Women Workers Cover 25

অর্ধেক আকাশের সমানাধিকার

গার্গী চ্যাটার্জী

‘Whatever men comrades can accomplish, women comrades can too...’- ১৯৪৯ সালে চীন বিপ্লবের পর সরকার গঠন করে তৎকালীন চেয়ারম্যান কমরেড মাও জে দং দেশের নারী শ্রমশক্তির প্রতি আহ্বান জানান। পুরুষদের মতন নারীদেরও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে যোগদানের মধ্যে দিয়ে সমান সুযোগ - সুবিধা ও অধিকার নিশ্চিত করার। সে ক্ষেত্রে সরকার সমস্ত রকমের সহায়তা প্রদান করতে প্রস্তুত ও বদ্ধপরিকর।

ঠিক তার দু বছর আগেই, ৪৭ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে স্বাধীন হওয়া আমাদের দেশ, আমাদের ভারতবর্ষ আজ স্বাধীনতার ৭৮ বছরে দাঁড়িয়ে তার মোট জনসংখ্যার অর্ধেক অংশ, নারীদের জন্য স্থায়ী বা অন্ততপক্ষে সংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা তো দূর, কাজের বাজারে মহিলাদের ন্যূনতম সুযোগ - সুবিধা - নিরাপত্তা পর্যন্ত নিশ্চিত করার জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি।

রাষ্ট্র সংঘ, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) এবং ম্যাক কিনসে গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের আলাদা আলাদা ভাবে করা ২০২৩ - ২৪ সালের সমীক্ষা বলছে ভারতবর্ষের কর্মক্ষম মহিলারা যদি কাজের বাজারে পুরুষদের মতন সমান সুবিধা ও সুযোগ পেতেন তাহলে ২০২৫ সালে দেশের অর্থনীতিতে বাড়তি ৭০০ বিলিয়ন ডলারের অধিক যুক্ত হতো। অর্থনীতিতে ৬০% বৃদ্ধি দেখা যেতো।

পরিহাসের বিষয় হলো ওই একই সমীক্ষায় ১৮০ টি দেশের মধ্যে কাজের বাজারে নারী শ্রমশক্তির যোগদানের নিরিখে ভারতের স্থান ১৬৬ তম। পাকিস্তান - মরক্কো সহ সিরিয়া, প্যালেস্টাইনের মতন যুদ্ধবিদ্ধস্ত মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ ও আরব দেশগুলি কেবল মাত্র আমাদের দেশের চেয়ে নিচে রয়েছে।

ভারতবর্ষের কাজের বাজারে মাত্র ২৩.৫% মহিলাদের উপস্থিতি রয়েছে। স্বল্পমেয়াদী কাজ, চুক্তি ভিত্তিক কাজ, প্রজেক্ট ওয়ার্ক ইত্যাদি ধরলে ফিমেল লেবার ফোর্স পার্টিসিপেশন রেট (LFPR) অনুযায়ী সম্প্রতি গত ৫ বছরে এই সংখ্যাটা কিছুটা বেড়ে ৩২.৮% হয়েছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে ভারতবর্ষের কাজের বাজারে থাকা নারী শ্রমশক্তির ৮০% ই অস্থায়ী ও অসংগঠিত কাজের সাথে যুক্ত, যার মধ্যে ৪৮% কৃষিক্ষেত্রে, ২০% উৎপাদন শিল্পে এবং ৩০% পরিষেবামূলক কাজের সাথে যুক্ত।

তীব্র লিঙ্গ বৈষম্য, যৌন হয়রানী, বেতন বৈষম্য, কর্মক্ষেত্রে শোষণ, স্বচ্ছন্দে কাজের পরিবেশ সহ মহিলাদের জন্য যে নূন্যতম পৃথক বন্দোবস্ত (বাথরুম, রেস্ট রুম) প্রয়োজন সেটুকু পর্যন্ত আজকের "বিকশিত ভারত" এ অধরা। ফলত দেশের কাজের বাজারে যেমন মহিলাদের যোগদান কম, তেমনই দেশের অর্থনীতিতে তার প্রতিফলনও কম। মোট GDP র মাত্র ১৮% নারী শ্রমশক্তির ওপর নির্ভরশীল, যেখানে চীনের অর্থনীতিতে মহিলাদের অবদান GDP র ৪২%। রাষ্ট্রের নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন পরিষ্কার।

আমাদের রাজ্যের ছবিটা ঠিক কেমন?

