NEP 2020 WB

রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর কতৃক সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারদের পাঠানো সার্কুলারের বিরোধিতা করছি কেন?

ঋজুরেখ দাশগুপ্ত

১. ইউজিসি রাজ্য সরকারকে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০২০ প্রয়োগের জন্য (যা ইউজিসির চিঠিতে স্পষ্ট উল্লেখ করা আছে) একটি নির্দেশনামা পাঠিয়েছে ৩১শে জানুয়ারি, ২০২৩। রাজ্য সরকার তার বিরোধিতা না করে, একটি শব্দও উচ্চারণ না করে অবিকল সেই নির্দেশিকা রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারদের পাঠিয়েছেন ১৭ই মার্চ,২০২৩ তারিখে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে বলেছিলেন বিজেপির শিক্ষানীতির তিনি বিরোধিতা করছেন। তাহলে, অবিকল সেই নির্দেশিকাকে কেন পাঠাচ্ছেন? আরএসএসের এত ভয়ঙ্কর আক্রমণ সত্বেও কেন এর বিরোধিতা করে মোদীজি বা অমিত শাহ বা জগদীপ ধনখড় বা হিমন্ত বিশ্বশর্মার সঙ্গে বৈঠক করলেন না? ভাইপোর ছাত্রযুব সভার পোস্টারে লেখা থাকছে ভাইপো গর্জন করবেন, লেখা থাকছে না যে জাতীয় শিক্ষানীতির প্রয়োগ আটকানো হবে। গর্জন করা ভাইপো, বর্ষণ করা পিসি কি তাহলে ভিজে বেড়াল হয়ে গেলেন? বিভিন্ন সূত্রের একাংশ থেকে এটা প্রচার চালানো হচ্ছে যে কেরালার বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সরকার এই শিক্ষানীতির প্রয়োগ করছে। যা সর্বৈব মিথ্যা রটনা। কেরালার সরকার মাল্টিপল এন্ট্রি-এক্সিট, যোগা শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করাসহ নির্দেশিকার বিভিন্ন বিষয় কোনো অবস্থাতেই প্রয়োগ করা হবে না এমনটাই জানিয়েছে এবং চার বছরের স্নাতক কোর্সকে একজন ছাত্রের কাছে অপশনাল হিসেবে রাখবে বলেছে অর্থাৎ কোনো ছাত্র বাড়তি এক বছর নিয়ে যদি স্নাতক স্তরেই গবেষণার কাজ করতে চায় তাহলে করতে পারবে- এইটুকুই। যে ছাত্র তিন বছরেই অনার্স স্নাতক হতে চায় সে অনায়াসে তিন বছরের পড়াশুনা করে অনার্স নিয়েও স্নাতক হতে পারবে। কোনো অবস্থাতেই বাধ্যতামূলকভাবে চার বছরের অনার্স স্নাতকের কোর্স চাপানো হবে না।

NEP2020

২. এমনটা একাংশ বলতে চাইছেন যে এই সার্কুলারে শুধু চার বছরের স্নাতক কোর্সের কথা বলা হয়েছে তাই বিরোধিতা হোক। প্রথমে এই অতি সরলীকরণ করে পরে "ও, তাহলে ঠিক আছে" বলে পিছু হঠার এই পুরোনো কৌশল প্রতিক্রিয়ার পঞ্চম বাহিনীর পরিকল্পনা কিনা- সে ব্যাপারে সন্দেহ থাকছেই। সার্কুলারে প্রকৃত অর্থে কী বলা হয়েছে?- বলা আছে, ইউজি প্রোগ্রামে মাল্টিপল এন্ট্রি এক্সিট থাকবে। অর্থাৎ- কেউ এক বছর পড়ে পাশ মার্ক পেয়ে ছেড়ে দিলে তাকে দেওয়া হবে ইউজি সার্টিফিকেট, কেউ দুবছর পড়ে পাশ মার্ক পেয়ে ছেড়ে দিলে দেওয়া হবে ইউজি ডিপ্লোমা, তিন বছরে ব্যাচেলর ডিগ্রি, চার বছরে ব্যাচেলর ডিগ্রি উইথ অনার্স অথবা অনার্স উইথ রিসার্চ। আমরা এর বিরোধিতা করছি কারণ- এই প্রক্রিয়া সরাসরি ড্রপ আউটে ইন্ধন দেবে, এই নির্দেশিকার অন্যান্য অংশের কথা বললে বোঝা যাবে ছাত্রছাত্রীদের ওপর প্রবল চাপ চাপানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে যা অনেকের পক্ষেই বিশেষত প্রান্তিক অংশের (আর্থিক, ভৌগলিক, সামাজিক) ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে বহন করা অসম্ভব। ফলত, তারা বাধ্য হবেন ইউজি সার্টিফিকেট বা ডিপ্লোমা নিয়েই কাজের সন্ধানে পরিযায়ী হতে। তিন বছরের আজকের স্নাতক কোর্সেই বাংলায় ড্রপ আউট ৩০শতাংশের ওপরে, চার বছরে অনার্স হলে (কেননা তিন বছরে অনার্স থাকছে না) এই ড্রপ আউট আরও বাড়বে এ ব্যাপারে কোনো সংশয় নেই। এই সিদ্ধান্তে ওয়ার্কিং স্টুডেন্টদের কার্যত জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে এক বছর লেখাপড়া করে কলেজ ছেড়ে দেওয়ার কথা। অনেক ছাত্রছাত্রী আমাদের রাজ্যে ছোটখাটো কাজ করে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন রোজ, তাদের শিক্ষাগ্রহণের অধিকার কেড়ে নেবে এই সিদ্ধান্ত।

