পর্ব ১৩ (অন্তিম পর্ব)
পশ্চিমবঙ্গে দাঙ্গা হয়, রামনবমীর তরোয়াল শাসক দলের হাতে!
‘‘সরকার চায় না। তাই পশ্চিমবঙ্গে দাঙ্গা হয় না।’’ এই ছিল মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কমরেড জ্যোতি বসুর ভাষ্য।
কথাটির সত্যতা আরও দৃঢ় ভাবে প্রমাণ করেছে তৃণমূল কংগ্রেসের শাসন। গত সাড়ে ন’ বছরে রাজ্য সব দিকে পিছিয়েছে। তারই মধ্যে বিশেষভাবে যন্ত্রণাদায়ক — পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য আক্রান্ত হয়েছে। রাজ্যে এই সময়কালে অনেকগুলি দাঙ্গা হয়েছে। যা ভুলে গেছিল পশ্চিমবঙ্গ, সেই সাম্প্রদায়িক হানাহানি দেখা গেছে মমতা ব্যানার্জির শাসনে। বসিরহাট, আসানসোল, রানীগঞ্জ, ধুলাগড়, পুরুলিয়ার ঘটনা তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। প্রাণহানিও হয়েছে অনেকগুলি। আসানসোলে এক ইমামের ছেলে খুন হয়েছেন। পুরুলিয়াতেও প্রাণহানি হয়েছে। বসিরহাট দেখিয়েছে স্পষ্ট কিভাবে সাম্প্রদায়িক হানাহানিতে অংশ নেয় শাসক দলের নেতা, কর্মীরা। বসিরহাট ছাড়াও প্রতিটি ঘটনায় হিন্দুত্ববাদীদের পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের একাংশকে এই হানাহানিতে কোনও না কোনও পক্ষের হয়ে হিংসাত্মক হতে দেখা গেছে। একইসঙ্গে এই সময়কালে রাজ্যে সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িকতাও রসদ পেয়েছে। খাগড়াগড় প্রমাণ — তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা, কর্মীদের মদত পাচ্ছে জেএমবি-র মত সন্ত্রাসবাদী শক্তিও।
এই পরিস্থিতি তৈরি হলো কি ভাবে? গনতন্ত্র যেখানে ধ্বংসের মুখে, সেখানে সাম্প্রদায়িক শক্তি অনুকূল পরিবেশ পেয়ে যায়। ২০১১-তে মমতা ব্যানার্জি আকাঙ্খিত মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে পৌঁছোনর পরই রাজ্যে বামপন্থীদের উপর হামলা মারাত্মক পর্যায়ে নিয়ে যায় তৃণমূল কংগ্রেস। নরেন্দ্র মোদী ২০১১-তে পরামর্শ দিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জিকে — ‘প্রথম রাতেই বেড়াল মেরে দিন।’ তৃণমূল কংগ্রেস সি পি আই(এম)-র অফিস ভেঙেছে। ঘরছাড়া করেছে বামপন্থীদের। সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার করেছে অনেককে। সেই সুযোগে নিজেদের শক্তি বাড়িয়েছে হিন্দুত্ববাদীরা। সাম্প্রদায়িক শক্তির সবচেয়ে বড় শত্রু বামপন্থীরা, বিশেষত কমিউনিস্টরা। রাজ্যে যত বামপন্থী-নিকেশ করার পথে গেছে মমতা ব্যানার্জির দল, তত ফনা তুলেছে সাম্প্রদায়িক শক্তি।
রাজ্যে রামনবমী আগেও পালিত হয়েছে। যাঁরা বিশ্বাস করেন, তাঁরা ধর্মাচরণ করেছেন। সরকার যাঁরা পরিচালনা করে, তাঁরা সেই সময় ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করেনি। তৃণমূল কংগ্রেস রামনবমী দখল করার চেষ্টা করেছে। তা নিয়ে বিজেপি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সঙ্গে শক্তি প্রদর্শনে নেমেছে। আসানসোলসহ একাধিক জায়গায় তরোয়াল হাতে নিজের হিন্দুত্ব প্রমাণে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদেরই দেখা গেছে। অনেক জায়গায় তৃণমূল কংগ্রেসই রামনবমীর মিছিল করেছে। বীরভূমে ২০১৭-র ডিসেম্বরে পুরোহিত, ব্রাহ্মণ সম্মেলন করে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা, মন্ত্রীরা পাল্লা দিয়ে হনুমান জয়ন্তী পালন করেছেন।
সুবিধা তুলেছে আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।