পশ্চিমবঙ্গের জুটমিল গুলিতে এই বিষয়ে যৌথভাবে সমীক্ষা চালিয়েছে ‘সংহিতা’ এবং নাগরিক মঞ্চ। এই সমীক্ষার রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, জুট মিলে যৌন হেনস্থা প্রায়ই ঘটে। যদিও খুব কম জনই ঘটনার কথা প্রকাশ করতে বা কোনরকম অভিযোগ করতে সম্মত হন। কারণ অধিকাংশ জুটমিল গুলি ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং সেগুলির ম্যানেজমেন্ট এজাতীয় বিষয় নিয়ে আদৌও ভাবিত নন। তারওপর দেশের সংবিধান, আইন - আদালত স্বীকৃত যে ন্যূনতম রক্ষাকবচ গুলো কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের প্রাপ্য সেগুলি না এই মিল গুলিতে ঠিকঠাক বলবৎ, না সেগুলি সম্পর্কে অধিকাংশ মহিলা কর্মচারীরা ওয়াকিবহাল। ফলত "অহেতুক ঝঞ্ঝাট" এড়িয়ে যেতে, কাজ থেকে ছাঁটাই না হতে মুখ বুজে থাকাই একরকম বাধ্যবাধকতা।

রাজ্যের ‘এলিট’ কর্মস্থলেও ছবিটা দুঃখজনক। ২০২১ সালের ৮ মার্চ ‘সংহিতা’ এবং ‘সাউথ এশিয়ান ওম্যেন ইন মিডিয়া’ যৌথভাবে একটি সমীক্ষার খসড়া রিপোর্ট পেশ করে। এই রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গের মহিলা সংবাদকর্মীদের কর্মস্থলের অভিজ্ঞতার কথা বিস্তৃতভাবে লেখা হয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ৫৬% মহিলা সংবাদকর্মী যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছেন কর্মক্ষেত্রে। অর্থাৎ প্রতি ১০ জন মহিলা মিডিয়াকর্মীর মধ্যে প্রায় ৬ জন যৌন হেনস্থার মুখোমুখি হন। নির্যাতিতাদের মাত্র ২০ শতাংশ মহিলা অভ্যন্তরীণ কমিটির কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন, বাকিরা জানাননি। মহিলা সংবাদকর্মীদের একাংশ এ কথাও জানান, অভিযোগ করলে চাকরি চলে যাবার ভয় রয়েছে। তাছাড়াও নিয়মিত তাঁদের অপমান ও বিদ্রুপ শুনতে হয়। ৩৬.৭ শতাংশ মহিলা জানিয়েছেন, তাঁদের কর্মস্থলে যৌন হেনস্থা বিরোধী নীতিমালা আছে। ৩৩.৩ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁদের কর্মস্থলে যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে কোন গাইডলাইনের অস্তিত্ব নেই। বাকি ৩০ শতাংশ জানিয়েছেন তাঁরা নিজেরাই জানেন না আদৌ এই সংক্রান্ত কোনও নীতিমালা বা গাইডলাইন আছে কি না।

সর্বশেষ গতবছরের ৯ ই আগস্ট বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ টা সংঘটিত হলো খোদ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার অন্যতম সেরা সরকারি হাসপাতালের বুকে। কর্তব্যরত চিকিৎসক - ছাত্রীর ওপর নৃশংস অত্যাচার ও ধর্ষণ করে হত্যা - যা সম্পূর্ণ বে আব্রু করে দেয় আমাদের রাজ্যের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা, টিকে থাকা নারী শ্রমশক্তির কাজের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টিকে।

এই একই অবস্থা গোটা দেশ জুড়ে। তা সে পুনে - নয়ডার কর্পোরেট সেক্টর হোক, তামিলনাড়ুর মাছের বাজার হোক, মহারাষ্ট্রের আখের ক্ষেত হোক, কোলকাতার হাসপাতাল বা পার্কস্ট্রিটের পুলিশ থানা হোক, ঝাড়খণ্ডের খনি হোক বা হরিয়ানার স্কুল হোক - নূন্যতম সুরক্ষার ব্যবস্থা অমিল।

আগামী ৯ জুলাই  সমস্ত রকমের শোষণ - বঞ্চনার বিরুদ্ধে "অর্ধেক আকাশ" চেতাবনী দিতে সামিল হবে লড়াই এর ময়দানে।

‘নারীদের আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠিত করো, সবরকম শোষণ থেকে মুক্ত করো’- এই মূল স্লোগানকে সামনে রেখেই  শ্রমজীবী মহিলাদের সংগঠিত করা হয়।কর্মরত নারীদের জন্য আইন বা সংবিধানে অধিকার দেওয়া থাকলেও, তা থেকে বঞ্চিত হন সিংহভাগই। বিশেষ করে অসংগঠিত ক্ষেত্রে এই ঘটনা বেশি ঘটে।

দেশ জুড়ে বিপুল সংখ্যক মহিলা শ্রমিক অসংগঠিত ক্ষেত্রে পুরুষদের সমান কাজ করলেও সমবেতন থেকে বঞ্চিত হন। এই বৈষম্য ইঁটভাটা থেকে ধানের খেত সব জায়গায় হয়। কোনও কোম্পানি ছাঁটাইয়ের পথে গেলে সবার আগে মহিলাদের উপর কোপ পড়ে। বিভিন্ন মলে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয় মহিলাদের। আধিকারিক বা সহকর্মীর হাতে যৌন হেনস্তার ঘটনাও প্রায়শই ঘটছে। এমন নানা সমস্যা, বঞ্চনা, শোষণের মুখে দাঁড়িয়ে কাজ করে চলেছেন অসংখ্য নারী।

আইসিডিএস মহিলাদের দীর্ঘ সময় প্রকল্প কর্মী করে রেখেছে দেশের সরকার। দাবি উঠেছে তাদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দিক সরকার। তাহলে তাঁরা মজুরি পাবেন এবং সামাজিক সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা পাবেন। কেরল রাজ্য আইসিডিএস মহিলাদের স্বীকৃতি দিয়েছে।পশ্চিমবঙ্গেও চাই এ স্বীকৃতি।

কর্মরত মহিলাদের শিশুদের দেখভালের দায়িত্ব রাষ্ট্র নিচ্ছে না। সংসার চালাতে বের হলে বাড়ির আগামী প্রজন্মের মধ্যে অন্ধকার নেমে আসছে। শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা । বেসরকারি ক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন ছুটি দেয় না অধিকাংশ সময়। ছুটি নেওয়া মানেই চাকরি চলে যাওয়া। তবে আইন আছে ছুটি দেওয়ার। এখন বিভিন্ন নতুন ক্ষেত্রে শ্রমজীবী মহিলা সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্ন ডেলিভারি পরিষেবা, গাড়ি চালক হিসাবে মহিলাদের সমস্যা ও তার সমাধান কোন পথে হবে, তা ও এখন আলোচনার বিষয়।

আমাদের রাজ্যের শ্রমজীবী মহিলাদের অবস্থা করুণ। কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য ও যৌন লাঞ্ছনা প্রতিদিনের বিষয়।

মনে রাখা প্রয়োজন, আর.জি.কর-এ ডাক্তার তরুণী খুন ও ধর্ষিত হয়েছিলেন নিজের কর্মক্ষেত্রে। কাজেই, কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের অবস্থান নিয়ে চুলচেরা আলোচনা প্রয়োজন আজ। সেই আলোচনা সুবিধাপ্রাপ্ত কর্মী মেয়েদের (অর্থাৎ, হোয়াইট কলার ওয়ার্কার) আর প্রান্তিক কর্মী মেয়েদের (অর্থাৎ, ব্লু কলার ওয়ার্কার) জন্য এক হবে না।

শ্রমজীবী মহিলারা কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন গুলির আহ্বানে আগামী ৯ জুলাই এর সর্বভারতীয় সাধারণ ধর্মঘটে যোগ দেবেন কারণ এটি তাদের অধিকার, কাজের পরিবেশের উন্নতি এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে।

শ্রমিক আন্দোলন ঐতিহাসিকভাবে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে এসেছে। কিন্তু এটি কি মহিলাদের জন্য প্রাসঙ্গিক? উত্তর হলো— হ্যাঁ, এবং এর প্রাসঙ্গিকতা আগের চেয়েও বেশি। প্রথমত, শ্রমিক আন্দোলন মহিলাদের জন্য প্রাসঙ্গিক কারণ তারা এখনও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের শিকার। পুরুষদের তুলনায় মহিলারা বিশ্বব্যাপী ২০ শতাংশ কম মজুরি পান। ভারতের মতো দেশে এই বৈষম্য আরও প্রকট। শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমে মহিলারা এই বৈষম্য দূর করার জন্য সংগঠিতভাবে লড়াই করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, ১৯২০-এর দশকে আমেরিকার শ্রম নারীবাদীরা কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য সুরক্ষাবাদী আইন পাস করতে সক্ষম হয়েছিলেন, যা তাদের কাজের শর্ত উন্নত করেছিল।দ্বিতীয়ত, বর্তমান অর্থনৈতিক কাঠামোতে শ্রমজীবী মহিলাদের অবস্থান আরও নাজুক হয়ে উঠেছে। কোভিড মহামারীর পর মহিলাদের অবৈতনিক কাজের পরিমাণ বেড়েছে, এবং অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। ভারতে ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ২ কোটি মহিলা শ্রমশক্তি থেকে বাদ পড়েছেন। শ্রমিক আন্দোলন এই ধরনের সংকটে মহিলাদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের দাবি তুলতে পারে। তৃতীয়ত, শ্রমিক আন্দোলন মহিলাদের কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করে। ইউনিয়ন বা শ্রমিক সংগঠনগুলোতে মহিলাদের অংশগ্রহণ বাড়লে তারা নিজেদের সমস্যা নিজেরাই তুলে ধরতে পারেন। শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমে তারা এই শোষণের বিরুদ্ধে লড়তে পারেন।চতুর্থত, শ্রমিক আন্দোলন শুধু অর্থনৈতিক অধিকারের জন্য নয়, সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্যও লড়ে। মহিলাদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ তারা প্রায়শই দ্বৈত শোষণের শিকার—লিঙ্গ ও শ্রেণি উভয় ক্ষেত্রে। শ্রমিক আন্দোলন এই দুটি দিকেই কাজ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের নতুন শ্রম কোডে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে। শ্রমিক আন্দোলন এই ধরনের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারে।পঞ্চমত, শ্রমিক আন্দোলন মহিলাদের নেতৃত্বের সুযোগ করে দেয়।

শ্রমজীবী মহিলাদের ধর্মঘটে সামিল হওয়া এবং শ্রমিক আন্দোলনে অংশ নেওয়া তাদের জন্য শুধু একটি পছন্দ নয়, বরং একটি প্রয়োজনীয়তা। এটি তাদের শোষণ থেকে মুক্তি, ন্যায্য অধিকার আদায় এবং সামাজিক ক্ষমতায়নের পথ। বর্তমান সময়ে শ্রমিক আন্দোলন মহিলাদের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক কারণ এটি তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে। তবে এর সফলতা নির্ভর করে মহিলাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সংগঠিত হওয়ার উপর।

ভারতের শ্রমজীবী মহিলারা কর্মক্ষেত্রে একাধিক স্তরের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন— শুধু মজুরি বা চাকরির অনিশ্চয়তা নয়, আরও গভীর সামাজিক-অর্থনৈতিক বাধা রয়েছে। সংক্ষেপে প্রধান সমস্যাগুলি নিচে দিলাম:

১) নিম্ন মজুরি ও মজুরি বৈষম্য

মহিলারা পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় একই কাজের জন্য অনেক কম মজুরি পান।

বহুক্ষেত্রে ন্যূনতম মজুরিও দেয়া হয় না, বিশেষ করে অসংগঠিত খাতে (গৃহশ্রমিক, কৃষিশ্রমিক, হকার, গার্মেন্টস শ্রমিক)।

২) চুক্তিভিত্তিক ও অনিশ্চিত চাকরি

অধিকাংশ নারী কর্মী আউটসোর্সিং, কনট্রাক্ট বা ক্যাজুয়াল ভিত্তিতে কাজ করছেন।

নিয়মিত চাকরি, পিএফ, পেনশন, স্বাস্থ্য সুবিধার মতো সামাজিক সুরক্ষা নেই।

কাজ চলে যাওয়ার ভয় সর্বদাই থাকে।

৩)অতিরিক্ত কাজের সময় ও কাজের শোষণ

দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে বাধ্য করা হয়—১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত, বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্প ও পরিষেবা খাতে।

অনেকক্ষেত্রে ওভারটাইমের জন্য যথোপযুক্ত পারিশ্রমিকও দেওয়া হয় না।

) কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও নিরাপত্তার অভাব

যৌন হয়রানি এখনও বড় সমস্যা, অনেকেই ভয়ে অভিযোগ করেন না।

POSH আইন (Sexual Harassment of Women at Workplace Act, 2013) যথাযথভাবে প্রয়োগ হয় না।

ট্রান্সপোর্ট ও রাস্তাঘাটে নিরাপত্তাহীনতা রয়েছে।

) মাতৃত্বকালীন সুরক্ষার অভাব

গর্ভবতী হলে চাকরি হারানোর সম্ভাবনা থাকে।

মাতৃত্বকালীন ছুটি বা সুবিধা বহুক্ষেত্রে প্রাপ্য নয়।

অসংগঠিত খাতে এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি।

) উন্নয়নের সুযোগের অভাব

পদোন্নতির সুযোগ নেই।

স্কিল ডেভেলপমেন্ট বা প্রশিক্ষণের খুব কম সুযোগ পাওয়া যায়।

পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় অনেকখানি পিছিয়ে পড়ছেন।

) দ্বৈত কাজের বোঝা

কর্মস্থলের কাজের পাশাপাশি ঘরের যাবতীয় দায়িত্বও নারীদের উপরই বর্তায়।

এই দ্বৈত বোঝার ফলে শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি বাড়ছে।

শ্রমজীবী মহিলাদের লড়াই শুধু উচ্চতর মজুরি নয়, সম্মানজনক ও নিরাপদ কর্মপরিবেশের লড়াই।

সমাজিক সুরক্ষা, সমানাধিকার ও পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে এই সংগ্রাম আজকের দিনে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক।

‘Women hold up half the sky’- কমরেড মাওয়ের বিপ্লব পরবর্তী এই আহ্বানে চীনের অর্ধেক আকাশ যেমন তাদের দেশের কাজের বাজারে নিজেদের অধিকার সুনিশ্চিত ও প্রতিষ্ঠিত করতে সমস্ত রকমের সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন, ঠিক তেমনই আমরা বামপন্থী শ্রমিক সংগঠন গুলির পক্ষ থেকে বিশ্বাস রাখি আজকের এই নিদারুণ সংকটের পরিস্থিতিতে আমাদের রাজ্যের "অর্ধেক আকাশ", আমাদের রাজ্যের নারী শ্রমশক্তি তার সম্পূর্ণ শক্তি নিয়েই সামিল হবেন মেহনতির অধিকার বুঝে নেওয়ার ৯ জুলাই এর সর্বভারতীয় সাধারণ ধর্মঘটে।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন