“ধর্মীয় বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়ানোর অপরাধে পুরীর শংকরাচার্যের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক। সাধুবেশে বিদ্বেষের বিষ ছড়ানো এই সব মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করুক” - কথাগুলি ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে।
কিছুদিন আগে উত্তরাখণ্ডে ধর্মসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ধর্মাবলম্বীদের খুন করার নিদান দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে নাগরিক সচেতনতার চাপে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের ফলে ঐ ভাষণকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে।
স্বাধীনতার ৭৫ বছর যখন পালন করছি তখন ভারতীয় সাধারণতন্ত্রের শাসকেরা ধর্মীয় বিদ্বেষের উস্কানি দিয়ে হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করছে। অবিভক্ত ভারতের আপামর জনগন যখন ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে উপনিবেশের জাল ছিন্ন করে মুক্ত ভারতবর্ষের চিন্তা করছে তখনই হিন্দুমহাসভা পরে আরএসএস হিন্দুরাষ্ট্রের দাবী তুলে বিভাজনের উস্কানি দেয়। মুসলিম লিগের জন্ম ও পৃথকরাষ্ট্রের দাবী তোলা হয়। সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। ধর্মীয় জিগির তুলে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনকে দুর্বল করা হল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্যাসিবাদী শক্তির পরাজয়ের বাতাবরণে বিশ্বজূড়ে মুক্তির আন্দোলন গতি পায়। ভারতবর্ষের বুকেও শ্রমিক কৃষক মেহনতি মানুষের আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থকে টিকিয়ে রাখার কথা মাথায় রেখেই দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। হিন্দুরাষ্ট্র ও ইসলামিক রাষ্ট্রের দাবীদারেরা ব্যাপক ধর্মীয় দাঙ্গা সৃষ্টি করে দেশবিভাজনের রাস্তা পরিস্কার করে। ধর্মের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা সম্ভব নয় পরবর্তীকালে পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ গঠনেই প্রমান হয়ে যায়। মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারতবর্ষ ভেঙ্গে ইসলামিক রাষ্ট্র হিসাবে পাকিস্তান তৈরি করা হল।
ভারতে হিন্দুত্ববাদীরা হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারল না। দীর্ঘ তিন বছর আলোচনার পরে ভারতের সৃষ্টিশীল মনন ও চেতনা স্থির করল “We the people of India”; অর্থাৎ ভারতের জনগণ ধর্ম, বর্ণ, জাত, ভাষা নির্বিশেষে ঐক্যমত হয়ে সংবিধান গ্রহন করল। সংবিধান হল নতুন ভারতের প্রশাসনের দিশারি। নতুন ভারতের লক্ষ্য হবে মুক্ত চিন্তা, জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়, অর্থনৈতিক ন্যায়ের মাধ্যমে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা। ধর্ম ব্যক্তিপছন্দ ও আচরণের বিষয়। সরকার, প্রশাসন, বিচার ধর্ম বিমূর্ত।
পন্ডিত জওহরলাল বললেন,
"We have definitely accepted the democratic process. Why have we accept it? Well, for a variety of reasons. Because we think that in the final analysis it promote the growth of human beings and of society; because, as we have said in our constitution; reattach great value to individual freedom; because we want the creative and adventurous spirit of man to grew.
it is not enough for us really to produce the material goods of the world. we do want high standards of living but not at the cost of man's creative spirit, his creative energy, his spirit of adventure; not at the cost of all these fine things of life which have enabled man throughout ages.
Democracy is not merely a question of elections - the question before US is how to combine democracy with socialism through peaceful and legitimate means."
(“আমরা আন্তরিকভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেই প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছি। কেন এমন অবস্থান ? এর সমর্থনে একাধিক কারন রয়েছে। আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষে কারন আমরা মনে করি শেষ বিচারে এই ব্যবস্থা মানুষ এবং সমাজের বিকাশের সহায়ক, আমরা দেশের সংবিধানে ব্যাক্তিস্বাধীনতাকে অনেক উঁচু আসনে রেখেছি, কারন আমরা চাই ব্যাক্তি মানুষের সৃজনশীল ও সজীব চেতনা সমৃদ্ধ হোক।
শুধু কতকগুলি বস্তুগত উৎপাদনেই আমাদের পার্থিব জীবন অতিবাহিত হোক দেশ পরিচালনায় এমন ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। আমরা নিশ্চিতভাবেই মানবজীবনের উৎকর্ষতার পক্ষে কিন্তু যে সৃজনশীলতা, যে সজীবতা এবং যে সকল উপলব্ধির মাধ্যমে মানবজীবন আজকের সভ্যতায় পরিণত হয়েছে সেইসবকিছুর বিনিময়ে এমন উৎকর্ষতা আমরা চাই না।
গনতন্ত্র বলতে শুধু নির্বাচন বুঝলে ভ্রান্তি হবে, ন্যায়সঙ্গত এবং শান্তির পথে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাথে সমাজতন্ত্রের ধারনাকে আমরা কিভাবে সংযুক্ত করতে পারি সেটিই হল আমাদের সামনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন”)
স্বাধীনতার ৭৫ বছর আমাদের প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে, বর্তমান সরকার এর উল্টোপথে চলছে কেন?
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মানুষকে সৃষ্টিশীল ও মহীয়ান করার পরিবর্তে মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনা ও ধর্মীয় বিদ্বেষে আবদ্ধ করে গণতন্ত্রের মূল আদর্শকেই ধ্বংস করতে চাইছে।
আমাদের লড়াই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও শান্তিপূর্ণ পথে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই। এটাই ৭৫-তম প্রজাতন্ত্রের শপথ।