নির্বাচন কমিশনে সিপিআই(এম)-এর চিঠি

২৭ জুন, ২০২৫

মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশন নির্বাচন সদন নয়াদিল্লি – ১১০০০১

মহাশয়, আমাদের কাছে গত ২৪ জুন, ২০২৫ তারিখে বিহারের উদ্দেশ্যে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের চিফ ইলেক্টোরাল অফিসারের থেকে একটি চিঠির কপি এসেছে, চিঠির নং-২৩/২০২৫-ইআরএস (ভলিউম ২)। ঐ চিঠি ‘বিশেষ সংশোধন’ (Special Intensive Revision) সংক্রান্ত।

নির্বাচনী তালিকা সংক্রান্ত পর্যালোচনা একটি নিয়মিত ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও ঐ প্রস্তাবগুলির মাধ্যমে নির্বাচনী তালিকা থেকে নাম অন্তর্ভুক্তি বা বর্জনের দায়িত্ব বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভোটারদের উপরই চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরই ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজিত হবে। নির্বাচনের একেবারে প্রাক্কালে একাজের ঘোষণা হচ্ছে যা উদ্বেগের বিষয়। কারণ বিহারে গত বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল অক্টোবর/নভেম্বর মাসে। কিছু নির্দিষ্ট কারণে আমরা এই পদ্ধতি ও প্রক্রিয়াকে আপত্তিকর মনে করছি:

১. নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল এমন কার্যক্রম শুরু করার আগে স্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে যথাযথ আলোচনাপূর্বক তাদের মতামত জানা। কিন্তু দেখা গেল কমিশন শুধুমাত্র একটি সভার আয়োজন করেই নিজেদের পরিকল্পনাকে কার্যকর হওয়ার ঘোষণা করেছে।

২. নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে এমন কর্মসূচি গ্রহণ করলে কাজের পরিবেশ নষ্ট হতে পারে, এতে ঝুঁকি রয়েছে। গোটা প্রক্রিয়াটি শেষ করার জন্য মাত্র এক মাস সময় নির্ধারন করা হয়েছে।

৩. ভোটার তালিকা থেকে কারও নাম বাদ দেওয়ার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিএলও’দের উপরই বর্তায়। ইতিমধ্যেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন এমন ভোটারদের উপর নিজেদেরকে বৈধ ভোটার প্রমাণ করার দায় চাপানো অনুচিত সিদ্ধান্ত।

৪. কোনও বিএলও কোনও বৈধ ভোটারকে এনুমারেশন ফর্ম সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে কিংবা কোনও ভোটার নিজে ঐ ফর্ম সংগ্রহের পদ্ধতি না জানলে তার নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। যে রাজ্যে সাধারণ সাক্ষরতার প্রসঙ্গে যথেষ্ট অভাব রয়েছে সেখানে ইন্টারনেট সংযোগ বা ইলেকট্রনিক-সাক্ষরতার অভাবের মধ্যে কিভাবে ভোটাররা সংশ্লিষ্ট ফর্ম ডাউনলোড বা আপলোড করবেন?

৫. ইতিমধ্যে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ভোটারদের জন্য নিজেদের ঠিকানার প্রমাণপত্র জমা দেওয়ায় জোর দেওয়া হয়েছে। এতে অকারণ হয়রানিই বাড়বে, অনেকের কাছেই প্রয়োজনীয় নথিপত্র নেই।

৬. অভিভাবকের প্রমাণপত্র দাবী করা হলে কাজের বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠবে।

৭. অনেক বৈধ ভোটারেরই নাম বাদ যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যারা সাময়িকভাবে অন্যত্র গেছেন কিংবা ঐ সময়ের মধ্যে নিজেদের রাজ্যে ফিরতে পারবেন না, যদিও তাঁদের নাম অন্য কোনও তালিকায় নেই।

৮. এই গোটা প্রক্রিয়াটি এনআরসি’র উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত প্রকল্পের মতোই। আমাদের আশঙ্কা যে এমন পদ্ধতি ব্যবহার করে কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণির ভোটারদের নিশানা করে তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হতে পারে।

আমাদের জানানো হয়েছে বিহারে নির্বাচন কমিশনের সিইও’র তরফে আয়োজিত ২৫ জুন, ২০২৫-এর বৈঠকে উপস্থিত বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই এ প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেছে এবং একে বাতিল করার দাবি জানিয়েছে।

শুধুমাত্র বিহারেই নয় নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী অন্যান্য আসন্ন নির্বাচনেও একই পদ্ধতি প্রয়োগ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে উদ্বেগ বাড়ছে।

আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে কাজের এমন প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করার আবেদন জানাচ্ছি।

ধন্যবাদ সহ,

নীলোৎপল বসু

(পলিটব্যুরো সদস্য)


শেয়ার করুন

উত্তর দিন