ওয়েবডেস্ক
নভেম্বর বিপ্লব ১৯১৭-তে হলেও তার প্রস্তুতি বহুবছরের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে হয়েছিল- আর সেই সংগ্রাম বিপ্লবীদের নিজেদের মধ্যেও চলেছিল। ইস্পাত তৈরিতে যেমন উত্তাপ দিয়ে লোহা গলিয়ে সংকর ধাতু তৈরী হয়, অনেকটা সেরকমই। ঘটনাটি দানা পাকায় ১৯০৩-এর জুলাই-অগাস্টে যখন বিপ্লবী উদ্যোগ প্রথম একটা ঠিক মতো সাংগঠনিক রূপ পায় রুশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক লেবার পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসে। সেখানে কিন্তু সবাই রাজনৈতিক ভাবে একই ধারার মানুষ ছিলেন না- এদের মোটামুটি ভাগ করলে দুটো মূল ধারাতে ধরা হতো; আর এই দুটো ধারার মধ্যে জোরালো রাজনৈতিক ও মতাদর্শের লড়াই থেকেই ১৯১৭ এর নভেম্বর বিপ্লবের ধরণ আর কর্মসূচির জন্ম হয়।এদের মধ্যে লেনিন আর তার মতের সমর্থকদের বলা হতো বলশেভিক আর তাদের বিপরীত ধারার বিপ্লবীদের বলা হতো মেনশেভিক। এই মেনশেভিকরা রাশিয়ায় জারতন্ত্রের অবসান চাইলেও এনাদের পার্টি গঠন নিয়ে মতামত লেনিনপন্থীদের থেকে একেবারেই আলাদা ছিল। এদের মত ছিল যে বিপ্লবী পার্টি হবে খোলামেলা; যেকোনো অংশের বা শ্রেণীর মানুষের জন্য পার্টির দরজা খোলা থাকবে, বিপ্লবী পার্টি হবে জনগণের পার্টি। এই নিয়ে যখন বিবাদ তুঙ্গে ওঠে তখন লেনিন ১৯০৪ সালের গোড়ায় লেখেন 'এক পা আগে, দুই পা পিছে'। সেখানে লেনিন বলেন: "ক্ষমতা দখলের জন্য সংগ্রামে সর্বহারাশ্রেণীর হাতে সংগঠন ছাড়া অন্য কোনো হাতিয়ার নেই।" তার যুক্তি ছিল যে পুঁজিবাদী দুনিয়া মানুষে মানুষে রুটি-রুজির জন্য যে বেপরোয়া প্রতিযোগিতা বা ইঁদুরদৌড়ের ব্যবস্থা চালু করেছে তাতে খেটে-খাওয়া মানুষকে একে-অপর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়- তাহলে এই অবস্থায় তারা কি করে নিজেদের দুনিয়া গড়বেন? লেনিন বলেন যে একমাত্র যদি এই খেটে খাওয়া মানুষরা নিজেদের দৈনন্দিন শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মতাদর্শগতভাবে একজায়গায় আসেন তবেই সংগঠন শক্তিশালী হয় সম্ভব. অর্থাৎ শুধু এই রাজনৈতিক বা মতাদর্শের ঐক্যই মূল নয়- তাকে সাথে নিয়ে বাস্তবে আন্দোলনের মাটিতে সংগঠনের ঐক্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আর এই থেকেই নভেম্বর বিপ্লবের কর্মসূচি আর রূপ নির্ণীত হয়- লেনিনের যুক্তিমতো ঠিক হয় যে বিপ্লবের প্রাথমিক কাজ রাশিয়াতে জারতন্ত্রের অবসান করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হলেও তা হবে শ্রমিকশ্রেণী ও খেটে খাওয়া মানুষের নেতৃত্বে- করা হবে আমূল ভূমিসংস্কার। আর তার জন্য পার্টির নিয়ন্ত্রণ ও সদস্যপদ দেওয়া হবে এমন ভাবে যাতে পার্টিতে অ-সর্বহারা বা খেটে খাওয়া মানুষ বাদে সুবিধেবাদী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের ভিড় এড়ানো যায়। একমাত্র তবেই বিপ্লবী শক্তির জয় সম্ভব কারণ এই ধরণের মধ্যবিত্ত এমনকি ধনী শ্রেণী থেকে আসা মানুষ বিপ্লবের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বেশিদিন টেকসই হয়না। ১৯০৪ সালে নেওয়া লেনিনের এই নীতিই নভেম্বর বিপ্লবের সাফল্য নিশ্চিত করতে পেরেছিলো।