বেসরকারিকরণ, জাতীয় সম্পদ লুঠ, শ্রম আইনের অবলুপ্তি এবং নয়া কৃষি আইনের বিরোধিতা সহ কেন্দ্রীয় সরকারের দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিরোধী নীতিসমূহের বিরুদ্ধে সারা দেশে প্রতিবাদ আন্দোলন প্রদর্শনের ব্যাপক সাফল্যে ভারতের শ্রমিক শ্রেণী, কৃষক জনতা এবং ক্ষেতমজুরদের পলিট ব্যুরোর পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির পক্ষ থেকে আজ দেশব্যাপি সাধারণ ধর্মঘটের আহ্বান জানানো হয়েছিল। কৃষক এবং ক্ষেতমজুরদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আগামীকালও প্রতিবাদ প্রদর্শন চলবে।
দম্ন-পীড়ন, ভীতিপ্রদর্শন এবং দেশজূড়ে ব্যাপক গ্রেফতারী সত্ত্বেও সারা দেশে এবং বিশেষত বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে এই প্রতিবাদ আন্দোলনের সাফল্য উল্লেখযোগ্য। দিল্লির প্রতিটি প্রবেশপথে ব্যারিকেড বসিয়ে কৃষক এবং খেতমজুরদের সংসদে পৌঁছান রুদ্ধ করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এই শীতপ্রবাহের সময়েও জেখানেই তারা বাধা পেয়েছেন তাদের উপরে টিয়ার গ্যাস এবং জলকামান সহ আক্রমন চালান হয়, তা সত্ত্বেও প্রত্যেকটি রাজপথই ছিল ধর্মঘটীদের দখলে।
ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা ধর্মঘটে সারা দেশেই ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থাগুলিতেও অভূতপূর্ব সাফল্য লক্ষ্য করা গেছে। সবকটি বন্দর সহ হ্যাল, ভেল, বিইএমএল, বেল-এর মতো সংস্থা এবং ভাইজাগ, সালেম ও বোকারো ইস্পাত কারখানা, কয়লাখনি, লোহারখনি, বিদ্যুৎ ক্ষেত্র, পরিবহন (সড়ক এবং অন্যান্য) সর্বত্রই কর্মচারীরা ধর্মঘটে শামিল হয়েছেন। দেশজুড়ে ট্রাক চালক, নির্মাণ শ্রমিক, মাথায় ভার বওয়া মজদুরেরা, বিড়ি শ্রমিক, অঙ্গনওয়াড়ি, আশা, মিড-ডে মিল কর্মচারীদের থেকে শুরু করে মেডিক্যাল সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভরা এমনকি তথ্য-প্রযুক্তি কর্মীরাও সরাসরি যুক্ত হয়েছেন এই ধর্মঘটে।
এখনও অবধি পাওয়া হিসাব অনুযায়ী ১ কোটি ৬ লক্ষ শ্রমিক – কৃষকদের মিলিত আন্দোলনে কেরালা কার্যত বনধ-কে প্রত্যক্ষ করেছে। তৃনমূলের গুণ্ডাবাহিনীর আক্রমন সত্বেও এই ধর্মঘট পশ্চিমবঙ্গে বড় সাফল্য লাভ করেছে – জুট মিলগুলিতে, প্রাইভেট বাস পরিবহণ ক্ষেত্রে এবং স্টিল ফ্যাক্টরিসমূহে ধর্মঘট সর্বাত্মক চেহারা নেয়, ব্যাংক ও বীমা ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীদের বাদ দিলে ধর্মঘট ৮০ শতাংশ সফল। ত্রিপুরায় বিজেপি সরকার এবং সমাজবিরোধীদের পক্ষ থেকে ধর্মঘটকে ব্যার্থ করতে আক্রমন নামিয়ে আনা হলেও সেই রাজ্যেও ধর্মঘট বস্তুত বনধের চেহারা নেয়। একইভাবে বিজেপি শাসিত রাজ্য আসাম, কর্ণাটক, বিহার সহ সর্বত্র একই চেহারায় ধর্মঘট পালিত হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে ধর্মঘটে অংশগ্রহনকারীদের উপরে নামিয়ে আনা নিপীড়নের বিরুদ্ধে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরোর পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। ভারতের শ্রমজীবী শ্রেণী, অন্নদাতা কৃষক ও খেতমজুর এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশের এই ধর্মঘটের পরে নিজেদের জনস্বার্থবিরোধী নিতিসমূহকে (যার ফলে কোটি কোটি মানুষের জীবন জীবিকা ধ্বংস হয়েছে এবং গোটা দেশের উপরে দুর্দশা নেমে এসেছে) পরিবর্তন করা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের পুনরায় চিন্তা করা উচিত।
কৃষক ও খেতমজুরদের উপরে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজধানী দিল্লির সন্নিকটে থাকা বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকারগুলির পক্ষ থেকে যে নিপীড়ন প্রয়োগ করা হচ্ছে তা অবলম্বে বন্ধ করার দাবী জানাচ্ছে পলিট ব্যুরো। নয়া কৃষি আইনের বিরুদ্ধে নিজেদের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করে তারা আগামীকাল ২৭ নভেম্বর, শুক্রবার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে চলেছেন – তাদের সেই অধিকার প্রয়োগ করতে দিতেই হবে।
শেয়ার করুন