‘জেল ভরো’ ও আইন অমান্য গোটা দেশজুড়ে যেভাবে ৬ মার্চ এক অভূতপূর্ব উৎসাহে শ্রমজীবি মহিলারা করলেন সিআইটিইউ এর উদ্যোগে এক কথায় অনন্য।গত ৪৫ বছর ধরে আমাদের দেশে বেকারত্বের সমস্যা বেড়ে চলেছে।তাতে মহিলারাও ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ২০০৪ সালে মহিলাদের কাজে নিযুক্ত হবার সংখ্যা ৪১.৬ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ কমেছিল,২০১৭-১৮ সালে তা আরো ২২শতাংশ কমেছে। বাকি অংশের মহিলারা বিনা মজুরিতে বেশ কিছু কাজের সাথে যুক্ত আছেন, যা সরকার তাদের কাজকে মর্যাদা দিচ্ছে না। রাষ্ট্রসঙ্ঘের তালিকাভুক্ত হিসাব বলছে ৫১ শতাংশ ভারতীয় মহিলা বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করে চলেছে যাদের জাতীয় সমীক্ষাতেও কোনো প্রতিফলন হচ্ছে না।
দাবি গুলো-
১. মহিলাদের কাজকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
২. বিনা পারিশ্রমিকের কাজের মূল্য নির্ধারণ করে তাকে জিডিপি-তে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৩. সমান মজুরি দিতে হবে।
৪. প্রকল্প কর্মীদের, পূর্ণ কর্মীর মর্যাদা দিতে হবে।
৫. ৪৫তম শ্রম সম্মেলনের সুপারিশ কে কার্যকর করতে হবে।
৬. কর্মক্ষেত্রে ও পরিবারে নারীদের ওপরে যৌন হেনস্থা ও যে কোন প্রকার অত্যাচার বন্ধ করতে হবে।
৭. মহিলা ও শিশুদের উপর নৃশংসতা ও অত্যাচার বন্ধ করতে হবে ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৮. ৪৫ তম শ্রম সম্মেলেনের সুপারিশকে কার্যকরী করে শ্রমজীবি মহিলাদের মাসিক ১০০০০ টাকা পেনশন সহ সামাজিক সুরক্ষা এবং ,মাতৃত্বকালীন ছুটির অধিকার দিতে হবে ।
৯. আমাদের রাজ্যে অস্থায়ী শিক্ষিকা, মহিলা শিক্ষাকর্মী ও অন্যান্য সরকারী ক্ষেত্রে কর্মরত অস্থায়ী মহিলা কর্মীদের ৭৩০ দিনের Child Care Leave ( CCL) দিতে হবে।
১০. সমস্ত ধরণের নির্বাচনে মহিলাদের ৩৩% আসন সংরক্ষণ করতে হবে।
১১. তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সামাজিক মর্যাদা দান করে তাদের কাজের অধিকারকে সুনিশ্চিত করতে হবে।
এরাজ্যেরও নানান প্রান্তে শ্রমজীবি মহিলারা এই লড়াইয়ে শামিল ছিলেন । মূল জমায়েত ছিল কলকাতা কর্পোরেশনের মূল ফাটকের সামনে দুপুর ১ টার সময়ে । এ রাজ্যে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও শ্রমজীবি নারীদের ওপরে যে ধরণের অত্যাচার চলছে তার কোন সুরাহা হয়নি। পুলিশের ব্যাপক জমায়েত ও প্রশাসনের পরিকল্পিত রাস্তা আটকানোর মাধ্যমে গোটা আন্দোলনকে খাটো করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই কর্মসূচী সফল ভাবেই পালিত হয়েছে। সিআইটিইউ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে অনাদি সাহু, গার্গী চ্যাটার্জী, মহিলা সংগঠনের নেতৃত্ব সহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন এবং শ্রমজীবি মহিলাদের মূল দাবিগুলো সোচ্চারে উচ্চারণ করে গ্রেপ্তার বরণ ও করেন মহিলা শ্রমজীবিরা।
দীর্ঘদিনের শোষণ বঞ্চনা ও বৈষম্য দূর করতে নারীদের দীর্ঘ লড়াই সামগ্রিকভাবে মহিলারা বিশেষত শ্রমজীবী মহিলা ও যুবতীরা সাহসের সঙ্গে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে মরণপণ লড়াই করতে উদ্যোগী হয়েছেন। শ্রমিকশ্রেণী তাদের সংগ্রামকে শুধুমাত্র সমর্থন করেছে তা নয় সমগ্র নারী-পুরুষ মিলিত হয়ে তাদের শোষণ ও অপমানের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়ে লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করছে।