১৭ ফেব্রুয়ায়ী ২০২৩ (শুক্রবার)
পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী রাজ্য বাজেট পেশ করলেন।আমাদের রাজ্যে বাজেটে অর্থমন্ত্রীকে খতিয়ান দিতে হয় না গত বছর তিনি যা বলেছিলেন তার কতটা তিনি করতে পারলেন বা পারলেন না । আমাদের রাজ্যে সেভাবে আয় -ব্যয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ্য হিসেব রাজ্যের মানুষের সামনে বলবার দায় নেই অর্থমন্ত্রীর। আমাদের রাজ্যে রাজ্য বাজেটের সাথে এক বছরের আর্থিক সমীক্ষা প্রকাশ করারও দায় নেই সরকারের। এরকমই নিয়ম চালু করেছে রাজ্যে নির্বাচিত তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার। ১২৪ পৃষ্ঠার লিখিত বাজেট বক্তৃতা এবং দুপাতার আর্থিক বিবরণীতে কাজ সারা হয়ে গেছে। রাজ্যবাসীর ওঁদের মুখের কথা বিশ্বাস করতে হবে। কারণ তথ্য আর কোথাও নেই। রাজ্য সরকার কোন তথ্য প্রকাশ করে না । আর্থিক সমীক্ষাতে প্রতি বছর আর্থিক সব ক্ষেত্রের আর্থিক তথ্য থাকে; এই তথ্য রাজ্যবাসীকে জানানোর দায় আছে একটি নির্বাচিত সরকারের। প্রায় সর্বত্রই এই তথ্য জানানো হয় রাজ্যবাসীকে। অতীতে হত-এখন এঁর হয় না । বাজেটের পরিপ্রেক্ষিত হওয়া উচিৎ এই সমীক্ষা । ২০১৫-১৬ সালে , ২০১৬-১৭ সালে, ২০২০-২১ সালে প্রকাশিত হয়েছিল এ রাজ্যে এই সমীক্ষা ; তাকে সমীক্ষা না বলে সরকারের প্রচার পুস্তিকা বললে ভালো হয় কারণ তাতে তথ্য সারণী বা খতিয়ানের বদলে রয়েছে কিছু ছবি আর কিছু ঘোষণা। তাই কেন কি ভেবে অর্থমন্ত্রী এই বাজেট পেশ করলেন তা কেউ জানে না । চলে আসি বাজেট বক্তৃতায়। এই বক্তৃতার শুরুতে মুখ্যমন্ত্রীর পুরস্কার প্রাপ্তি এবং শেষে মুখ্যমন্ত্রীর একটি রচিত কবিতা। মাঝে মুখ্যমন্ত্রীর নানা প্রকল্পের দেওয়া নামকরণের নামমাহাত্ম্য বর্ণনা। এই বাজেট মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত প্রচার না রাজ্যবাসীর জনকল্যাণের খতিয়ান -তা বোঝা যায় না। বাজেট তো ফাঁকা হওয়ারই ছিল। রাজ্য সরকার ঋণে ডুবে আছে এবং আরও ঋণ করে চলেছে ; মাঝে মাঝেই এলোপাথারি প্রকল্পের ঘোষণা আর সরকারী কর্মসংস্থান নেই বললেই চলে।‘শ্রী’ পদবীর প্রকল্পগুলির কথা ফলাও করে বলা আছে -শুধু এই বিশেষ প্রকল্প এবং শিবিরের কথাই বলা আছে । কিন্তু সরকারী চাকরি? কর্মসংস্থান নিয়ে সরকারের কোন ঘোষণা ? নেই। চাষীরা ফসলের দাম পাচ্ছে না , সরকারের কোন বিশেষ ব্যবস্থা? নেই। অসংগঠিত শ্রমিকের বীমায় কত ব্যয় হল? সরকারের কোন ঘোষণা? নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। সরকারের কোন ঘোষণা? নেই । তাহলে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন মাথায় রেখে গ্রামোন্নয়নের বরাদ্দ বৃদ্ধি? তাও নেই। কি আছে এই বক্তৃতায়? রাজ্যবাসীকে নানা ভাবে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে বাজেট । মহিলা উদ্যোগীদের ঋণদানের ব্যবস্থা করে রাজ্য লাভবান হয়েছে বলে বলা হল। কিন্তু সেই ঋণের বেশির ভাগ তো ক্ষুদ্র ঋণদান সংস্থাগুলির কাছে। সেখানে তো চড়া হারে সুদ গুনতে হয়। ঋণগ্রস্তদের মধ্যে আত্মহত্যা ঘটে গেছে এর মধ্যেই। কৃষক আত্মহত্যা নিয়ে বাজেট কোন কথা বলে নি। ২০২১ সালে তথ্যের অধিকার আইনের ধারায় এক প্রশ্নের উত্তরে জানা যায় যে শুধুমাত্র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ১২২ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যা করেছেন স্বনিযুক্ত পুরুষ মহিলা উভয়েই। এই তথ্য দিয়েছে জাতীয় ক্রাইম রিসার্চ ব্যুরো। তাই ঋণগ্রস্তদের দুর্দশার দিকে ফিরেও না তাকিয়ে দুস্থ মানুষকে, কাজ হারানো মানুষকে আর্থিক সহায়তা করার বদলে তাদের আরও ঋণগ্রস্ত করবার কথা বলা আছে এই বাজেটে। কিভাবে? ক্রেডিট কার্ড দেওয়ার কথা বলা আছে মৎস্যজীবীদের, আর্টিসানদের অর্থাৎ কারিগর-শিল্পীদের, উইভার অর্থাৎ তাঁতিদের । এঁদের কেও ঋণগ্রস্ত করে তুলবার পরিকল্পনা করেছে সরকার। বেকারদের জন্যও এবার রয়েছে ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড। এর আগে আমরা ছাত্রদের ক্রেডিট কার্ড শুনেছি। এই বাজেট তো জানালো না সেই প্রকল্প কিরকম চলছে? এবারও রয়েছে সেই ক্রেডিট কার্ডের ঘোষণা। ক্রেডিট কার্ড তো আসলে ব্যাঙ্কের কাছে ঋণগ্রস্ত করে দেওয়া মানুষকে। ঋণের জালে জড়িয়ে যায় এইভাবেই দুস্থ মানুষ। আমাদের রাজ্যে কাজ হারানো বহু মানুষ এমনিতেই ঋণগ্রস্ত। এক সংস্থাকে চড়া সুদের হার মেটাতে আরেক সংস্থা থেকে ঋণ নিচ্ছেন তাঁরা। এ কথা রাজ্যবাসীর কাজ হারানো মানুষদের ঘরে ঘরে। ঋণ নিচ্ছেন মানুষ জিনিষপত্রের দাম বাড়ার জন্য। দৈনিক রোজগারের মানুষ মাস চালাতে পারছেন না- ঋণ নিচ্ছেন । ঋণ নিচ্ছেন ক্ষুদ ঋণদান সংস্থা থেকে; ঋণ নিচ্ছেন গ্রামে মহাজনের কাছ থেকে। রাজ্যবাসী জানে আর রাজ্য সরকার জানে না? ঋণের উপর আরও ঋণ চাপাচ্ছে সরকার। অনুদান নয়, সরাসরি ঋণ। ঋণ কে দেবে , সুদের হার কত কিছু বলা নেই বাজেটে।এখানেই বাজেটের অসততা।শেয়ার করুন