Site icon CPI(M)

Poli-tricks Of Abstaining: A Report

Mamata Supports BJP

‘বিরত থাকার মানে আসলে যখন সমর্থন

ওয়েবডেস্ক প্রতিবেদন

উপরাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচনে মোদীর প্রার্থীকে ওয়াকওভার দিল তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি বিরোধিতায় তৃণমূলের সর্বশেষ নমুনা এটাই।

ভোটদানে ‘বিরত’। এই বিরতি সাময়িক না বরং এক দীর্ঘ আঁতাতেরই চিহ্ন।

সেই আঁতাত আসলে সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে পপ্যুলিজমের ঘর করার গল্প বলে। দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে নিজেকে বিরোধী দলের নেতৃত্ব হিসাবে প্রমান করতে মরিয়া চেষ্টা দিয়ে সেই গল্পের শুরু। কোনও দলের সাথেই কোনও কথা না বলে যথেচ্ছ তারিখ এবং সময়ে সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান। শরদ পাওয়ার প্রার্থী হতে রাজি হলেন না, ফারুক আব্দুল্লাহ, গোপালকৃষ্ণ গান্ধীও ‘না’ জানালেন। বিজেপি বিরোধীদের একজনই প্রার্থী – এই যুক্তিতে যশবন্ত সিনহা’র নাম চূড়ান্ত হল। শিরোমণি অকালি দল, ওড়িশার বিজেডি, অন্ধ্রপ্রদেশের টিআরএস এবং আম আদমি পার্টি সেই সর্বদলীয় জোটের বাইরে রইল। পরে আআপ জানায় রাষ্ট্রপতি পদে বিরোধীদের প্রার্থী চূড়ান্ত হলে তার সমর্থনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

রাষ্ট্রপতি পদে বিজেপি’র প্রার্থী হলেন ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন রাজ্যপাল দ্রৌপদী মুর্মু। প্রচার হল তিনি নাকি দলিত ক্ষমতায়নের প্রতীক। ১৯৯৭ সালে বিজেপি দলে যোগ দেন দ্রৌপদী মুর্মু, রায়রঙ্গনপুর নগর পঞ্চায়েতের কাউন্সিলর নির্বাচন যেতেন বিজেপি’র প্রার্থী হিসাবেই, ২০০০ সালে ঐ পঞ্চায়েতেরই চেয়ারপার্সন হন। ওড়িশায় বিজেপি-বিজেডি জোট সরকারের মন্ত্রীও ছিলেন। ২০১৫ সালে ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল। এহেন বিজেপি’র প্রার্থীর নাম শুনেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে বসলেন দ্রৌপদী মুর্মু প্রার্থী হচ্ছেন, একথা আগে জানলে তিনি তাকেই সমর্থন জানাতেন। অর্থাৎ, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরোধিতার বিষয়টি আসলে কিছুই নয়, যথাযথ মর্যাদা সহ মমতা’কে আগে থেকে জানানো হলে বিজেপি’কে সমর্থন করাই যায়।

‘ভোটদানে বিরত’ থাকা তৃণমূল কংগ্রেসের নতুন কোন ‘ইয়ে’ নয়। ২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসীন হওয়ার পর থেকে লোকসভা, রাজ্যসভায় বিজেপি’র প্রস্তাবিত যেকোনো গুরুত্বপুর্ন বিল’র ক্ষেত্রে ভোটদানের প্রসঙ্গ এলেই তাদের বিজেপি বিরোধীতা অন্য দিনের চাইতে একটু বেড়ে যায়। ‘ভোটদানে বিরত’ থেকে তারা সেই বিরোধিতা উদযাপন করেন। এমন প্রবল বিরোধিতার ঝাঁঝে মোদী সরকারের চোখ জ্বলে নিশ্চয়ই, তাই সারদা আর্থিক কেলেঙ্কারি, নারদ ঘুষ কান্ডে সিবিআই, ইডি অনেককে ডেকেও কাউকেই দোষী চিহ্নিত করতে পারে না।

তাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী ঐক্যের নামে যে ভুল তারা করেছে, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাকে শুধরে নিতেই আরেকবার ‘ভোটদানে বিরত’।

