দুঃস্বপ্নের এক দশক : চন্দন দাস...

নভেম্বর ২৪ ,২০২০ মঙ্গলবার

পর্ব ৭

গনতন্ত্রে আঘাত করে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উজ্জীবিত করেছেন মমতা


গনতন্ত্র রক্ষা এবং সাম্প্রদায়িকতার শক্তিকে প্রতিরোধের সংগ্রাম এখানে অভিন্ন। গত সাড়ে ন’ বছরে রাজ্যকে এই অবস্থানে এনে ফেলেছেন মমতা ব্যানার্জি। পশ্চিমবঙ্গে গনতন্ত্র বিধ্বস্ত। এটি স্পষ্ট। ২২৩ জন সিপিআই(এম) কর্মী শহীদ হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের দুষ্কৃতীদের হামলায়। কয়েক হাজার পরিবার ঘরছাড়া হয়েছে। জমি দখল করে নেওয়া হয়েছে অনেক কৃষিজীবীর। ধর্ষিতা হয়েছেন অনেকে। ভয়ের বাতাবরণ কায়েম করা হয়েছে শহরেও। বিধানসভার মধ্যে বিরোধী দলের মহিলা বিধায়ককে পাঁজাকোলে করে মাটিতে আছড়ে ফেলে যথেচ্ছ মারধরের দৃষ্টান্ত কেন তৈরি করেছে মমতা ব্যানার্জির বাহিনী? আতঙ্কের পরিবেশ কায়েম করতে। বিরোধিতা ‘অপরাধ’। এই সবই তৃণমূল কংগ্রেস করেছে দুটি কারনে — বামপন্থীদের নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে এবং গনতন্ত্র ধ্বংস করতে। যদিও দুটি সম্পৃক্ত — কারন বামপন্থীরাই রাজ্যে গনতন্ত্রের ধারক ছিলেন। তাই পশ্চিমবঙ্গে গনতন্ত্র ধ্বংস করা হলো কেন — এই প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ।

দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের ঘটনা
রাস্তা তৈরি ঘিরে বিবাদ
দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে যাওয়া হলো মহিলাকে
ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা, ২ ফেব্রুয়ারি,২০২০


প্রকাশ কারাত কী বলেছিলেন? ২০১০-র ৯ই সেপ্টেম্বর তাঁর একটি প্রবন্ধে সিপিআই(এম)-র তৎকালীন সাধারন সম্পাদক লিখেছেন,‘‘কেন পশ্চিমবঙ্গে এত আক্রমন? এর কারন, গোটা দেশে পশ্চিমবঙ্গ হলো সিপিআই(এম) এবং বামপন্থীদের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাঁটি।...পশ্চিমবঙ্গে যে ধরনের আক্রমণ চালানো হচ্ছে তার মূল লক্ষ্য হলো বামফ্রন্টকে দুর্বল করা। ওরা জানে বামফ্রন্ট দুর্বল হয়ে পড়লে শাসক শ্রেণী তাদের নয়া-উদারনৈতিক কর্মসূচীকে শক্তিশালী করার সুযোগ পাবে।’’ অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেসের সন্ত্রাসের পিছনে একচেটিয়া পুঁজির একটি গভীর স্বার্থ ছিল।