রাজ্যে সঙ্ঘের শাখা বেড়েছে। ২০১১-তে যা ছিল ৩৫০টির মত, তা এখন হয়ে গেছে প্রায় ১৫শো। তার মধ্যে দক্ষিণবঙ্গে রয়েছে ৯১০টি শাখা। এছাড়া সপ্তাহে একদিন সদস্যরা মিলিত হয়, এমন সাপ্তাহিক মিলন রয়েছে ১০৯২টি। জেলা, ব্লক, অঞ্চল মিলিয়ে রাজ্যে এখন বিশ্ব হিন্দু পরিষদেরও ১৫০০-র কাছাকাছি ইউনিট তৈরি হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গে প্রায় ১২০০। বাকিটা উত্তরবঙ্গে। বেড়েছে বজরং দল, দূর্গা বাহিনী, বীরাঙ্গনা, রাষ্ট্র সেবিকা সমিতির মত সংগঠনের সদস্যও। বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে, যখন রাজ্যে সব রাজনৈতিক দল নিজেদের কর্মসূচী চালাতে পারত, তখন রাজ্যে বাড়তে পারেনি সাম্প্রদায়িকতা।
নিজেদের অনুকূলে এই পরিবেশের সম্ভাবনা সঙ্ঘও দেখেছিল। ২০১১-তে। কী ছিল তাদের অবস্থান? ২০১১-র ২৩শে মে প্রকাশিত সঙ্ঘের পত্রিকার সম্পাদকীয়র শিরোনাম ছিল — ‘দুঃশাসনের অবসান’। সেখানে সঙ্ঘ লিখেছিল — ‘‘অবশেষে দুঃশাসনের অবসান।..যদিও কমিউনিস্টরা বিজেপিকেই শুধু প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, পয়লা নম্বর শত্রু বলিয়াই মনে করে। ইহা স্বীকার করিতেই হইবে, পশ্চিমবঙ্গের মার্কসবাদী সরকার ও ক্যাডারদের অত্যাচারের প্রতিবাদে দায়িত্বশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁহারই নেতৃত্বে তৃণমূল জোটের এই বিরাট জয়।’’
২০১৬-র নির্বাচনের পর আর এস এস জানালো —‘‘...তৃণমূলের এই জয় সম্ভব হয়েছে স্রেফ জাতিয়তাবাদী ভোটের ফলে। ...জাতিয়তাবাদী ভোটাররা অনেকক্ষেত্রেই দেখেছেন যেসব জায়গায় বিজেপি দুর্বল, জেতার সম্ভাবনা ক্ষীণ, সেখানে ঢেলে তাঁরা তৃণমূলের পক্ষে গিয়েছেন। ঠিক যেমনটি হয়েছিল গত বিধানসভা নির্বাচনে।’’
এখন সঙ্ঘ কী বলছে? সঙ্ঘের ইংরাজি মুখপত্র ‘অরগানাইজার’-র সাম্প্রতিক সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। এবারের কভার স্টোরি ‘কিলিং ফিল্ডস অব বেঙ্গল’। পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে তিনটি প্রবন্ধ আছে। তার মধ্যে দুটি রাজ্যের ‘কিলিং ফিল্ডস’ নিয়ে। সেখানে কোথাও পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নিজেদের কর্মসূচী, বক্তব্য, ভাবমূর্তির জোরে মানুষের সমর্থন আদায় করতে পারছে — সঙ্ঘ তা মনে করছে বলে উল্লেখ করা হয়নি। লেখা হয়েছে — হিংসাত্মক রাজনীতি এবং রাজ্য সরকারের অপশাসন বাংলার ‘ভোটদাতাদের বিজেপি-র হাতে ঠেলে দিচ্ছে।’ একই সঙ্গে সঙ্ঘ স্পষ্ট কর্মীদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে, ২০১১-তে বামপন্থীদের পরাজিত করার ক্ষেত্রে মমতা ব্যানার্জি ‘বিশ্বাসযোগ্য’ ভূমিকায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তবে তাদের অনুযোগ, ‘যে আশা মমতা ব্যানার্জি দেখিয়েছিলেন, তা দুর্ভাগ্যজনকভাবে পূর্ণ হয়নি।’
তাই কী? যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির স্বার্থে। মিনাখাঁর মত অনেকগুলি জায়গায় তারা এক সঙ্গে পঞ্চায়েত চালিয়েছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের এলাকা কুলিয়ানা একটি দৃষ্টান্ত হতেই পারে। গোপীবল্লভপুর-২ নং ব্লকের কুলিয়ানা পঞ্চায়েতে দিলীপ ঘোষের বাড়ি। কুলিয়ানায় ২০০৮-০৯’র পরবর্তী সময়ে তৃণমূল কংগ্রেস-মাওবাদীদের তাণ্ডব, হুমকির মুখোমুখি হয়েছে সি পি আই (এম)। ২০১১-র মে-র পর মাওবাদীরা গত। আধিপত্য পুরোপুরি নিজেদের হাতে তুলে নেয় তৃণমূল কংগ্রেস। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কুলিয়ানায় ১০টি আসনের একটিতেও সি পি আই (এম)-কে প্রার্থী দিতে দেওয়া হয়নি। তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছিল। এবং তারা বি জে পি-কেও প্রার্থী দিতে দিয়েছিল। 'ভোটের ফল— ১০টি আসনের ৭টিতে দিদিভাই’-র দল জেতে।
বাকি ৩টিতে ‘মোদীভাই’-র দল জেতে।
সারদা, নারদ স্টিং অপারেশনের মত অপরাধের তদন্তের গতি শ্লথ রেখেছেন মোদী, অমিত শাহ্। দু’ দলের বোঝাপড়া চলেইছে। রাজ্যে এই সাড়ে সাতবছরে সঙ্ঘ নানা ভাবে বেড়েছে। প্রমাণ তাদের স্কুল। সরকার ঢালাও অনুমোদন দিয়েছে। রাজ্যে আর এস এস-র প্রাথমিক স্কুল আছে ৩১৪। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গে আছে ১১০টি। গত দু’ বছরে যে পাঁচটি বিদ্যালয় বেড়েছে — তার সবকটিই উত্তরবঙ্গে। দক্ষিণবঙ্গে স্কুল এখনও ২১৪টিই। এই সময়ে সঙ্ঘের স্কুলগুলিতে বেড়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকাও। অনেক জায়গাতেই সঙ্ঘ একল বিদ্যালয়(একজন পরিচালিত) শুরু করেছে। স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা সহযোগিতাও করছেন।
মমতা ব্যানার্জি সবসময়েই সঙ্ঘের সহায়ক। তৃণমূল সবসময়েই বিজেপির পরিপূরক। উদাহরণ আছে। জলঙ্গীর ঘটনা, ২৯ জানুয়ারির। এনআরসি, সিএএ, এনপিআর’র বিরুদ্ধে আন্দোলনরত গ্রামবাসীরা কিছুক্ষণের জন্য রাস্তা অবরোধ করেছিলেন। পুলিশ গ্রামবাসীদের বোঝানোর চেষ্টা করেনি। ডেকে এনেছিল তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্বৃত্তদের। এসেছিল সশস্ত্র তৃণমূল কংগ্রেসীরা। তাদের মধ্যে ছিল শাসক দলের নির্বাচিত জন প্রতিনিধিও। দুষ্কৃতীরা গুলি চালায়। মৃত্যু হয় সালাউদ্দিন সেখ(২০) এবং আনারুল বিশ্বাস(৬৫)-র। তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতির নামে গ্রামবাসীরা এই হামলার নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। সরাসরি গুলি চালিয়ে যুবক সালাউদ্দিনকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী, তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। গণতান্ত্রিক পথে পরিচালিত একটি আন্দোলন ভাঙার জন্য এমন নৃশংস হামলার সঙ্গে শাহিনবাগ এবং আরও কিছু জায়গায় বিজেপি পরিচালিত প্রশাসন, সঙ্ঘ পরিবারের আক্রমণের সাম্প্রতিক দৃষ্টান্তগুলিই তুলনীয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী কী বলেছেন? ওই হামলার ঘটনার মাত্র পনেরো দিনের মাথায়, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি বিধানসভায় বলেছেন,‘‘জলঙ্গীতে সরস্বতী পূজার দিন কেন বন্ধ করতে গেছিলেন? লজ্জা করে না? এই জন্য আপনারাই দায়ী।’’
গুলি চালানোর ঘটনার সমালোচনা তো দূরে থাক, মুখ্যমন্ত্রী টেনে আনলেন ‘সরস্বতী পূজা।’ গ্রামবাসীরা রাস্তা আটকেছিলেন। তাও মাত্র কয়েক মিনিট। বন্ধ করেননি। মুখ্যমন্ত্রী এনআরসি, সিএএ, এনপিআর নিয়ে মানুষের আশঙ্কা, ক্ষোভকে গুরুত্বই দিলেন না। বিজেপি’র সংবিধানবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের আন্দোলনমুখীনতা নস্যাৎ করলেন। উলটে ‘সরস্বতী পূজার’ অজুহাত এনে একটি সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ দেওয়ার চেষ্টা করলেন ঘটনাটির।
কাদের খুশি করতে এটা করা হলো? কারা উৎসাহিত হলো? রাজ্যে মাথা তুলতে মরিয়া হয়ে ওঠা হিন্দুত্ববাদীরা।
‘মমতাকে ছাড়া বিজেপি বিরোধী লড়াই হয় না’ — এমন নিদারুণ ভাবনায় মথিত কিছু মানুষ এখনো এরাজ্যে বাস করেন। কিন্তু বিজেপি-র এই প্রশ্নে এমন কোন শিশুসুলভ বোঝাপড়া নেই। কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার খর্ব করার ইস্যুতে মাননীয়া চুপ করে থাকেন। কাশ্মীরের দুটি অঙ্গরাজ্যে অবনমিত হওয়ার সময় মমতা ব্যানার্জির অস্ত্র সেই নীরবতা। লাদাখে সংঘর্ষের বিষয়ে দেশের অখন্ডতার প্রশ্নে দৃঢ় অবস্থান জানিয়েও যখন সিপিআই(এম)সহ অনেকে জানতে চাইছে ঠিক কী ঘটেছিল সেখানে, কেন প্রধানমন্ত্রী বললেন কেউ ঢোকেইনি ভারত ভূখন্ডে — তখন মমতা ব্যানার্জির কোন প্রশ্ন নেই। তৃণমূল কংগ্রেস কী বললো? তারা বললো, জাতীয় স্বার্থে তারা সবসময় দেশের পাশে আছে।
কে নেই? এই প্রথম নয়। বিজেপির কোন ছলচাতুরির বিরুদ্ধে মমতা ব্যানার্জি প্রশ্ন করেননি। বরং পাশে থেকেছেন। ২০০৩। নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন করে এনডিএ সরকার। যুক্ত করা হয় ‘১৪এ’ ধারা। ওই ধারা অনুসারে কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজন মনে করলে প্রত্যেক ভারতবাসীর নাম নথিভুক্ত ও একইসঙ্গে প্রতিটি নাগরিকের জন্য ‘ন্যাশনাল আইডেনটিটি কার্ড’ ইস্যু বাধ্যতামূলক করতে পারে। ২০০৩-র সেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে আরও বলে দেওয়া হয়েছে যে, ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অথরিটি তৈরি করে কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজন মনে করলে প্রত্যেক দেশবাসীর জন্য জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তৈরি করতে পারে। জাতীয় নাগরিকপঞ্জি(এনআরসি)’র ভিত্তি হলো সেই সংশোধনী। সেই ভিত্তি তৈরি হয়েছিল অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়ে। সেই মন্ত্রীসভায় ছিলেন মমতা ব্যানার্জি। সেদিন তিনি কী করেছেন? চুপ থেকেছেন। রাম মন্দির নির্মাণ যখন এনডিএ-র নির্বাচনী ইশ্তেহারে জায়গা করে নিল, বাজপেয়ীর পাশে সেদিন ইশ্তেহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে তৃণমূল নেত্রী বসে ছিলেন।
গুজরাটে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের সময় তৃণমূল কংগ্রেস কোথায়? বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সরকারে। বাংলাদেশ থেকে দলে দলে মানুষ পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে পড়ে — সংসদে লালকৃষ্ণ আদবানীর তোলা সেই ‘অনুপ্রবেশ’ ইস্যু নিয়ে হট্টগোল করেছিলেন কে? মমতা ব্যানার্জি। বাংলাভাগের অন্যতম কান্ডারী, হিন্দু মহাসভার নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিকে ‘অটলবিহারী বাজপেয়ীর মতই অটল’ বলেছিলেন কে? মমতা ব্যানার্জি। তৃণমূল কংগ্রেসে ঢুকে পড়েছে কিছু হিন্দুত্ববাদীরাও। উদাহরণ ভদ্রেশ্বরে খুন হওয়া পৌরসভার চেয়ারম্যান, তৃণমূল কংগ্রেস নেতা মনোজ শর্মা। তিনি আসলে ছিলেন স্বয়ংসেবক। আবার মুকুল রায়ের মত তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারাও হয়ে উঠেছেন বি জে পি-র থিঙ্ক ট্যাঙ্ক। বিজেপির তৃণমূলীকরণ চলছে। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা গিয়ে পুষ্ট করছে বিজেপিকে।
রাজ্যে সাম্প্রদায়িকতার পথ মসৃণ করতেই তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম। গত সাড়ে ন’ বছরে সাম্প্রদায়িক বিভাজনে অন্যতম অনুঘটক হয়ে মমতা ব্যানার্জির দল তা প্রমাণ করেছে ফের। এই পরিস্থিতিকেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা সুরেন্দ্র জৈন অতি উৎসাহে বর্ণনা করছেন —
‘‘পশ্চিমবঙ্গ গেরুয়া যুগে প্রবেশ করেছে।’’ তাই লড়াইয়ের সূচীমুখ দাঁড়িয়ে আছে একটি বাক্যে — পশ্চিমবঙ্গে গনতন্ত্র উদ্ধার এবং ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার সংগ্রাম অবিভাজ্য। দুটি শক্তিকে একই সঙ্গে হারাতে হবে।
*সমাপ্ত*
শেয়ার করুন