সংবিধান কেবলমাত্র একটা বই নয়, সেটা এখন আন্দোলনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। বুধবার সাংবাদিকদের কাছে এই মন্তব্য করে সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেছেন, সংবিধানে দেওয়া ভারতের জনগণের নাগরিক অধিকার ও ব্যক্তির অধিকার আক্রান্ত বিজেপি সরকারের হাতে। তাই আগামী ২৬ জানুয়ারি সারা দেশের সঙ্গে এরাজ্যেও অসংখ্য সভা করে সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ করে সংবিধান রক্ষার শপথ নেওয়া হবে। সংবিধান কেবল একটা বই নয়, সেটা এখন লড়াইয়ের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
সংবিধান রক্ষার জন্য ২৬ জানুয়ারি সারা রাজ্যে সংবিধান হাতে নিয়ে কর্মসূচি পালনের জন্য বামপন্থী ও সহযোগী দলগুলি তৃণমূল ও বিজেপি ছাড়া সবাইকে আহবান জানিয়েছে। সংবিধান রক্ষায় প্রতিবাদী ভূমিকা নেওয়া সমস্ত ব্যক্তি ও সংগঠনকেও শামিল হতে অনুরোধ করেছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এই আন্দোলনে ব্যাপকভাবে শামিল হবে বলে প্রত্যাশাও করা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে এদিন সেলিম সাংবাদিকদের বলেন, মোদী সরকার ভেবেছিল দমনপীড়ণ, গ্রেপ্তারি, ১৪৪ ধারা ইত্যাদি করে এবং ভয় দেখিয়ে সিএএ বিরোধী আন্দোলনকে দমন করে ফেলবে। কিন্তু মিইয়ে যাওয়া দূরের কথা, যতদিন যাচ্ছে আন্দোলন ততোই তীব্র হচ্ছে। বিশেষ করে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে ছাত্রসমাজ যেরকম ব্যাপকভাবে এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে তা স্বাধীনতার পরে দেখা যায়নি। ছাত্ররাই দেশকে সংবিধানের পাঠ শেখাচ্ছে। এবারের সাধারণতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে সংবিধান নিয়ে যত আলোচনা হচ্ছে আগে কখনো তা দেখা যায়নি। সরকার ভেবেছিল সিএএ করে মানুষকে ভাগ করে ফেলবে। কিন্তু তার বদলে মানুষ আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন।
সাধারণতন্ত্র দিবসের আগে বামপন্থীরা বৃহস্পতিবারই নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিবস উদ্যাপন করবেন দেশপ্রেম দিবস হিসাবে এবং তারপর ৩০ জানুয়ারি গান্ধীজীকে হত্যার দিবসে কর্মসূচি পালন করবে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। সেলিম বলেছেন, আরএসএস যা করছে সেটা দেশপ্রেম নয়, ওটা দেশপ্রেমের বিকৃত ভাবনা। নেতাজীর দেশপ্রেম এবং সংগ্রামকে স্মরণ করিয়ে সেকথাই আমরা বলব। মানুষের মধ্যে বিভাজন ভারতের ঐতিহ্যের বিরোধী। আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাদের যখন বিচার চলছিল তখন তাঁদের মুক্তির দাবিতে যে আন্দোলন হয়েছিল, তার স্লোগান ছিল, ‘লালকিলা সে উঠে আওয়াজ/ সায়গল ধিঁলো শাহনওয়াজ’। সেই সময়ে কলকাতার বুকে বামপন্থীদের নেতৃত্বে মিছিলে পুলিশের গুলিতে দুই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছিল যাঁদের একজনের নাম রামেশ্বর, আরেকজনের নাম রশিদ আলি। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সংগ্রামে শামিল হওয়ার এই ঐতিহ্যই আমাদের রয়েছে।
নেতাজী ভক্তির নামে আরএসএস’এর ভণ্ডামি সম্পর্কে সেলিম বলেন, ঝাড়খণ্ডে ২৩ জানুয়ারি ছুটি দেওয়া হতো। বিজেপি এসেই সেটা বন্ধ করে দেয়। আসামেও ক্ষমতায় এসেই বিজেপি স্কুলে রবীন্দ্রজয়ন্তী বন্ধ করেছে। আর প্রধানমন্ত্রী কলকাতায় এসে কলকাতা বন্দরের নাম পরিবর্তন করেছেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির নামে। কলকাতা বন্দরের একটা ডকের নাম থাকবে নেতাজীর নামে আর মাথার ওপর থাকবে শ্যামাপ্রসাদের নাম?
তিনি বলেন, মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়ে গান্ধীর চশমা নিয়েছেন, কিন্তু গান্ধীর দৃষ্টি নেননি। গান্ধী হত্যাকারীরা এখন সংবিধান হত্যা করতে নেমেছে। তাই সংবিধান রক্ষা করতে আমরা ক্ষুদিরামের উত্তরসূরিরা লড়াই করছি নাথুরামের উত্তরসূরিদের বিরুদ্ধে।
অমিত শাহ যেভাবে প্রকাশ্যে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে বিতর্কের আহবান জানিয়েছেন সেই সম্পর্কে সেলিম বলেছেন, বিতর্কটা দরকার ছিল আইন পাশ করানোর আগে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে আইন পাশ করিয়ে এখন প্রতিবাদ দেখে জনসমর্থন জোগাড় করতে বিতর্কের কথা বলছেন অমিত শাহ। জনমত গড়তে মিথ্যা প্রচার করছে বিজেপি। হিন্দুদের বলছে যে আপনাদের ভয়ের কোনও কারণ নেই। কিন্তু এনআরসি মানেই নাগরিকদের নিজেদের প্রমাণ দাখিল করতে হবে নাগরিকত্বের। সরকার কেন প্রমাণ করছে না কে কে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী?
বিজেপি’র বিষাক্ত প্রচারের ফলে কীভাবে বেঙ্গালুরু থেকে বস্তিবাসী পশ্চিমবঙ্গবাসীকে তাড়ানো হচ্ছে তার উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সেলিম।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর এনপিআর নিয়ে প্রতিবাদ সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওঁর কাজের ধরনটাই হলো কখনো সরকারিভাবে প্রতিবাদ লিপিবদ্ধ করেন না, উনি নাকি চুপিচুপি প্রতিবাদ করেন। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবাদ নথিভুক্ত করানো হলো না কেন?
শেয়ার করুন