Communists Never Give Up
১৮৭১ এপ্রিল মাস। ঠান্ডার তীব্রতা কিছুটা কমছে লন্ডন শহরে। সন্ধ্যায় কুয়াশা ঢাকা শহর। লন্ডনের ব্রিটিশ লাইব্রেরি প্রায় ফাঁকা। একজন ভদ্রলোক এক মনে কিছু খবরের কাগজ ঘেঁটে চলছেন। কোনোটা ইংরেজি, কোনোটা ফরাসি, আবার কোনোটা জার্মান ভাষায় প্রকাশিত। সেগুলো আবার নিজের পকেট থেকে কিছু চিরকুট, চিঠিপত্র বের করে মেলাচ্ছেন। সেই সকাল ১০টায় এসে শেষ সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিদিন পড়ছেন আর লিখছেন। অথচ সাধারণভাবে এই সব সংবাদপত্রগুলো কোনো পাঠক লাইব্রেরিতে এসে দেখতে চায়না।এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে মে মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত একনাগাড়ে শুধু পড়েই চললেন ভদ্রলোক। তারপর ৬ থেকে ৩০মে, এই ২৫ দিন ধরে লিখলেন মাত্র ৩৫ পাতার একটা প্যামফ্লেট।
৩০শে মে, ১৮৭১। ২৫৬, হাই হলবোর্ন, ওয়েস্টার্ন সেন্ট্রাল, লন্ডন। এই তারিখ আর ঠিকানা দিয়ে লেখা ৩৫ পাতার এই প্যামফ্লেটটি ইংরেজি ভাষায় প্রথম প্রকাশিত হ'লো সেই বছরই, ১৩ জুন। মাত্র ১০০০কপি ছাপা হ'ওয়ার সাথে সাথে নিঃশেষ। আবার ২০০০ কপি ছাপা হ'লো। সেটাও শেষ। এরপর ফরাসি, জার্মান, রাশিয়ান, ডাচ, স্প্যানিশ, ফ্লেমিশ, ক্রোয়েশিয়ান, ড্যানিশ, পোলিশ সহ বহু ভাষায় অনুবাদিত হ'লো কয়েক বছরের মধ্যেই। পৃথিবীর বহু সংবাদপত্রেও প্রকাশিত হ'লো এই লেখাটি।
১৮৭৬সালে জার্মান সংস্করণ লেখক নিজেই অনুবাদ করেছিলেন কিছু সংশোধন করে। ১৮৯১ সালে লেখকের মৃত্যুর ৮বছর পরে এই লেখাটির ওপর ২৯ পাতার একটা ভূমিকা লিখে ১৮ই মার্চ লেখকের প্রিয় বন্ধু সহযোদ্ধা ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস এটি আবার প্রকাশ করেন। ২৯ পাতার ভূমিকা সহ ৩৫ পাতার এই লেখাটি রচনার ১৫০ বছর পরে আজও পৃথিবীর দেশে দেশে সমাজবিজ্ঞানী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ঐতিহাসিক এবং সমাজ বিপ্লবীদের কাছে একইভাবে আকর্ষণীয়।
আসলে এটা ঠিক লেখা নয়। এটা আসলে একটা বক্তৃতা বা বিবৃতি, যেটা কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের সাধারণ পরিষদের সামনে পেশ করেছিলেন কার্ল হাইনরিখ মার্কস। প্যারিস শহরে শ্রমিকদের ক্ষমতা দখলের লড়াই, প্রথম শ্রমিক শ্রেণীর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াই সম্পর্কে 'ফ্রান্সের গৃহযুদ্ধ' শীর্ষক এই লেখাটিই এখনও পর্যন্ত সবচাইতে বিশ্লেষণাত্মক।
১৮৭১ সালের ১৮ই মার্চ প্যারিস শহরের দখল নিয়েছিল সেখানকার শ্রমিকরা। ২৬শে মার্চ তারা নির্বাচন সংগঠিত করে। ২৮শে মার্চ গণভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে তৈরি করেছিল প্যারি কমিউন।
মার্কস এই লেখায় বলেছিলেন - "কমিউন ছিল প্রধানত শ্রমিক শ্রেণীর নিজস্ব সরকার। অপরের শ্রমফল আত্মসাৎ করে যারা ভোগ-দখল করছে তাদের বিরুদ্ধে উৎপাদক শ্রেণীর যে সংগ্রাম, এই কমিউন ছিল সেই সংগ্রামেরই ফল বিশেষ। যে রাজনৈতিক রূপে শ্রমিক শ্রেণীর আর্থিক মুক্তি সম্ভব হতে পারে, কমিউন ছিল অবশেষে আবিস্কৃত সেই রূপ"।
অর্থাৎ ১৮৪৮ সালে কমিউনিস্ট ইস্তেহারে মার্কস-এঙ্গেলস সমাজ পরিবর্তন করে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক সমাজ গঠনের যে উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন - প্যারিস কমিউন ছিল তার প্রথম হাতেকলমে প্রয়োগের পরীক্ষাগার।
এই কমিউন কি কাজ করেছিল?
মার্কসের ভাষায় বললে,
১) ”সংসদীয় সংস্থা না হয়ে কমিউনকে হতে হয়েছিল একটা কাজের সংস্থা, একই সাথে কার্যনির্বাহক এবং আইন প্রণয়নকারী সংস্থা। পুলিশকে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতিয়ার না রেখে তার রাজনৈতিক প্রকৃতির সমস্তটাকেই দ্রুত ঘুচিয়ে দিয়ে তাকে পরিণত করা হলো কমিউনের কাছে দায়বদ্ধ ও যে কোনও সময়ে প্রত্যাহারযোগ্য সংস্থা রূপে। প্রশাসনের অপর সকল শাখার ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কমিউনের সদস্যগণ থেকে শুরু করে ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত সরকারি কাজে নিযুক্ত সবারই মজুরি নির্ধারিত হ'লো শ্রমজীবী মানুষের মজুরির সমান। রাষ্ট্রের বড় বড় হোমরাচোমরাদের বিলুপ্তির সাথে সাথে তাদের বিশেষ সুবিধা, ভাতা ইত্যাদি বিলোপ করা হলো।...... রাষ্ট্র কতৃক সমস্ত উদ্যোগই অর্পিত হ'লো কমিউনের হাতে।”
২) ”পূর্বতন সরকারের বাহুবলের হাতিয়ার স্থায়ী সৈন্য ও পুলিশ বাহিনীর কবল থেকে উদ্ধার পাবার পর স্বত্বাধিকারী সংস্থা হিসাবে সমস্ত গির্জার সাথে সরকারি সম্বন্ধ শেষ করে ও তাদের স্বত্ব নাকচ করে কমিউন চাইল দমনের আধ্যাত্মিক বল, 'ধর্ম যাজকদের শক্তি'কে চূর্ণ করতে। ধর্মপ্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের সর্ববিধ হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত ক'রে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দ্বার জনগণের অবৈতনিক শিক্ষালাভের জন্য মুক্ত করে দেওয়া হ'লো। এর ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষা সকলের আয়ত্বে এল শুধু তাই নয়, শ্রেণীগত কুসংস্কার ও সরকারি শক্তি আরোপিত শৃঙ্খল থেকে বন্ধনমুক্ত হয়ে উঠলো বিজ্ঞান।”
৩) ”একের পর এক ক্ষমতাসীন সরকারের নিকট উচ্চারিত এবং যথারীতি লঙ্ঘিত আনুগত্যের শপথ গ্রহণে অভ্যস্ত বিচার- বিভাগীয় কর্মচারীরা সেইসব সরকারের কাছেই নিজেদের নির্লজ্জ দাসত্বটাকে আড়াল করে রাখার মুখোশ হিসাবে যা ব্যবহার করত, সেই মেকি স্বাধীনতা থেকে তাদের বঞ্চিত করা হ'লো। সমাজের অন্যান্য কর্মচারীদের মতোই ম্যাজিস্ট্রেট ও জজেরাও হ'য়ে উঠলো প্রকাশ্যে নির্বাচিত, দায়িত্বশীল এবং প্রত্যাহার যোগ্য (recall)।”
৪) ”কমিউনের একটা প্রাথমিক খসড়ায় স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হ'লো যে, ক্ষুদ্রতম একটা পল্লীগ্রামেরও রাজনৈতিক শাসনের রূপ হবে কমিউন আর গ্রামাঞ্চলে স্থায়ী সেনাবাহিনীর বদলে গড়ে তুলতে হবে অত্যন্ত স্বল্পমেয়াদী একটা গণমিলিশিয়া।.... প্রত্যেক প্রতিনিধিকে যে কোনও সময়ে ফিরিয়ে নেওয়া যাবে, প্রত্যেকে বাধ্য থাকবে নিজ নিজ নির্বাচকদের অবশ্য পালনীয় নির্দেশ পালন করতে।"
বুর্জোয়া গণতন্ত্রে যারা নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়, তাদের আইন প্রণয়নের অধিকার থাকে, কিন্তু তা প্রয়োগের দায়বদ্ধতা থাকে না। যারা প্রয়োগ করে, তারা নির্বাচিত হয়না। তাই তারা মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার পরিচয় না দিয়েও বছরের পর বছর প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে থেকে যান। আবার যারা বিচার করে, তাদেরও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকেনা, কারণ জনগণ তাদের নিয়োগকর্তা নয়, তাদের পছন্দমতো নিয়োগ।
এই জন্যই প্যারিস কমিউন নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে মার্কস সঠিকভাবেই বুর্জোয়া গণতন্ত্রের এই ফাঁকিবাজি উল্লেখ করে বলেছিলেন - "বুর্জোয়া গণতন্ত্রের এই সারবস্তু যা আসলে বুর্জোয়া একনায়কত্বকে টিকিয়ে রাখতে, এবং বুর্জোয়া ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারকে রক্ষা করতে উপযুক্ত ছিল, কমিউন তাকে অস্বীকার ক'রে শাসন যন্ত্রের পুরোটাকে শুধু জনগণের দ্বারা নির্বাচিত করার আওতায় এনেই সীমাবদ্ধ থাকলো না, উপরন্তু জনগণের হাতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ফিরিয়ে আনার অধিকারও তুলে দিয়েছিল, যা ইতিহাসের এক অভূতপূর্ব ব্যাপার। বস্তুত সর্বহারার শ্রেণীর একনায়কত্ব এই প্রথম মূর্ত রূপ পেয়েছিল"।
এই কমিউনের রক্তাক্ত পতন ঘটে ১৮৭১ সালের ২৮মে, মাত্র ৭২ দিনের মাথায়। প্রতিবিপ্লবী বুর্জোয়াদের ভার্সাই সরকারের প্রধান এডলফ তিঁয়ের প্রুশীয় বাহিনীর (জার্মানি) সাহায্যে প্যারিস আক্রমণ করে। ১ সপ্তাহ ধরে গড়ে ওঠা কমিউনার্ডদের টানা প্রতিরোধের পরিসমাপ্তি ঘটে ২৮শে মে। ৬৬৬৭ জন কমিউনার্ডদের কবরের হিসাব পাওয়া গেলেও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে বলা হয় প্রায় ২০হাজার কমিউনার্ড ও প্যারিস বাসীর রক্তে ভেসেছিল প্যারিস শহর ২৫-৩০ শে মে, বুর্জোয়া এডলফ তিঁয়ের বাহিনীর আক্রমণে।
যে বুর্জোয়ারা অভিযোগ তুলেছিল প্যারিসের কমিউনার্ডরা নাকি ৮৭৭ জনকে হত্যা করেছিল, তাই এদের হিংস্র বর্বর বলে প্রচার করা হয়েছিল তৎকালীন সব বুর্জোয়াদের পরিচালিত সংবাদপত্রে। আর ২০হাজার নাগরিক যাদের বড় অংশই ছিল নিরস্ত্র, তাদের ৭দিনে খুন করে নাকি শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল বুর্জোয়ারা - এই ছিল তৎকালীন ফ্রান্সের সবচাইতে বড় বুর্জোয়া সংবাদপত্র দৈনিক ফিগেরো পত্রিকার মালিক ও সম্পাদক পিয়ের রোশেলের লেখা ৩০ শে মে, ১৮৭১ এ সম্পাদকীয়র দাবী। বুর্জোয়াদের যুক্তি - ২০হাজার মানুষ খুন নাকি শান্তির জন্য!!
পাঠক কোনো মিল কি খুঁজে পাচ্ছেন আজকের সময়ের সাথে!
মাত্র ৭২ দিনের শ্রমিকদের পরিচালিত এই রাষ্ট্র সম্পর্কে মার্কস তাঁর বিশেষ বন্ধু ক্যুগেলম্যানকে ১৮৭১ সালের ১৭ ই এপ্রিল একটি চিঠিতে লিখেছিলেন - "প্যারি কমিউনের কল্যানে পুঁজিপতি শ্রেণী এবং তার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণীর সংগ্রাম এক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। এর প্রত্যক্ষ পরিণাম যাই হোক না কেন, বিশ্বে ঐতিহাসিক গুরুত্বের একটা নতুন যাত্রা বিন্দু তো লাভ করা গেল।"পরাজয়কে কি ভাবে দেখে মার্কসবাদীরা? একটা পরাজয় যে পরবর্তী জয়ের সূচনা করে এই কথাই মার্কস বারবার উল্লেখ করেছেন। ১৮৭১ সালে আন্তর্জাতিক এর ২৩শে মে সাধারণ পরিষদের সভায় মার্কসের বক্তব্য রূপে যা কার্যবিবরণীতে উল্লিখিত হয়েছিল - 'প্যারিসের সংগ্রাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে তাঁর আশঙ্কা অন্তিমক্ষণটি সমাসন্ন, কিন্তু কমিউন যদি পরাস্ত হয়ও, সংগ্রাম তাতে পিছিয়ে পরবে মাত্র। কমিউনের নীতিগুলো চিরন্তন, সেগুলিকে চূর্ণ করা যাবে না; শ্রমজীবী শ্রেণীগুলি যতদিন মুক্ত না হচ্ছে, ততদিন সেগুলো বারবার ফিরে আসবে'।
মার্কসেরই শিক্ষা, একটা পরাজয় মানে সংগ্রাম পিছিয়ে পড়ে, কিন্তু শেষ হয় না - যা আজও একইভাবেই প্রাসঙ্গিক। প্যারিস কমিউনের সময়েও বুর্জোয়া সংবাদপত্র সম্পর্কে মার্কসের বক্তব্য অনুধাবন যোগ্য আজকের প্রেক্ষাপটেও।
আন্তর্জাতিকের সাধারণ সভার ৬ই জুন, ১৮৭১ এর কার্যবিবরণীতে মার্কসের যে বক্তব্য নথিভুক্ত হয়েছিল - 'আরেকটি বিষয় সম্পর্কে তিনি পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান; তা হ'লো কমিউন সম্পর্কে ইংরেজি সংবাদপত্রে প্রচারিত জঘন্য মিথ্যা। এগুলো হ'লো ফরাসী ও প্রুশীয় পুলিশের বানানো সব মিথ্যা কথা। তাদের ভয় ছিল পাছে সত্যি কথা প্রকাশিত হয়ে পড়ে। দাবি করা হয়েছিল যে মিলিয়ের (প্যারিসের নির্বাচিত প্রতিনিধি) ছিলেন কমিউনের হিংস্রতম সদস্যদের একজন। অথচ এটা ঘটনা যে তিনি কখনোই কমিউনের সদস্য ছিলেন না, কিন্তু তিনি প্যারিসের প্রতিনিধি ছিলেন বলে তাকে গুলি করে মারার একটা অজুহাত পাওয়া দরকার ছিল। ইংরেজি সংবাদপত্রগুলি তিঁয়েরের চৌকিদার ও শিকারী কুকুর হিসাবে কাজ করলো।
সেই সময়ে The Times, London, The Standard, The Daily News, The Paris-Journal, Daily Figero, La Verite ইত্যাদি পত্রিকায় প্রকাশিত প্যারিস কমিউন সম্পর্কে কুৎসা প্রচার নিয়ে আন্তর্জাতিকের সাধারণ পরিষদ, অনেকগুলো চিঠি এইসব সংবাদপত্রের সম্পাদককে পাঠায়, যার বেশিরভাগই ছাপা হয়নি।
বুর্জোয়া সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা ১৫০ বছর আগে যা ছিল এখনও একই আছে। এখনও তারা শাসকশ্রেণীর পাহারাদার ও প্রভুভক্ত শিকারী কুকুরের ভূমিকাই পালন করে চলেছে।
আজ থেকে ২০৩ বছর আগে আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কার্ল হাইনরিখ মার্কস। আজ থেকে ১৫০ বছর আগে প্যারিস কমিউন যখন সংগঠিত হয় তখন মার্কসের বয়স ছিল ৫৩ বছর।
প্যারিস কমিউনের রক্তাক্ত পরিসমাপ্তি দেখে মার্কস বা এঙ্গেলস ভেঙে দুমড়ে মুচড়ে যান নি। ২০হাজার কমিউনার্ডদের নির্বিচারে হত্যালীলা দেখে ভয়ে শিউরে উঠে বিপ্লবী পার্টি গড়ে তোলার কাজ বন্ধ রাখেন নি। বরং দ্বিগুণ উৎসাহে ব্যর্থতার সঠিক কারণ নির্ণয় করতে এবং তার থেকে প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করতেই উৎসাহিত করেছিলেন কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের সংগঠকদের।
প্যারিস কমিউন ভেঙে পড়ার কারণ মার্কস ব্যাখ্যা করেছিলেন ঐ ৩৫ পাতার 'ফ্রান্সের গৃহযুদ্ধ' শীর্ষক বক্তৃতা বা বিবৃতিটিতে। সেই সব আলোচনা করার সুযোগ নেই স্বল্প পরিসরে ও অন্য পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে রচিত এই প্রবন্ধে।
৭২ দিনের মাথায় রক্তস্নাত পতনের পরেও তিনি ইতিহাসের বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণে বুঝেছিলেন - প্যারিস কমিউনের পতন বড় কথা নয়, এটা আগামীর ভবিষ্যৎ রচনার সূচনা।
তীব্র আক্রমণ, রক্তাক্ত প্যারিসবাসী, ২০হাজার মানুষের লাশ, অবশেষে পরাজয়ের মাঝেও আগামীর ভবিষ্যৎ রচনার শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন মার্কস। তাই এর ৪৬ বছর পরে রাশিয়ায় সফল বিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল লেনিনের নেতৃত্বে। ১৮৭১ সালের পরাজয়ে যদি বিমর্ষ হয়ে বিপ্লবী কর্মকান্ডে ইতি টানতেন মার্কস-এঙ্গেলস বা নানা দেশের কমিউনিস্টরা, তাহলে ১৯১৭ রাশিয়া, ১৯৪৫ ভিয়েতনাম, ১৯৪৯ চিন, ১৯৫৯ কিউবার সমাজবিপ্লব সংগঠিত করতে পারতোনা কমিউনিস্টরা। তাই তো মার্কসের শিক্ষাগ্রহণের প্রক্রিয়াটাই অনন্য ও শিক্ষনীয়। মার্কসের এই শিক্ষার কথাই বারবার বলতেন কমরেড জ্যোতি বসু - We Communists never give up.
এই শিক্ষা আয়ত্ত করতে পারলে তবেই তাঁর ২০৪ তম জন্মদিবসে আমরা যথার্থ শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করতে পারবো।