১৫-১৭ মার্চ, কলকাতায় হতে চলেছে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র ২৬তম রাজ্য সম্মেলন। ব্রিটিশ শাসনে থাকা ভারতের অবিভক্ত বাংলায় কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম রাজ্য সম্মেলন হয় ১৯৩৪ সালে। মেটিয়াবুরুজে। সর্বহারা-কৃষক মেহনতি মানুষের স্বার্থে শ্রেণিসংগ্রাম, গণআন্দোলন পরিচালনায় এই রাজ্যে কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাস উজ্জ্বল। রয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর অনন্য নজির। মেটিয়াবুরুজ থেকে কলকাতা। প্রথম থেকে ২৬তম সম্মেলন। সেই ইতিহাসেরই গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য রাজ্য ওয়েবডেস্কের পক্ষ থেকে প্রকাশিত হল চারটি পর্বে। আজ চতুর্থ, তথা শেষ পর্ব।

২১তম রাজ্য সম্মেলন (৯-১২ ফেব্রুয়ারি, ২০০৫)
সম্মেলন আয়োজিত হয় কামারহাটি, নজরুল মঞ্চে। পার্টিতে নীতিভিত্তিক ঐক্যকে দৃঢ়তর করা, উন্নয়নের পথে শ্রেণি সংগ্রামের বিকাশ ঘটানো, পার্টির গুনগত মানের উন্নতিসাধন এবং শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে পার্টির গণভিত্তি প্রসারিত করার আহ্বান জানানো হয়। ‘বামফ্রন্ট সরকার ও আমাদের কাজ’ শীর্ষক দলিল প্রকাশিত হয়, এতে রাজ্য সরকার পরিচালনায় কর্মসূচি এবং শ্রেণি অভিমুখের ব্যখ্যা দেওয়া হয়। ৫জন প্রবীণ নেতৃত্বকে রাজ্য কমিটিতে আমন্ত্রিত সদস্য হিসাবে নির্বাচিত করে ৮৫ জনের রাজ্য কমিটি গঠিত হয়, রাজ্য সম্পাদক হিসাবে পুনর্নির্বাচিত হন অনিল বিশ্বাস।
২২তম রাজ্য সম্মেলন (১৩-১৭ জানুয়ারি, ২০০৮)

কলকাতার মহাজাতি সদনে কমরেড অনিল বিশ্বাস নগর ও কমরেড চিত্তব্রত মজুমদার মঞ্চে এই সম্মেলন আয়োজিত হয়। ২০০৬ সালে কমরেড অনিল বিশ্বাসের মৃত্যু হলে বিমান বসু রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব সামলান। এই সম্মেলন থেকে আহ্বান জানানো হয় শত্রুপক্ষের সমস্ত চক্রান্তকে পরাস্ত করে গোটা দেশের শ্রমজীবী জনগণের আন্দোলনে পথ দেখানোয় উপযুক্ত হয়ে উঠতে হবে। পার্টির অভ্যন্তরে নীতিনিষ্ঠ ঐক্য প্রতিস্থা করতে হবে, আন্তঃপার্টি গনতন্ত্রকে বিকশিত করতে হবে। পার্টিতে মতাদর্শগত মান বৃদ্ধি, পার্টির বিকাশের লক্ষ্যে সংখ্যা ও গুনের সমন্বয় ঘটাতে হবে। সম্মেলন থেকে বিমান বসু রাজ্য সম্পাদক হিসাবে পুনর্নির্বাচিত হন।
২৩তম রাজ্য সম্মেলন (১৫-১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১২)

সম্মেলন আয়োজিত হয় কলকাতায়, প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে। মতাদর্শগতভাবে আরও পুষ্ট হয়ে, সংগঠনকে নিস্ক্রিয়তামুক্ত করে ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধনের মাধ্যমে পার্টিকে পুনর্গঠিত করার আহ্বান জানানো হয়। সামাজিক জীবনে মানুষ অপছন্দ করেন এমন কাজ থেকে পার্টি কর্মীদের দূরে থাকার কথা বলা হয়। রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে গরীব মানুষের মধ্যে বিভাজন না করা, শহর-গ্রাম নির্বিশেষে গরীব মানুষের ঐক্য নির্মাণের ডাক দেওয়া হয়। ৮টি শুন্যপদ সহ ৮৩জনের নতুন রাজ্য কমিটি গঠিত হয়, রাজ্য কমিটিতে ১২ জন নতুন সদস্য নির্বাচিত হন। বিমান বসু রাজ্য সম্পাদক হিসাবে পুনর্নির্বাচিত হন।
২৪তম রাজ্য সম্মেলন (৮-১৩ মার্চ, ২০১৫)

কলকাতায়, প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে কমরেড সমর মুখার্জি নগর এবং কমরেড অমিতাভ বসু ও কমরেড শ্যামলী গুপ্ত মঞ্চে এই সম্মেলন আয়োজিত হয়। সম্মেলনের মূল আহ্বান ছিল ‘তৃণমূল হটাও রাজ্য বাঁচাও, বিজেপি হটাও দেশ বাঁচাও’। এছাড়াও আশু কর্মসূচি হিসাবে ‘স্বৈরতন্ত্র হটাও সাম্প্রদায়িকতা হটাও’, ‘দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারির অবসানের দাবীতে মুখরিত করুন পশ্চিমবাংলাকে’, ‘কৃষকদের সুরক্ষা দিতে হবে’, ‘চাই শিল্পায়ন, খুলতে হবে বন্ধ শিল্পসংস্থা’ এবং ‘ পৌর নিরবাচনের প্রস্তুতিতে সর্বশক্তি নিয়োগ কর’ স্লোগানসমুহ নির্ধারিত হয়। এই সম্মেলনে প্রতিনিধি, প্রবেশে বিশেষ অনুমতিপ্রাপ্ত এবং দর্শক হিসাবে মোট ৭৮৭ জন অংশগ্রহন করেন। ৩টি শুন্যপদ সহ ৮৫ জনের রাজ্য কমিটি গঠিত হয়, রাজ্য কমিটিতে ২৩ জন নতুন সদস্য নির্বাচিত হন। রাজ্য সম্পাদক নির্বাচিত হন সূর্যকান্ত মিশ্র।
২৫তম রাজ্য সম্মেলন (৫-৮ মার্চ, ২০১৮)

কলকাতায় প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে, কার্ল মার্কস মঞ্চ ও মহম্মদ আমিন নগরে এই সম্মেলন আয়োজিত হয়। কার্ল মার্কসের দ্বিশতজন্মবর্ষে মতাদর্শের সংগ্রামকে শানিত করো ও সংগঠনকে দৃঢ় করো, মোদী সরকারের অনুসৃত নয়া উদারবাদী আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামকে তীব্র করুন, তৃণমূল কংগ্রেসের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ও হিন্দুত্ববাদী শক্তির ফ্যাসিস্তসুলভ অভিযানের বিরুদ্ধে, কৃষিক্ষেত্রে ভয়াবহ সংকটের বিরুদ্ধে কৃষক ও খেতমজুরদের প্রতিরোধ – সংগ্রাম শক্তিশালী করো এবং শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্যের অবসান সহ ক্রমবর্ধমান বেকারির বিরুদ্ধে কর্মসংস্থানের দাবীতে ব্যাপক গণআন্দোলন গড়ে তোলার মত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রস্তাবে এই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়। একইসাথে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠনের শতবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষেও সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৩ জন দর্শক সহ মোট ৭৬৮ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে সম্মেলন আয়োজিত হয়েছিল। সম্মেলন থেকে ৮ জন বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য এবং ৮১ জনের রাজ্য কমিটি নির্বাচিত হয়, রাজ্য সম্পাদক হিসাবে পুনর্নির্বাচিত হন সূর্যকান্ত মিশ্র।
ছবিঃ সোশ্যাল মিডিয়া, গনশক্তি - লেখার সাথে সদৃশতা বজায় রেখে ছবি যুক্ত হয়েছে, সবক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ছবি পাওয়া যায় নি
তথ্যসুত্রঃ গনশক্তি

প্রথম পর্বের লিংকঃ মেটিয়াবুরুজ থেকে কলকাতা - সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্মেলন (১ম পর্ব)
দ্বিতীয় পর্বের লিংকঃ মেটিয়াবুরুজ থেকে কলকাতা - সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্মেলন (২য় পর্ব)
তৃতীয় পর্বের লিংকঃ মেটিয়াবুরুজ থেকে কলকাতা - সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্মেলন (৩য় পর্ব)
**************************************