সারাদেশকে আগামীদিনে ‘কাশ্মীর’ বানাতে চায় সঙ্ঘ, সতর্ক করলেন তারিগামি

কলকাতা, ৩ জানুয়ারি— যে কাশ্মীরের মানুষ স্বেচ্ছায় ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্তানের বদলে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে যোগ দিয়েছিলেন, সেই কাশ্মীরকে মোদী সরকার কীভাবে জেলখানায় পরিণত করেছে তার কাহিনী শোনালেন ভেঙে দেওয়া জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভার সদস্য ও সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইউসুফ তারিগামি। শুক্রবার কলকাতায় গণশক্তি পত্রিকার ৫৪তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি বললেন, অবরুদ্ধ কাশ্মীরে ৫ মাস ধরে ইন্টারনেট বন্ধ। ইংরাজি নতুন বছরে মোদী সরকার কাশ্মীরের মানুষকে উপহার হিসাবে কেবল এসএমএস করার সুযোগ দিয়েছে। কলকাতা অথবা দেশের অন্য কোনো জায়গার যুবকরা এটা কল্পনা করতে পারবে! কাশ্মীরকে ওরা জেলখানায় পরিণত করেছে, যার খবরও বাইরে আসতে দিচ্ছে না।

কাশ্মীরের যে ইতিহাসকে আরএসএস ভুলিয়ে দিতে চায় তার উল্লেখ করে তারিগামী বলেছেন, স্বাধীনতার সময় কাশ্মীরের রাজা হরি সিং ভারতে যোগদান নিয়ে দোদুল্যমান ছিলেন। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণ পাকিস্তানে যেতে অস্বীকার করেন এবং ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন। হায়দরাবাদের মতো ফৌজি লড়াইতে নয়, শেখ আবদুল্লাহের নেতৃত্বে কাশ্মীরের মানুষের লড়াইতে কাশ্মীর ভারতে এসেছে। ধর্মের নামে দেশ বাছতে অস্বীকার করায় পাকিস্তানের হানাদারদের হাতে বারামুল্লায় মুসলিমরা শহীদ হয়েছে। তারপরে কাশ্মীরের ভারতভূক্তির চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে ভারতের সেনারা কাশ্মীরে ঢুকেছে। সেই কাশ্মীরের মানুষকে অমিত শাহরা কোন সাহসে সন্ত্রাসবাদী বলে গালি দেয়?

কাশ্মীর নিয়ে মোদী অমিত শাহের পদক্ষেপে আসলে পাকিস্তানই উৎসাহিত হয়েছে বলে মনে করেন তারিগামি। তিনি বলেছেন, কাশ্মীরের সব রাজনৈতিক নেতারা বন্দী। পাকিস্তান আজও কাশ্মীরের দাবি ছাড়েনি। সীমান্তের ওপার থেকে তারা এখন বলে, ‘ফারুক দেখো, এই সেকুলার ভারতকে তোমরা বেছেছিলে? ভারতমাতা তোমাকে জেলে আটকে রেখেছে।’

কাশ্মীরের অন্য রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ইউসুফ তারিগামিও বন্দী ছিলেন কিছুদিন আগে পর্যন্ত। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন এবং আইনী পদক্ষেপে তাঁকে কাশ্মীরের বন্দীদশা থেকে মুক্ত করেছেন। ৩৭০ ধারা তুলে দিয়ে মোদী সরকার কীরকম আজাদি কাশ্মীরকে দিয়েছে তা বোঝাতে তারিগামি বলেন, তিন তিনবার চেষ্টা করে সুপ্রিম কোর্ট বলার পরে কমরেড সাধারণ সম্পাদক আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারলেন। কেমন আজাদি বিজেপি দিয়েছে বুঝুন। কি অভিযোগে আমি বন্দী জানতে চাওয়ায় বলা হয়েছিলো, আমার বিপদ ঠেকাতে আমাকে কারো সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। বিপদটা আমার? নাকি আমিই সরকারের বিপদ? কাশ্মীরে এখন গুলি চালানোর দরকার হবে কেন? শ্মশান কিংবা কবরস্থানে কি আর গুলি চলে!

কাশ্মীরের মানুষের ওপরে যে আক্রমণ নেমে এসেছে আগামী দিনে দেশের অন্যান্য রাজ্যের মানুষের ওপরেও নেমে আসবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন এবং প্রতিরোধে এগিয়ে আসার আবেদন জানিয়েছেন তারিগামি। সভায় এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র এবং পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য বিমান বসু ও গণশক্তির সম্পাদক দেবাশিস চক্রবর্তী।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন