Pundit Kashmiri Cover

পণ্ডিত মোহন লাল কাশ্মীরি - এক বিচিত্র জীবন

শ্যামাশিষ ঘোষ

জীবন বড়ই বিচিত্র। জীবনের কথা বলে যে ইতিহাস তাও বিচিত্র হওয়াই স্বাভাবিক। বর্তমান সময়ে ইতিহাসের নাম করে যে গণহিস্টিরিয়া জাগানোর চেষ্টা চলছে, প্রকৃত ইতিহাস তার থেকে শত যোজন দূরের বিষয়। ইতিহাস কথা বলে। কান পাতলে শোনা যায় সেই কথা। তা বোঝার জন্য ইচ্ছা লাগে, চেষ্টা লাগে, পরিশ্রম লাগে, ধৈর্য লাগে, যৌক্তিক পদ্ধতি লাগে। পণ্ডিত মোহন লাল কাশ্মীরি এমন একজন মানুষ, যিনি জন্মসূত্রে কাশ্মীরি পণ্ডিত; কর্মজীবনে, ছদ্ম পরিচয়ে মুসলিম; শেষ জীবনে, প্রকৃত অর্থে শিয়া মুসলিম। আমাদের বাঁধাগতের কাশ্মীরি পণ্ডিত ও কাশ্মীরি মুসলিমদের বাইনারির মধ্যে তাঁকে বাঁধা যায় না। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর কথায়, কাশ্মীরিদের এই মূর্ত প্রতীক ছিলেন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং একজন বিদ্বান, যাঁর মধ্যে কবি ও চিত্রকরের সত্তাও ছিল।

Mohan_Lal,_lithograph_by_Thomas_Ashburton_Picken

১৯৪৩ সালে প্রকাশিত অধ্যাপক হরি রাম গুপ্তা লিখিত, LIFE AND WORK OF MOHAN LAL KASHMIRI 1812-1877 বইটির মুখবন্ধে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু লিখেছেন, অনেক বছর আগে, একটি বইয়ের দোকানে মোহন লাল কাশ্মীরির আত্মকথা ও জার্নাল নামের বইটির দুটি অনেক পুরনো জীর্ণ খণ্ড তিনি পেয়েছিলেন। তিনি আগ্রহী হয়েছিলেন এই তরুণ ভারতীয় সম্পর্কে জানতে, যিনি নিজের মাতৃভূমি কাশ্মীর থেকে এত দূর চলে এসেছেন, এবং ইংরেজি ভাষায় ভ্রমণবৃত্তান্ত লিখেছেন।

বইটি পড়ে তাঁর আগ্রহ ও উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছিল এই ব্যক্তির অ্যাডভেঞ্চার প্রবণতা ও সাহসের কথা জেনে, যিনি বিপদ ও চ্যালেঞ্জ, এমনকি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও, অ্যাডভেঞ্চার থেকে পিছিয়ে আসেননি, বরং সেই অভিজ্ঞতাকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং সেটি নিয়ে লিখেছেন, যাতে অন্যরা এই অভিজ্ঞতা কিছুটা হলেও ভাগ করে নিতে পারেন। তাঁর সৃষ্টিশীলতা এবং দ্রুত চিন্তার ক্ষমতা ও নরম ভাষা দিয়ে তিনি যে কোনো পরিস্থিতি সামলানোর জন্য প্রস্তুত ছিলেন; কূটনীতির প্রথা ও ষড়যন্ত্র বিষয়ে চমকপ্রদ দক্ষতা দেখিয়েছিলেন; এমনকি কঠোর বিরোধীদেরও নিজের দিকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

পণ্ডিত মোহন লালের প্রপিতামহ, পণ্ডিত মনি রাম, ওরফে পণ্ডিত শিব নাথ, শাহ আলমের (১৭৫৯-১৮০৬) শাসনকালে মুঘল দরবারে উচ্চ পদে আসীন ছিলেন। সম্রাট তাঁকে রাজা উপাধি দিয়েছিলেন এবং তৎকালীন প্রায় কুড়ি লাখ টাকা মূল্যের একটি জায়গীর প্রদান করেছিলেন। তাঁর আর এক পূর্বপুরুষ, পণ্ডিত লছদিই রাম জুটশি কাশ্মীর ছেড়ে দিল্লীতে বসবাস করতেন সম্রাট শাহজাহানের (১৬২৭-১৬৫৮) সময়কালে।

ড. বৈকুণ্ঠ নাথ শার্গা, একজন গর্বিত কাশ্মিরি পণ্ডিত, সম্প্রদায়ের কল্যাণে গভীর আগ্রহ নিয়ে কাজ করে এসেছেন। তিনি লখনউ কাশ্মিরি অ্যাসোসিয়েশনের (১৯৯৬-৯৯) সভাপতি এবং এআইকেএস-এর (১৯৯৭-২০০০) বরিষ্ঠ সহ-সভাপতির পদে ছিলেন। ভারতকে গর্বিত করেছে এমন পরিবারগুলির ইতিহাস নথিভুক্ত এবং সংরক্ষণের কঠিন কাজে হাত দিয়েছিলেন ডঃ শার্গা। তাঁর মহান কাজ Kashmiri Panditon Ke Anmol Ratna, নিশ্চিত করেছে ইতিহাসে তাঁর একটি স্থান। কাশ্মিরি পণ্ডিত সমাজ অবশ্য নিজেদের ইতিহাসের-অর্জনের সংরক্ষণে অনেকাংশেই উদাসীন থেকেছে। ডঃ শার্গা জুটশিদের যে বংশতালিকা পুনর্নির্মাণ করেছিলেন এইরকম: পণ্ডিত শিব নাথ জুটশি > পণ্ডিত শম্বু নাথ জুটশি > পণ্ডিত ব্রহ্ম নাথ জুটশি।

পণ্ডিত ব্রহ্ম নাথ জুটশির শিখ মাতা তাঁকে আদর করে বুধ সিং নামে ডাকতেন। ফার্সি ভাষায় ভাল জ্ঞান থাকার সুবাদে, তিনি দোভাষী হিসাবে কাজ পেয়েছিলেন স্যার এম এলফিনস্টোন-এর কাছে, যিনি পরবর্তীকালে বোম্বাই প্রদেশের গভর্নর হন। ব্রিটিশদের অধীনে কার্যকালে তাঁকে পাঞ্জাব, সিন্ধ, বালুচিস্তান এবং আফগানিস্তানে মুসলিমদের মধ্যে কাজ করতে হয়েছিল। সনাতন ধ্যানধারণা ছেড়ে তিনি যথেষ্ট স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন কাটিয়েছিলেন, মাংস এবং সুরাপানে অভ্যস্ত ছিলেন। গোয়ালিয়রের কৌল বংশজাত পণ্ডিত স্ত্রীর গর্ভজাত, তাঁর দুই পুত্র ছিল – পণ্ডিত মোহন লাল এবং পণ্ডিত কেদার নাথ – দুজনেই দিল্লীতে জন্মগ্রহন করেন, যথাক্রমে, ১৮১২ এবং ১৮১৪ সালে। দু’জনেই বড় হয়ে উঠেছিলেন কসমোপলিটান সমাজ এবং মুক্ত চিন্তার পরিবেশে।

স্থানীয় মুসলমান মৌলবীদের কাছে পণ্ডিত মোহন লাল উর্দু এবং ফার্সি শিখেছিলেন। সাদি শিরাজির ‘বুস্তান’ এবং ‘গুলিস্তান’ পাঠের সাথেসাথেই তিনি রুমি এবং ওমর খৈয়ামের কাব্য সংকলনগুলি পাঠ করেছিলেন। মৌলবীরা তাঁকে প্রাথমিক আরবি ভাষা এবং পবিত্র কোরানের কিছু আয়াতের শিক্ষাও দিয়েছিলেন। ১৮২৯ সালে তিনি যোগ দেন দিল্লীর ফার্সি কলেজের ইংরেজি ক্লাসে। কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মুঘল শাসনের সময় ১৭৯২ সালে। লখনৌ এর প্রাক্তন মন্ত্রী নবাব ইতমাদ-উদ-দৌলার থেকে ১,৭০,০০০ টাকার এক উদার দানের মাধ্যমে কলেজটির প্রচুর আয় হয়। এই ইংরেজি ক্লাসটিই পরে দিল্লী ইংলিশ কলেজে পরিণত হয়েছিল। পণ্ডিত মোহন লাল এখানে তিন বছর পড়াশুনা করেছিলেন। তিনিই সম্ভবত ইংরেজি পড়া প্রথম কাশ্মীরি পণ্ডিত ছিলেন এবং তাঁর শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন।

১৮৩১ সালে, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, উত্তরপূর্ব ভারতে তাদের কর্তৃত্ব ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত, স্যার অ্যালেকজান্ডার বার্নেসকে, ভারত ও ক্যাস্পিয়ান সাগরের মধ্যবর্তী দেশগুলির খবরাখবর রাখার জন্য, গুপ্তচর হিসাবে নিযুক্ত করে। তাঁর নিয়োগ ছিল আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়ার সুলতানি রাজত্বগুলি এবং তিব্বতে প্রবেশের একটি বড় পরিকল্পনার অঙ্গ; লক্ষ্য ছিল দুটি, “দামী তাঁতে বোনা পণ্যের বাজার চালু করা এবং খ্রিস্টের উপদেশ ছড়িয়ে দেওয়া এখানকার ঘন জনবসতির মধ্যে।” চূড়ান্ত উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম দেশগুলিকে ব্রিটিশরাজের অধীনে আনা। ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিসই প্রথম, নিয়োগ করে, অত্যন্ত মেধাবি এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী পণ্ডিত মোহন লাল কাশ্মীরিকে, স্যার অ্যালেকজান্ডার বার্নেসের অনুগামী হওয়ার জন্য। ১৮৩১ সালে, তাঁর ১৯ বছর বয়সে, ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিসে যোগদানের পর, তিনি মির্জা কুলি কাশ্মীরি নাম নেন। বাৎসরিক ১০০০ টাকা বেতনে, স্যার বার্নেসের জন্য ফার্সি অনুবাদক হিসাবে কাজ শুরু করেন।

ব্রিটিশরা সফল হয়েছিল শাহ সুজাকে তাদের বশংবদ হিসাবে কাবুলের সিংহাসনে বসাতে। ব্রিটিশদের এই কাজ আফগানিস্তানে ব্রিটিশ স্বার্থের উপর আক্রমণ চালানো অন্যান্য সেনাপ্রধানদের পছন্দ হয়নি। মির্জা কুলি কাশ্মীরির প্রথম কাজ ছিল আফগান প্রতিরোধ আন্দোলনের মধ্যে ভাঙন ধরানোর কাজে দালাল নিযুক্ত করা। তিনি এই কঠিন কাজে সফল হয়েছিলেন তাঁর কৌশল এবং বুদ্ধির সাহায্যে। নিজেকে অভিজাত কাশ্মীরি মুসলিম পরিবারের অন্তর্গত জাহির করে, তিনি রাজ পরিবারের মেয়েকে বিবাহ করেন। এইভাবে তিনি লোকজনের ভিতরে গুপ্তচরবৃত্তি চালাতে পেরেছিলেন বিশেষ কোনও বিপদ ছাড়া।

স্যার অ্যালেকজান্ডার বার্নেস এবং পণ্ডিত মোহন লাল, দুজনেই ১৮৩২-৩৪ সালে মধ্য এশিয়ায় রাজনৈতিক এবং সামরিক তথ্য সংগ্রহের জন্য অনুসন্ধান চালানোর কাজে নামেন। তাঁর ভ্রমণকালে, মির্জা কুলি কাশ্মীরি সেইসব অঞ্চলের প্রভাবশালী পরিবারের মেয়েদের স্ত্রীরূপে গ্রহণ করেন যাতে তাঁর এই বৈবাহিক মিত্রতা তাঁকে গোঁড়া মুসলিমদের থেকে যথেষ্ট সুরক্ষা দিতে পারে। নতুন ধর্মপরিচয়ের সুযোগ নিয়ে, তিনি একাধিক স্ত্রীর সাহচর্যে আনন্দের জীবন কাটিয়েছিলেন। মধ্য এশিয়া থেকে ফেরার পর পণ্ডিত মোহন লাল ১৮৩৪ সালে তাঁর ভ্রমনের রোজনামচা প্রকাশ করেন।

তাঁর মধ্য এশিয়া ভ্রমণের পরে পণ্ডিত মোহন লাল কাশ্মীরি ওরফে মির্জা কুলি কাশ্মীরি, সিন্ধু প্রদেশে ব্রিটিশদের বাণিজ্যিক প্রতিনিধি এবং কাবুলে স্যার বার্নেসের রাজনৈতিক সচিব পদে উন্নীত হয়েছিলেন। প্রথম অ্যাংলো-আফগান যুদ্ধে, আফগানিস্তানে ব্রিটিশ তথ্য সংগ্রহের নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা এবং তাকে বাড়ানোর কাজে তিনি ছিলেন প্রধান সহায়ক। ইতিমধ্যে, তিনি বালুচিস্তান এবং আফগানিস্তানের সম্ভ্রান্ত পরিবারের অনেক মহিলাকেই বিবাহ করেছেন। ১৮৪১ সালের ২ নভেম্বর তারিখে, স্যার অ্যালেকজান্ডার বার্নেসের বাড়ি আক্রান্ত হয় একদল ক্ষিপ্ত জনতার হাতে এবং তিনি ও তাঁর ভাই চার্লস নিহত হন। কিন্তু পণ্ডিত মোহন লাল একটি জানালা দিয়ে পালিয়ে যান, তবে এই ঘটনার কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ধরা পড়েন। নিজের জীবন বাঁচাতে মির্জা কুলি কাশ্মীরি নাম নিয়ে কলমা পাঠ করেন। এক বণিকের বাড়িতে লুকিয়ে থেকে তিনি আফগান রাজধানির ঘটনাবলির বিবরণ পাঠাতে থাকেন কলকাতায়। তাঁর রিপোর্টগুলির মধ্যে কাবুলে ব্রিটিশ অফিসারদের ব্যবহার সম্পর্কিত অনেক কড়া এবং সংগত সমালোচনা থাকত।

পরে, ইরানের শিয়া মুসলিমদের সঙ্গে যোগাযোগের সময়ে তিনি পারস্যের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে খুবই প্রভাবিত হয়ে পড়েন। এইসময়ে তিনি সঠিকভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন একজন মুজতাহিদের (শিয়া সম্প্রদায়ের কাছে মুজতাহিদ হলেন এমন একজন ব্যক্তি যাঁকে ইসলামী আইনের আসল কর্তৃত্ব হিসাবে মানা হয়) কাছে, যিনি তাঁর নতুন নামকরণ করেন, আগা হাসান জান কাশ্মীরি। দিল্লীর নিকটবর্তী লোহারু রাজ্যের শাসক নবাব মির্জা আলা-উদ-দিন খান, যাঁর ছদ্মনাম ছিল আলাই, তাঁর ফার্সি কবিতায় মোহন লালের নাম উল্লেখ করেছিলেন আগা হাসান জান হিসাবে।

১৮৪৩ সালে, আগা হাসান জান কাশ্মীরি অবসর গ্রহণ করেন বাৎসরিক ১০০০ টাকা পেনসনের সাথে। তারপর, তিনি এক লম্বা সফরে বার হন – ইজিপ্ট, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম এবং জার্মানি। হেরাতের শাসক শাহ কামরান তাঁর ফার্সি শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন। ইরানের মির্জা আব্বাস তাঁকে পারস্যের সিংহের মর্যাদা দিয়েছিলেন, আফগানিস্তানের রাজা শাহ সুজা-উল-মুলক তাঁকে দুরানি সাম্রাজ্যের সেরা সম্মানে ভূষিত করেছিলেন, মহারাজা রণজিৎ সিং তাঁকে ৫০০ টাকা এবং সম্মনীয় উত্তরীয় প্রদান করেছিলেন। মুঘল সম্রাট আকবর শাহ তাঁকে আনুষ্ঠানিক পোশাকে সম্মানিত করেছেন এবং নিজ হাতে তাঁর পাগড়িতে রত্ন লাগিয়ে দিয়েছিলেন।

এরপরে ১৮৪৫ সালে আগা হাসান জান কাশ্মীরি, মহারানী ভিক্টোরিয়ার আমন্ত্রণে লন্ডনের রয়্যাল বল-এ অংশগ্রহণ করে, সেখানেই সকলকে জানান যে তাঁর জন্মদত্ত আসল নাম পণ্ডিত মোহন লাল কাশ্মীরি, কাশ্মীরের জুটশি পণ্ডিত বংশের সাথে তাঁর যোগ। এই ঘোষনা এই কাশ্মীরিকে এক আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব হিসাবে তুলে ধরে। ১৮৪৬ সালের ইউরোপ সফরের পর, আগা হাসান জান কাশ্মীরি মধ্য এশিয়ার দেশসমূহ এবং ইউরোপ ভ্রমণের একটি সংশোধিত সংস্করণ প্রকাশ করেন। এতে তাঁর মধ্য এশিয়ার ভ্রমণবৃত্তান্ত যুক্ত হয়, তাঁর ইউরোপ ভ্রমণের বৃত্তান্তের সাথে। ওই একই সময়কালে, তিনি কাবুলের আমীর, দোস্ত মোহম্মদ খানের জীবন নিয়ে তাঁর লেখা দুই খণ্ডে প্রকাশ করেন।

তাঁর প্রিয় স্ত্রী, হায়দারি বেগম, ছিলেন শিয়া মুসলিম এবং বিদ্বান। ১৮৫৭ সালের টালমাটাল সময়ে তিনি (হায়দারি বেগম) সেই সময়ে দিল্লীতে যেসব ঘটনা ঘটছিল তার বিস্তারিত রোজনামচা লিখেছিলেন, যার মধ্যে শেষ মুঘল সম্রাটের উপর ব্রিটিশদের অত্যাচারের কাহিনীও ছিল। পরবর্তীকালে তাঁর ডায়েরি ভারতের ব্রিটিশ সরকার বাজেয়াপ্ত করেছিল। আগা হাসান জান কাশ্মীরি শিয়া সম্প্রদায়ের জন্য লুধিয়ানায় যে ইমামবাড়া প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তা আগা হাসান জানের ইমামবাড়া নামে পরিচিত। এর কাছেই ছিল তাঁর নামাঙ্কিত রাস্তা।

এহেন আগা হাসান জান কাশ্মীরির শেষ জীবন অবশ্য কেটেছিল অখ্যাতি এবং আর্থিক সমস্যার মধ্যে। নিজস্ব সম্প্রদায়ের মানুষজন তাঁকে বয়কট করে; উচ্চ সম্মান ও খ্যাতি সত্ত্বেও বিমর্ষতা এবং একাকীত্ব গ্রাস করেছিল তাঁকে। এমনকি ঘনিষ্ঠ পণ্ডিত সগোত্ররাও তাঁকে বর্জন করেছিলেন। ১৮৭৭ সালে, ৬৫ বছর বয়সে আগা হাসান জান কাশ্মীরির মৃত্যু হয়, তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছিল আজমগড়ের কাছে, দিল্লীতে লাল বাগ নামের তাঁর উদ্যানে। সেখানে কোনও সমাধিফলক ছিল না, ছিল শুধু একটি চাতাল। বলা হয়, তার নীচেই ছিল আগা হাসান জান কাশ্মীরি এবং তাঁর প্রিয় হায়দরি বেগমের মরদেহ। চাতালটি এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

তথ্যসূত্র: কাশ্মীর পেন


শেয়ার করুন

উত্তর দিন