পুলিশ যুদ্ধ করুক করোনা সংক্রমণের সাথে, মানুষের সাথে নয় - শমীক লাহিড়ী

২৬ মার্চ,২০২০

বিচ্ছিন্ন করে রাখতেই হবে। কিছু ক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা প্রয়োগ করতেও হবে। যারা বুঝেও বুঝতে চাইছেন না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতেই হবে।

কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও একশ্রেণীর পুলিশ এলোপাতাড়ি মারধোর করাকেই একমাত্র রাস্তা ভেবে নিয়ে চলছে। এর ফলে বহু জরুরী পরিষেবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে লোকের অভাবে। ল্যাব টেকনিশিয়ান, ব্যাঙ্ক ও রেল কর্মী, ওষুধ পৌঁছে ফেরার পথে, সব্জি নিয়ে যাতায়াতের সময়, প্যারা মেডিকেল স্টাফ, পেট্রোল পাম্পের কর্মচারী কেউ ছাড় পাচ্ছেন না বেশ কিছু জায়গায়। আজ যারা অন্যায়ভাবে আক্রান্ত হলেন এক শ্রেনীর পুলিশের হাতে, কাল থেকে এরা কাজে না গেলে কি হবে? ডায়ালিসিস কেন্দ্রের অপারেটর না গেলে কত রুগী মৃত্যুর মুখে পড়বেন? ব্লাড ব্যাঙ্কের গ্রুপ ডি কর্মচারী না গেলে ব্লাড ব্যাঙ্ক খুলবে? প্রবীণ অসুস্থ যারা আয়াদের উপর নির্ভরশীল তাঁরা বেঁচে থাকবেন এরা কাজে আসতে না পারলে? মানুষকে বাঁচাবার লড়াইয়ে নেমেছি আমরা সবাই - কাউকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য নয়।

সংবেদনশীল না হয়ে গোটা কয়েক ষান্ডাগান্ডা সিভিক পুলিশ আর এই কয়েকদিন যানবাহনের অভাবে পয়সা তুলতে না পারা ক্রুদ্ধ কয়েকজন পুলিশের হাতে এই কঠিন কাজটা দয়া করে ছেড়ে দেবেন না। একদলকে বাঁচাতে তাহলে আর একদলকে অজান্তেই মেরে ফেলার ভুল রাস্তায় আমরা চলে যেতে পারি।

লকডাউনের ২৪ ঘন্টার মাথায় ওষুধ সহ অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস উধাও হতে শুরু করেছে। গরীব মানুষের রোজগার নেই। লকডাউন সফল রাখতে গেলে জিনিসের যোগান যেমন ঠিক রাখতে হবে তেমনই গরীব মানুষের হাতে ৩সপ্তাহের খাবার তুলে দিতেই হবে। সেটা না হলে লকডাউন ধরে রাখা খুব কঠিন হয়ে যাবে। অথচ লকডাউন সফল না হলে গভীর বিপদ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী - করোনায় বেঁচে যাওয়া মানুষ যেন ক্ষুধায় না মরে, তার জন্য অবিলম্বে আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করুন। কেরালার সরকার যদি ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করতে পারে, আপনারাও পারবেন। সারা বছরই তো আম্বানি-আদানী-ক্লাব এরা আপনাদের প্যাকেজ পায়। এই দুর্দিনে গরীব মানুষের কথা একটু ভাবুন।



রাজ্যের যে মানুষগুলো ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে আটকে পড়েছে, তারা অসহায় হয়ে পড়েছে। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আপনি দয়া করে একটা help line খুলুন এদের জন্য। রাজ্যের হাসপাতাল গুলোতে ডাক্তার -নার্স-কর্মীরা যাতায়াত করতে পারছেন না। রাজ্যের সব বেসরকারি এম্বুলেন্সগুলোকে আপাতত নিজেদের হেফাজতে নিয়ে এদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হোক, যাতে হাসপাতালগুলো সচল থাকে। এখনও স্বাস্থ্য কর্মী দের বড় অংশই সংক্রমণ রোধক পোশাক, মাস্ক পায় নি। জেলার ছোট খাটো স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলির কথা ছেড়ে দিন, আজ এই জন্য বেলেঘাটা ID হাসপাতালে বিক্ষোভে কয়েক ঘন্টা কাজ আটকে থাকলো। এটাই কিন্তু রাজ্যের একমাত্র করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র।

চীন-জার্মানী-কানাডার রাষ্ট্র প্রধান বা প্রশাসন কিন্তু রোজ ভাষন দেন নি টিভিতে, কিন্তু খাবার, ওষুধ, মাস্ক, পোশাক সব ব্যবস্থা করেছে। চীন ১.৭৬ কোটি মানুষের কাছে রোজ খাবার পৌঁছে দিয়েছে। কানাডার সরকার সব মানুষের ব্যাঙ্ক একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে। কেরালার সরকার সবাইকে ১মাসের খাবার দিয়েছে। ২০হাজার কোটি টাকা বিপর্যয় মোকাবিলায় বরাদ্দ করেছে। সবটা না পারলেও কিছুটা তো আমাদের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার দুটিও পারে।




শেয়ার করুন

উত্তর দিন