ডিজিটাল ইন্ডিয়া। এবং মোদীর ডিজিটাল ইন্ডিয়া। উত্তরপ্রেদেশেও জিও ধান-ধানা-ধান 4G স্পিডে চলে। ততোধিক স্পিডে লাশ গুনতে হয় নির্যাতিতাদের। দলিত মহিলাদের উপর নির্যাতনের ঘটনা ওখানে ব্রেকিং নিউজ নয় বরং রোজনামচা হয়ে গেছে। হাথরাস থেকে বুন্দেলখন্ড এরকম অজস্র ঘটনার নিদর্শনের আর্কাইভ 4G স্পিডে ভর্তি হচ্ছে মোদী-যোগীর জামানায়।
মহিলাদের উপর নির্যাতন শুধুমাত্র সামাজিক ব্যধি বলে দাগিয়ে দেওয়াটাও একটা চরম অন্যায়। আসলে RSS-BJPর যে স্বপ্নের রাষ্ট্র নির্মাণের পরিকল্পনা তাতে মহিলাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে শোষণ করাটা ওদের মনুবাদী পরিকল্পনার অন্যতম অংশবিশেষ। ওরা মনে করে মহিলারা শুধুমাত্র ঘরের কাজ করবে আর সন্তান উৎপাদন করবে। তাই প্রতিদিন মহিলাদের শিক্ষা ও কাজের পরিসরকে সঙ্কুচিত করছে RSS পরিচালিত BJP সরকার।
এখন আপনি বলতেই পারেন যে দেশের মহিলারা তো পড়াশোনা করছে, চাকরিও করছে। তাহলে আপনাদের সমস্যাটা কোথায়?? সমস্যা আছে। সমস্যা আছে বলেই প্রশ্নগুলো উঠছে। JNU বলুন বা যাদবপুর-প্রেসিডেন্সি। BJP সরকারের টার্গেট কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। পড়াশোনার অধিকার সঙ্কুচিত করো। ইউনিভার্সিটির ছাত্রীদের নামে গাদা গাদা ফেক নিউজ নামাও। ফেসবুকে আইটি সেল-কে দিয়ে খাপ বসাও। কেউ যদি সোচ্চারে হকের কথা বলে তাহলেই দাগিয়ে দাও দেশদ্রোহী বলে।
এমনিতেই বেকারি বেড়েছে ৪৫%। এই রেকর্ড সর্বোকালের সর্বোচ্চ। এই লকডাউনে কাজ গেছে প্রচুর মহিলার। ছোট্ট শিশু প্ল্যাটফর্মে তার মা-কে ডেকেছে, কিন্তু সেই আওয়াজ পৌঁছায়নি তার মায়ের কানে। আমাদের দেশের সরকারের কল্যানে লাশ হয়ে গেছে পরিযায়ী শ্রমিক মা। কত মা মাইলের পর মেইল হেঁটেছে তার শিশুকে কোলে নিয়ে। সরকার মোমবাতি জ্বালানো আর থালা বাজানো বাদ দিয়ে বাকি সময়টা আইসোলেশনেই ছিল।
সমকাজে সমবেতনের প্রশ্ন অনেকদিনের। আশা কর্মীরা বেতন পাচ্ছে না ঠিকমত। কাজের পরিসর কমছে। ICDS কর্মীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ক্রমশ। আমরা দেশজুড়ে দেখছি নার্সিং কর্মীদের বিক্ষোভ। কাজের সময়সীমা বাড়ছে পাল্লা দিয়ে কিন্তু বেতন বাড়ছে না। কাজের সুরক্ষার প্রশ্নেও গভীর অনিশ্চয়তার ছাপ। দলিত মহিলাদের উপর সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিপীড়নের প্রশ্নে তো বিজেপির জুরি মেলা ভার। দেশের সরকার প্রতিদিন সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রশ্নে পিছিয়ে দিতে চাইছে মহিলাদের। এর পিছনে কাজ করছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা ও মনুসংহিতার ব্লু-প্রিন্ট।
হিন্দু ধর্মে নারীদের অবস্থানের দগদগে ইতিহাস সতীদাহপ্রথা। অর্থাৎ মৃত স্বামীর সঙ্গে জীবিত স্ত্রীকে জ্বলন্ত পুড়িয়ে মেরে ফেলার রীতি।
মনুস্মৃতিও আলাদা কিছু তথ্য দেয়না আমাদের। মনুস্মৃতি বলছে নারীর নিজের পিতৃসম্পদে কোনও অধিকার নেই। নারীকে উৎপাদনযন্ত্র এবং ভোগ্যদ্রব্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মেয়েকে সাজসজ্জার মাধ্যমে তার স্বামীর কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে হবে। নয়তো সন্তান উৎপাদন সম্ভব হবেনা। মহিলাদের বহন আর বাহন করার মধ্য দিয়ে মহিলারা আদতে হয়ে উঠবে কেবলমাত্র উৎপাদন যন্ত্র। অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখা- সে তো সোনার পাথরবাটি!!
ওরা ভয় পায় শিক্ষাকে। ওরা জানে আমরা যত বেশি পড়বো তত বেশি জানবো, আর তত কম মানবো। তাই উচ্চশিক্ষাখাতে বাজেট কমে, ফেলোশিপ বন্ধ হয়। ক্যাম্পাসে গুলিও চলে। ওদের ভাষায় ইউনিভার্সিটি অন্য সংজ্ঞা পায়। ওরা হাথরাস ঘটায়, ওরা বুন্দেলখন্ড ঘটায়, ওদেরই দোসররা কামদুনি-পার্কস্ট্রিট-ধূপগুড়ি ঘটায়।
অধিকারের কথা বললে পুলিশ নামায় রাস্তায়। উগ্র জাতীয়তাবাদের জিগির তুলে হিংসা ছড়ায়। কিন্তু আমাদের মানুষের জোর আছে। আমরা মুক্তির আশ্বাসের দিশারী। আমরা জলকামানের সামনে দাঁড়িয়ে আগলে রাখি ছাত্র কমরেডকে। আমরা কল্পনা দত্ত, ইলা মিত্র থেকে গৌরি লঙ্কেশদের মধ্যে প্রতিরোধের আগুন খুঁজে পাই। আমরা মিছিল সাজাই সমাজ বদলের। আমরা গান গাই, কবিতা লিখি, স্লোগান দিই। আমরাই ব্যারিকেড গড়ি। আমরাই আবার ওদের ধর্মান্ধতার দেওয়াল ভাঙি রাস্তাজুড়ে। আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী মহিলা দিবসে আমরা শপথ নিই নতুন করে। শিক্ষার অধিকার, কাজের অধিকার, সমানাধিকার লড়ে নেওয়ার শপথ।