ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (দ্বিতীয় পর্ব)
প্রকৃতপক্ষে জন্মলগ্নে আরএসএস কিন্তু একেবারে উচ্চবর্ণের মনুবাদী সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী, ব্রাহ্মণ্যবাদীদের ধারার জাতপাত, বর্ণভিত্তিক মানসিকতায় বিশ্বাসী লোকদের দ্বারাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে ব্রাহ্মন্যবাদের সঙ্গে যে শরীরচর্চা ,অস্ত্র চর্চা ইত্যাদি ক্ষত্রিয় ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই- সেই বিষয়টিকে কিন্তু জন্ম লগ্নে আরএসএস নেতৃত্ব তাদের মস্তিষ্কপ্রসূত ব্রাহ্মণ্যবাদী চিন্তা চেতনার মূল উপাদানে জায়গা দেয়নি ।
ক্ষত্রিয় ধর্মের মূল বৈশিষ্ট্য-- শরীরচর্চা ,অস্ত্র চর্চা র মতো বিষয় গুলিকে মুসলমান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবহারের উদ্দেশ্য নিয়েই জন্মলগ্ন থেকে সেগুলো নিজেদের ভেতর আত্মস্থ করার চেষ্টা করেছে আরএসএস। এই গুলিকেই আরএসএসের মূল উপাদান হিশেবে সংঘ নেতৃত্তের মধ্যে প্রধানত সংক্রমিত করেছিলেন হেডগেওয়ার। সঙ্ঘীয় পরিভাষা অনুযায়ী যাদেরকে তিনি' হিন্দু' বলতে অভ্যস্ত ছিলেন, অর্থাৎ; যারা ভারতের বহুত্ববাদী পরম্পরায় বিশ্বাসকরেনা ,সমন্বয়বাদী চেতনায় আস্থাবান নয়-- সেই সমস্ত 'হিন্দু'দের রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত করবার লক্ষ্যেই ,তাদের ভিতর বর্ণবাদী সংস্কৃতিতে পরিচালিত করে, ব্রাহ্মণ্যবাদী ভাবধারার ভিতরেই ক্ষত্রিয়দের যে প্রচলিত অভ্যাস-- শরীরচর্চা এবং অস্ত্র চর্চা ,এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দান করেছিলেন হেডগেওয়ার।
শরীরচর্চা এবং অস্ত্রচর্চার বিষয়টিকে কিন্তু সমসাময়িককালের মহারাষ্ট্রে সশস্ত্র বিপ্লববাদী চিন্তা-চেতনায় বিশ্বাসী তরুণ প্রজন্ম, যাঁরা অনেকাংশে স্বামী বিবেকানন্দের ভাবধারার দ্বারা পরিচালিত, পরিব্যাপ্ত হতেন, তাঁরা সেই শরীরচর্চা, অস্ত্র চর্চার বিষয়টিকে প্রধানত পরিচালিত করতেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে ভারতবর্ষ থেকে বিতাড়িত করবার উদ্দেশ্যে। এমন কোনো উদ্দেশ্য কিন্তু আরএসএসের জন্ম লগ্নে ছিল না। পরবর্তীকালেও ছিলনা।
সশস্ত্র বিপ্লবীদের ব্রিটিশদের এদেশ থেকে তাড়ানোর উদ্দেশ্যে শরীরচর্চা ,অস্ত্র চর্চার ধারাটিকে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আরএসএস পরিচালিত করেছিল ব্রিটিশদের পরিবর্তে, মুসলমানদের এদেশ থেকে বিতাড়িত করবার উদ্দেশ্যে।
আরএসএসের প্রতিষ্ঠার অনেক আগে, এমনকি আরএসএস নামক একটি রাজনৈতিক হিন্দু সন্ত্রাসী ফ্যাসিবাদী ভাবধারার সংগঠন তৈরির ভাবনাচিন্তা কে অঙ্কুরিত করবার ও আগে, কৈশোরের প্রারম্ভে নাগপুর অঞ্চলে হেডগেওয়ার নিজের জীবন চর্চা তে শরীর চর্চাকে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম হিসেবে স্থান দিয়েছিলেন। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল কিন্তু মজবুত শরীর তৈরি করে, তাকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা।
নিয়মিত ব্যায়াম ,লাঠি খেলা ইত্যাদির ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে শরীরকে মজবুত করে ,সেই মজবুত শরীর দিয়ে যখন সশস্ত্র বিপ্লবী রা নিজেদেরকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সঁপে দেওয়ার সংকল্প গ্রহণ করতেন ,সেই সময়েই কিন্তু হেডগেওয়ার শরীর চর্চার মধ্যে দিয়ে, শরীর তৈরি করে ,স্বাস্থ্য তৈরি করে, সেই উন্নত স্বাস্থ্যকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ব্যবহারের সংকল্পে ব্রতী হয়েছিলেন।
হেডগেওয়ারের প্রথম জীবনের শরীরচর্চা ,অস্ত্র চর্চার এইযে ভাবধারা ,অর্থাৎ; মজবুত শরীর তৈরি করে ,সেই শরীরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবার মানসিকতা, সেই মানসিকতাই আরএসএসের জন্মকালে, যেমন হেডগেওয়ার এই সংগঠনটি উপর আরোপ করেছিলেন, তেমনিই এই সংগঠনটি তৈরি করবার ক্ষেত্রে যে সমস্ত উচ্চবর্ণীয়, উচ্চবর্গীয় ,বর্ণভিত্তিক, ব্রাহ্মণ্য ব্যবস্থার সমর্থক লোকজন তার সঙ্গে ছিলেন ,তারাও শরীরচর্চা কে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবার উদ্দেশ্যে আত্মনিবেদনের সবথেকে বড় সমর্থক ছিলেন।
এই মানসিকতাটাই সঙ্ঘ নেতৃত্ব তাদের জন্মলগ্ন থেকে ধারাবাহিক ভাবে বহন করে আসছে এবং আজ ও তারা শরীর চর্চাটিকে দেখে ; মজবুত শরীর তৈরি করে , সেই মজবুত শরীরের ভিতর দিয়ে মুসলমান খতম করার মানসিকতার ভিতর দিয়েই।
পড়তে থাকুন... www.cpimwb.org.in