প্রকাশ কারাত


গনতন্ত্র ধ্বংস এবং বামপন্থীদের রক্তাক্ত করা সেই চক্রান্তের দুটি অংশ। দেশে শাসকদের নয়া উদারনৈতিক কর্মসূচীর প্রধান বাধা বামপন্থীরা। দেশে একচেটিয়া পুঁজি যত দাপট বাড়াতে চেয়েছে, তত তার সাথে লড়াইটা বেড়েছে বামপন্থীদের। ২০০৮ থেকে জাতীয় রাজনীতি আরও দক্ষিণপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। ঠিক সেই সময়ে বামপন্থীদের উপর, বিশেষত ‘বামপন্থীদের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাঁটি’ পশ্চিমবঙ্গের উপর আক্রমন তীব্র হয়েছে। কিন্তু আসলে বামপন্থীদের দুর্বল করা এবং গনতন্ত্র তছনছ করায় সুবিধা হয়েছে কার? অতি দক্ষিণপন্থী, সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদী শক্তির। এবং তা অবধারিত। গনতন্ত্রের ধ্বংসাবশেষের উপরেই ফ্যাসিবাদের বিস্তারের সুযোগ বেশি। সমানাধিকার গনতন্ত্রের ভিত্তি। আর সামপ্রদায়িকতা এই ভিত্তিকেই চ্যালেঞ্জ করে ধর্মীয় বিভাজনের অঙ্কে। ফলে গনতন্ত্র যখন দুর্বল সাম্প্রদায়িক শক্তির পক্ষে সেই পরিস্থিতি সবচেয়ে অনুকূল। মমতা ব্যানার্জি সেই পথের ঠিকাদার। পশ্চিমবঙ্গ তার প্রমাণ।

ছবি : শহীদ কমরেড মঙ্গল হেমব্রম কে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন,কমরেড নিরুপম সেন ,মদন ঘোষ সহ অন্যান্য সাথীরা
(ভাতার ২ ) বন্ধ করে দেওয়া সিপিআইএম এর পার্টি অফিস পুনরায় খোলেন লোকাল কমিটির সদস্য সনাতন হেমব্রম , তাই তাকে খুন করার হুমকি দেওয়া হয়। বাড়ি গিয়ে তারা সনাতন হেমব্রম এর বাবা মঙ্গল হেমব্রম কে খুন করে তৃণমূল। (২৪ মার্চ ,২০১৪)


রাজ্যে গত সাড়ে ন’ বছরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ, বিজেপি বেড়েছে বিধ্বস্ত গনতন্ত্রের সুযোগে। আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে সংখ্যালঘু-গোঁড়ামিরও ছড়িয়ে পরার অপপ্রয়াসের। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার এই বিপদের উৎস সন্ধানে আমরা অবধারিত ভাবে গনতন্ত্রের ধ্বংসাবশেষে পৌঁছোব। রাজ্যে গনতন্ত্র ধ্বংস করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এবং তা সাম্প্রদায়িক শক্তির মাথাচাড়া দেওয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ট ভাবে জড়িত। সিপিআই(এম) তার ২৫ তম রাজ্য সম্মেলনের প্রস্তাবে সুস্পষ্টভাবে তাই উল্লেখ করলো, ‘‘বর্তমান ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গনতন্ত্রের জন্য লড়াই অভিন্ন একটি লড়াই।...এ দেশে গনতন্ত্রের উপর আক্রমন একটি বিশেষ চেহারা নিয়ে নেমে এসেছে। এই প্রশ্নে আমাদের রাজ্যে অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ নতুন মাত্রা পেয়েছে ২০১১ থেকে। সামগ্রিকতার বিচারে বিগত ৩ বছরে গনতন্ত্রের উপর লাগামহীন আক্রমন চলছে এই রাজ্যে।’’

রাজ্যে নানা ভাবে, প্রতিটি ক্ষেত্রে গনতন্ত্রের উপর আঘাত হেনেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১১-র মে-তে সরকার গঠন করে তৃণমূল কংগ্রেস। পঞ্চায়েত সংক্রান্ত এই সরকারের প্রথম পদক্ষেপ ২৬শে মার্চ, ২০১২। প্রথম পদক্ষেপেই উত্তর ২৪ পরগণা জেলা পরিষদের যাবতীয় ক্ষমতা কেড়ে নেয় রাজ্য সরকার। যা তার আগের ৩৪ বছরে কখনো হয়নি। শুধু উত্তর ২৪ পরগণাই নয়, সেই অনাচারের শিকার হয়েছিল মুর্শিদাবাদ এবং নদীয়া জেলা পরিষদও। নির্বাচিত প্রতিনিধি, সংস্থাকে অগ্রাহ্য করা, মানুষের মতামতকে পদদলিত করা এবং বিরোধীদের কার্যত উৎখাত করার রাজনীতির স্পষ্ট প্রকাশ ঘটে সেদিনই। ২০১৩,২০১৮ — মমতা-শাসনে দুটি পঞ্চায়েত নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। বিরোধী প্রার্থীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে দেওয়া হয়নি। প্রার্থীপদ দিতেই পারেননি বেশিরভাগ। ব্লক অফিস ঘেরাও করে দাঁড়িয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের সশস্ত্র বাহিনী। মহিলা প্রার্থীকে ব্লক অফিসের সামনে চুলের মুঠি ধরে, শাড়ি খুলে দিয়েছে মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর বাহিনী — এমন ঘটনাও ঘটেছে। অসংখ্য বাড়ি পুড়েছে। লুঠতরাজ হয়েছে। এখন রাজ্যে পঞ্চায়েতগুলি কার্যত নিষ্ক্রিয়। পৌরসভাগুলির ক্ষেত্রেও হামলা চালিয়ে দখল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। নির্বাচন কমিশনের প্রধানকে ঘিরে রাজ্যের মন্ত্রীরা হুমকি দিচ্ছেন — এমন ঘটনাও ঘটেছে। এখন তো কলকাতাসহ রাজ্যের সিংহভাগ পৌরসভায় কোনও নির্বাচিত বোর্ডই নেই। প্রশাসক বসানো হয়েছে নবান্ন থেকে। প্রশাসকরা সবাই তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা। দলের দখল কায়েম হয়েছে গনতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রায় প্রতিটি পর্যায়ে। কিন্তু পঞ্চায়েত ও পৌরসভা চালায় মূলত আমলারা। কারন, মমতা ব্যানার্জি জেলা চালানোর ক্ষেত্রে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের গুরুত্ব দেন না। শোনেন আমলাদের কথা। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ভূমিকা, তা সে বিরোধীই হোক কিংবা শাসকদলের — পুরোপুরি নস্যাৎ করা হয়েছে। ছাত্র সংসদ তুলে দেওয়া হয়েছে। বিধানসভার অধিবেসন গুরুত্বহীন করে দেওয়া হয়েছে। আলোচনা ছাড়া বাজেট পাশ হয়ে যায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের। শিক্ষক, মহিলা, ছাত্র — রাস্তায় আন্দোলন করলেই জোটে নির্মম পুলিশী অত্যাচার। মানুষের দাবি, প্রত্যাশার কন্ঠস্বর সরকার পরিচালনার কোথাও রাখতে চাননি মমতা ব্যানার্জি। মানবাধিকার কমিশন, নারী সুরক্ষা কমিশনের মত সংস্থাগুলির কোনও কার্যকারিতাই রাজ্যে নেই।

গণনার দিন, একজন গোলাপি রঙের জামা পরা লোককে অবিশ্বাস্য তৎপরতার সঙ্গে ব্যালট পেপারে তৃণমূলের ছাপ দিতে দেখা গিয়েছিল, (নদীয়া ,কৃষ্ণগজ্ঞ ২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচন)


অথচ বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালেই তৃণমূল কংগ্রেস কলকাতা কর্পোরেশন চালিয়েছে। চালিয়েছে একাধিক পৌরসভা। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরের মত জেলা পরিষদে জিতেছে। অনেক পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতিতেও তারা সেই সময়ে জিতেছে। মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকারও কেড়ে নিয়েছে তৃণমূল। উদাহরণ — মমতা ব্যানার্জি বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালেই ৭৩টি বন্‌ধ ডেকেছিলেন। নিজে সরকারে এসে ধর্মঘটের অধিকারই কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সরকারী কর্মচারীদের ধর্মঘট আটকাতে ‘ডাইস নন’ জারি করেন। হুমকি দেন চাকরিতে ছেদের। কিন্তু জামাই ষষ্ঠীতে ছুটি দেন। ছাত্র সংসদে নির্বাচন বন্ধ করা হয়েছে। খেতমজুর অথবা ঠিকা শ্রমিক — মজুরি বৃদ্ধির যে কোনও আন্দোলনে তৃণমূল কংগ্রেস হামলার দৃষ্টান্ত রেখেছে। আন্দোলন করলে সরকারী কর্মচারী অনেক দূরে বদলি করার পদ্ধতি চালু হয়েছে। আন্দোলন, ধর্মঘট সম্পর্কে ঠিক এই রকমেরই ধারনা সঙ্ঘেরও। কোথায় প্রভেদ দুই সরকারের সময়কালে, তার মোক্ষম উদাহরণ হতে পারে তথাকথিত ‘গনতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ।’

‘বর্তমান’ পত্রিকার প্রকাশ শুরু ১৯৮৪-র ডিসেম্বরে। ১৯৯২-এ প্রকাশিত হয় ‘প্রতিদিন।’ দুটি পত্রিকারই ‘এডিটোরিয়াল পলিসি’ আমরা জানি। কিন্তু কেন সংবাদপত্রদুটির মালিকরা ওই সময়েই ঝুঁকিপূর্ণ সংবাদপত্র প্রকাশের ব্যবসায় পা রাখলেন, বিচারের প্রয়োজন সেটা। বাংলার সংবাদপত্রের ইতিহাস বলছে কমিউনিস্টরা তাদের মুখপত্র গ্রামে নিয়ে যেত। তা মূলত নিজেদের সাংগঠনিক দক্ষতার উপর ভিত্তি করে। কিন্তু বাংলায় সংবাদপত্রের বাজার মূলত ছিল শহর, শহরতলী এবং মফঃস্বলের সম্ভান্ত্র, ধনী অংশ। ১৯৮০ পরবর্তী সময়ে গ্রামের প্রত্যন্ত চায়ের দোকানে দৈনিক কাগজ, সেই দিনই সকালের মধ্যে পৌঁছোন শুরু হয় ১৯৮০ পরবর্তী সময়ে।

কেন?
অর্থনীতি ইতিহাসের চালিকাশক্তি। ১৯৭৭-এ বামফ্রন্ট সরকার গড়ে উঠেছিল। তারপর ভূমিসংস্কার হয়। গ্রামের সরকার, অর্থাৎ পঞ্চায়েত গড়ে উঠেছিল একই পর্যায়ে। বামফ্রন্টের ভূমিসংস্কার কর্মসূচী অর্থনীতির ব্যপক উন্নতি ঘটিয়েছিল। রাজ্যের বাজার, মানুষের কেনার ক্ষমতা বেড়ে গেছিল ভূমিসংস্কারের হাত ধরে। বরুণ সেনগুপ্তর মত মানুষরা বুঝেছিলেন — চাল, আলু, সব্‌জিসহ অন্যান্য জিনিস কেনার পর, ১কিংবা ২ টাকা খরচ করে দিনে একটা কাগজ কেনার ক্ষমতা অর্জন করছে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চল, মফঃস্বলের বড় অংশ।
অন্যদিকে সেই সময়েই গনতন্ত্রের বিকাশ ঘটাতে শুরু করে। পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠার পর গ্রামেও এই ধারনা স্বাভাবিক হয়ে ওঠে যে — ‘রাজনীতি’ শুধু সম্পন্ন, জমিদার-জোতদার পরিবারের একচেটিয়া নয়। গ্রামের বড় অংশও আগ্রহী হয়ে উঠতে থাকেন রাজনীতি, অর্থনীতির বিষয়ে। কারন — পঞ্চায়েত তাঁর। তিনি পঞ্চায়েতে ঢুকতে পারেন, নিজের প্রয়োজন বলতে পারেন। তাঁর মতামতের গুরুত্ব অসীম — এই ধারনা পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে অনুপ্রবিষ্ট হচ্ছিল ওই সময়ে, পঞ্চায়েতের হাত ধরে, বামপন্থীদের উদ্যোগে। সংবাদপত্রের মালিকরা বুঝেছিলেন প্রসারিত গনতন্ত্রের এই পরিসরকে বিরোধিতার কথার বাজার হিসাবে ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদের কাঁধে ভর করে গ্রামের পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটছিল। ফলে দিনের কাগজ দিনেই পৌঁছোন সুযোগও তৈরি হয়ে গেছিল।

সংবিধানে অনেক কিছু লেখা থাকে — সংবাদপত্র প্রকাশের স্বাধীনতা, স্বাধীন মত প্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে সংবিধানের সেই সব ঘোষণাকে প্রতিষ্ঠা করে দেখিয়েছিল বামফ্রন্ট। যে কাগজে প্রতিদিন প্রথম পাতায় কমরেড জ্যোতি বসুর বিরুদ্ধে খবর প্রকাশ করাকেই নিজেদের ‘সম্পাদকীয় নীতি’ করে তুলেছিল, সেই পত্রিকা আটকে দেওয়ার চক্রান্ত কখনও করেননি বামপন্থীরা।

তথাকথিত স্বাধীন দেশে কলম পরাধীন


২০১১-র পরে গণশক্তির বোর্ড ভেঙেছে কয়েক হাজার তৃণমূল কংগ্রেসীরা। গণশক্তির প্রচার আটকানো হয়েছে। গণশক্তি বন্টন করার জন্য রক্তাক্ত হতে হয়েছে পার্টিকর্মীদের। গণশক্তির প্রাপ্য সত্বেও রাজ্য সরকার বিজ্ঞাপন বন্ধ করেছে। মামলায় হেরেছে। তবু বিজ্ঞাপন দেয়নি মমতা ব্যানার্জির সরকার।
২০১১-র আগে এমন ভাবাই যেত না পশ্চিমবঙ্গে। বরং ‘বামফ্রন্ট মুসলমানদের জমি নিয়ে নিচ্ছে’, ‘জ্ঞানেশ্বরীতে নাশকতা সিপিএম-রই চক্রান্ত’ — এমন খবর প্রকাশ করা যেত। এবং সেই কাগজের সাংবাদিকরা মহাকরণে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর আশেপাশে ঘুরতে পারতেন, আলিমুদ্দিন স্ট্রীটে এসে কমরেড অনিল বিশ্বাস, বিমান বসুদের প্রশ্নও করতে পারতেন।

ছাত্র-যুবরা শিক্ষাও কাজের দাবিতে আন্দোলন করলে, জুটেছে পুলিশের লাঠির আঘাত...
গনতন্ত্রের চেহারা কেমন ছিল এবং এখন কেমন, তা বোঝাতে তথাকথিত ‘গনতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের’ অবস্থার তুলনামূলক আলোচনাই যথেষ্ট। আজকের পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির সমালোচনা করে দিনের পর দিন খবরের কাগজ, টিভি চ্যানেলের ব্যবসা করা অসম্ভব। তা গত সাড়ে ন’ বছরে তৃণমূল কংগ্রেসই তা প্রমাণ করে দিয়েছে।

উল্লেখযোগ্য হলো, জাতীয় পর্যায়েও একচেটিয়া পুঁজির স্বার্থে সংবাদমাধ্যমে ক্রমাগত আধিপত্য বিস্তারের অগণতান্ত্রিক উপায় লক্ষ্য করা গেছে বিজেপির ক্ষেত্রেও।

◆●◆●●●◆●◆●◆●◆●◆●◆●◆●◆●◆●◆●◆ ধারাবাহিক চলবে

পরবর্তী বিষয় : পরের পর্ব (পর্ব ৮) সংখ্যালঘুদের বিজেপির স্বার্থে ব্যবহার তৃণমূলের...


শেয়ার করুন

উত্তর দিন