PB Statement

ভারতে স্টারলিংকের ব্যবসায় আপত্তি: পলিট ব্যুরো বিবৃতি

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র পলিট ব্যুরো বিবৃতি

ভারত সরকার ইলন মাস্কের সংস্থা স্টারলিংককে ভারতে ব্যবসা করার ছাড়পত্র দিয়েছে। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সরকারের এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা জানাচ্ছে।

ভারতে ব্যবসার জন্য স্টারলিংক সংস্থা কীভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ছাড়পত্র আদায় করেছে তার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটাই অস্বচ্ছ। ভারতের অভ্যন্তরীণ জরুরী পরিকাঠামোকে এভাবে কোনও বিদেশী সংস্থাকে ব্যবহার করতে দেওয়া দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। এমন সিদ্ধান্তে আমাদের দেশের টেলিকম ব্যবস্থা সহ কূটনৈতিক যোগাযোগসমুহে বিভিন্ন মার্কিনী এজেন্সিগুলির জন্য পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকে পড়ার সুবিধা তৈরি হবে।

কৃত্রিম উপগ্রহ, আরও বিশেষ করে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে অপেক্ষাকৃত কম দুরত্ব বজায় রেখে চলা কৃত্রিম উপগ্রহ পরিচালনার দায়িত্ব একবার স্টারলিংক’কে দায়িত্ব দেওয়া হলে আর সেসব ফিরিয়ে নেওয়া যাবে না। আমাদের দেশের মহাকাশ সংক্রান্ত পরিকাঠামো সাধারণভাবেই অপ্রতুল, এমন পরিস্থিতিতে স্টারলিংক’কে সেই পরিকাঠামো ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া দেশের স্বার্থ বিরোধী পদক্ষেপ।

যদি কেন্দ্রীয় সরকার সত্যিই আমাদের দেশের স্বনির্ভরতার উন্নতিসাধন করতে আগ্রহী থাকে তবে তারা ইসরো’কে সেই দায়িত্ব দিতে পারত। স্যাটকম (এসএটিসিওএম) ক্ষেত্রের জন্য জরুরী সামগ্রীর নির্মাণে ভারতে ডট, সি-ডটের মতো সংস্থাগুলির যথেষ্ট দক্ষতা রয়েছে। এদের দায়িত্ব দেওয়া হলে দেশের সরকারী মালিকানাধীন সংস্থাগুলিকে (পাবলিক সেক্টর) শক্তিশালী করা যেত। দেশের নিরাপত্তা ও ডিজিটাল পরিকাঠামোর সার্বভৌমত্ত্বও সুরক্ষিত থাকত।

কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে স্টারলিংকের চুক্তির গোটা বিষয়টিই রহস্যে ঘেরা। প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ঐ চুক্তির সুবাদে স্পেকট্রাম ব্যবহারের খরচের মাত্র ৪ শতাংশই মূল্য হিসাবে ট্রাই’র পাওনা হবে, এসমস্ত চুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রীম বাবদ যেটুকু অর্থ ট্রাই’র পাওয়ার কথা সেটুকুও তারা পাবে না। এর ফলে আমাদের জাতীয় সম্পদের ব্যপক লোকসান হবে, দেশের স্বার্থের পক্ষেও তা হানিকারক। এখনও অবধি এ চুক্তির ক্ষেত্রে ভারতীয় মহাকাশ পরিচালন সংস্থা ইন-স্পেস’র তরফে স্টারলিংক’কে কোন কোন ক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়া হয়েছে তার কোন বিশদ তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি।

আম্বানি’দের রিলায়েন্স জিও এবং মিত্তলদের ভারতী এয়ারটেল সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে স্টারলিংক যেভাবে ভারতের বাজারে ব্যবসার সুযোগ পাচ্ছে তাতে কার্যত সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দুই মালিকগোষ্ঠীর একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। এমনটা ঘটলে বিএসএনএল’র মতো সংস্থার পক্ষে তার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাই দুরহ হয়ে উঠবে। দেশের প্রায় সর্বত্র যারা সুলভে টেলিকম ও ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দেয় সেই বিএসএনএল’কে ধ্বংস করতেই কেন্দ্রীয় সরকার আরও একবার এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।

স্টারলিংক সংস্থা’কে ব্যবসা করার ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্তে ভবিষ্যতে দেশের স্বার্থহানী ঘটবে। সিপিআই(এম) দাবী জানাচ্ছে অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করা হোক।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন