অর্থনৈতিক শ্লথতা প্রসঙ্গেই ইয়েচুরি সমাবেশে বলেন, অস্থিরতার ফাঁকে সমানে বড়লোকদের ছাড় দিয়ে চলেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। বড় বড় কর্পোরেট সংস্থার ব্যাঙ্ক ঋণ মকুব করে দেওয়া হচ্ছে। ব্যাপক ছাড় দেওয়া হয়েছে কর্পোরেট করের ওপর। অথচ, কেন্দ্রের সরকার কৃষিঋণ মকুব নিয়ে একটি কথাও বলছে না।
উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বরে কেবল কর্পোরেট কর ছাড় দিয়ে কোষাগারের ১.৪৫ লক্ষ কোটি টাকা লোকসান স্বীকার করেছে বিজেপি জোট সরকার।
দেশে সিএএ,এনআরসি,এনপিআর বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে পরাধীন ভারতে অসহযোগ আন্দোলনের তুলনাও টানেন ইয়েচুরি। তিনি বলেন, গান্ধীজীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনের সময় কথা পর্যন্ত বলতে অস্বীকার করে ব্রিটিশ প্রশাসন। পরে বাধ্য হয় আলোচনায় বসতে। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন এখন বিভিন্ন প্রান্তে সিএএ-বিরোধী আন্দোলনও শান্তিপূর্ণ। বরং শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে বিভিন্ন জায়গায় লাঠি চালিয়েছে বিজেপি সরকারের পুলিশ।
ইয়েচুরি বলেন, জাতীয় পতাকা নিয়ে রাস্তায় নামছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। তাঁদের পাশে রয়েছেন কৃষকরা, সমাজের সব অংশের মানুষ। এটিই বাস্তবতা। এর পরও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করছেন পিছাবেন না। ৩৭০ ধারা বাতিল, সিএএ পাশের রাজনীতিই চালাবেন। তাঁদের মনে রাখা দরকার মানুষের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন নিজের জোর প্রমাণ করেছে। সরকারের ফের ভেবে দেখা উচিত।
এদিন মধ্য প্রদেশের গোয়ালিয়রে সভায় অংশ নেন কংগ্রেস নেতা এবং রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিং। যোগ দিয়েছেন লোকতান্ত্রিক জনতা দল নেতা শারদ যাদবও। তাঁরাও সংবাদমাধ্যমে বলেন, সরকারের প্রধান দায়িত্ব মানুষের যন্ত্রণায় পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা। অর্থনৈতিক শ্লথতায় ভয়ঙ্কর অবস্থা। সেই সময়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে সংবিধান এবং জনতার একতাকে ধ্বংস করার লাগাতার চেষ্টা।
সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে ইয়েচুরি ব্যাখ্যা করেছেন কেন নাগরিকত্ব দেওয়া সিএএ’র উদ্দেশ্য নয়। পাকিস্তানের জনপ্রিয় শিল্পী আদনান স্বামী ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন ২০১৫-তে। ২০১৬-তে তাঁকে নাগরিকত্ব দেয় ভারত। পরে তিনি পদ্মশ্রী পুরস্কারও পান। ইয়েচুরির মন্তব্য, পাকিস্তানের কোনও নাগরিককে তো আগেও ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। চালু আইনেই তার ব্যবস্থা ছিল। নাগরিকত্ব দেওয়াই উদ্দেশ্য হলে তার জন্য আইন পাশ করানোর দরকার ছিল না। বিজেপি সরকারের আসল লক্ষ্য দেশজুড়ে অস্থিরতা তৈরি করা। ধর্মীয় বিদ্বেষ তৈরি করা। মেরুকরণ এবং সাম্প্রদায়িকতা কাজে লাগিয়ে যাতে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পারে বিজেপি।
এনপিআর প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে ইয়েচুরি বলেছেন, আদৌ বিষয়টি জনগণনা নয়। জনগণনা বলে চালানোর চেষ্টা হয়েছে। এনপিআর আর এনআরসি একেবারেই আলাদা বলে যা বোঝানো হচ্ছে, একেবারেই ঠিক নয়। এই সরকার এনপিআর’র যে ফরম করেছে সেখানে সন্দেহজনক ভোটার চিহ্নিত করার সংস্থান রয়েছে। সেটি করা হলে সেই এনআরসি’র মতো অবস্থা হবে।
উল্লেখ্য, আসামে এনআরসি প্রক্রিয়ায় বাদ গিয়েছে প্রায় ১৯ লক্ষ আবেদনকারীর নাম। তার মধ্যে হিন্দু এবং মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষই রয়েছেন। বস্তুত সমাজের সবচেয়ে প্রান্তিক অংশই নানা নথি জোগাড় করতে নাজেহাল হয়েছে। ইয়েচুরি বলেছেন, সিএএ,এনআরসি,এনপিআর কেবল মুসলিমদের বিপন্ন করবে না। বিপদে পড়বেন তফসিলি জাতি, আদিবাসী বহু মানুষ। যে কোনও প্রান্তিক মানুষই সঙ্কটে পড়বেন। যে কারণে বিরোধিতায় নামছেন সব অংশেরই মানুষ।
শেয়ার করুন