যত্ব হরণের পাশব চেষ্টা, তখন এই সুদীপ্ত'র দেখানো পথেই ছাত্ররাই দেখাবে নতুন দিনের পথ। তারাই নতুন যুগের নতুন বাণীর বাহক । তারাই সংহতি-চেতনার অগ্রদূত। নতুন চেতনার আলোক-উদ্ভাসিত তাদের দৃষ্টি । তারাই দেশে আনবেও নতুন প্রাণোন্মাদনার জোয়ার। সেই জোয়ারে ভেসে যাবে পুরনো জীর্ণ যা কিছু ফ্যাসিবাদী সঞ্চয় সব। তাই এই ছাত্রসমাজের কাছে তাই নতুন কালের অনেক প্রত্যাশা । তাদের কাছে আজ একটাই সংগ্রাম, তা হলো শোষণমুক্তির সংগ্রাম, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, মনুষ্যত্ব না-হারাবার সংগ্রাম। সংগ্রাম সাম্প্রদায়িকতার বীভৎস অস্তিত্বকে চিরকালের মত সমাজের বুক থেকে মুছে দেওয়ার ।
ঠিক যেরকম ভাবে সুদীপ্ত'র লাশ আমাদের দোহাই দিয়েই শিখিয়েছিল,
"তোর রক্তের দাগ, যদি পুষে রাখে দাগ
তবে রাস্তাকে ভালোবাসবি"
এই রাস্তাকে ভালোবেসে আমাদের লড়াই চলবে।
আর এই লড়াইকে আরো মজবুত করতে আগামীকাল দেখা হোক।
২রা এপ্রিল, ২০২৩।
প্রতিটা উন্মত্ত যোবন বুঝিয়ে দিক আমরা আজও কোথাও হার মানি নি। প্রজন্ম চত্ত্বর - এজেসি বোস রোড (দীনেশ মজুমদার ভবনের সামনে) ঠিক বেলা ১২ টা।
সুদীপ্ত'রা হার মানতে শেখায় নি। তাই তো আজও প্রতিটি লড়াইয়ে আমাদের সাথে থাকে সামনের সারিতে। আজ বাংলার যে প্রান্তে যে ছাত্র-ছাত্রীরা শাসকের বুকে কাঁপন ধরিয়ে লড়াই করছে তাদের প্রতিটি চোখের ভাষায় আমরা খুঁজে পাই সুদীপ্ত গুপ্ত'কে। সে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী দের লড়াইই হোক বা বাকুড়ায় ড্রপ আউটে হারিয়ে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার মূল স্রোতে ফেরানোর লড়াইতে সরকারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠাই হোক বা কোন কলেজ ক্যাম্পাসের গেটে তৃণমূল দুষ্কৃতী বাহিনীর অতর্কিতে আক্রমণই হোক।
রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা যে কোন ছাত্র-ছাত্রী মুখই হল আমাদের সুদীপ্ত গুপ্ত।
তাই তো, সুদীপ্ত'কে স্মরণ করেই আমরা জীবন মরণ এ লড়াইয়ে তোমাকেই পাশে চাই। আমাদের
"সুদীপ্ত সংগ্রাম চলছে চলবে।"