তারিখঃ ৫ জুলাই, ২০২০ – রবিবার
প্রেস বিবৃতি
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)’র পলিট ব্যুরো নিম্নলিখিত বিবৃতি দিয়েছে
রেমডেসিভিরঃ পেটেন্ট সংক্রান্ত একাধিপত্য বাতিল করতে হবে – বাধ্যতামূলক লাইসেন্স জারী করতে হবে
জিলিয়াড সায়েন্সেস’র অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের উপরে প্রয়োগে ফলপ্রসূ হয়েছে। গনমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সুত্র থেকে জানা যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী তিনমাসের জন্য জিলিয়াড সায়েন্সেস’র থেকে উৎপাদিত রেমডিসিভিরের সমস্তটাই নিজেদের জন্য কিনে রেখেছে। এছাড়াও করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় কাজে আসতে পারে এমন যেকোন ওষুধের ক্ষেত্রেই তারা এইভাবে নিজেদের একচেটিয়া প্রভাব বজায় রেখেছে। এর ফলে সারা পৃথিবীর অন্য কোন দেশই এই ওষুধ নিজেদের প্রয়োজনে পাবে না।
রেমডেসিভিরের ৫ দিনের কোর্সের বর্তমান মূল্য মার্কিন ডলারের হিসাবে ৩০০০ ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় ২.২৫ লক্ষ টাকা। জিলিয়াডের সাথে লাইসেন্স চুক্তি অনুযায়ী পাঁচটি ভারতীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা এই ওষুধ প্রস্তুত করতে পারবে। ভারতে প্রস্তুত রেমডেসিভিরের দামের ক্ষেত্রে রেয়াত দেওয়ার ফলে এই ওষুধের ৫ দিনের কোর্সের বিক্রয়মূল্য হবে ৪০০ মার্কিন ডলার বা ৩০ থেক ৩৫ হাজার টাকা। আমেরিকায় এই ওষুধ প্রস্তুত করতে উৎপাদনী খরচ পড়বে ১০ ডলার বা ৭৫০ টাকারও কম, ভারতে সেই খরচ ১০০ টাকার মতো হবে। নিজেদের একচেটিয়া পেটেন্ট ব্যবস্থার জোরে জিলিয়াড গোটা পৃথিবীকে এই ওষুধ তার উৎপাদন খরচের প্রায় ১০০ গুন বেশি দামে কিনতে বাধ্য করছে।
এদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য আইসিএমআর’র পক্ষ থেকে রেমডেসিভিরের ব্যবহার করআর ক্ষেত্রে খুবই দ্রুততার সাথে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে জিলিয়াডের সমস্ত উৎপাদিত ওষুধের ওপরে কব্জা করেছে তার ফলে এবং জিলিয়াড সায়েন্সেস’র নিজস্ব একচেটিয়া পেটেন্ট ব্যবস্থার কারনে হয় ভারতীয়রা এই প্রয়োজনীয় ওষুধ পাবেন না নয়তো যতটুকু পাওয়া যাবে তা বিরাট খরচস্বাপেক্ষ হবে।
ভারতের পেটেন্ট আইনের ৯২ নম্বর ধারা অনুযায়ী (এই আইন এবং ধারা প্রণয়নে বামেদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল) ভারত সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে আবশ্যিক লাইসেন্স জারী করে নিজেদের দেশে ওষুধ প্রস্তুত করতে পারে। ভারতে জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি রেমডেসিভিরের জেনেরিক সংস্করণ উৎপাদন করতে সক্ষম এবং যথেষ্ট আগ্রহী। এমনকি, উল্লিখিত আইনের ধারা অনুযায়ী প্রস্তুত ওষুধ সেই সব দেশেও রপ্তানি করা যায় যারা নিজেরা প্রয়োজনীয় ওষুধ উৎপাদন করতে সক্ষম নয়। জিলিয়াডের অমানবিক দামের কাছে মাথা নত না করে ভারত সরকারের উচিত এখনি কয়েকটি জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির উদ্দেশ্যে রেমডেসিভিরের জেনেরিক সংস্করণ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় লাইসেন্স জারী করা। সারা পৃথিবীতে জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে ভারত অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে, এমতাবস্থায় ভারতীয়দের প্রয়োজনে কেন এই ওষুধের অতি দ্রুত এবং সুলভ সংস্করণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না তার সত্যিই কোন যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা নেই।
সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছে যাতে অতি দ্রুত আমাদের দেশের জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলীকে ভারতের পেটেন্ট আইনের ৯২ নম্বর ধারা অনুযায়ী রেমডেসিভিরের জেনেরিক সংস্করণ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় আবশিক লাইসেন্স জারী করা হয়। মানুষের জীবন রক্ষায় এবং অতিমারি মোকাবিলায় এই পদক্ষেপ একান্তই জরুরী।
শেয়ার করুন