নীলোৎপল বসু
অষ্টাদশ লোকসভার প্রথম অধিবেশনে আগের তুলনায় অনেক প্রত্যয়ী ও শক্তিশালী বিরোধীদের সাথে দেশের সরকারকে যুঝতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে সংসদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হল মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির জন্য আয়োজিত নেট ইউজি পরীক্ষার দুর্নীতি। দুর্নীতির বিভিন্ন উদাহরণ সকলের চোখের সামনে থাকা সত্বেও কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান কোথাও কোনও দুর্নীতি হয়নি বলে যাবতীয় অভিযোগকে সরাসরি অস্বীকার করেন। এই মুহূর্তে ঐ পরীক্ষায় দুর্নীতি সম্পর্কে এতকিছু প্রকাশ্যে এসে গেছে যে সেসব অস্বীকার করার আর কোনো উপায় নেই। অবশেষে সরকার স্বীকার করে নিয়েছে যে নেট ইউজি পরীক্ষায় দুর্নীতি হয়েছে এবং সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। এমন জাতীয় স্তরের পরীক্ষায় দুর্নীতি হলে তাকে সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা বলেই চিহ্নিত করতে হয়। এই কারণেই সরকার নিজেদের অযোগ্যতা ঢেকে রাখতে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে। এই কমিটি খুঁজে বের করবে কোন পরিস্থিতিতে এমন ব্যাপক আকারের দুর্নীতি তাদের নজর এড়িয়ে সংগঠিত হল। নিজেদের প্রশাসনিক ব্যবস্থার কঙ্কালসার চেহারাটি গোপন রাখতেই সংসদে এই নিয়ে আলোচনার দাবি বারবার বিরোধীরা তোলা সত্বেও সরকার পক্ষ আলোচনায় রাজি নয়।
এই অপরাধপ্রবণতা আসল রোগের উপসর্গমাত্র
যা ঘটেছে তাতে দুর্নীতি অবশ্যই একটি বড় বিষয়। নিট ইউজি পরীক্ষার পাশাপশি ইউজিসি-নেট পরীক্ষার ফলাফলও স্থগিত রাখা হয়েছে। এমন অদ্ভুত পরিস্থিতি সত্যিই অভূতপূর্ব। ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ) যেভাবে নিজেদের কর্তব্যে অবহেলা করেছে তা নজিরবিহীন।
গুরুত্বপুর্ণ প্রবেশিকা পরীক্ষায় এই ধরণের ব্যাপক দুর্নীতি আসলে অপরাধ প্রবণতার দিকেই ইঙ্গিত করে। সেই প্রবণতা শুধু পরীক্ষার আয়োজনেই সীমাবদ্ধ থাকে না, সমগ্র উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থাটাই বিরাট বিপদের সম্মুখীন হয়। এমন বিপর্যয়ের দিক থেকে নজর ঘোরাতেই সরকার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। যে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে তারও লক্ষ্য আসল সত্যকে চাপা দেওয়া। সেই জন্যই যাদের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, সেই এনটিএ-র চেয়ারম্যান প্রদীপ যোশিকেই নির্লজ্জের মতো চেয়ারম্যান করে এই তদন্ত কমিটির মাথায় বসানো হয়েছে।
এনটিএ'র প্রতিষ্ঠা ও আজকের অবস্থা
পরীক্ষার গোটা ব্যবস্থাটাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবস্থাকে নকল করে তৈরি করা হয়েছে। ওরা নিজেদের দেশে এডুকেশনাল টেস্টিং সার্ভিসকে দিয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষা নেয়। তার অনুকরনেই ২০১৮ সালে মোদী সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত হয় ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি। এর সাথেই গড়ে তোলা হয় একটি কেন্দ্রীয় এসেসমেন্ট বডি, যার কাজ সারা দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ ও প্রবেশিকা পরীক্ষার আয়োজন করা। এই সকল পরীক্ষার যাবতীয় নথিপত্র সংরক্ষণের দায়িত্বও তারাই নেয়। বোঝাই যায় এমন কর্মকাণ্ডের আসল উদ্দেশ্য ছিল উচ্চশিক্ষাকে একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থায় পর্যবসিত করা। আমাদের দেশের বাস্তবতার কারণেই শিক্ষা প্রসঙ্গে এই ধরণের মার্কিন মডেল ব্যর্থ হতে বাধ্য। ভারতের সংবিধান রাজ্যগুলিকেও শিক্ষা সংক্রান্ত বিশেষ ভূমিকা পালনের জন্য অধিকার দিয়েছে। এতদিন পর্যন্ত বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহে রাজ্য সরকারগুলিই সেই কর্তব্য পালন করে এসেছে। রাজ্যগুলির হাত থেকে দায়িত্ব কেড়ে নিয়ে এই কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলায় যে বিপর্যয় ঘটা অবধারিত ছিল তাই ঘটেছে।
আগাগোড়া ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থা ছাড়াও বিপর্যয়ের আরও অনেক কারণ রয়েছে। এনটিএ-এর মতো সংস্থার কাজ পরিচালনা করতে যে জরুরী পরিকাঠামো প্রয়োজনীয় ছিল, তার প্রায় কোনও ব্যবস্থাই তারা করেনি। ২৫ জনেরও কম স্থায়ী সদস্য নিয়ে সর্বমোট ২৫ টি জাতীয় স্তরের পরীক্ষা আয়োজনের দায়িত্ব এনটিএ-কে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের এক প্রাক্তন আধিকারিক এমন বন্দোবস্ত সম্পর্কে বলেছেন ‘ এই সংস্থাকে পেশাদার, মেদহীন, কাজ পরিচালনায় দক্ষ হিসাবে ধারণা করা হয়েছিল। দক্ষ এবং বিশ্বাসযোগ্য প্রযুক্তিগত সহায়ক সংস্থার সাথে কেবলমাত্র অনলাইন পরীক্ষা পরিচালনার উদ্দেশ্যেই যাবতীয় মনোযোগ দেওয়া হয়’। সংসদে কোনও সুনির্দিষ্ট আইন অনুযায়ী এই সংস্থাকে গঠন করা হয়নি। একে গড়ে তোলা হয়েছে প্রাইভেট সোসাইটি গঠন সংক্রান্ত আইনের অধীনে। তথাকথিত ‘পেশাদার, মেদহীন এবং দক্ষ সত্তার’ প্রতি বাড়তি মনোযোগের জন্য, নাকি জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার দায়কে অস্বীকার করার জন্যই এত বড় কেলেঙ্কারী ঘটেছে!
এনটিএ’র প্রধান কাজ কি কি? পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করা, সেই প্রশ্নপত্রের বণ্টন এবং কোয়ান্টাম পর্যায়ের তথ্যপ্রযুক্তির ভিত্তিতে গোটা ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত রাখা। তাদের হাতে যেটুকু লোকবল ছিল তার ভিত্তিতে এমন দায়িত্ব পালনে সাফল্য প্রায় অসম্ভব ছিল। এমন পরিস্থিতিতে তারা কি করেছিল? প্রায় সমস্ত বিষয়ে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে নিজেদের কাজকে আউটসোর্স করেছিল। জাতীয় স্তরের পরীক্ষায় সুরক্ষার প্রশ্নে বেসরকারী সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়ার পদক্ষেপই সম্ভবত দুর্নীতির অন্যতম একটি উৎস। আপাতত দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগের চাপে এনটিএ’র ডিরেক্টর জেনারেলকে বরখাস্ত করা হলেও প্রদীপ জৈন স্বমহিমাতেই আসীন রয়েছেন। যার সংস্থার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তাকেই তদন্ত কমিটির মাথায় বসিয়ে দেওয়ায় তদন্তের বিষয়টা যে আসলে কোন দিকে এগোবে, তা সহজেই অনুমেয়।
ডাক্তারি পড়াশোনায় কায়েমি রাজনীতি ও অর্থনীতি প্রসঙ্গে
শিক্ষাক্ষেত্রের এই নির্দিষ্ট পরিসরে যা চলছে তার অন্তর্নিহিত অর্থ উপলব্ধি করতে প্রাপ্ত তথ্যই যথেষ্ট ইঙ্গিত দেয়। এই ক্ষেত্রে সরকারের নীতি একটিই, আরও বেসরকারিকরণ, আরও বানিজ্যিকীকরণ। এই মুহূর্তে আমাদের দেশে মোট মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৭০৬ এবং মোট আসন ১০০৮৯০। এর মধ্যে ৩৮২ টি কলেজ সরকারি, এদের অধীনে রয়েছে মোট ৫২,৩২৫ টি আসন। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১১৮০ টি এবং ডিমড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১০,২০৫ টি আসন রয়েছে। বেসরকারি কলেজগুলির মোট আসন সংখ্যা ৪২,৩৫০।
শিক্ষার্থীদের পড়ার খরচের সাথে মোট ব্যয়ের যে কতটা ফারাক সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সেই তথ্যও পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে লাগে ২৩০০০ টাকা ও পড়ার জন্য মোট খরচ হয় ৩.৫ লক্ষ টাকা, অন্যান্যদের তুলনায় এই খরচ সবচেয়ে কম। রাজ্য সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলিতে ঐ একই খাতে প্রয়োজন হয় যথাক্রমে ৭৫০০০ ও ৬ লক্ষ টাকা। বেসরকারি কলেজে সেই খরচ কত? ভর্তি হতে ১২.৭৫ লক্ষ এবং পড়ার জন্য ৮০ লক্ষ টাকা। ডিমড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি ফি এবং খরচ দুটোই সবচেয়ে বেশি, ফি ২০ লক্ষ এবং পড়তে খরচ হয় ১.২ কোটি টাকা। এ থেকেই বেশ স্পষ্ট বোঝা যায় যে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলিতে ডাক্তারি পড়ার খরচের পরিমাণ অনেক কম এবং অনেক বেশি সাশ্রয়ী। প্রাইভেট মেডিকেল কলেজগুলির হাতে সারা দেশের মোট শিক্ষার্থীর ৪৮ শতাংশ আসন রয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক বেসরকারিকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণের যে মডেল তৈরি করা হয়েছে, সেই কারণেই দুর্নীতির মূল লক্ষ্য হল কিভাবে আরও বেশি করে ক খরচের সরকারি কলেজে ভর্তি করানো যায়। এই কারণেই এনটিএ’র মতো অতি কেন্দ্রীভূত বন্দোবস্তে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হলে ব্যাপক অর্থের লেনদেন মারফৎ যাবতীয় কারসাজি করার পথ সুগম হয়েছে। আর তাই সরকারী মেডিকেল কলেজে ভর্তি নিশ্চিত করার ব্যবসা এতটাই লাভজনক যে, এই কাজে এক বিশাল ব্যাপ্তির কোচিং বাণিজ্যের উদ্ভব ঘটেছে।
কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক দ্বারা গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি ২০১৫ সালের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, কোচিং ইনস্টিটিউটগুলির বার্ষিক আয় তখনই ছিল প্রায় ২৪০০০ কোটি টাকা। ভারতে কোচিং ব্যবসার আজকের অবস্থাটি ঠিক কোথায় পৌঁছেছে? বার্ষিক আয় প্রায় ৫৮,৮০৮ কোটি টাকা। ইনফিনিয়াম গ্লোবাল রিসার্চ হল পুনে ভিত্তিক একটি পরামর্শদাতা সংস্থা৷ তাদের প্রতিবেদন অনুসারে বলা যায় ২০২৮ সালের মধ্যে সেই আয় ১,৩৩,৯৯৫ কোটি টাকায় পৌঁছে যাবে। এধরণের কোচিং ব্যবসায় যুক্ত কর্পোরেট সংস্থাগুলির মুনাফার লোভই নিটের মতো পরীক্ষায় বিপুল অর্থের চোরা লেনদেনের আসল উৎস। আর একটি তালিকার দিকে নজর দেওয়া উচিত। এতে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর, কাট অফ নম্বর ও কাট অফ নম্বর পাওয়া ভর্তির যোগ্য মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার হিসাব রয়েছে-
সাল | কাট অফ নম্বর | কাট অফ নম্বর প্রাপ্তদের সংখ্যা |
২০২১ | ১৩৮ | ৮,৭০,০০০ |
২০২২ | ১১৭ | ১০,০০,০০০ |
২০২৩ | ১৩৭ | ১১,০০,০০০ |
২০২৪ | ১৬৪ | ১৩,১৬,২৬৮ |
বোঝাই যাচ্ছে ১,১০,০০০ আসনের জন্য কি হয়। এটা উপলব্ধি করতে কোনও রকেট সায়েন্স বুঝতে হয় না। চলতি বছরেই পাশ করানো হয়েছে ১৩,১৬,২৬৮ জন’কে। সহজেই অনুমেয় এই বিপুল প্রতিযোগিতার আবহে দুর্নীতি কিভাবে সক্রিয় হতে পারে। যে কোনও উপায়ে ভর্তি হওয়ার ব্যবস্থা করতে অসদুপায় অবলম্বনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। উপরের তথ্যের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে নিট-ইউজি পরীক্ষায় যা ঘটেছে তা হবারই ছিল।
নয়া শিক্ষানীতি’র তিন নীতি
নিট দুর্নীতির পরিপ্রেক্ষিতে, কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী বারংবার স্পষ্ট করেছেন যে সদ্য গঠিত এনডিএ সরকারের প্রথম একশো দিনের মধ্যেই আরও জোরালো আকারে নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি-২০২০ বাস্তবায়িত করা হবে। এর অর্থ কী বোঝা দরকার। নেপ ২০২০-র প্রসঙ্গে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়েছে। এই নীতির মূল কথা শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ, কেন্দ্রীকরণ এবং সাম্প্রদায়িকীকরণ। ঐ তিন নীতিকে বস্তুত শিক্ষা এবং শিক্ষার্থীদের আক্রমণের লক্ষ্যে পরিকল্পিত ত্রয়ী বলা যায়। সেই তিন নীতি কিভাবে কার্যকর হবে নিট-ইউজি পরীক্ষাই তার সবচেয়ে সুনির্দিষ্ট উদাহরণ হিসাবে সামনে এসেছে। কেন্দ্রীভূত পরীক্ষার বন্দোবস্ত ভর্তি প্রক্রিয়ায় ইতিমধ্যেই রাজ্যগুলির কাছ থেকে যাবতীয় অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তামিলনাড়ু সরকার প্রথম থেকেই নিট’র বিরোধিতা করে এসেছে। ভারতের বৈচিত্র্যময় বাস্তবতা ও নানা প্রান্তের নিজস্ব আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি অনুযায়ী এমন এক প্রক্রিয়া গ্রহন করা অত্যন্ত জরুরী, যা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে দুর্বল জনসাধারণের আকাঙ্ক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত পরিকল্পনা ঠিক এর উল্টো পথে চলেছে। জনসাধারণের দাবীসমূহকে এড়িয়ে গিয়েই দেশের প্রধানমন্ত্রী গর্বের সাথে ঘোষণা করছেন, তাঁর সরকার দেশের জনসাধারণের ধনী অংশের জন্য বিবিধ সুযোগগুলি সুরক্ষিত রাখতে চান। অতএব বলাই যায় এমন আবহে নিট-ইউজি পরীক্ষার কেলেঙ্কারি অনিবার্যই ছিল।
বিভিন্ন সুত্র থেকে ইতিমধ্যে জানা গেছে নিট প্রবেশিকা পরীক্ষায় এমন কিছু প্রশ্ন এসেছে যা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে করা হয়েছে। এই অবস্থার জন্য দায়ী সরকারের বিভিন্ন কাজকর্মে আরএসএস’র চিন্তাভাবনার অনুপ্রবেশ। এর প্রতিরোধে এক জরুরী আইনি বন্দোবস্ত একান্তই জরুরী, নিট-ইউজি পরীক্ষা সংক্রান্ত দুর্নীতি সেই বিতর্ককে সামনে এনে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি-২০২০’র জনবিরোধী চরিত্রকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে।
আগামী দিনের পথ
দেশজুড়ে ছাত্রছাত্রীদের কড়া প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এছাড়াও জনগণের এক বিরাট অংশই নিজেদের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। সর্বত্রই নিট পরীক্ষা বাতিলের দাবী উঠছে। দেশের স্বার্থে এই পরিস্থিতি কিছুটা হলেও স্বস্তিদায়ক। পরীক্ষা বাতিলের দাবীর সাথেই জরুরী হল, এনটিএ’র ব্যবস্থাকে বাতিল করা এবং কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ। এত বড় কেলেঙ্কারীর পরেও তিনি এই ব্যবস্থার পক্ষেই সোচ্চার সমর্থন জানাতে ব্যস্ত রয়েছেন।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াতেই প্রতিবাদ সীমিত না রেখে, কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতির মূল উপাদানগুলিকে খারিজ করার জন্য লড়াই চালানো প্রয়োজন। আজকের পরিস্থিতিতে ব্যাপক ও বিস্তৃত ছাত্র আন্দোলনের উদ্ভব লক্ষ্য করা যাচ্ছে যা সত্যিই আশাব্যাঞ্জক। নির্বাচনী ফলাফলে স্পষ্ট হয়েছে দেশের জনসাধারণ বিজেপি ও এনডিএ-কে কিছুটা পিছিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। তারা ধাক্কা খেয়েছে, তা সত্ত্বেও বিজেপি পুনরায় নিজেদের সংগঠিত করে আগের পরিকল্পনা মতোই এগোনোর ক্ষমতা ধরে রেখেছে। দেশের স্বার্থে তাদের সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন প্রতিহত করা যেতে পারে একমাত্র সরকারের জনবিরোধী নীতি বাতিলের লড়াইতে ব্যাপক অংশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেই।