কোভিড-১৯ অতিমারির কারনে দেশজূড়ে অভূতপূর্ব পরিস্থিতি বিবেচনা করে ২২ টি সমমনোভাবাপন্ন দল একসাথে আলোচনায় বসে। দেশের অর্থনীতি ধসে পড়েছে। সমাজের সকল অংশের মানুষকেই চরম দুর্দশার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। জীবিকার উপায়গুলি ধ্বংস হয়ে গেছে। মানুষ প্রান হারিয়েছেন।
সারা দেশে বর্তমান পরিস্থিতে স্বাস্থ্যপরিষেবায় যুক্ত চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিক এবং সুরক্ষা ক্ষেত্রে কর্মরত ব্যাক্তিরা, সাফাইয়ের কাজে যুক্ত কর্মচারী সকলের কাজকে সম্মান জানিয়ে প্রতি এই আলোচনায় অংশ নেওয়া সবাই দুহাত তুলে অভিনন্দন জানিয়েছেন। একইসাথে এই কঠিন সময়ে অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা যেমন পানীয় জল সরবরাহ, বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজের সাথে যুক্তদের প্রতিও অভিবাদন জানানো হয়। এই সমস্ত ক্ষেত্রে যুক্ত মানুষজন অসাধারন উদ্দীপনা এবং কর্তব্যপালনের উদাহরণ তৈরি করেছেন। নিজেদের জীবনকে গুরুতর বিপদের সামনে রেখেও কর্তব্যপরায়ণতার যে নিষ্ঠা তারা দেখিয়েছেন তার প্রতি আমরা সকলেই বিনম্র ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বর্তমান সংকটের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন থেকেই সমমনোভাবাপন্ন দলগুলি বরাবরের মতো ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি নিজেদের তরফে সম্পূর্ণ সহযোগিতার মনোভাব দেখিয়েছে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হল এই সময়কালে কেন্দ্রীয় সরকার সময়োচিত, কার্যকরী এবং সংবেদনশীল পদক্ষেপ গ্রহণের দায়িত্ব পালনে ব্যার্থ হয়েছে। ছোট এবং মাঝারি বিভিন্ন ব্যাবসা-বাণিজ্য ক্ষেত্রে কর্মরত শ্রমিক, কর্মচারী, পরিযায়ী মজদুর, ক্ষেতমজুর, কৃষিজীবীদের দুর্দশার অবসান ঘটাতে সরকারের তরফ থেকে মুখে যত বড় ঘোষণাই করা হোক না কেন কার্যত সেইসবের কোন সুফলই মানুষের কাছে পৌঁছায় নি। কার্যত এই সময়ে সংবিধান স্বীকৃত যুক্তরাষ্ট্রীয় গনতন্ত্রের যাবতীয় অধিকারসমুহের থেকে রাজ্যগুলীকে বঞ্ছিত করেছে এবং নিজের হাতে একচেটিয়া মনোভাব দেখিয়ে প্রভুত ক্ষমতার কেন্দ্রিকরন করেছে ।
সমমনোভাবাপন্ন সব দলগুলিই মনে করে এই সময়ে সরকারের তরফে নিজেদের ঢাক পেটানো অথবা কোনোরকম একনায়কোচিত মনোভাবের প্রদর্শন করা উচিত নয়। এই সময় সবাইকে সাথে নিয়ে এক বিরাট কর্মযজ্ঞের প্রয়োজন। দেশের জনগণের স্বার্থে সেই সম্মিলিত কর্মযজ্ঞেরই একান্ত প্রয়োজন, বারে বারে তারা সেই দাবীই জানিয়েছেন। এখন কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত সকল রাজনৈতিক দলগুলির সাথে কথা বলার, আলোচনায় তাদের মতামত এবং পরামর্শ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে সংসদীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে (যেমন বিভিন্ন স্ট্যান্ডিং কমিটি) সক্রিয় করে অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলীকে মানুষের সাহায্যে কার্যকরী করে তোলা।
কেন্দ্রীয় সরকারের বিপরীতে সকল রাজনৈতিক দলগুলি একসাথে সারা দেশের জনগণের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। সরকারের সামনে নিম্নলিখিত দাবিসনদ পেশ করা হচ্ছে সেইসব দলের পক্ষ থেকেঃ
১. আয়করের পরিসরের বাইরে থাকা সকল পরিবারের কাছে সরকারের তরফে আগামী ছয় মাসের জন্য প্রতি মাসে ৭৫০০টাকা নগদ পৌঁছে দিতে হবে। প্রথম মাসে ১০,০০০ টাকা এখনি দিতে হবে এবং বকেয়া অর্থ প্রতি মাসে সমান ভাগে আগামী পাঁচ মাস ব্যাপি সময়ে পৌঁছাতে হবে।
২. অভাবগ্রস্থ, অতি দরিদ্র মানুষদের জন্য প্রতি মাসে ১০ কেজি খাদ্যশস্যের ব্যাবস্থা করতে হবে, এই ব্যাবস্থাকে কার্যকরী করতে হবে আগামী ছয় মাস অবধি। এমএনরেগা প্রকল্পের কাজের দিন সংখ্যা বাড়িয়ে ২০০ দিন করতে হবে এবং এই কাজে সংশ্লিষ্ট তহবিলের প্রয়োজনীয় আয়োজন করতে হবে।
৩. সকল পরিযায়ী মুজদুরদের জন্য বিনামুল্যে পরিবহনের ব্যাবস্থা করতে হবে যাতে তারা নিজেদের ঘরে ফিরতে পারেন। পড়াশোনা অথবা অন্যান্য কারনে বাইরে গিয়ে আটকে পড়া ছাত্রছাত্রী এবং অন্যান্যদের নিজেদের ঘরে ফেরানোর ব্যাবস্থা করতে হবে অবিলম্বে।
৪. কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে যথাযথ এবং নির্ভুল তথ্য প্রকাশ করে সরাসরি জনগণের মধ্যে ব্যাপক হারে সংক্রমনের নিশ্চায়ক পরীক্ষার ব্যাবস্থা করতে হবে। এই কাজে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
৫. শ্রম আইন সম্পর্কিত যাবতীয় একতরফা সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।
৬. রবি শস্যের চাষ সংক্রান্ত ব্যাবস্থাকে সুনিশ্চিত করে এমএসপি’গুলীকে সক্রিয় রেখে যথাযথ সহায়তার ব্যাবস্থা করতে হবে যাতে উৎপাদিত ফসল সঠিক সময়ে বাজারে পৌঁছাতে পারে। এই মুহূর্তে অতি অবশ্যই সরকারের তরফে চাষের বিজ, সার ইত্যাদির আয়োজন করে কৃষিজীবীদের হাতে তুলে দিতে হবে যাতে তারা খরিফ শস্যের কাজ করতে পারেন।
৭. অতিমারির মোকাবিলায় সামনের সারিতে থেকে লড়াই করা রাজ্যসরকারগুলীর জন্য যথেষ্ট আর্থিক সাহায্যের ব্যাবস্থা করতে হবে।
৮. সরকারের তরফে স্পষ্ট বার্তা ঘোষণা করতে হবে। লকডাউন প্রত্যাহার করার ক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনা (যদি সেরকম কিছু আদৌ থাকে) জানাতে হবে সবাইকে।
৯. অবিলম্বে যাবতীয় সংসদীয় কার্যক্রমকে সঠিক ক্ষমতায় পুনঃসক্রিয় করতে হবে।
১০. নিজেদের প্রচার বন্ধ করে এখনি দেশজূড়ে দারিদ্র দূরীকরণে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে স্পষ্ট এবং অর্থবহ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। জনমানসে ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক ঘোষণা সম্পর্কে যথেষ্ট ভুল ধারণা ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা দাবী করছি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চাহিদার কার্যকরী উৎক্রমন ঘটাতে সরকারের তরফে যথাযথ কোষাগারীয় সহায়তা প্যাকেজের ঘোষণা করা হোক।
১১. আন্তর্জাতিক এবং অন্তর্দেশীয় বিমান পরিষেবার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলীর সাথে আইনানুগ পরিসীমার কথা মাথায় রেখেই আলোচনা স্বাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক।
শেয়ার করুন