PB Statement

প্রেস বিবৃতি

গত ৭-৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪-এ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী)-র পলিট ব্যুরো বৈঠক হয়েছে, পলিট ব্যুরো নিম্নলিখিত বিবৃতি দিয়েছে:

বাংলাদেশের পরিস্থিতি

এই প্রসঙ্গে আরও একবার পলিট ব্যুরো দৃঢ়ভাবে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিজেদের দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং পূর্ণ সুরক্ষা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে ইসলামী মৌলবাদী শক্তির তৎপরতাকে বাংলাদেশ প্রশাসন উপেক্ষা করছে বলে মনে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতে বিজেপি-আরএসএস এবং হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি উস্কানিমূলক প্রচারের মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে বিভেদকামী আবেগকে চাগাড় দিতে যেরকম ঘৃণ্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে পলিট ব্যুরো তার নিন্দা করছে। এ ধরনের কৌশল বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষা করবে না।

ভারত ও বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতি সীমান্তের দুদিকে জনগণের স্বার্থের ক্ষতি করে এমন যাবতীয় সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জোরালোভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে পলিট ব্যুরো।

উপাসনাস্থল সংক্রান্ত আইন প্রয়োগ করতে হবে

নিম্ন আদালতে দায়ের হওয়া কয়েকটি মামলার ক্ষেত্রে আদালত যেভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে তাতে পলিটব্যুরো গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ঐ সকল মামলায় দাবি তোলা হচ্ছে যেখানে যেখানে শতাব্দী প্রাচীন মসজিদ ইত্যাদি রয়েছে সেখানেই নাকি আগে মন্দির ছিল। বারাণসী এবং মথুরার পরে, সম্বলে, নিম্ন আদালত কর্তৃক ষোড়শ শতকের একটি মসজিদের জমিতে সমীক্ষার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট ঘটনায় এলাকায় হিংসা ছড়িয়ে পড়ে, চারজন মুসলমান যুবক নিহত হয়। এই পরিস্থিতিতে আজমের শরীফ দরগাহ সম্পর্কে স্থানীয় দেওয়ানী আদালতে পুনরায় একই ধরনের আবেদন গৃহীত হয়েছে।

১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল সংক্রান্ত বিশেষ বিধান (প্লেস অফ ওয়ার্শিপ আইন), বহাল থাকা সত্বেও এ ধরনের মামলা বন্ধ করতে সুপ্রিম কোর্টের তরফে হস্তক্ষেপ না করা দুর্ভাগ্যজনক। ২০১৯ সালে অযোধ্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের রায়ও স্পষ্টভাবে ঐ আইনের বৈধতা ও তার প্রয়োগ বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছিল। সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে, সংশ্লিষ্ট আইন লঙ্ঘন করে এমন যাবতীয় আইনি প্রক্রিয়াকে অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য উপযুক্ত হস্তক্ষেপ করা সুপ্রিম কোর্টেরই দায়িত্ব।

য়েনাড়ের জন্য অবিলম্বে ত্রান তহবিল গঠন করতে হবে

ওয়েনাড়ে বিধ্বংসী ভূমিধ্বস বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কেরালাকে সঠিক সহায়তা প্রদানে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্মম উদাসীনতার তীব্র সমালোচনা করছে পলিট ব্যুরো। তাৎক্ষণিক প্রয়োজন হিসাবে ২১৪.৬৮ কোটি টাকা এবং সামগ্রিক পুনরুদ্ধার এবং পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে ২৩১৯.১ কোটি টাকার সংস্থানের জন্য রাজ্যের তরফে জরুরী আবেদন জানানোর চার মাস পরেও কেন্দ্র এখনও অনুমোদন দেয়নি। ভূমিধ্বসকে ‘গুরুতর প্রকৃতির বিপর্যয়’ হিসাবে চিহ্নিত করতে অস্বীকার করা সহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য ঋণ মকুব করতে অনীহা দেখানোর মতো আচরণ অত্যন্ত অন্যায় এবং অমানবিকতার প্রতিফলন, যা সংকটকালে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কেন্দ্র-রাজ্যের পারস্পরিক সহায়তার বুনিয়াদি নীতিকেই ক্ষুণ্ন করে।

কেরল রাজ্য সরকারের দাবিকে মান্যতা দিয়ে ঐ তহবিল অবিলম্বে মঞ্জুর করবার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে পলিট ব্যুরো।

নয়ডার কৃষকদের সংগ্রামে সমর্থন

উত্তরপ্রদেশের গ্রেটার নয়ডায় আন্দলনরত কৃষকদের উপর পুলিশী নিপীড়নের নিন্দা করছে সিপিআই(এম)। অল ইন্ডিয়া কিসান সভা (এআইকেএস) এবং অন্যান্য সংগঠনের প্রায় দেড়শ নেতা-কর্মীকে জেলে পাঠানো হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া কৃষকরা জেলের ভিতরে অনশন শুরু করেছেন। আরও অনেক নেতাকর্মীকে গৃহবন্দি করা হচ্ছে। এ লড়াইয়ের সামনের সারিতে থাকা মহিলাদের ওপর পুলিশের হামলা মর্মান্তিক।

গ্রেটার নয়ডা সংগ্রাম রিয়েল এস্টেট প্রকল্পের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পঁয়তাল্লিশটি গ্রামের কৃষকদের জমি অধিগ্রহণ করা নিয়ে সমস্যার সূত্রপাত। কৃষকরা তাদের জন্য প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের হারে সংশোধন চাইছেন, ১৯৯৭ সালের চুক্তি অনুযায়ী বিকল্প প্লট বরাদ্দ এবং বাধ্যতামূলক কর্মসংস্থান নীতি বাস্তবায়নের দাবিও তারা জানিয়েছেন।

সিপিআই(এম) এ সংগ্রামকে পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছে। অবিলম্বে আন্দোলনকারিদের উপর দমন-পীড়ন বন্ধ করে সরকারকে কৃষকদের ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে সেসবের বাস্তবায়ন করতে হবে।

পার্টি কংগ্রেসের প্রস্তুতি

২০২৫ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য ২৪তম পার্টি কংগ্রেসের জন্য নির্দিষ্ট রাজনৈতিক প্রস্তাবের একটি খসড়া নিয়ে পলিট ব্যুরোতে আলোচনা করেছে৷ সেই আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারিত খসড়াটি পরবর্তী কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে অনুমোদনের জন্য পেশ করা হবে। আগামী ১৭-১৯ জানুয়ারি, ২০২৫-এ কলকাতায় কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হবে।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন