৪ মে, ২০২৫ , নয়াদিল্লি
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-এর পলিট ব্যুরো ৩ মে, ২০২৫ তারিখে নয়াদিল্লিতে বৈঠক করে নিম্নলিখিত বিবৃতি জারি করেছে:
পলিট ব্যুরো পাহালগামে সন্ত্রাসবাদীদের হাতে নিহত ২৬ জন মানুষের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছে,এবং এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পাহালগামে সন্ত্রাসবাদী হামলা
পাহালগামের মর্মান্তিক সন্ত্রাসবাদী হামলা, যাতে ২৬ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, গোটা দেশকে শোক ও ধিক্কারের ঐক্যে আবদ্ধ করেছে। খুনীদের শনাক্ত করে শাস্তি দেওয়ার জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা করা উচিত। এই হামলা একটি গুরুতর নিরাপত্তা ত্রুটির ফলাফল—এ বিষয়ে পূর্ণ তদন্ত হওয়া এবং দায়িত্ব নির্ধারণ আবশ্যক, যাতে ভবিষ্যতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো—কাশ্মীরের জনগণ এই হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে পথে নেমেছেন। উপত্যকাজুড়ে বন্ধ পালন করা হয়েছে। এই গণ-মনোভাবকেই ভিত্তি করে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে সন্ত্রাসবাদীদের বিচ্ছিন্ন করতে হবে। এমন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত নয়—যেমন সন্ত্রাসবাদীদের বাড়ি ভেঙে ফেলা—যা নিরীহ পরিবারগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং জনগণের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার বোধ সৃষ্টি করে।
পলিট ব্যুরো মুসলিম ও কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় চালানো ঘৃণার প্রচার এবং ব্যক্তি নাগরিকদের ওপর আক্রমণের নিন্দা করেছে। এই সাম্প্রদায়িক মানসিকতা কেবল সন্ত্রাসবাদীদের লক্ষ্যপূরণেই সাহায্য করছে—মানুষকে বিভক্ত করা।
সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিছু কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে, যেখানে এসব সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী ঘাঁটি গেড়েছে। এখন অগ্রাধিকার হওয়া উচিত হামলাকারী ও তাদের পরিচালকদের চিহ্নিত করে একটি দলিল তৈরি করা এবং তা আন্তর্জাতিক মহলের সামনে উপস্থাপন করা। এই বিষয়ে আর্থিক কর্মপদক্ষেপ কার্যগোষ্ঠী (FATF)-র কাছে হস্তক্ষেপ চাওয়া উচিত। সরকারকে বিবেচনা করতে হবে যে, সামরিক প্রতিক্রিয়া আদৌ সীমান্ত পার সন্ত্রাস রোধে কার্যকর ও প্রতিবন্ধক হবে কিনা।
জাতিগত জনগণনা
কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছে যে, সাধারণ জনগণনার সঙ্গে জাতিগত জনগণনাও চালানো হবে। এটি একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত, যা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দাবি। তবে কীভাবে জাতিগত তথ্য সংগ্রহ করা হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। সরকার যেন অবিলম্বে সাধারণ জনগণনার সময়সূচি ঘোষণা করে, যা বহুদিন বিলম্বিত।
ওয়াকফ আইন ও সাম্প্রদায়িক আক্রমণ
২০২৫ সালে বিজেপি সরকার ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল পাশ করার পর দেশের বিভিন্ন শহরে সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রদায়িক আক্রমণ হয়েছে। মুসলিমদের সম্পত্তিতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বিজেপি এই আইনকে ব্যবহার করছে ধর্মের ভিত্তিতে জনগণকে মেরুকরণ করতে ও সংখ্যালঘুদের আক্রমণ করতে। বিজেপির কিছু নেতা ঘোষণা করেছেন যে, ওয়াকফ আইনের পর এবার গির্জার মালিকানাধীন সম্পত্তির দিকে নজর দেওয়া উচিত। এতে তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়—সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি দখল করে তাদের সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার ও সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করা। মুসলিম চরমপন্থী সংগঠনগুলোও এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে এবং হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির হাতের পুতুল হয়ে উঠছে।
রাজ্যপালের ক্ষমতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়
রাজ্যপালের ক্ষমতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় কেন্দ্রীয় সরকারের সেই প্রচেষ্টার ওপর আঘাত হেনেছে, যেখানে তারা বিরোধী দলের শাসিত রাজ্যগুলির কার্যক্রমে বাধা দিতে রাজ্যপালদের ব্যবহার করছিল। আদালত সময়-সীমাবদ্ধ নির্দেশিকা জারি করে বলেছে যে রাজ্যপালরা রাজনৈতিক এজেন্টের মতো নয়, সংবিধানিক প্রধান হিসেবেই কাজ করবেন।
এই রায় মেনে নিয়ে রাজ্য বিধানসভাগুলির মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো উচিত, কিন্তু মোদি সরকার এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করার কথা ভাবছে। এটি করা উচিত নয়। উপরাষ্ট্রপতি ও বিজেপির কিছু নেতার মন্তব্য আদালতের বিচার করার ক্ষমতার সরাসরি অপমান এবং তা নিন্দাযোগ্য।
অপারেশন কাগার
ছত্তীসগঢ় ও আশেপাশের অঞ্চলে মাওবাদীদের নির্মূল করতে কেন্দ্রীয় সরকার অপারেশন কাগার শুরু করেছে, যা আদিবাসীদের জীবনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। মাওবাদীরা সরকারের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে। সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে নিরীহ আদিবাসীরা এই লড়াইয়ের বলি না হন। কেবল অস্ত্রের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়, শান্তিপূর্ণ আলোচনার পথ গ্রহণ করতে হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক যুদ্ধ
যুক্তরাষ্ট্র প্রায় সব দেশের ওপর আমদানি শুল্ক বাড়িয়েছে, পরে ৯০ দিনের জন্য বিরতি ঘোষণা করেছে, তবে চীনের ক্ষেত্রে তা কার্যকর থাকছে। এই পদক্ষেপ বিশ্বের অনেক দেশই বিরোধিতা করেছে। চীন, কানাডা, মেক্সিকো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাল্টা শুল্ক চাপিয়েছে। কিন্তু ভারত সরকার এর কোনও প্রতিবাদ করেনি, বরং স্বেচ্ছায় শুল্ক কমিয়ে ট্রাম্পকে খুশি করার চেষ্টা করছে।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনা
ভারত সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি (BTA) স্বাক্ষরের জন্য আলোচনা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে দুটি দফা আলোচনা শেষ হয়েছে এবং বছরের শেষ নাগাদ চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে তাদের কৃষিপণ্য আমদানির জন্য বাজার খুলে দিতে এবং পেটেন্ট আইন পরিবর্তনের জন্য চাপ দিচ্ছে। এসব চাপ ভারতীয় কৃষক ও দেশের স্বার্থের পরিপন্থী—ভারতকে এই চাপ প্রতিরোধ করতে হবে।
গাজায় গণহত্যামূলক যুদ্ধ
পলিট ব্যুরো গাজা, প্যালেস্তাইনে চলমান যুদ্ধের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ইসরায়েলি হামলা ও ত্রাণ সরবরাহে নিষেধাজ্ঞার ফলে গাজার মানুষ গণঅনাহারের শিকার হচ্ছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবিলম্বে ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করানো এবং খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে হবে।
বিহার নির্বাচন
বিহার রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত হবে। পার্টি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি শুরু করবে। মহাগঠবন্ধনের শরিকদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই আলোচনা চলছে।
কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক
নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম বৈঠক আগামী ৩-৫ জুন নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে।