ত্রিপুরায় হামলার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে পার্টির সাধারণ সম্পাদকের চিঠি
তারিখঃ বৃহস্পতিবার, ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২১
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, ত্রিপুরায় সিপিআই (এম) তথা বামফ্রন্টের উপর হামলার বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নিম্নলিখিত চিঠি লিখেছেন।
নীচে সেই চিঠির সম্পূর্ণ অনুবাদ প্রকাশিত হল।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহাশয়,
৮ই সেপ্টেম্বর ত্রিপুরায় সিপিআই (এম) এবং বামফ্রন্টের উপর যে হিংসাত্মক সহিংসতা ঘটেছে তার প্রতি আমরা আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
পূর্ব পরিকল্পিতভাবে রাজ্য সদর দপ্তর সহ সিপিআই (এম)-এর বেশ কয়েকটি অফিসে বিজেপি কর্মীদের দ্বারা আক্রমণ চলেছে। যেসব অফিস ক্ষতিগ্রস্ত বা ভস্মীভূত তাদের মধ্যে রয়েছে উদয়পুর মহকুমা অফিস, গোমতী জেলা কমিটি অফিস; সেপাহিজালা জেলা কমিটির কার্যালয়; বিশালগড় মহকুমা কমিটির কার্যালয়, সাঁতার বাজার মহকুমা অফিস; পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা কমিটি অফিস এবং সদর মহকুমা কমিটির অফিস।
সবচেয়ে নির্মম হামলা চলে আগরতলায় পার্টির রাজ্য কমিটির অফিসে। তারা অফিসের মাঠসংলগ্ন এলাকায় ও দপ্তরের প্রথম তলায় ভাঙচুর করেছে, অফিসের দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে এবং ত্রিপুরায় জনগণের শ্রদ্ধেয় নেতা দশরথ দেবের মূর্তি অবধি ভেঙেছে।
সিপিআই(এম)-এর বহু নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা চলেছে, ভাঙচুর হয়েছে অথবা আগুন লাগানো হয়েছে।
এমনকি গণমাধ্যমের অফিসগুলিও হামলার হাত থেকে রেহাই পায়নি। পার্টির কাগজ ‘ডেইলি দেশের কথা’ পত্রিকার অফিসেও হামলা হয়েছে।
এই ঘটনায় লক্ষণীয় যে, সমস্ত জায়গাতেই পুলিশ উপস্থিত থাকা সত্বেও তারা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। রাজ্য কমিটির দপ্তরের সামনে কিছু সিআরপিএফ জওয়ান উপস্থিত ছিলেন কিন্তু হামলা শুরু হবার ঠিক এক ঘণ্টা আগে তাদের সেখান থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। (হামলার বিশদ বিবরণ চিঠির সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে।)
যে কায়দায় বিজেপি’র গুন্ডাবাহিনী পরিচালিত হয়েছে তাতে রাজ্য সরকারের এই ঘটনায় সরাসরি যোগসাজশ স্পষ্ট হয়েছে। এই হামলাগুলি হয়েছে কারণ শাসক দল বিজেপি ত্রিপুরা রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের কার্যকলাপ দমন করার চেষ্টা করতে চেয়েও বারে বারে ব্যর্থ হয়েছে।
সিপিআই(এম) এবং বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে এই হিংসাত্মক আক্রমণ বন্ধ করার জন্য অবিলম্বে আপনার হস্তক্ষেপের জোরালো আহ্বান জানাচ্ছি। যেভাবে হামলা হয়েছে তা স্পষ্ট করে দেয় যে রাজ্য সরকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে এবং বিরোধী দলকে শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম সংগঠিত করার সাংবিধানিক অধিকারকে সুরক্ষিত করতে চরমভাবে ব্যর্থ।
আক্রমন রোধ করতে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের ব্যর্থতা যদি বাস্তবিক হয়ও তাহলেও মনে রাখতে হয় সংবিধানের নীতিগুলি বাস্তবায়নের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকার বাধ্যবাধকতা।
আপনার তরফে এই ঘটনায় জরুরী প্রতিক্রিয়ার প্রত্যাশা রাখছি।
ধন্যবাদ সহ,
আপনার জ্ঞাতার্থে,
সীতারাম ইয়েচুরি
সাধারণ সম্পাদক
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)