তারিখঃ রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০২২
নয়া দিল্লিতে ১২, ১৩ মার্চ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র পলিটব্যুরোর সভায় নির্ধারিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিম্নলিখিত বিবৃতি জারী করা হলঃ
সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনসমুহ প্রসঙ্গে
উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, গোয়া এবং মনিপুরে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিজেপি পুনরায় সরকার গঠন করেছে। সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ তীব্রতর করে, সংবাদমাধ্যমের এক বিরাট অংশের উপরে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম রেখে এবং ব্যাপক অর্থবল ব্যবহার করে বিজেপি উত্তরপ্রদেশে নিজেদের সরকার টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হলেও তাদের ক্ষমতা আগের তুলনায় কমেছে।
পাঞ্জাবে আম আদমি পার্টি বিরাট জয় পেয়েছে। বহুদিন ধরে চলা কংগ্রেস নাহলে অকালি দলের দ্বীদলীয় শাসনব্যবস্থাকে খারিজ করে পাঞ্জাবের জনগণ নির্ধারক অবস্থান গ্রহন করেছেন।
সামগ্রিকভাবে এই ফলাফলে স্পষ্ট হয়েছে যে দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক শক্তির আধিপত্যই বিরাজ করছে। কর্তৃত্ববাদী শাসনের অভিমুখে ক্রমবর্ধমান হিন্দুত্ব-কর্পোরেট শাসনের প্রতিরোধে আগামী দিনে বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে দ্বিগুন উৎসাহে ভর করে এগোতে হবে, নতুন রণকৌশলে বিবর্তিত হতে হবে।
ত্রিপুরায় সিপিআই(এম)’র উপরে বিজেপি’র ফ্যাসিস্ত কায়দায় আক্রমনের প্রতিবাদে
বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরেই, ত্রিপুরায় বিজেপি সিপিআই(এম) ক্যাডারদের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী কায়দায় ভয়ঙ্কর আক্রমণ নামিয়ে আনে এবং রাজ্য জুড়ে অনেকগুলি দলীয় কার্যালয়ে নির্বিচারে হামলা চালায়। ত্রিপুরায় সন্ত্রাসের রাজনীতির এহেন বহিঃপ্রকাশের তীব্র নিন্দা করছে সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো। এর আগেও বিজেপি বারে বারে সিপিআই(এম)-র বিরুদ্ধে এই ধরনের সন্ত্রাস সংগঠিত করেছে, পার্টি ও পার্টি কর্মীদের সন্ত্রস্থ করতে প্রতিবারের মতোই তারা আবারও ব্যর্থ হবে।
ইপিএফ’এ সুদের হার কমানো প্রসঙ্গে
নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশের পরেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ইপিএফ তহবিলে সুদের হার কমিয়ে দেওয়ার ঘোষণা করেছে, গত বছরের ৮.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮.১ শতাংশে পরিণত করা হয়েছে। এতে শ্রমজীবী মানুষের উপর আরও বেশি আক্রমণ নামিয়ে আনা হল। চাকরি হারানোর ক্রমবর্ধমান ঘটনা, মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদির ফলে জনজীবনে বর্ধিত যন্ত্রণার পটভূমিতে এমন সিদ্ধান্ত কার্যত নিষ্ঠুরতা।
পার্টির সমস্ত ইউনিটকে জনগণের জীবন-জীবিকার উপর এই আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত করার আহ্বান জানাচ্ছে সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো৷
সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ বৃদ্ধির প্রসঙ্গে
সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলকে “সাংবিধানিক এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার নামে দেশে ধর্মীয় গোঁড়ামি ক্রমবর্ধমান” বলে ঘোষণা করার সাথেই আরএসএস ২০২২ সালে নিজেদের বার্ষিক প্রতিবেদনে ঘোষণা করেছে যে " বিভিন্ন সরকারী পদে প্রবেশ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের বিস্তৃত পরিকল্পনা রয়েছে"। “এই হুমকিকে পরাজিত করতে সংগঠিত শক্তি সহ সমস্ত প্রচেষ্টা” চালানোর আহ্বান জানিয়েছে আরএসএস। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিশানা করতে এ হল আরেকধরনের কৌশলী পদক্ষেপ।
সাম্প্রদায়িক হিংসা প্রতিরোধে এবং সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সাংবিধানিক নিশ্চয়তা এবং আইনের শাসন বজায় রাখতে সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক শক্তিকে সামনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে পলিট ব্যুরো। ভারতের ঐক্য ও অখণ্ডতার জন্য এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সিপিআই(এম)’র ২৩ তম পার্টি কংগ্রেস প্রসঙ্গে
আসন্ন পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক-সাংগঠনিক খসড়া প্রতিবেদন নিয়ে পলিট ব্যুরোর সভায় আলোচনা হয়েছে। সেই সম্পর্কিত আলোচনা আগামী ২৫-২৭ মার্চ কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বিবেচনার জন্য পেশ করা হবে।
আগামী ৬-১০ এপ্রিল, ২০২২ কেরলের কান্নুরে সিপিআই(এম)-এর ২৩-তম পার্টি কংগ্রেস সম্পন্ন হবে।