বাংলার পুনর্জাগরণের জন্য, বামপন্থার পুনরুত্থান প্রয়োজন - মহম্মদ সেলিম

৭ জুলাই ২০২৩ (শুক্রবার)

প্রথম পর্ব

সময় বহমান। তা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না। সময় সাথে সাথে সবকিছুরই পরিবর্তন হয়। একটা সরকার পরিবর্তনের নামে যেভাবে গুণ্ডামি মস্তানি করছে সেইটা যদিও একটা পরিবর্তন অবশ্যই। মনে রাখতে হবে পরিবর্তন উন্নতির দিকেও যেতে পারে, নিচের দিকেও যেতে পারে। অবতরণও হয়, আবার আরোহণও হয়। কিন্তু এইবার মানুষও বুঝতে পারছেন, এই যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওরা ভেবেছিল ভিনি ভিডি ভিসি করে সবটা জিতে নেবে তেমনটা আর সম্ভব না। একদিন হঠাৎ কারোর মনে হল, আর অ্যাপয়েন্টমেন্ট হল নির্বাচন কমিশনারের এবং ভোটের ঘোষণা হয়তে গেল। সর্বদলীয় বৈঠক তারপরে ডাকা হল। অফিসারদের তারপরে ট্রেনিং দেওয়া হল। খাতা নেই, ডিসিআর নেই, কাগজপত্র নেই, ফর্ম নেই। তার মানে কেউ নমিনেশন দিতে পারবে না। কিছুদিন ধরেই দেখছিল সবাই পিংলায় বোমা বিস্ফোরণ হচ্ছিল৷ কারখানায় নানা বোমা তৈরি হচ্ছিল। পিংলায় মারা গেছিল যে তার বাড়ির লোকেরা বলেছিল সামনে ভোট আছে, এইজন্য অর্ডার বেশি আছে। এই জন্য বোমা তৈরি করতে হচ্ছে। অর্থাৎ রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাসের এমন একটা পরিবেশ তৈরি হবে আর তার সাথে প্রশাসন ও পুলিশের একটা অংশকে কাজে লাগিয়ে নিয়ে মিথ্যাচার চালানো হবে। মিথ্যা মামলা হবে। অথচ উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে কেউ কিছু করবে না। এমন একটা অবস্থাকেই সম্প্রতি বিমান দা ‘বোবা কালার মত পরিস্থিতি’ বলে চিহ্নিত করেছেন। সাধারণত এভাবে বলি না আমরা। মানুষ নিরাপত্তা চান। নির্বাচন কর্মীরাও তাই চান। যারা প্রচার করবেন, সাধারণ মানুষ, ভোটার সকলেরই নিরাপত্তা প্রয়োজন। কিন্তু নির্বাচনে যাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী না আসে, এলেও যেন সঠিকভাবে ফোর্স মোতায়েন না হয় সেই চেস্টা হচ্ছে। ফোর্স মোতায়েন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের, তারা কোটি কোটি টাকা খরচা করে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে যাতে কোনো বাহিনী নিয়োগ না হয়।


এমন ঘটছে কেন?
সারা দেশের সাথে আমাদের রাজ্যেও এক লুঠেরা ব্যবস্থা চলছে। সেই ব্যবস্থাকে কায়েম রাখতে গেলে মানুষের অধিকারকে লুঠ করতেই হয়। স্বাধীন ভারতে ভোটাধিকার হল একটি ন্যুনতম সাধারণ নাগরিক অধিকার। এই রাজ্যে আমরা কি দেখছি? নমিনেশন দেওয়া যাবে না, পোলিং এজেন্ট বসতে পারবে না, জরুরী ফর্মগুলি ফিল-আপ করতে পারবে না, পারলেও কারচুপি করে খারিজ করে দেওয়া হবে অথবা নষ্ট করে দেওয়া হবে। আসলে ভোট দিতে দেওয়া হবে না। ভোট কেন্দ্রে কাউন্টিং এজেন্ট থাকতে পারবে না। ২০১৮ তেও এমনটা করা হয়। আমাদের রাজ্যে নির্বাচনের ইতিহাসে বিরোধীদের পক্ষে সবচেয়ে কম নমিনেশন জমা হয়েছিল ২০১৮তেই৷ তার সাথে মিথ্যা মামলা, সন্ত্রাস, সরাসরি দৈহিক আক্রমণ এসবও চলে। দুর্জন আর মহাজনদের কারবার তৈরি হয়েছিল। এখন দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন চলছে, আমরা প্রথমে বলেছিলাম চোর ধরো, জেল ভরো, তারপর স্লোগান উঠল গ্রাম জাগাও, চোর তাড়াও। এসব থেকে মানুষের মনোভাব স্পস্ট বোঝা যায়। মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। পালে হাওয়া পেতে আন্দোলনের মধ্যে বিজেপি ঢুকতে চেয়েছে। তারা আন্দোলনের অভিমুখ পাল্টে দিতে হিন্দু-মুসলমান, রাজবংশী-আদিবাসী-তপশিলি এসব বলে প্রচার চালায়। এভাবেই সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর নাম করে জনগনের বিভিন্ন অংশকে ভাগ করে দিতে চায় ওরা। আসলে বামপন্থীদের দুর্বল করাই উদ্দেশ্য। বিরোধীরা দুর্বল হয়নি, ভাগাভাগির রাজনীতির প্রকোপে মানুষের ঐক্য কিছুটা দুর্বল করে দেওয়া গেছিল। ঐক্যবদ্ধ মানুষ প্রতিরোধ গড়তে পারে, নিজের হক চাইতে পারে, তার ধক দেখাতে পারে, সেটাই দুর্বল করে দিতে বিভাজনের রাজনীতি আসরে নামে। শিক্ষা নিয়োগের দুর্নীতি মাদ্রাসা স্কুলে হচ্ছে। এবার যদি সাম্প্রদায়িক শক্তি এসে বলে মাদ্রাসা আলাদা স্কুল আলাদা, হিন্দু আলাদা মুসলমান আলাদা-তাতে কার লাভ হবে?


চুরি, ঘুষের টাকায় যে পাহাড় জমালো তারই লাভ হল। বিগত পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাতেই মানুষের উত্তরণ ঘটেছে। নিজেদের চেতনা থেকেই এমন হয়েছে। আমরা বললাম ঘরে ঘরে লালঝাণ্ডা রাখুন। এতে কি হল? অমিত শাহকে পর্যন্ত জিজ্ঞাসা করতে হয়েছে এত লালঝাণ্ডা কোথা থেকে এল! লাল ঝাণ্ডার ভয়ে উনি তো নবান্নের চোদ্দ তলায় পৌঁছে গেছিলেন। মানুষের মেজাজ বোঝা যাচ্ছিল। আমরা সবসময় বলি, অধিকার কে কাকে দেয়? অধিকার কেড়ে নিতে হয়। চোপড়ায় নমিনেশনের সময় সবাই মিলে সংগঠিত ভাবে প্রার্থিপদ জমা কর‍তে যাওয়ার সময় দুষ্কৃতিরা গুলি চালাল। একই ঘটনা ভাঙড়েও হয়েছে। বিডিও অফিসে আগে থেকে তৃণমূলের লোকেরা ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে। ইলেকশন কমিশন বলেছিল ১ মাইল অবধি নাকি কাউকে জটলা করার অনুমতি দেওয়া হবে না। মনে রাখতে হবে সন্ত্রস্থ মানুষ জোট বেঁধে গেলে ভরসা পায়। এবারে আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ট্রফি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া যাবে না। ভেঁপুযাত্রার সময় তৃণমূল কংগ্রেস একটা নকল ভোট করে সব জিতে নেওয়ার ভান করেছিল, যেন ভোটটা প্রায় হয়েই গিয়েছিল। শুধু নামগুলির ঘোষণা বাকি। আইপ্যাকের মত কর্পোরেট এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে নমিনেশন ও অন্যন্য কাগজপত্র অনলাইন ট্রান্সফার করে দেবার বন্দোবস্ত ছিল। অ্যামাজন, জোমাটোর মত ডেলিভারি পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু মানুষ বেঁকে বসলেন। এই লড়াইতে শুধু সিপিআই(এম) রয়েছে এমন না, লড়াই করছে বামফ্রন্ট। শুধু বামফ্রন্টও না, সহযোগী অন্যান্য বামদলগুলিও রয়েছে যারা ফ্রন্টের বাইরে রয়েছেন। তার সাথে যুক্ত হয়েছে বিজেপি-তৃণমূল বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক শক্তি।

এখানেই আরেকটি বিষয় মনে রাখা জরুরী। এবারের সন্ত্রাসের পরিবেশের মাঝেও প্রায় জামাই আদর করে বিজেপির নমিনেশন করানো হয়েছে। অথচ এত করেও তারা দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনের বেশি মনোনয়ন জমা দিতে পারেনি। আমরা কিছু সমঝোতা, কিছু আলাপ-আলোচনার মধ্যে দিয়ে এগোনোর চেষ্টা করেছি, আমাদের লক্ষ্য ছিল কোথাও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় শাসক দল যেন ওয়াকওভার না পায়। সেটা হয়েছে, লড়েই করতে হয়েছে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে করতে হয়েছে।

বাজারি সংবাদমাধ্যমগুলি প্রায় কন্ট্রাক্ট নিয়ে মোদি আর মমতার ছবি দেখানোর চেষ্টায় ছিল। বাইনারি তো এভাবেই বানানো হয়। মানুষের মনের মধ্যে তা ছাপ ফেলে। তারাও আজকে বলতে মানুষের লড়াইয়ের ছবি দেখাতে বাধ্য হচ্ছে। আসলে বাইনারির আড়ালে অনেক টাকাপয়সা, বিজ্ঞাপনের খেলা আছে। গত ভোটে আমরা দেখলাম তৃণমূলের একটা অংশ আর পারছি না, দমবন্ধ হয়ে আসছে ইত্যাদি বলে বিজেপিতে গিয়ে লাইন দিয়েছিল। কদিন পরে তারাই আবার ফিরে এল। ২০১৪ থেকেই আমাদের রাজ্যে প্রচার শুরু হয় ‘নবান্ন’কে নাকি ‘ছাপ্পান্ন’ আটকাতে পারে। আদানি আর আম্বানির দুই হাত- একদিকে মোদি ধরছেন, আরেকদিকে মমতা। দেউচা পাঁচামি থেকে তাজপুর বন্দর সবই দেখা গেছে। ইলেকশন বন্ডের দিকে তাকালেও বোঝা যায় কোত্থেকে টাকাটা আসছে। কোনো নীতিগত প্রশ্নে, বিজেপির অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি, স্পষ্টভাবে বললে আরএসএস-এর ছাপ আছে এমন কোনো বিষয়ে মমতা ব্যানার্জি মুখ খোলেননি, খুলবেন না। তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধিতা করবে না। একথা ঠিক যে সেই সেটিংস বুঝতে মানুষের কিছুটা সময় লেগেছে।


নিয়োগ দুর্নীতির সময় কী হল? হাইকোর্টের নির্দেশের পরে তদন্ত হল। বিজেপি’র এম পি’রা কি করছিলেন? শিক্ষা তো যৌথ তালিকায়। কেন্দ্রের শিক্ষা দপ্তরও নিজেদের দায়িত্ব পালন করেনি। কেন্দ্রের সরকারও কোনও ভূমিকা পালন করল না। আদালতের নির্দেশ না এলে তদন্ত শুরু হত না। দিল্লিতে কুস্তিগীরদের সাথে কি ঘটছে? এই মেয়েরা দেশের জন্য প্রাইজ এনেছেন। হরিয়ানা, ইউপি এইসব জায়গায় মেয়েদের খেলায় অংশগ্রহণ করতে অনেক বাধা ছিল। এরাই সে বাধা ভেঙে সামনে এগিয়েছেন। যখন অলিম্পিক্স, এশিয়ান গেমস, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে এরা ট্রফি, মেডেল জিতেছেন তখন প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে ছবি তুলছেন। অথচ তারাই যখন শ্লীলতাহানির অভিযোগ করছেন তখন একটা এফআইআর করবার জন্য সুপ্রিম কোর্টে দৌড়াতে হচ্ছে। এখন পক্সো আইনের পরিসর পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে। এতে কি বোঝা যায়?

যতদূর অবধি এদের স্বার্থ থাকবে ততদূর অবধিই তারা যেতে দেবে, তার বেশি না। দু:খজনক হলেও একথা ঠিক যে আইন বা সংবিধান মোতাবেক সরকারি সার্ভিসগুলিতে যে পেশাদারিত্ব একসময় ছিল সেসবই নষ্ট করা হয়েছে। তারা মনে করছেন রিটায়ারমেন্টের পরে আমাদের এখানে নানা ছতোয় রেখে দেওয়া হবে। এইজন্যেই মানুষকে সংগঠিত করতে হয়। এটাই ওরা করতে দিতে চায় না। দিল্লিতে যখন One rank One pension বলে জওয়ানরা যখন রিটায়ারমেন্টের পরে ধরনা দিয়েছেন তাদের ভেঙে দিয়েছেন। কৃষক আন্দোলন, ছাত্র আন্দোলনকে যেরকম দুরমুশ করার চেষ্টা করেছে। একইভাবে এই মেয়েদের উপরেও পুলিশি হানা ঘটিয়ে দুরমুশ করার চেষ্টা করেছে। এটা অনেকে দূরের ঘটনা মনে করে। কিন্তু একই কাজ তো পাশের বাড়িতেও হচ্ছে। যেটা তৃণমূল এখানে করছে, সেই একই কাজ তো বিজেপি সারা দেশে করছে। উত্তরপ্রদেশ, মমধ্যপ্রদেশ, ত্রিপুরাতেও তাই ঘটেছে। প্রতিদিন মানুষ তাই দেখছে, তাই তাদের আশাভঙ্গ হয়েছে। কয়লা পাচারের কেসে চার্জশিট থেকে ভাইপো বাদ কেন? মানস ভুঁইয়ার ক্ষেত্রেই সেই একই ঘটনা দেখল সবাই। মোদি আর মমতার রাজনীতি একইরকমের। আমার শরণে এসো, আমি তোমায় রক্ষা করব। আর যদি তুমি আমার বিরুদ্ধে যাও তাইলে আমি কিছু লেলিয়ে দেব। অমিত শাহ এই রাজ্যে এসে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে কিছু বললেন না। উনি বললেন ৩৫ টা আসন চাই। আর এরা বলল আমাদের ২৪০টা আসন চাই। তাহলে সেটিংটা কোথায় সেকথা বুঝতে অসুবিধা হয় নাকি? লোকসভায় তৃণমূল বেশিরভাগ আসন বিজেপিকে ছেড়ে দেবে আরেকদিকে বিধানসভায় বিজেপি বেশিরভাগ আসন তৃণমূলকে ছেড়ে দেবে। কিন্তু এটায় সফল হতে একটা ন্যূনতম গ্যারান্টি চাই, সেটা হল বামেদের ভ্যানিশ করে দিতে হবে। তাই মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন বামেদের নাকি দূরবীন দিয়েও দেখা যায় না। এইসব বাইনারির গোড়ার কথা, শুধু দুটি পার্টি থাকবে। আর কেউ নেই। যখন বিজেপি, তৃণমূলের উত্থান হয়নি, তখন থেকে আমাদের দেশের রাজনীতিতে এই যে আমেরিকার মত টু পার্টি সিস্টেম তাকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা হয়েছে। যেটাকে হিন্দিতে বলে, চিৎ ভি উন কা, পট্ ভি উন কা। এটাই ওরা করতে চেয়েছিল। আর আমরা সবসময় বলেছি বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। তৃতীয় একটা রাস্তা বের করতে হবে। শাসক দল, শাসক শ্রেণি সবসময় চায় যে তার হাতেই ক্ষমতাটা থাকুক, মানুষের শক্তিকে তারা অস্বীকার করে। আর মানুষের শক্তিকে অস্বীকার করার প্রথম শর্তই হচ্ছে তাদের সংগ্রামী ঐক্যকে দুর্বল করে দেওয়া। তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া। এই গোটা পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমাদের যে লড়াই তা হচ্ছে বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল আর তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপির যে নাটক তার পরিসমাপ্তি চেয়ে। আসলে বিজেপি-তৃণমূল হচ্ছে রাজ্যের মানুষের বিরুদ্ধে, মানুষের সম্প্রীতির বিরুদ্ধে, মানুষের অধিকারের বিরুদ্ধে।

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েতের মানে কী? পঞ্চায়েত শব্দটা তো এসেছে পঞ্চ থেকে যার মানে পাঁচ। সিদ্ধান্তের অধিকার একজনের না, কয়েকজন মিলে তবে কাজ হবে। এটার একটি traditional দিকও রয়েছে। সেই ঐতিহ্যের শিকড়ে কিছু democratic element আছে। বামফ্রন্ট যখন ক্ষমতায় এলো, জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী হলেন, আমরা বললাম সেই ঐতিহ্যের আইনি রূপ দিতে হবে। সরকারের কাজ বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকার যতই ক্ষমতাশালী হোক, রাজ্যের সমস্যা সে বুঝতে পারে না, তাই রাজ্যের হাতে অধিকার চাই বেশি। আমরা সেখানে থামলাম না। রাজ্যের অধিকার দেওয়া হল জেলাকে, জেলা পরিষদকে। জেলার যে অধিকার সেটা ব্লকে, পঞ্চায়েত সমিতি। ব্লকের যে ক্ষমতা সেটা অঞ্চলে। গ্রাম পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েত মানে শুধু প্রধান উপপ্রধান না। সেখানে বিরোধীদেরও মর্যাদা দেওয়া হল। একদম statutory. সাধারণ ভোটারদের শুধু ভোট দেওয়া না। গ্রাম সংসদ। গ্রাম সভা। বছরে দুইবার গ্রাম সভা বসবে। এই যে আবাস যোজনার দুর্নীতি, সামান্য কে কোনটা পাবে, কার কতটুকু পাওনা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, অন্যান্য যা প্রকল্পের সুবিধা বলা হচ্ছে শাসক দলের সঙ্গে থাকলেই সেগুলো তুমি পাবে। নচেৎ পাবে না। এটা তো গণতান্ত্রিক হতে পারে না। বামপন্থীরা যখন কোনো সংস্কার করে সেটা বলে for all. শিক্ষা ব্যবস্থা, ভূমিসংস্কার যখন করলাম, পঞ্চায়েত যখন করলাম সেগুলো targeted একটা specific section এর জন্য নয়। সাংবিধানিক কাঠামো আছে। আমরা ট্যাক্স দিচ্ছি, তোমরা করো। তারা যখন করছে না তখন মানুষকে তার দায়িত্ব নিতে হয়। আমরা বললাম, গ্রাম জাগাও, চোর তাড়াও। গ্রাম শহর সব মিলে… যত বেশি গ্রাম জাগতে আরম্ভ করল, এক, এজেন্সিগুলোর উপর চাপ বাড়ল। তৎপর হল। হাইকোর্টগুলোও বলল। মানুষও তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হল। মানুষ ঐক্যবদ্ধ হল। এর মধ্যে রামনবমী এর মধ্যে হজরত মহম্মদ নানারকম ঘটনা নিয়ে এসে তাণ্ডব পাকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। রাজবংশী মুসলমান। যে কোনো ঘটনা নিয়ে এসে ভাগাভাগি করার চেষ্টা করা হয়েছে। লোকে তো দেখছে কী ঘটছে। রিষড়ায় যে একটা আলাদা ঘটনা হল তা তো নয়। আগে যেটা আসানসোল থেকে ধূলাগড় থেকে বসিরহাট থেকে দাঙ্গার পরিস্থিতি সংঘটিত করা সম্ভব হয়েছিল এই সময়ের মধ্যে। তার চেয়ে অনেক বেশি দাঙ্গা তৈরি করার পরিবেশ তৈরি করেছে দুই দল মিলে যাদের ব্যানারের কথা বলছ। মানুষ বলল, না, আমরা চোরের বিরুদ্ধে লড়তে চাই। হিন্দু মুসলমানের বিরুদ্ধে নয়, মুসলমান হিন্দুর বিরুদ্ধে নয়। উত্তরবঙ্গ দক্ষিণবঙ্গের বিরুদ্ধে নয় দক্ষিণবঙ্গ উত্তরবঙ্গের বিরুদ্ধে নয়। পাহাড় সমতলের বিরুদ্ধে নয় সমতল পাহাড়ের বিরুদ্ধে নয়। এই বাইনারিটা সাধারণত সব সময় দুটো দলের মধ্যে। এটা মানুষকে পরস্পরের মুখোমুখি করে দিয়েছিল, সেই অংশের মানুষকে যার সর্বস্ব লুট হচ্ছে। তার নদী, তার খনি, তার ক্ষেত, তার পোস্ট অফিস, তার ব্যাঙ্ক- তার এয়ারলাইনস তার রেললাইন, তার পরিবহন সব কিছু লুট হচ্ছে। তার চাকরিবাকরি সব। ফসলের সে দাম পাচ্ছে না, কিন্তু সে একজন কৃষকের বিরুদ্ধে আরেকজন কৃষক লড়িয়ে দিয়েছিল। একজন দোকানদারের বিরুদ্ধে আরেকজন দোকানদারকে লড়িয়ে দিয়েছিল। যারা লুট করছে তারা কিন্তু গ্রিনরুমে। গ্রামের মানুষ বুঝলেন যদি গ্রাম জাগে যদি গ্রাম এক কাট্টা হয়, তাহলে চোর তাড়ানো যাবে। যারা একটু নড়ে গিয়েছিল, সরে গিয়েছিল, দূরে চলে গিয়েছিল, ভয় পেয়ে গিয়েছিল, সন্ত্রস্ত হয়ে গিয়েছিল- তারা যেই এককাট্টা হল, তখন তাদের শক্তি বাড়ল, এটা হবেই৷ যারা ভেবেছিল সব সমস্যার সমাধান ওই এক ছাপান্ন ইঞ্চি একাই করে দেবে বা একা মমতাই করে দেবে বা তার ভাইপো করে দেবে তারা বুঝল, যে মানুষ নিজের অধিকারের লড়াইতে নিজে ভূমিকা পালন না করেন তাহলে লুট বন্ধ হবে না। লুটেরাদের সরিয়ে দিয়ে যদি লুটতরাজ শেষ করতে হয়, যদি গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হয়, তাহলে পঞ্চায়েত একটা জায়গা যেখানে লুটেরাদের তাড়িয়ে মানুষের হাতে পঞ্চায়েত থাকবে। এইজন্যই পঞ্চায়েত তৈরি হয়েছিল। মানুষের হাতে পঞ্চায়েত যাওয়া মানে, মানুষকে অধিকার দেওয়া। বিকেন্দ্রীকরণ মানে তাই। গণতন্ত্রীকরণ মানে তাই। গণতান্ত্রিক অধিকারের সম্প্রসারণ মানে তাই। গণতন্ত্রের সঙ্গে দুর্নীতির একটা সাপে-নেউলে সম্পর্ক আছে। স্কুল বোর্ড, মাদ্রাসা বোর্ড, স্কুল কমিটি, কলেজ কমিটি, ছাত্র সংসদ - কিছুই নির্বাচন করলো না। নিজেদের মনপসন্দ লোককে বসিয়ে দিল। এসব যে নামগুলো শুনছেন যে জেলে যাচ্ছে, কালীঘাট থেকে মমতা ব্যানার্জি নিজের মন পছন্দ লোককে বসিয়ে দিলেন। আর মানুষের যে অধিকার ছিল সেটা কেড়ে নিলেন। তাহলে শিক্ষক, অভিভাবক ছাত্র শিক্ষা কর্মী মানুষ তারা নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে যদি পরিচালনা করত তাহলে একরকম হত। একজন যদি সবকিছু ঠিক করে দেয় সেই অবস্থায় সেই একজন বিপথে পরিচালনা করলে গোটা সমাজটা বিপথে চলে যায়। তাহলে কোনো ব্রেক থাকবে না, ক্লাচ থাকবে না, গিয়ার থাকবে না।

আমরা আবারও পঞ্চায়েতটাকে এভাবেই নিয়ে আসতে চাইছি যেখানে মানুষের হাতে স্টিয়ারিং টা থাকবে। আমাদের সময়ে পঞ্চায়েতে কোথাও ভুলভ্রান্তি হয়নি তা তো নয়। কিন্তু ভুল থেকে শিখে আমরা শিখেছি। আমরা আরও বেশি মানুষকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী আরো বেশি need based programme করব আমরা, যেগুলো মানুষের দরকার।

দ্বিতীয় পর্ব

বিভিন্ন সামাজিক সুযোগ সুবিধা যেগুলি সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে সেই নিয়ে মানুষকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে। মনে রাখতে হবে এসব কোনও দলের স্কিম নয়। এগুলি সরকারের কাজ, তাদের দায় ও দায়িত্ব। এটা ধারাবাহিকভাবে চলে। সরকারে কোন একটা দল আসে, হারে,জেতে। সারা পৃথিবীতেই এধরনের স্কিম রয়েছে। এইসব social scheme এল কেন? যখন মানুষ নিজের অধিকার বুঝল, শ্রমজীবী মানুষ খেটে খাওয়া মানুষ, যখন রুশ বিপ্লব হল, যখন মেহনতী মানুষ নিজের সরকার পেল, তখন যারা এই বুর্জোয়া শাসকশ্রেণি তারা দেখল খুব বিপদ। তখন তারা কনসেশন দিতে আরম্ভ করল।

এই যে স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশগুলো হ্যাপিনেস ইন্ডেক্স দিতে শুরু করল তারা শিক্ষার দায়িত্ব, স্বাস্থ্যের দায়িত্ব, নানানরকম বৃদ্ধ লোকের দায়িত্ব, শিশুর দায়িত্ব, এগুলো নিল। এটা হল welfare state। এই যে welfare state concept এল, এটা socialism বা সমাজতন্ত্রের যে আন্দোলন গড়ে উঠল, তার অন্তত একটা প্রাইমারি দাবি মেনে নিয়ে, অনেকে বলে অ্যান্টিডোট, এমনভাবে করা হল যাতে মানুষের এই (আন্দোলনের) রূপ লাস্ট না করে। বামপন্থীরা দাবি করেছে এটা। সবই তো আমরা বলছি না যে বিপ্লব করে কালকেই আমরা সমাজতন্ত্র তৈরি করব! তাহলে আমার অধিকার আমাকে দাও।

রেশন- এ বলে মোদির চাল, ও বলে দিদির চাল। খাদ্য আন্দোলন থেকে, স্বাধীনতার আগে থেকে, যখন আমাদের এখানে মন্বন্তর হয়েছে, তখন থেকে কমিউনিস্টরা লড়েছে। শুধু খাদ্য আন্দোলন না, আমরা বলেছি শুধু খাদ্য দাও তা না, খাদ্যের backward linkage হচ্ছে। তাহলে কৃষকের অধিকার দিতে হবে। জমির অধিকার দিতে হবে। আমরা বলেছি লাঙল যার জমি তার। অধিকারবোধ। তেভাগা। তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে আমরা বললাম সেচের ব্যবস্থা করতে হবে, উন্নত বীজ দিতে হবে। বীজখামার গুলো উঠল। পঞ্চায়েতের হাতে যাতে চাল সংগ্রহ করতে পারে, পাট সংগ্রহ করতে পারে, যাতে ফসল সংগ্রহ করতে পারে। যাতে support price পায়। এগুলো প্রত্যেকটা আন্দোলনের ধাপ, পর্যায় আছে। তাহলে আজকে দাঁড়িয়ে কৃষকরা তো ফসলের দাম পাচ্ছে না। তাহলে কৃষি তো আর লাভজনক হচ্ছে না। তাহলে এটা কি welfare scheme থেকে আলাদা?

এই যে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। বামপন্থীদের গাল দেওয়া হয়েছে উদারীকরণের সময় থেকে যে আমরা ভর্তুকির পক্ষে। আমরা অবশ্যই ভর্তুকির পক্ষে৷ আজকে মমতা ব্যানার্জি বলো, মোদি বলো, এরা উদারীকরণ নীতির পক্ষে। তারা মনে করে জ্বালানিতে subsidy দেওয়া যাবে না, বিদ্যুতে subsidy দেওয়া যাবে না, fertilizer বা সারে subsidy দেওয়া যাবে না, শিক্ষায় খরচ করা যাবে না। এগুলো ওরা মনে করে bad investment. স্বাস্থ্যে খরচ করা যাবে না। এগুলো সব ব্যক্তিগত মালিকানায় হবে! তাহলে বামপন্থীরা দুর্বল হওয়া মানে হচ্ছে সারে ভর্তুকি কমিয়ে দিল। de-control করে দিল। আজকে blackmarket হচ্ছে। পেট্রল ডিজেলের admission price থেকে সরিয়ে দিল এবং সেখানে দাঁড়িয়ে গোটা বিশ্বে তেলের দাম যখন কমছে আমাদের সরকার মুনাফা করছে, তেল কোম্পানি গুলো মুনাফা করছে আর দুই সরকারই এদের উপর ট্যাক্স আদায় করছে, পুরো তুলে নিচ্ছে। তাহলে মমতা ব্যানার্জি কী বলছেন? প্রথম বেকার ভাতা চালু করে কে সারা দেশের মধ্যে, স্বাধীন ভারতে? কারণ চাকরি দেবার দায়িত্ব সরকারের। যখন সে পারছে না, তখন কিছুটা দায় স্বীকার করা। তখন এই দক্ষিণপন্থীরা এর বিরোধিতা করেছিল। যে কী হবে টাকা দিয়ে? তখনকার দিনে! ৫০ টাকা দিয়ে কী হবে? তাহলে ৭৭ সালে আমরা সরকারে এলাম এবং ৫০ টাকা দিয়ে বেকারভাতা চালু হল। পরে সেটা স্বনির্ভর কর্মসূচিতে গেল। তারপরে আবার সিট মানি হল। তারপরে বললাম পঞ্চায়েতের টাকা, ১ লাখ টাকা আমরা দেব। বেকার ছেলেমেয়েরা স্বনির্ভর হবে। কোথায় গেল সেই স্কিম গুলো? তখনও আমরা বলিনি ওই ৫০ টাকাটা সরকার দেবে, আমি দিচ্ছি বা তুমি দিচ্ছ, জ্যোতি বসু দিচ্ছে। কে দেবে? আমি dyf করতাম দীর্ঘদিন। গোটা দেশে একটা স্লোগান শেখাতাম : প্যায়সা হামারা আপ কা, নাহি কিসি কা বাপ কা। যে কৃষক ফসল ফলায় সে রোজগার করে। যে শ্রমিক পাথর ভাঙে সে রোজগার করে। রাস্তায় বসে যে চর্মশিল্পী জুতো সেলাই করে, সে খেটে সারাদিনে রোজগার করে। যে লোকটা রাজমিস্ত্রীর কাজ করে, কাঠমিস্ত্রীর কাজ করে, রিক্সা চালায় এই প্রচন্ড গরমের মধ্যে, ঘাম ঝরাচ্ছে, ঠেলা ঠেলছে তার কাছে টাকাটা আসে। তাহলে পার্থ চ্যাটার্জির কাছে টাকাটা কোত্থেকে এল? তাহলে অভিষেক ব্যানার্জির এই এত বৈভব কোত্থেকে এল? তাহলে, সাধারণ একটা পঞ্চায়েতের প্রধান হয়েছে, উপপ্রধান হয়েছে, কাউন্সিলর হয়েছে এত সম্পত্তির মালিক হয়েছে, যদি এসব বিলি করত তবে তো ভিখিরি হয়ে যেত! এত টাকা এল কোত্থেকে তবে? তাহলে মানুষের টাকা, মেহনতের টাকা মানুষের হাতে না দিয়ে জমা হচ্ছে সরকারের কাছে। আর সরকার তার একটা অংশ খরচ করছে। এইবার সেটা সেই সরকার ঠিক করবে কোনটাতে খরচ করবে। বামপন্থীরা মানে এটা।

আমরা সেসময় সরকারের বেশিরভাগ স্কিমগুলো গ্রামে দিয়ে দিয়েছিলাম, পুরসভায় দিয়ে দিয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বলেছিলেন ৫০% of schemes. আমরা দীর্ঘদিন কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে লড়াই করলাম যে centre-sponsored scheme, central-assisted scheme সেগুলোকে lockstock balance রাজ্যকে দিতে হবে। UPA-I এ যখন আমরা সমর্থন করলাম, যখন ১০০ দিনের কাজের অধিকার পেলাম, সেইরকমই আমরা, যখন সাচার কমিটি হল, যখন tribals রা জঙ্গলের অধিকার পেল, জমির অধিকার পেল, যখন মহিলাদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ সংরক্ষণের দাবি উঠছিল, সেইরকমই তখন সিদ্ধান্ত হল যতগুলো কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলো আছে যেগুলো welfare scheme, মানুষের কাজে লাগে, মানুষের প্রয়োজন হয়, যেগুলো basic services, প্রথম এই basic services all india র মধ্যে চালু হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে। food for work দিয়ে শুরু হয়েছিল। কাজের বদলে খাদ্য। ৭৭এ। তারপরে নানারকমের স্কিম ছিল। NRGP, REGP. গ্রামে যখন শুখা মরসুমে মানুষ কাজ পায়। প্রথম যখন যুক্তফ্রন্ট সরকার হল দিল্লিতে, দেবগৌড়ার সরকার, আমরা বামপন্থীরা সমর্থন করলাম, ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত মন্ত্রীও ছিলেন সেখানে, প্রথম কমিউনিস্টরা অংশগ্রহণ করল যে সরকারে তারা প্রথম বলল basic services. মানে বাসস্থান অর্থাৎ এই যে আবাস যোজনা। মানে পানীয় জল। এরকম এই ন্যূনতম জিনিসগুলোকে সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। UPA-I এ আমরা যখন সরকার গড়লাম, সমর্থন করলাম, ছোট শহর ও গ্রামের উন্নয়নেও রাজ্য সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্র সরকারকেও দায়িত্ব নিতে হবে। তার আগে নেয়নি তারা। তখন নতুন স্কিম হল। এবং ২৭টা স্কিম যেগুলো central government এর বিভিন্ন ministry করত সেগুলো state government এর মধ্য দিয়ে পঞ্চায়েতে transfer হল। এখন হচ্ছে দুর্নীতি। এত কথা না বলে বলতে পারি, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছি, স্কিমের বিরুদ্ধে লড়ছি না! তাহলে যে স্কিমে এখন একজন ছেলেমেয়ের স্টাইপেন্ড পাবার কথা, পাচ্ছে না, তার মানে দুর্নীতি হচ্ছে মাঝখানে। তাহলে যদি দুর্নীতি বন্ধ করা যায় তাহলে সে শুধু পাবে তা নয়, পরিমাণটা বাড়বে। তাহলে যে যে ভাতাটা পাচ্ছে যদি দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যায়, আসলে কথাটা কী-প্যায়সা হামার আপকা নাহি, নাহি কিসি কা বাপ কা! কিন্তু বলছে কী? এ বলছে আমি স্বাস্থ্যসাথীর জন্য টাকা দিচ্ছি। ও বলছে আমি আয়ুষ্মান ভারতের জন্য টাকা দিচ্ছি। অথচ যখন করোনা হয়েছিল তখন রেড ভলিন্টিয়ার ভরসা ছিল। তখন এই সরকারগুলি খুঁজে পাওয়া যায়নি। এখন দুয়ারে সরকার বলছে। তাহলে মানুষের স্বার্থে কারা কাজ করবে? মানুষের প্রয়োজনে? আর এই ধরনের স্কিম গুলো আমরা চালু করেছিলাম যেমন, আজ পর্যন্ত নতুন কোনো প্রকল্প হয়নি আমাদের রাজ্যে গত ১২ বছরে।

এগুলোকে কিছুটা মালিশ-পালিশ করা হয়েছে, কিছুটা রংবদল করা হয়েছে, কিছুটা ফেস বদল করা হয়েছে, কিছুটা নাম পাল্টানো হয়েছে। কিন্তু GST করার পরে যেহেতু ট্যাক্স আদায় বেড়েছে এবং central-assisted programme গুলো যেহেতু ফান্ড শুদ্ধ ট্রান্সফার হয়েছে, তাই টাকার পরিমাণ বেড়েছে, তাহলে দুর্নীতিও বেড়ে গেছে স্কিমগুলোর থেকে। এখন আদিবাসী জাতি, আদিবাসীদের হস্টেলের টাকা, স্টাইপেন্ডের টাকা, সংখ্যালঘু স্টাইপেন্ডের টাকা, জেনারেল স্টাইপেন্ডের টাকা, সব বন্ধ৷ কারণ লুঠ হয়েছে। ১০০ দিনের কাজের টাকাও যেমন বন্ধ। তাহলে আমরা লড়ে ১০০ দিনের কাজ নিয়ে আসলাম, আমরা ওটাকে ২০০ দিন করতে চাইছি, তাহলে এখন যে বলছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে ৫০০ টাকা পাচ্ছি, যদি দুর্নীতি বন্ধ করা যায়, এই চোরেদের কাছ থেকে এই টাকা যদি উদ্ধার করা যায়, তাহলে তো ১০০০টাকা, ১৫০০ টাকা, ২০০০ টাকা দেওয়া যায়। এটাকে মমতা ব্যানার্জি বলছেন, আমি দিচ্ছি, আমি না থাকলে বন্ধ হয়ে যাবে। এরকম স্বৈরতান্ত্রিক লোকেরা মনে করে যে তারা আছে বলে পৃথিবীটা চলছে, তারা চোখ বুজলে পৃথিবীটা শেষ হয়ে যাবে। বা সে জন্মেছিল বলে পৃথিবীটা আছে সে যদি না জন্মাত তাহলে পৃথিবীটা থাকত না। যেকোনো ফ্যাসিস্ট, যেকোনো স্বৈরতান্ত্রিক এরকমটাই মনে করে। যে পৃথিবীটা তার থেকেই শুরু, তার সঙ্গেই শেষ। কিন্তু আমরা মনে করি মানুষের গোটা ইতিহাসে একটা ধারা আছে, সেই ধারা প্রবহমান। এখানে কেউ লুঠ করছে আর কেউ সেই ধারায় আরও কিছু তাকে সমৃদ্ধ করছে।

সমগ্র লেখাটি ৪ টি পর্বে প্রকাশিত, আরও দুটি পর্বের জন্য পরবর্তী লিঙ্কে ক্লিক ক্রুন...


শেয়ার করুন

উত্তর দিন