সৌম্যদীপ্ত রায়চৌধুরী
প্রথম মহাযুদ্ধের অব্যবহিত পরেই ফ্রান্সের ক্যাম্পেন অরণ্যে এক রেলগাড়ির কামরায় সাক্ষরিত হয় ভার্সেই সন্ধি। আপাত শান্তির আড়ালে এই সন্ধির মধ্যেই নিহিত ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ। এ প্রসঙ্গে মার্শাল ফার্দিনান্দ ফখ্ লিখেছিলেন- ‘This is not a Peace. It is an Armistice for twenty years.’। এ কথারই প্রায় প্রতিধ্বনি পাওয়া যায় ২৮’ জুন ১৯১৯ সালে জার্মান সংবাদপত্র ডয়েশ জাইতুং’র সম্পাদকীয়তে- ‘Today...the disgraceful Treaty is being signed...The German people will... reconquer the place among the nations to which it is entitled.’

তারপর দেখতে দেখতে বিশ্ব রাজনীতির মোড় ঘুরল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীনই পট পরিবর্তন ঘটল রাশিয়ায়। লেনিনের নেতৃত্বে জারতন্ত্রকে পরাস্ত করে পৃথিবীর প্রথম সর্বহারার একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হল, প্রতিষ্ঠা হল সোভিয়েত। অন্যদিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয় এবং ভার্সাই সন্ধির শর্তসমূহ জার্মানিকে ঠেলে দিল অন্ধকারের পথে। যুদ্ধ পরবর্তী ব্যাপক অঙ্গচ্ছেদ(ভার্সাই সন্ধির শর্ত দ্রষ্টব্য), বিপুল পরিমাণ আর্থিক জরিমানা, ভয়াবহ আর্থিক মন্দা এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব- জার্মানির ভাগ্যাকাশে উল্কার গতিতে উত্থান ঘটল অ্যাডলফ হিটলারের। ৩৩’এ রাইখষ্টাগে আগুন ধরালেন ওলন্দাজ মারিনাস্ ভন ডের্ লিউব। দোষ এসে পড়ল কমিউনিস্টদের ঘাড়ে। নির্বিচারে কমিউনিস্ট হত্যা এবং বিনা বিচারে জেলে বন্দি অগুন্তি কমিউনিস্ট। নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে অ্যাডলফ্ হিটলার হলেন জার্মান ফুয়েরার। আপাতদৃষ্টিতে এই ইতিহাসটুকু আমাদের কমবেশি সকলেরই জানা। এ লেখার বিষয়বস্তু সরাসরি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমর-ইতিহাস নয়, ঐ বিশ্বযুদ্ধোত্তর পরবর্তী পূর্ব ইউরোপে সমাজতন্ত্রের অভিমুখ।
১৯৩৯-৪১ এর প্রথমার্ধ পর্যন্ত প্রায় গোটা ইউরোপই নাৎসি পদানত। ৪১’ সালে ঘটল দুটি ঘটনা। ২২শে জুন রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি লংঘন করে নাৎসি জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে বসে। অন্যদিকে ৭ই ডিসেম্বর জাপান পার্ল হারবার আক্রমণ করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে যোগদান করে।যুদ্ধের গতি যত এগিয়েছে ততই জার্মানির দাপট নিস্তেজ হতে থেকেছে। অবশেষে ১৯৪৫ সালের ৮’মে সন্ধ্যায় বার্লিনে এবং মস্কোর স্থানীয় সময় ৯’মে একদা প্রবল পরাক্রান্ত নাৎসি জার্মানির নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের চুক্তিতে সই। নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে- ধরা পড়ার ভয়ে, তার এক সপ্তাহ আগেই ৩০’এপ্রিল হিটলার আত্মহত্যা করেছেন। একদা ফ্যাসিবাদের দূর্গ রাইখস্ট্যাগের মাথায় অপরাজেয় সোভিয়েত বাহিনী মার্শাল জুকভের নেতৃত্বে কাস্তে-হাতুড়ি সম্বলিত লাল পতাকা উড়িয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় ঘোষণা করে। সোভিয়েত লাল ফৌজ এবং সোভিয়েতের আম জনতার নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের ফলেই সম্ভবপর হয় এই লড়াই।
মহাযুদ্ধ চলাকালীন বেশ কটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মিত্রশক্তি আয়োজিত এই সম্মেলনগুলি নিয়ে দু-চার কথা বলা প্রয়োজন। ৪২’র পর থেকেই একথা খানিক স্পষ্ট হয়ে যায় যে জার্মানি এ যুদ্ধ হারতে চলেছে। পাশাপাশি যুদ্ধ পরবর্তী বিশ্বে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির শক্তি হ্রাস হতে চলেছে। এমতাবস্থায় ১৯৪৩ এর ২৮শে নভেম্বর-১লা ডিসেম্বর ইরানের তেহরানে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রপ্রধান য়োসেফ স্তালিন, তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপ্রতি ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল মিলিত হলেন- সেই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কমরেড স্তালিনের প্রথম সাক্ষাৎ। চার্চিল এর আগে আলাদা আলাদা করে স্তালিন এবং রুজভেল্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও এই প্রথম তিন প্রধানের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজিত হয়। এই তেহরান কনফারেন্স থেকেই দুটি বিষয় উঠে আসে, প্রথমত- ইউরোপে একটি “সেকেন্ড ফ্রন্ট” খোলা, দ্বিতীয়ত, যুদ্ধোত্তর পৃথিবীতে এমন একটি অর্গানাইজেশন গড়ে তোলা যা বিশ্ব শান্তির পক্ষে কথা বলবে। বলা যেতে পারে সম্মিলিত জাতিসঙ্ঘের (যদিও তখন সেটি League Of Nations) মূল ভাবনার সূত্রপাত সেখানেই।
ইউরোপীয় রণাঙ্গনে যুদ্ধের একেবারে শেষ লগ্নে সোভিয়েতের ক্রিমিয়ায় আয়োজিত হয় ইয়াল্টা সম্মেলন (৪-১১ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৫)। এই সম্মেলন থেকেই মূলত যুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপে প্রভাব বিস্তার, জার্মানির মানচিত্রের পুনর্বিন্যাস এবং League Of Nations এর পরিবর্তে “United Nations” গড়ে তোলার কথা আলোচিত হয়।
কিন্তু তেহরান বা ইয়াল্টা সম্মেলন আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু নয়। এ লেখার উপজীব্য জার্মানির আত্মসমর্পণের পরে বার্লিনের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত পটসড্যাম শহরে আয়েজিত সম্মেলনটিকে নিয়ে।১৭ই জুলাই - ২রা আগস্ট ১৯৪৫, প্রায় ১৫দিন ধরে চলা এই সম্মেলনটি শুধুই যে তিনটি সম্মেলনের মধ্যে দীর্ঘতম এমনটিই নয়, এর পাশাপাশি ঐতিহাসিক দিক থেকেও এই সম্মেলনটি ভীষণভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। ৪৫ এর এই সম্মেলনে “The Old Fellow” কমরেড স্তালিন।কিন্তু পট পরিবর্তন হয়েছে ব্রিটেনে। রক্ষণশীল চার্চিলকে নির্বাচনে পরাস্ত করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন লেবার পার্টির ক্লিমেন্স এটলী। অন্যদিকে এপ্রিলেই প্রয়াত হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন উপ-রাষ্ট্রপতি হ্যারি এস ট্রুমান। ফলত আগের সকল রাষ্ট্রনেতাদের যে সমীকরণ অন্ততপক্ষে ইয়াল্টা সম্মেলন পর্যন্ত টিকেছিল, তাঁর সবটাই নতুন করে সাজাতে হবে। বিশেষত নব্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টটির একবগ্গা সোভিয়েত বিরোধিতা এবং অ্যান্টি-কমিউনিস্ট নীতি ছিল সর্বজনবিদিত। ভুললে চলবে না ১৯৪১ সালে, সেনেটর থাকাকালীন ট্রুমানের সেই কুখ্যাত উক্তি- ““If we see that Germany is winning we ought to help Russia, and if Russia is winning we ought to help Germany, and that way let them kill as many [of each other] as possible.”
আশা করা যায় কমিউনিস্ট সোভিয়েতের সঙ্গে গোলটেবিলে বসে বিশ্ব রাজনীতির ভারসাম্য বজায়ের এই প্রচেষ্টায় ট্রুমান কতখানি সচেষ্ট ছিলেন তা পাঠক বুঝতে পারছেন।
কেন পটসড্যাম সম্মেলন এত গুরুত্বপূর্ণ?
৪৫ সালের ১৭ জুলাই থেকে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে মোট নয়টি অধিবেশন বসে। ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচনের (৫ জুলাই ১৯৪৫) ফলাফল ঘোষণার জন্য সম্মেলনে দুই দিনের একটা বিরতি নেওয়া হয়। ২৬ জুলাই নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
সে নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের কনজারভেটিভ পার্টি পরাজিত হয় এবং
নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন লেবার পার্টির নেতা ক্লিমেন্ট অ্যাটলি। ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট অ্যাটলি পটসড্যাম সম্মেলনে চার্চিলের স্থলাভিষিক্ত হন।নেতৃত্বের পরিবর্তন হলেও ব্রিটেনের পররাষ্ট্র-নীতিতে (ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি বা ঐ স্বঘোষিত “পৃথিবীর প্রভু” মানসিকতা) কোনো পরিবর্তন হয়নি। ২৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় দফা সম্মেলন চলে ২ আগস্ট পর্যন্ত। দ্বিতীয় দফার সম্মেলনে মোট চারটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথমত, ১৭ দিনব্যাপী চলা সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নের সমাধান করা হয় এবং কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, নাৎসিবাদকে ধ্বংস করা হবে এবং সমগ্র জার্মানিকে নাৎসি পার্টির প্রভাব থেকে মুক্ত করা হবে। সকল প্রকার নাৎসি আইন বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত হয় সেখানে- যা De-Nazification নামে পরিচিত।
দ্বিতীয়ত, জার্মানিতে অস্ত্রশস্ত্র, সামরিক সাজসরঞ্জাম, সামরিক বিমান ও জাহাজ নির্মাণ নিষিদ্ধ করা হয়। পরিবর্তে জার্মানিকে অসামরিক শিল্প ও কৃষিক্ষেত্রে শক্তিশালী করতে হবে।
তৃতীয়ত, পটসড্যাম সম্মেলনে নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নাৎসি জার্মানির নেতৃত্বে গোটা ইউরোপ জুড়ে সংঘটিত যে নরমেধ যজ্ঞ- তার বিচার শুরু হয় আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে। সে ট্রাইব্যুনাল বসে জার্মানির ন্যুরমবার্গ শহরে।
অতঃকিম
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোসেফ স্তালিনের নেতৃত্বে, মার্শাল জুকভ, মার্শাল রাকসোভস্কি প্রমুখের নেতৃত্বে লালফৌজের যে বিজয়রথ, সেই বিজয়রথ সমাজতন্ত্রের আদর্শকে আঁকড়ে ধরে ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব ইউরোপ সহ বিশ্বের নানা প্রান্তে। সমাজতান্ত্রিক আদর্শের এই ফলস্বরূপঃ
-প্রথমত পূর্ব ইউরোপের পোল্যান্ড, লাতভিয়া, চেকশ্লোভাকিয়া, যুগোশ্লাভিয়া সহ বিভিন্ন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।মহাযুদ্ধ পরবর্তী প্রায় বিশ বছর বিশ্বের অর্থনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং তার নেতৃত্বাধীন পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক শিবির।
- গোটা পৃথিবী জুড়ে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই তীব্রতর হয়। ভারতবর্ষ সহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকা জুড়ে জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম শক্তিশালী হয়ে ওঠে। যার ফলে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তির হাত থেকে স্বাধীনতা লাভ করে বেশ কিছু দেশ।যদিও ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি শেষ মূহুর্তেও মরণ কামড় দিয়ে গেছে (উপমহাদেশ যাকে চেনে “দেশভাগ” বলে। যে কামড়ের খেসারত এখনও ভারতীয় উপমহাদেশ দিয়ে চলেছে)। যে উত্তরাধিকার বহন করে আলজেরিয়ার রাজধানী আলজেয়ার্সে ১৯৬৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে অ্যাফ্রো-এশীয় সংহতি সম্মেলনে চে’র সেই বিখ্যাত বক্তৃতা- At the Afro-Asian Conference in Algeria- শীর্ষক সেই বক্তৃতায় বিশ্বব্যাপী নয়া-উপনিবেশবাদ বা নিওকলোনিয়ালিজমের বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রাম এবং সংহতি প্রসঙ্গে চে বলছেন- -
“Now is the time to throw off the yoke, to force renegotiation of oppressive foreign debts, and to force the imperialists to abandon their bases of aggression. I would not want to conclude these remarks, this recitation of concepts you all know, without calling the attention of this gathering to the fact that Cuba is not the only Latin American country; it is simply the only one that has the opportunity of speaking before you today. Other peoples are shedding their blood to win the rights we have. When we send our greetings from here, and from all the conferences and the places where they may be held, to the heroic peoples of Vietnam, Laos, so-called Portuguese Guinea, South Africa, or Palestine — to all exploited countries fig hting for their emancipation — we must simultaneously extend our voice of friendship, our hand and our encouragement, to our fraternal peoples in Venezuela, Guatemala and Colombia, who today, arms in hand, are resolutely saying “No!” to the imperialist enemy."
- বিশ্ব পুঁজি তার চরিত্র পাল্টায়। বিশ্বপুঁজির সংকটকে চিহ্নিত করাটা এই মুহূর্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ঐ লেনিনের ভাষায় “নির্দিষ্ট পরিস্থিতির নির্দিষ্ট বিশ্লেষণ”। বিশ্ব পুঁজি তাঁর রূপ পাল্টেছে। লেনিন “Imperialism:The Highest Stage Of Capitalism” গ্রন্থের তৃতীয় অধ্যায়ে “Finance Capital And The Financial Oligarchy” লগ্নি পুঁজি প্রসঙ্গে যে পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন, বর্তমান নয়া-উদারনীতির যু্গে সে ধারণা খানিক বদলেছে, যা নিয়ে পরবর্তীকালে পল সুইজি এবং পল ব্যরান “একচেটিয়া পুঁজি”র ধারণাকে সামনে আনছেন। মোদ্দা কথা হল এইটে যে বিশ্ব পুঁজির এই সংকটে লাতিন বিশ্ব-আফ্রিকা সহ সমগ্র তৃতীয় বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক লড়াইকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে। বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী গোটা দুনিয়ায় অন্যতম শক্তিশালী, প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে উঠে আসে সোভিয়েত ইউনিয়ন, এশিয়া জুড়ে সমাজের লড়াই তীব্রতর হয়। ৪৯ এর চিন বিপ্লব বা কয়েক দশক পরের ভিয়েতনামের লড়াই মুক্তিকামী মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছে। সেই কবে ১৯৬৫ নাগাদ ঘানার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কোয়ামে নাক্রুমাহ্ বলেছিলেন -“All these liberatory forces have, on all major issues and at every possible instance, the support of the growing socialist sector of the world.”
সমাজতন্ত্রের উত্তরাধিকার
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ- যে যুদ্ধ কেড়ে নিয়েছে ৬.৫ কোটি মানুষের জীবন। একা সোভিয়েত ইউনিয়নেরই নিহতের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৬৬ লক্ষ, যার মধ্যে প্রায় ৩০ লক্ষ সোভিয়েট কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। ১ কোটি ১০ লক্ষ সোভিয়েত সেনা জীবন দিয়েছেন এই যুদ্ধে। ইউরোপের বিভিন্ন বন্দি শিবিরে বন্দি থাকা ৫৭ লক্ষ সোভিয়েট বন্দির মধ্যে ৩৩ লক্ষেরই মৃত্যু হয়। “অপারেশন বার্রবারোসা” এবং পরবর্তী সময়ে (স্তালিনগ্রাদে পরাজয়ের আগে পর্যন্ত) অপরাজেয় জার্মান ভেরমাখট্ গুঁড়িয়ে দেয় সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রায় দেড় হাজার শহর, জনপদ। জার্মান লুফত্ওয়াফা’র নিদারুণ বোমা বর্ষণে প্রায় পঁচাত্তর হাজার গ্রাম, তিরিশ হাজারেরও বেশি কলকারখানা, প্রায় ষাট হাজার কিলোমিটার রেলপথ মানচিত্র থেকে মুছে গিয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে যুদ্ধবিধ্বস্ত আর কোনও দেশকে এমন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়নি। উৎসাহী পাঠক এ বিষয়ে, বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ইতিহাস’ অথবা Progress Publishers, Moscow থেকে প্রকাশিত মার্শাল জিওর্জি জুকভের দুই খণ্ডে ‘Reminiscences and Recollections’ বইদুটি দেখতে পারেন।
এই বছর পটসড্যাম সম্মেলনের ৮০ বছর। এ বছর ফ্যাসিবাদের উপর চূড়ান্ত বিজয়ের আট দশক। সোভিয়েত ভেঙেছে। এতদসত্ত্বেও খোদ পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের শ্রমিকশ্রেণী ডাক দিয়েছে ‘Back To Basics! Back To Marx!’
বিশ্বজোড়া কর্পোরেট পুঁজির এমন দাপটের যুগেও আমাদের পাথেয় হতে পারে কমরেড স্তালিনের প্রজ্ঞা- ‘এই পথে আলো জ্বেলে— এ-পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে।’