শান্তনু দে
১। ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সংঘর্ষের তাৎক্ষণিক পরিণতি হলো ইজরায়েল-প্যালেস্তাইনের মধ্যে সম্পর্ক ‘স্বভাবিক’ করার ওয়াশিংটনের শীতল স্বপ্ন অচিরেই অদৃশ্য হয়ে যাবে, যদি এটি দীর্ঘ যুদ্ধে পরিণত হয়।
২। শুধু সদ্য-সম্প্রসারিত ব্রিকস-একাদশের অভ্যন্তরেই নয়, প্রকৃতপক্ষে আরব বিশ্বের বৃহৎ অংশ ইতিমধ্যেই ইরানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে।
৩। সাতটি আরব দেশের সঙ্গে প্যালেস্তাইন-ও সম্প্রতি ব্রিকসে যোগ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে। সাতটি দেশ হলো: আলজেরিয়া, মিশর, সৌদি আরব, আরব আমিরশাহি, বাহারিন, কুয়েত এবং মরক্কো। আগস্টে জোহানেসবার্গে ব্রিকসের বৈঠক থেকে মিশর, ইথিওপিয়া, ইরান, আর্জেন্টিনা, আরব আমিরশাহি ও সৌদি আরবকে পূর্ণ সদস্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
৪। সিরিয়াতে অস্থিরতা তৈরিতে চরম ব্যর্থ ওয়াশিংটন।
৫। প্রজেক্ট-ইউক্রেন নিভন্ত। মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের চাই নতুন যুদ্ধ। শান্তিপূর্ণ পশ্চিম এশিয়া মানে সিরিয়াতে পুনর্নির্মাণ, ইরাক আর লেবাননে নতুন করে উন্নয়ন। রাশিয়া-চীনের স্ট্রাটেজিক অংশীদারিত্বকে মধ্যপ্রাচ্যের সকলেই দেখছে শ্রদ্ধার চোখে। বাড়ছে ডলার-বিমুখতা।
৬। ব্রিকসে আলোচনার কেন্দ্রে ডি-ডলারাইজেশন। মার্কিন ডলারের আধিপত্য কাটিয়ে ভিন্ন মুদ্রায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালনা। বিকল্প হিসেবে ব্রিকসে অভিন্ন মুদ্রার ভাবনা।
৭। একটি বহুমুখী বিশ্ব গঠনের লক্ষ্যে– ব্রিকস একাদশ সাঙহাই কর্পোরেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও), ইউরেশিয়ান ইকনমিক ইউনিয়ন (ইএইইউ) এবং চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিসিয়েটিভ (বিআরআই)-সহ ইউরেশিয়া এবং গ্লোবাল সাউথের অন্যান্য প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠানগুলিতে— সম্মিলিতভাবে শাস্তি দিতে অনুরাগী জাতি-কেন্দ্রিক, বর্ণবাদী রাষ্ট্রের কোনও স্থান নেই।
৮। এবছরই, ইথিওপিয়াতে আফ্রিকান ইউনিয়নের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি ইজরায়েলকে। কোনওভাবে ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত প্রবেশের চেষ্টা করলে, তাঁকে সরাসরি মূল হল থেকে বের করে দেওয়া হয়, যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
৯। গতমাসে রাষ্ট্রসঙ্ঘের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ইরানের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম রাইসির ভাষণ ব্যহত করার চেষ্টা করেছিলেন মাত্র একজন, একা এক ইজরায়েলি কূটনীতিক। এমনকি পশ্চিমের কোনও মিত্রও তাঁর পাশে দাঁড়াননি। তাঁকে বের করে দেওয়া হয়।
১০। প্যালেস্তাইনে মানবিক সাহায্য পাঠাবে চীন। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মাধ্যমে তারা এই সাহায্য পাঠাতে চায়। চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং ২০২২ সালের ডিসেম্বরে স্পষ্টভাবে বলেছেন, বেজিঙ ‘একটি স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে, যা ১৯৬৭ সালে সীমানার উপর ভিত্তি করে হবে এবং পূর্ব জেরুজালেম এর রাজধানী হিসাবে পূর্ণ সার্বভৌমত্ব উপভোগ করবে। চীন রাষ্ট্রসঙ্ঘের পূর্ণ সদস্য হওয়ার জন্য প্যালেস্তাইনকে সমর্থন করে।
১১। তেহরানের লক্ষ্য আরও বড়– লেভান্ত থেকে পারস্য উপসাগর পর্যন্ত পশ্চিম এশিয়ার প্রতিরোধ আন্দোলনকে স্ট্র্যাটেজিক পরামর্শ দেওয়া: হিজবুল্লাহ, আনসারুল্লাহ, হাশদ আল-শাবি, কাতাইব হিজবুল্লাহ, হামাস, প্যালেস্তিনীয় ইসলামিক জিহাদ-সহ অগণিত অন্যান্য। যেন তারা সবাই ‘গ্র্যান্ডমাস্টার’ ইরানের তত্ত্বাবধানে নতুন গ্র্যান্ড চেসবোর্ডের অংশ।
১২। এই অঞ্চলের অন্যত্র, পাঁচ সাগর– কাস্পিয়ান, কৃষ্ণ সাগর, লোহিত সাগর, পারস্য উপসাগর এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগর বরাবর কৌশলগত করিডোর তৈরির অতলান্তবাদীদের (পশ্চিম ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের সওয়ালকারীরা) লক্ষ্য একেবারে বিপর্যস্ত। ১৩। রাশিয়া এবং ইরান ইতিমধ্যেই কাস্পিয়ানে মার্কিন নকশা ভেঙে ফেলছে– ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্টেশন করিডোর (আইএনএসটিসি)-এর মাধ্যমে– আর কৃষ্ণসাগর, এখন একটি রুশ হ্রদ হওয়ার অপেক্ষায়। ইউক্রেনে মস্কোর স্ট্র্যাটেজির ওপর নিবিড় নজর রাখছে তেহেরান। ১৪। রাশিয়া, চীন, ইরানের সম্পর্ক এখন পশ্চিমের নব্য রক্ষণশীলদের কাছে নতুন ‘শয়তানের অক্ষ’।