এখন আমাদের রাজ্যে প্রাইমারি, আপার প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার ঝড় চলছে। আদালতের রায়ে তৃণমূল সরকারের খোদ স্কুলশিক্ষামন্ত্রীর কন্যারই অবৈধ নিয়োগ বাতিল হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মামলাগুলির ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত চলছে। গোয়েন্দা দপ্তর থেকে একের পর এক হেভিওয়েটদের নামে ডাক আসছে। তৃণমূল শাসনে সরকারী পরীক্ষা পাশ করে চাকরির তালিকায় নাম রয়েছে যাদের, তারাই কলকাতার রাজপথে তাঁবু খাটিয়ে বছরের পর বছর ধর্না দিচ্ছেন। তাদের পথে বসিয়ে রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কাদের চাকরি দিয়েছে সেই তালিকা চেয়ে পাঠাচ্ছে আদালত।

এই অবস্থাতেই দেশের উপরাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন। সেই পদে বিজেপি’র প্রার্থী কে?

আড়াই ঘণ্টার বিরোধিতা!

বিজেপি ও তৃণমূল মিলে দার্জিলিঙের বৈঠকে আলোচনা করেই যে জগদীপ ধনকড়কে প্রার্থী করেছে, সেকথা দু’দিন আগেই বলেছিলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। মোদী-শাহের বিশেষ বার্তা নিয়ে সেই বৈঠকে এসেছিলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী। আড়াই ঘণ্টা আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু মমতা ছিলেন চুপ! এদিনের সিদ্ধান্তেই সেই ভণ্ডামির মাত্রা স্পষ্ট!

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। এই সেদিন অবধি যাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার হয়েছে অজস্র চটুল ‘মিম’। সেইসব বানিয়েছেন মূলত তৃণমূল সমর্থকেরাই। তৃণমূলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী জগদীপ ধনখড়’কে প্রকাশ্যে বিজেপি’র পার্টিজান অবধি বলেছেন। উপরাষ্ট্রপতি পদে নির্বিঘ্নে জয় পেতে সেই ধনখড়’কেই ওয়াকওভার দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।

একদিকে লুঠেরা কর্পোরেট পূঁজির সাথে আঁতাত আরেকদিকে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদই যাদের রাজনীতি, সেই বিজেপি’র বিরুদ্ধে যেকোনো ময়দানে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে লড়াই করবে সিপিআই(এম)। বিজেপি বিরোধীদের একজোট করতেও সেই একই মনোভাব আমাদের, সর্বোচ্চ ঐক্যের আহ্বান শুধু না, সেই ঐক্য নির্মাণে সক্রিয় ভূমিকা পালন। তাই আমরা বলছি উপরাষ্ট্রপতি পদে তৃণমূল কংগ্রেসের ‘ভোটদানে বিরত’ থাকা আসলে নির্লজ্জ দ্বিচারিতা। সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির ট্যুইট- হাইট অফ হিপোক্রিসি, সহজ কথায় ভণ্ডামি।

তৃণমূল কংগ্রেস কেন এমন করতে বাধ্য সেইসব নিয়ে ‘সুশীল সমাজ’ বহু ব্যখ্যা হাজির করতে পারে। সাবঅল্টার্ন রাজনীতি’র নামে সেইসব কথাবার্তা বাগ্মিতার মুখোশের আড়ালে চাটুকারিতার নয়া নজীর বানিয়েছে অনেক আগেই। এখন তাতেও আর কাজ হচ্ছে না বলে কোন কিছুতেই তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেন না। আমাদের মনে রাখতেই হবে এসবের শিকড় কোথায়, কতটা গভীরে।

প্রকৃত অর্থে মিডিয়ার সামনে ভোটদানে এমন বিরতি প্রসঙ্গে কি বলবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী?

‘Forbear to judge, for we are sinners all’ – তাই নয় কি?

ওয়েবডেস্কের পক্ষেঃ সৌভিক ঘোষ

ছবিঃ সোশ্যাল মিডিয়া

শেয়ার করুন