Site icon CPI(M)

Red October: Freedom Struggle- Analysis

Prabhat Patnaik Cover

প্রভাত পট্টনায়েক

‘মান্থলি রিভিউ’ পত্রিকার ২০১৭ সালের জুলাই-অগাস্ট সংখ্যায় মূল প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘The October Revolution and the Survival of Capitalism’ শিরোনামে। ওয়েবসাইটের পাঠকদের জন্য তারই একটা সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর রুশ বিপ্লববের ১০৬তম বার্ষিকীতে রাজ্য ওয়েবডেস্কের তরফে প্রকাশিত হল। 

অক্টোবর বিপ্লব ছিল মানব ইতিহাসের প্রথম বিপ্লব যা তাত্ত্বিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল এবং একটি পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যকর করা হয়েছিল।যদিও ফেব্রুয়ারী বিপ্লব, ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সের পূর্ববর্তী বুর্জোয়া বিপ্লবগুলির মতো, স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটেছিল,কিন্তু অক্টোবর বিপ্লবের ক্ষেত্রে এ কথা খাটে না।একই সাথে অক্টোবর বিপ্লবের বিরোধীরা এটিকে নিছকই একটা ব্ল্যাঙ্কিবাদী বিদ্রোহ বলে যে তকমা এঁটে দেয় সেকথাও ভিত্তিহীন। “বিপ্লব একটা দারুণ ব্যাপার,চলুন একটু বিপ্লব করে আসি” জাতীয় কোন মনোভাবের ফসল নয় অক্টোবর বিপ্লব।বিপরীতে, এই বিপ্লব ছিল যুগ সন্ধিক্ষণের একটি সুনির্দিষ্ট তাত্ত্বিক মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে এবং এই তত্ত্বের এমন একটি স্তরে বিকাশের উপর ভিত্তি করে যেখানে, জর্জ লুকাচের কথা ধার করে বলতে হয় – “তত্ত্বটি প্রয়োগে বিস্ফোরিত হয়েছিল।” বিপ্লবের অন্তর্নিহিত যুগ সন্ধিক্ষণের যে গভীর তাত্ত্বিক অনুধাবন তাই এই বিপ্লবকে সফল করেছিল। এটি যে বিপুল শক্তি উৎপাদন করেছিল, বিশ্বে এটি যে গভীর পরিবর্তন ঘটিয়েছিল এবং যে পরিমাণে এটি পুঁজিবাদের অস্তিত্বকে হুমকি দিয়েছিল তা অভূতপূর্ব।পুঁজিবাদের এই আতঙ্ক শেষ পর্যন্ত অদৃশ্য হয় কারণ পরবর্তীতে এই সন্ধিক্ষণপর্ব নিজেই এমনভাবে পরিবর্তিত হয়েছিল যা এর পূর্বের তাত্ত্বিক ধারণায় অপ্রত্যাশিত ছিল।

শ্রমিক-কৃষক জোট

সন্ধিক্ষণপর্বের এই তাত্ত্বিক ধারণা ধাপে ধাপে বিকশিত হয়েছিল। এর মধ্যে দুটি ধাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটির বিকাশ ঘটেছিল লেনিনের হাত ধরে বিংশ শতাব্দীর গোড়ায়। আলেকজান্ডার মার্তিনভ সহ অন্যান্যদের “নয়া ইস্ক্রা” ধাঁচার চিন্তার বিরুদ্ধে তৎকালীন রুশ সোশ্যাল ডেমোক্রাটিক লেবার পার্টির অভ্যন্তরেই লেনিনকে রাজনৈতিক বিতর্কে অবতীর্ণ হতে হয়। লেনিন উপলব্ধি করেছিলেন, যে দেশগুলিতে পুঁজিবাদের আগমন দেরীতে হয়েছে সেখানকার নতুন উদীয়মান বুর্জোয়ারা আর ১৭৮৯ সালের বিপ্লবে ফরাসি বুর্জোয়াদের মত সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বুর্জোয়া বিপ্লব সম্পন্ন করতে সক্ষম ছিল না।এর কারণ ছিল,বুর্জোয়ারা যে নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল,সেখানে তাদের ভয় ছিল যে সামন্ত সম্পত্তির উপর আক্রমণ বুর্জোয়া সম্পত্তির উপর আক্রমণে পরিণত হতে পারে।তাই এরা পুরানো সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার সাথে আপস করার প্রবণতা দেখায়, যা বোঝায় যে বুর্জোয়া বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার, এবং বিশেষ করে কৃষকদের সামন্ততান্ত্রিক জোয়াল থেকে মুক্ত করার কাজটি এখন এই দেশগুলির সর্বহারা শ্রেণীর উপর বর্তায়, যদিও এর আকার অপেক্ষাকৃত ছোট এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে এই সর্বহারা শ্রেণীর আগমনও ঘটে দেরীতে।

এর জন্য শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে শ্রমিক-কৃষক জোটের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এই ধরনের জোট সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বুর্জোয়া বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে শুধু সেখানেই থেমে যেতে পারেনা, শ্রমিক শ্রেণী কেবলমাত্র নতুন পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যে একটি শোষিত শ্রেণীর ভূমিকায় প্রত্যাবর্তন করেই থেমে থাকতে পারে না,শ্রমিক শ্রেণী, বুর্জোয়া বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর, স্পষ্টতই একটি নিরবচ্ছিন্ন বিপ্লবী প্রক্রিয়ায় সমাজতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাবে, এই সময়ে অবশ্যই শ্রমিক-কৃষক জোটের সুনির্দিষ্ট উপাদানগুলি পরিবর্তন হতে থাকবে।লেনিন যেমনটি তাঁর গণতান্ত্রিক বিপ্লবে সোশ্যাল ডেমোক্রাসির দুই কৌশলে (১৯০৫) তুলে ধরেছেন, “সর্বহারা শ্রেণীকে অবশ্যই গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে পূর্ণতার দিকে নিয়ে যেতে হবে, স্বৈরাচারের প্রতিরোধকে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে চূর্ণ করার জন্য ও বুর্জোয়াদের অস্থিরতাকে নিষ্ক্রিয় জন্য কৃষক জনগণের সাথে মিত্রতা স্থাপন করতে হবে।প্রলেতারিয়েতকে অবশ্যই সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করতে হবে, জনসংখ্যার আধা-সর্বহারা উপাদানদের নিজের সাথে যুক্ত রেখে, যাতে বুর্জোয়াদের প্রতিরোধকে বলপ্রয়োগে চূর্ণ করতে পারে এবং কৃষক ও পেটি বুর্জোয়াদের অস্থিরতাকে পঙ্গু করে দিতে পারে।”

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শ্রেণীর গঠনের পরিবর্তনের সাথে সর্বহারা-নেতৃত্বাধীন শ্রমিক-কৃষক জোটের এই ধারণা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে পূর্ণতার দিকে নিয়ে যাওয়া এবং এর পরবর্তীতে সমাজতন্ত্রের দিকে নিয়ে যাওয়া, শুধুমাত্র এই যুগ সন্ধিক্ষণকে বোঝার ক্ষেত্রে  একটি বড় পদক্ষেপ ছিল না,এটি ছিল মার্কসবাদী তত্ত্বের মধ্যেই একটি মৌলিক অগ্রগতির প্রতীক: প্রথমত, এটি ছিল কৃষকদের প্রতি মনোভাবের পরিবর্তন, কৃষকদের বিপ্লবী শক্তির সারিতে অন্তর্ভুক্ত করা যাকে শ্রমিক শ্রেণী নেতৃত্ব দিতে পারে। ১৭৮৯ এর ফরাসী বিপ্লবের সময়েই শুধু নয় পরবর্তীতে প্যারি কমিউনকে পরাজিত করার ক্ষেত্রেও বুর্জোয়ারা কৃষক সমাজের সমর্থন জোগাড় করতে পেরেছিল, অ্যাডলফ্ থিয়ার্স ফরাসী বিপ্লবের ফলে সুবিধাপ্রাপ্ত কৃষকদের মনে এই আশঙ্কা সৃষ্টি করতে পেরেছিল যে বুর্জোয়া সম্পত্তির উপর আক্রমণ ক্ষুদ্র সম্পত্তির উপরও আক্রমণ নামিয়ে আনবে। কিন্তু লেনিন দেখালেন যে নতুন পরিস্থিতিতে, কৃষকরা সর্বহারা শিবিরের অংশ হয়ে উঠতে পারে। দ্বিতীয়ত, কৃষকদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির এই পরিবর্তন তখন পর্যন্ত ইউরোপে সীমাবদ্ধ মার্কসবাদকেও পরিণত করেছিল সমগ্র বিশ্বের প্রাসঙ্গিকতায় একটি বৈপ্লবিক মতবাদে, তা পুঁজিবাদী বিকাশের মাত্রা যতই সীমিত হোক না কেন, এবং তৃতীয়ত, পর্যায়ক্রমে সমাজতন্ত্রে উত্তরণই ছিল সেই পথ যা বিশ্বের সকল দেশকে মানব মুক্তির জন্য অনুসরণ করতে হত।সমাজতন্ত্র আর কেবলমাত্র উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলির বিষয় ছিল না; এটি অনুন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলির বিপ্লবী এজেন্ডায়ও অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে। এরফলে মার্কসবাদকে একটি “পর্যায়ের তত্ত্বে”, যেখানে পূর্বনির্ধারিত উৎপাদনের একটি পর্যায় থেকে অন্য একটি পর্যায়ে রূপান্তরের ঐতিহাসিক অবশ্যম্ভাবীতায়  সমাজ বদল হবে, লঘু করার যে কোনও প্রচেষ্টাকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করা সম্ভব হয়েছিল। এটা বাস্তব যে অগ্রবর্তী পুঁজিবাদী দেশগুলির সমাজতন্ত্রের দিকে যাত্রা সরাসরি হতে পারে, যেখানে অনুন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলির বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে একটি দীর্ঘ ঐতিহাসিক উত্তরণ হতে হবে; কিন্তু সমাজতন্ত্রই হতে পারে সর্বত্র সমস্ত বিপ্লবী সংগ্রামের চূড়ান্ত লক্ষ্য।

সাম্রাজ্যবাদ

দ্বিতীয় ধাপটি ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই সন্ধিক্ষণকে অনুধাবন করে বিকশিত হওয়া লেনিনের সাম্রজ্যবাদ সম্পর্কিত তাত্ত্বিক ধারণা। মার্কসের মতে পুঁজিবাদের জমানায় লগ্নী ও শিল্পক্ষেত্রে পুঁজির আরো কেন্দ্রীভবন এর অন্তর্নিহিত বিশেষত্ব এবং এর ফলে এই বৃত্তগুলিতে একচেটিয়া ব্যবস্থা কায়েম হয় যার নিয়ন্ত্রক হয়ে দাঁড়ায় লগ্নীপুঁজির একটি ক্ষুদ্র অভিজাততন্ত্র। এরা বিপুল পরিমান লগ্নী পুঁজির নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এটি রাষ্ট্রের হর্তাকর্তাদের সাথে একটি “ব্যক্তিগত ইউনিয়ন” গড়ে তোলে, রাষ্ট্রের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করে এবং এর চরিত্র পরিবর্তন করে, যা পুঁজিবাদের এই নতুন পর্বের বৈশিষ্ট্য। এই পর্যায়ে, পুঁজিগুলির মধ্যেকার প্রতিযোগিতা বিশ্বজুড়ে “অর্থনৈতিক অঞ্চল” দখলের জন্য বিভিন্ন উন্নত পুঁজিবাদী দেশের অন্তর্গত বিভিন্ন একচেটিয়া জোটের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার রূপ নেয়; এবং ইতিমধ্যে তাদের মধ্যে বিভক্ত বিশ্বে, এই ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা অগত্যা যুদ্ধের মাধ্যমে এই অঞ্চল পুনর্বিভাজনের প্রচেষ্টার রূপ নেয়। এই যুদ্ধগুলি, যার মধ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ একটি উদাহরণ ছিল, বিভিন্ন দেশের শ্রমিকদের যুদ্ধক্ষেত্রে একে অপরকে হত্যা করতে বাধ্য করেছিল; পুঁজিবাদ উপনিবেশ, আধা-উপনিবেশ এবং নির্ভরশীল দেশগুলির নিপীড়িত জনগণকেও বিভিন্ন অর্থনৈতিক অভিজাততন্ত্রের স্বার্থে কামানের-খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করেছিল। পুঁজিবাদ এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছিল যেখানে ইতিমধ্যে বিভাজিত বিশ্বকে পুনর্বিভাজনের জন্য একাধিক যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল যা পুঁজিবাদের অধীনে “অসম উন্নয়নের” সর্বব্যাপীতার কারণেই ঘটেছে। 

পুঁজিবাদের সর্বশেষ পর্যায়ের এই উপলব্ধি, যাকে লেনিন, জে. এ. হবসনকে অনুসরণ করে, “সাম্রাজ্যবাদ” বলে অভিহিত করেছিলেন, এর বেশ কিছু প্রভাব ছিল। প্রথমত,মার্কসবাদী তত্ত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল এই বোঝাপড়া যে উৎপাদনের কোনো পদ্ধতি ঐতিহাসিকভাবে অপ্রচলিত না হওয়া পর্যন্ত উৎখাত করা হয়নি।এডুয়ার্ড বার্নস্টাইন ১৯০১ সালে মার্কসবাদের ব্যাপক সংশোধনের কথা বলেন। এর থেকে ‘সংশোধনবাদ’ শব্দটির উদ্ভব। তাঁর যুক্তিতে মার্কসবাদ পুঁজিবাদী সমাজের বৈপ্লবিক পরিবর্তন চায় কারণ তা মনে করে যে, এটি ঐতিহাসিক দিক থেকে বাতিল সমাজব্যবস্থা যা নিশ্চিতভাবেই এক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে এগোচ্ছে। কিন্তু যেহেতু এই ভাঙন বাস্তবে ঘটেনি বা ঘটবার সম্ভাবনাও প্রত্যক্ষ করা যায়নি, তাই পুঁজিবাদী সমাজের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের বিষয়টিকে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে শ্রমিকশ্রেণীর অর্থনৈতিক সচ্ছলতার জন্য প্রয়োজনীয় সংগ্রামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। অন্য অর্থে সর্বহারাদের বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী কার্যক্রম ত্যাগ করা উচিত। এবং প্রচলিত সমাজব্যবস্থার মধ্যে শান্তিপূর্ণ শ্রমিক সংগঠনমূলক ক্রিয়াকলাপে নিয়োজিত থাকা প্রয়োজন অপরদিকে রোজা লুক্সেমবার্গ পুঁজি সঞ্চয়ের একটি তত্ত্বের বিকাশের মাধ্যমে বিপ্লবী দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছিলেন যা ব্যবস্থার চূড়ান্ত পতনের দিকে ইঙ্গিত করেছিল। লেনিনবাদী যুক্তি এই বিতর্কের ভিত্তিকে সম্পূর্ণভাবে বদলে দিয়েছে।তাঁর মত ছিল, পুঁজিবাদ ঐতিহাসিকভাবে অচল হয়ে পড়েছিল, বা “মৃতপ্রায়” কারণ এর সাম্রাজ্যবাদী পর্যায়ে এটি পর্যায়ক্রমিক এবং ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে মানবতাকে আচ্ছন্ন করেছিল।উন্নত দেশগুলিতে এটি শ্রমিকদের সামনে একটাই পছন্দের প্রস্তাব দিয়েছিল – হয় পরিখার ওপারে সহযোদ্ধাদের হত্যা করা নয় একজোট হয়ে ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বন্দুক ওঁচানো- রোজা লুক্সেমবার্গের কথায় ‘সমাজতন্ত্র নয় বর্বরতা’। 

দ্বিতীয়ত, শুধুমাত্র উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলির শ্রমিকরাই নয়, নিপীড়িত দেশের “শ্রমজীবী মানুষ”ও ছিলেন, যারা সাম্রাজ্যবাদী শোষণের শিকার হয়েছিলেন এবং এই যুদ্ধগুলিতে কামানের খোরাক হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিলেন, তাদেরও পরিবর্তন হয়েছিল এই যুদ্ধগুলির কারণে।তাদের চেতনা এবং সেইসাথে প্রশিক্ষণ (সামরিক প্রশিক্ষণ সহ) এই যুদ্ধগুলির কারণে ক্রমাগত বিকশিত হয়েছিল এবং তারাও পুঁজির শাসনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল কারণ তারাও বর্বরতা এবং মুক্তির মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়ার পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল।

তৃতীয়ত, এই ব্যবস্থাটি শুধুমাত্র সাধারণ অর্থে ঐতিহাসিকভাবে বিলুপ্তির পথে ছিল তাই নয় বিশ্ব বিপ্লবের সম্ভাবনাকেও একটি আসন্ন ঘটনা হিসাবে ঐতিহাসিক এ্যাজেন্ডায় লিপিবদ্ধ করেছিল।বর্বরতা এবং সমাজতন্ত্রের মধ্যে বেছে নেওয়াটা তখন করতেই হয়েছিল বাস্তবিক পছন্দ হিসাবে কারণ সাম্রাজ্যবাদ মানবতার ওপরে উপর্যুপরি যুদ্ধ চাপিয়ে গিয়েছিল।

এই যুগসন্ধিক্ষণকে বোঝার প্রথম ধাপ যদি এটা হয়ে থাকে যে এই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা সমস্ত দেশকেই নানা বাঁক মোড় পেরিয়ে মানব মুক্তির পথ হিসাবে সমাজতন্ত্রের দিকেই অগ্রসর হতে হবে তাহলে এই উপলবদ্ধির দ্বিতীয় ধাপটি ছিল যে প্রতিটি মুক্তিকামী দেশের যাত্রা পরস্পর সংযুক্ত ছিল, যে সাম্রাজ্যবাদ তাদেরকে একটি শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেছে, যার “দুর্বল গ্রন্থি” ভেঙ্গে গেলে শৃঙ্খলের সম্পূর্ণ পতন ঘটবে  এবং এই সন্ধিক্ষণে শৃঙ্খলের ভাঙন ছিল আসন্ন। এই বোঝাপড়ার পরিণতি ছিল একটি আন্তর্জাতিক, কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠা, যা বিশ্বে তখনও পর্যন্ত ছিল একটা অভিনব ঘটনা, যেখানে ফ্রান্স, জার্মানি এবং ব্রিটেনের কমরেডরা চীন, ভারত, মেক্সিকো, মিশর, ভিয়েতনামের কমরেডদের সাথে মত বিনিময় করবে। 

ওয়েবডেস্কের পক্ষে ভাষান্তরঃ সরিৎ মজুমদার

শেয়ার করুন