৩. পাঠক্রম কী হবে?- বলা হয়েছে ইউজি প্রোগ্রাম হতে পারে চার রকমের- ক) সিঙ্গেল মেজর, খ) ডবল মেজর, গ) ইন্টারডিসিপ্লিনারি, ঘ) মাল্টিডিসিপ্লিনারি। এই মেজর (অনার্স নয়) একটা সাবজেক্ট (বিষয়) হতে পারে অথবা একটা ডিসিপ্লিন (স্ট্রিম) হতে পারে। এদের ভেতরের গঠন দেখলে এদের পার্থক্য বোঝা যাবে। এই চারটির যে কোনো একটি ইউজি প্রোগ্রাম একজন ছাত্র চয়ন করবেন। সেই প্রোগ্রামের (যে ধরণেরই প্রোগ্রাম হোক) ভেতর মোট আট ধরণের কোর্স থাকবে। কী কী?- ক) মেজর স্ট্রিম কোর্স, খ) মাইনর স্ট্রিম কোর্স, গ) মাল্টিডিসিপ্লিনারি কোর্স (এই মাল্টিডিসিপ্লিনারি আর আগের মাল্টিডিসিপ্লিনারি এক নয়), ঘ) AEC ( Ability Enhancement Course, ঙ) Skill Enhancement Course, চ) Value Added Course, ছ) Summer Internship, জ) Research Project/ Dissertation (চার বছরের স্নাতক প্রোগ্রামের জন্য)। উদাহরণ- আপনার কোর্স যদি ফিজিক্সে সিঙ্গেল মেজর হয় তাহলে আপনার মেজর স্ট্রিম কোর্সে থাকবে ফিজিক্স সঙ্গে বাকি ছটি অংশ থেকেও কোর্স চয়ন করতে হবে। আপনার কোর্স যদি ডবল মেজর হয় তাহলে আপনার দুটো মেজর স্ট্রিম কোর্স সাথে আরও ১২টি অর্থাৎ মোট ১৪টি কোর্স আপনাকে চয়ন করতে হবে অর্থাৎ প্রতি সেমিস্টারে আপনার মোট ৭টি বা ১৪টি করে সাবজেক্ট থাকবে অর্থাৎ ৭টি বা ১৪টি পরীক্ষা। তিন বছরে মোট ক্রেডিট হবে ১২০, চার বছরের ক্ষেত্রে হবে ১৬০। যদি ইন্টারডিসিপ্লিনারি বা মাল্টিডিসিপ্লিনারি ইউজি প্রোগ্রাম হয় সেক্ষেত্রে মেজর এবং মাইনর স্ট্রিম কোর্সে ইন্টারডিসিপ্লিনারি বা মাল্টিডিসিপ্লিনারি গ্রুপ অফ সাবজেক্ট থাকবে। যেমন- ইকোনোমেট্রিক্স মেজর হলে ইকোনমিক্স, স্ট্যাট ও অঙ্ক- এটা হবে মেজর স্ট্রিম কোর্স। যে কোনো প্রোগ্রামের মেজর বা মাইনর স্ট্রিম কোর্সে একটা সাবজেক্টও থাকতে পারে আবার একটা স্ট্রিমও থাকতে পারে। যে কোনো প্রোগ্রামের (মাল্টিডিসিপ্লিনারি প্রোগ্রাম হলেও মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেজর চয়ন করার পর তাকে আবার ভিন্ন গ্রুপের মাল্টিডিসিপ্লিনারি কোর্স চয়ন করতে হবে, মোট সাবজেক্টের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে) মাল্টিডিসিপ্লিনারি কোর্স চয়ন করতে হবে নিম্নোক্ত তালিকা থেকে- Natural and Physical Sciences, Mathematics-Statistics-Computer Application, Library-Information-Media Sciences, Commerce and Management, Humanities and Social Sciences. AEC'তে থাকবে- মডার্ন ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ ও ইংরাজি এবং কমিউনিকেশন স্কিল। SEC'তে থাকবে- সফ্ট স্কিল। VAC'তে থাকবে- Understanding India, Environmental science/Education, Digital and technological solutions, Health & wellness-Yoga-Sports-Fitness. সামার ইন্টার্নশিপে থাকছে বাধ্যতামূলক ভোকেশনাল ট্রেনিং, চার বছরের ক্ষেত্রে রিসার্চ কোর্সে পেপার, পেটেন্ট বা শুধু থিসিস সাবমিশন। আমরা এই সমগ্র পাঠক্রমের বিরোধিতা করছি নিম্নলিখিত কারণে- ক) মনে রাখতে হবে, এই শিক্ষানীতিই পিপিপি মডেলের কথা বলেছে। সেই প্রেক্ষাপটে নুন্যতম পরিকাঠামোহীন বাংলার শিক্ষাব্যবস্থায় এই পাঠক্রম চাপানো হবে দুদিন পর "আপনারা যখন পারছেন না, প্রাইভেটকে ডেকে আনুন" বলার জন্য। খ) একজন ছাত্রের ওপর অসহনীয় চাপ বাড়ানো হবে প্রতিটি সেমিস্টারে ৮টা বা ১৬টা কোর্সের ভেতর দিয়ে। সাম্মানিক ডিগ্রির ক্ষেত্রেই কলেজগুলোতে সিলেবাস শেষ হয় না, উপযুক্ত পরিকাঠামো থাকে না- এখন বলা হচ্ছে ৮টা কোর্স, যা কার্যত অসম্ভব এবং ছাত্রদের বাধ্য করা হচ্ছে পড়াশুনা ছেড়ে সস্তার শ্রমিক হওয়ার জন্য। গ) চার বছরের ক্ষেত্রে চতুর্থ বছর রিসার্চের জন্য বরাদ্দ বলা হয়েছে, আবার তা চালু করার জন্য বলা হয়েছে ডিপার্টমেন্টে দুজন পিইচডি হোল্ডার অধ্যাপক থাকলেই হবে। দুজন কতজনের দায়িত্ব নেবেন? তাদের স্নাতকোত্তর ও গবেষণার ছাত্রের পরে আবার স্নাতকে গবেষণার দায়িত্ব তারা কীভাবে নেবেন? এই গবেষণার পরিকাঠামো কটি কলেজে রয়েছে? শুধু জার্নাল সাবস্ক্রিপশন আর লাইব্রেরি থাকলেই গবেষণা হবে? মগের মুলুক? নাকি গরুর দুধে সোনা খোঁজার কাজ? ঘ) AEC কোর্সে মডার্ন ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজের কথা বলা হয়েছে। এগুলি কোনগুলো? কে ঠিক করবে? সংবিধানে তো মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ বলে কিছু নেই। ঙ) VAC কোর্সে যোগার উল্লেখ করা হয়েছে। কেন? জনস্বাস্থ্য নয় কেন? চ) লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী কোথায় সামার ইন্টার্নশিপ করবে? সেমিস্টারপিছু ৩ ক্রেডিট থাকবে এই ইন্টার্নশিপে। ছাত্র ও ছাত্রীদের মূল্যায়ন একইভাবে হবে সেমিস্টার পিছু চার সপ্তাহের ইন্টার্নশিপে? মাইনর কোর্সেও লোকাল ইন্ডাস্ট্রিতে ভোকেশনাল ট্রেনিংকে রাখতে হবে বলা হয়েছে। তার ক্রেডিটও ৩। ছাত্রীরা কী করবেন? সম্ভব তাদের পক্ষে? এই ইন্টার্নশিপ কি বিনা পয়সায় করবে ছাত্রছাত্রীরা? এভাবে গরমের ছুটিতে এবং বছরের অন্য সময়ে সস্তার শ্রমিক হবে ছাত্রছাত্রীরা? ছ) এই গোটা কাঠামো চাপানোর কথা বলা হয়েছে মোট ৩১ পাতা জুড়ে, তার জন্য কী পরিকাঠামো দরকার সেটা লেখা হয়েছে সাড়ে ছয় লাইনে। এই ছেলেখেলার কী মানে?

৪. এবারে আসা যাক স্নাতক প্রোগ্রামের কাঠামো প্রসঙ্গে। তিন বছরের স্নাতক প্রোগ্রামে মোট ১২০ ক্রেডিট থাকবে। প্রত্যেক সেমিস্টারে থাকবে ২০ ক্রেডিট করে। প্রথম এবং দ্বিতীয় সেমিস্টারে ৬টি করে কোর্স। মেজর ও মাইনর স্ট্রিম থেকে একজন ছাত্র যে দুটি কোর্স (এই কোর্সে একাধিক সাবজেক্ট থাকতে পারে এবং অনেকের ক্ষেত্রেই তা থাকবে) চয়ন করবে তার ক্রেডিট হবে ৪ করে অর্থাৎ মোট ৮। বাকি ৪টি স্ট্রিমের কোর্সের ক্রেডিট হবে ৩ করে মোট ১২। সমগ্র সেমিস্টারে ৪ ক্রেডিটের কোর্সে থাকবে ৪৫ ঘন্টার লেকচার ও ১৫ ঘন্টার টিউটোরিয়াল/ল্যাব ইত্যাদি। ৩ ক্রেডিটের কোর্সে থাকবে ৩০ ঘন্টার লেকচার ও ১৫ ঘন্টার টিউটোরিয়াল/প্রায়োগিক ইত্যাদি। তাহলে প্রথম দুটি সেমিস্টারে মূল বিষয় পড়ানোর জন্য বরাদ্দ থাকছে মাত্র ৯০ ঘন্টা, বাকি ২১০ ঘন্টা খরচ হবে ফিজিক্স মেজর ছাত্রের যোগা শিক্ষা বা মিডিয়া সাইন্স পড়াশুনায় অথবা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রের জন্য ৯০ ঘন্টা মূল বিষয় আর বাকি ২১০ ঘন্টা বরাদ্দ থাকবে অঙ্ক বা লোকাল ইন্ডাস্ট্রির ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ে। পরের সেমিস্টারগুলিও হবে প্রায় একইরকম। একেকটি সেমিস্টারে ৬-৮টি করে পরীক্ষা হবে। এই বিপুল অহেতুক চাপ সামলানোর জন্য কি অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা তৈরি? ৯০টি কাজের দিনের মধ্যে ৩০০ ঘন্টার কোর্স বিভিন্ন বিষয়ের মেজরের জন্য কীভাবে সম্ভব? আমাদের রাজ্যের অভিজ্ঞতা হল- সিবিসিএস চালু হওয়ার পর অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সেমিস্টারেই সিলেবাস শেষ হয় না। বারংবার ছাত্রবিক্ষোভও হয়েছে এই বিষয়ে। তার ওপরে এই ভয়ঙ্কর বিপুল সিলেবাস চাপানো কীসের জন্য? মূল বিষয়ে পড়াশুনার গুণগত মান বৃদ্ধির কোনো প্রচেষ্টা না করে ছাত্রছাত্রী এবং অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের ওপর এই অসহনীয় বোঝা চাপানোর কী কারণ? এর পরিণতি হল- পিডিএফ পাঠিয়ে সিলেবাস শেষ করানোর চেষ্টা যা কদিন আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক ছাত্রবিক্ষোভের কারণ হয়েছে। একজন ছাত্র একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সকাল ৯-৫টা শুধুমাত্র ক্লাসরুমেই বসে থাকবে? এইটাই কি আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর স্পিরিট? একজন ছাত্র ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতায় পুষ্ট হয়ে সমাজকে চিনবে, বিচারবুদ্ধির নির্মাণ হবে- এই প্রক্রিয়ার ধার ধারবে না আমাদের ক্যাম্পাসগুলো? এটা শিক্ষানীতি নাকি ক্যাম্পাসের শ্রমকোড? আসল উদ্দেশ্য- যখনই প্রতিষ্ঠানগুলি এই বিপুল চাপ সামলাতে পারবে না তখনই সরকার বলবে- তাহলে অমুক এড-টেক অ্যাপের সঙ্গে টাই আপ করুন, অমুক সাবজেক্ট তারা পড়িয়ে দেবে অথবা আপনার ক্যাম্পাসে তাহলে অমুক গ্রুপকে একটা বিল্ডিং করতে দিন যে বিষয়গুলো সামাল দেওয়া যাচ্ছে না সেগুলো প্রাইভেটরা দেখে নেবে। আর সেই দেখে নেওয়ার পরিবর্তে ছাত্রছাত্রীদের থেকে সংগৃহীত হবে বিপুল মুনাফা।

৫. নির্দেশিকায় হঠাৎ এক জায়গায় গরমের ছুটিতে কী করতে হবে তা লেখা হয়েছে। বলা হচ্ছে রেগুলার কোর্সও গরমের ছুটিতে ফাস্ট ট্র্যাক মোডে করাতে হবে। সাথে বলা হচ্ছে গরমের ছুটিকে ব্যাকলগ পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করতে হবে। তাহলে কি সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা থাকবে না? ৬ মাসের রেগুলার কোর্স কীভাবে ২ মাসে করে ফেলা যাবে? এই ফাস্ট ট্র্যাক মোডে পড়াবে কারা? ছাত্রছাত্রীরা তো ছুটিতে থাকবে, তাহলে পড়বে কারা? পড়া হবে কোথায়? কেউ জানে না এই প্রশ্নগুলোর উত্তর। ঘুরপথে এডটেক কোম্পানিগুলোকে সরকারি শিক্ষায় অনুপ্রবেশ করানোর এও এক কৌশল। আদানিকে অন্যায্যভাবে দেশবিদেশে কন্ট্র্যাক পাইয়ে দেওয়ারকান্ডে যৌথ সংসদীয় কমিটিটা ফাস্ট ট্র্যাক মোডে তৈরি হবে না, ম্যাথেমেটিক্স বা ফিলোজফির একটা কোর্স ফাস্ট ট্র্যাক মোডে হবে- ইহাই ফ্যাসিবাদ। ইহাই মোদী-মমতার শিক্ষানীতি!

৬. এই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে- কোনো ছাত্র মাঝপথে প্রতিষ্ঠান পাল্টাতে পারবেন, মাঝপথে তার কোর্স পুর্ণাঙ্গ অনলাইনে নিয়ে চলে যেতে পারবেন- এই সিদ্ধান্ত ভুয়ো ডিগ্রি বাড়িয়ে দেবে। ডিজিটাল ডিভাইডও বাড়বে এই সিদ্ধান্তে।

৭. এই গোটা বিষয় প্রয়োগ করতে সিলেবাসে ব্যাপক রদবদল দরকার। তার জন্য সিলেবাস কমিটি গঠন প্রয়োজন। জনতার মধ্যেও আলোচনা প্রয়োজন। চুপিসারে কোনোরকম আলোচনা ছাড়া বিজেপির শিক্ষানীতি চাপানোর চেষ্টা কেন করছেন মুখ্যমন্ত্রী? কোন অঙ্কে?

এই প্রশ্নগুলি সামনে রেখেই প্রত্যাহার করাতে হবে এই কালা সার্কুলার।

বাংলার মাটি, দুর্জয় ঘাঁটি/ লড়াই করেই বাঁচতে চাই/ হীরক রাজের শিক্ষানীতির/ এই বাংলায় ঠাঁই নাই…


শেয়ার করুন

উত্তর দিন