মাষ্টার দা সূর্য সেন এর আত্মবলিদান দিবসে লেখক - সংগ্রাম চ্যাটার্জি ....
আক্ষরিক অর্থেই কখনও কখনও মৃত মানুষ হয়ে ওঠেন জীবিত মানুষের চেয়েও শক্তিশালী! তখনই তো হয় সমস্যা! আর এই সমস্যা হবে বলে ফাঁসি দেওয়ার আগেই হাতুড়ি দিয়ে নৃশংসভাবে পিটিয়ে দাঁত ও হাড় ভেঙে দেওয়া হয়! এখানেই শেষ না, এরপর উপড়ে ফেলা হয় তাঁদের হাতের নখও!! আর এই নৃশংস অত্যাচারের পর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে খুন করার পর তাঁদের মরদেহ যেন তাঁর সহযোদ্ধারা না দেখতে পান, এমনকি সেই মরদেহ যাতে পরাধীন ভারতবর্ষের মাটিও ছুঁতে না পারে— তার জন্য যা যা করার প্রয়োজন ছিল সেটাই করা হয়েছিল— অর্থাৎ, তাঁদের মৃতদেহ রাতের অন্ধকারে এক ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজে বয়ে নিয়ে বঙ্গোপসাগরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়। সেটাও ছিল এইরকমই এক ১২ জানুয়ারির রাত। সালটা ১৯৩৪।
আজ থেকে প্রায় ৮৬ বছর আগে ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি ব্রিটিশ শাসকরা আমাদের দেশের মুক্তির লড়াইয়ে দেশের অন্যতম দুই মহত্তম সন্তান— স্বাধীনতা সংগ্রামী মাস্টারদা সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের সাথে ঠিক এই আচরণই করেছিল।
মাস্টারদা সূর্য সেন।
চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের প্রধান সেনাপতি। আমার দেশের ইতিহাস লেখায় ঔপনিবেশিক-সাম্রাজ্যবাদী প্রভাব ১৮৫৭'র মহাবিদ্রোহকে 'সিপাহী বিদ্রোহ'র বাইরে অন্য কিছু ভাবতে নিষেধ করে! ঠিক অনেকটা যেমন স্বাধীনতা আন্দোলনের দ্বিতীয় ধারার সৈনিকদের আখ্যায়িত করা হয়েছে 'ব্যক্তি সন্ত্রাসবাদী' হিসেবে, তেমনি প্রায় একইভাবে ঐ ধারার অন্যতম প্রধান— মাস্টারদার নেতৃত্বে সংগঠিত চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহকে আখ্যা দেয় স্রেফ একটা অস্ত্রাগার 'লুন্ঠন' বলে!
মাস্টারদা সূর্য সেন।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, অনন্ত সিং, কল্পনা দত্ত (যোশী), অম্বিকা চক্রবর্তী, সুবোধ রায় থেকে শুরু করে গনেশ ঘোষের নেতা মাস্টারদা সূর্য সেন। এই যাঁদের নাম লিখলাম, এঁদের মধ্যে যাঁরা বেঁচে গিয়েছিলেন সেদিন— তাঁদের সবারই ঠিকানা হয়েছিল আন্দামানের সেলুলার জেল। আর ঐ জেল ফেরতদের এক বড় অংশই পরবর্তী সময়ে যুক্ত হন আমার দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে, কমিউনিস্ট পার্টিতে।
১২ জানুয়ারি, ১৯৩৪। মাস্টারদা'র আত্মবলিদান দিবস। আমার দেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ের টাইমলাইনে একটা গুরুত্বপূর্ণ মোটা দাগ।
শেয়ার করুন